ছোটবেলা দেখেছি কনে দেখার আসরে মুরব্বিরা কনেকে জিজ্ঞেস করতেন, হাতের কাজ পারো
কিছু মা? অপরিচিত মানুষের সামনে লাজুক মেয়েটি ঘোমটার নিচে দুরুদুরু কাঁপছে। কিন্তু
মুখে কোনো উত্তর নেই। বরপক্ষের মুরব্বিদের চোখও মেয়েটির দিকে থেকে একটু সরে যায়। ঘরের
চারদিকে বড় বড় চোখে তাকায়। কাচের ফ্রেমে বাঁধাই করা ওয়ালম্যাটের দিকে চোখ নিবদ্ধ হয়।
খাটের উপর রাখা বালিশের কভারে স্থির হয় দৃষ্টি। টেবিলের উপর বিছিয়ে দেয়া কভারের কোণায়
আঁকা আল্পনায় চোখ হয় প্রশান্ত। প্রসন্ন মনে আবার কনের দিকে তাকায় স্নেহের দৃষ্টিতে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বোন, চাচি বা মামি সেই প্রশান্ত চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, এসব ওরই
আাঁকা। বরপক্ষের মুখে মাশাআল্লাহ্, মাশাআল্লাহ্ রব ওঠে। মেয়েটির বুকের ভিতর হাতুরি
পেটানো বন্ধ হয়।কত সুঁইয়ের কত ফোটায় আঙুলের অগ্রভাগ বিক্ষত হয়েছে তা কি কেউ জানে? কত
স্বপ্ন কত কল্পনায় এই আল্পনা আঁকা হয়েছে তার কাহিনি কি কেউ জানে?এই চিত্রের ভিতর যে
কত চিত্রকল্প ঘুমিয়ে আছে তার খবর কে রাখে?
আহা এই মেয়েরা যদি কবি হতো তবে তার বিবরণ ‘নক্সিকাথার মাঠ’এর মতোই পাঠকের মন
মাতিয়ে তুলতো। একজন লেখককেও সুইয়ের ফোঁড়ের মতোই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে তৈরি করতে হয় তার লেখা
। কত বিনিন্দ্র রাত কেটে যায় একটি লেখার জন্য। ভোরের আজান শুনে দেখা যায় শাদা কাগজের
উপর মূর্দার মতো পড়ে কাছে কলম। একটি অক্ষরও লেখা হয়নি! সব লেখকের বেলায়ই এমন হয়। আবার
যখন আসে এক বসাতেও কবিতা, গল্প হয়ে যায়। রিকশায় বসেও লেখা চলে আসে। বাসে, ট্রেনে, বিমানেও
টিকেটের বুকে ফুটে ওঠে শব্দবীজ। রোগসজ্জায়, হাসপাতালে, ওটিতেও লেখা হয়েছে কত অমর কবিতা।
আবার সমুদ্রের পাড়ে বসেও একটি পঙক্তি আসে না। এটাকেই অনেকে বলেন লেখা ‘নাজিল’ হয়।নাজিল
হবার জন্য লেখকে ভাবতে হয়। ধ্যানের জগতে যেতে হয়। পাঠ ও প্রস্তুতির ভিতর তৈরি হয় লেখার
ভাব। লেখালেখিটা স্বতস্ফূর্তের বিষয়। জোর-জবরদস্তি করে সবসময় লেখা হয় না। আবার লেখার
একটা চাপ থাকলে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেও লেখা চলে আসে।
একজন লেখককে প্রতিদিনই লেখার টেবিলে হাজিরা দিতে হয়।সময় নিয়ে বসতে হয়। লেখা
না হলে একটা ভাবনা হলেও টুকে রাখতে হয়।একজন ছাত্রের যেমন প্রতিদিনই পড়াশোনা করতে হয়।
চাকুরিজীবীকে সময় মতো অফিসে যেতে হয়। লেখকের ক্ষেত্রেও তাই। এখানে ফাঁকি দেবার সুযোগ
নেই। ছাত্রের ছাত্রত্ব একসময় শেষ হয়। চাকুরিজীবী একসময় অবসরে চলে আসেন। কিন্তু লেখকের
অবসর মৃত্যুর পর।
ক্ষণকালেও তার অবসর নেই। বন্ধের দিনে তার কাজ বেশি। অন্যদের মতো- খাও-দাও,
ঘুমাও আর টিভি দেখো; এই রুটিন লেখকের নয়। তার আহার, বিশ্রামও অন্যদের মতো নয়। বাড়ির
সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন রাতকে সঙ্গীকে জেগে থাকে লেখক। জগতে লেখা ছাড়া এর সাক্ষী
নেই।সাক্ষী যেহেতু লেখা; তাই সাক্ষীকে মজবুত করুন।
রুমালে আল্পনার কথা বলছিলাম। আল্পনার কোনো একটি জায়গায় দর্শকের চোখ আটকে থাকে।
কোন জায়গাটায় বার বার চোখ যায়। লেখার ভিতরও এমন কিছু শব্দফুল থাকে। সেখানটায় পাঠক চমকিত
হয়। বাগানে যেমন বিচিত্র ফুলের সমাহার দেখা যায়, লেখায়ও তেমনি। ফুলের রঙে যেমন বৈচিত্র্য
থাকে, লেখায় তেমনি। ফুলের গন্ধ যেমন হৃদয়কে আন্দোলিত করে; শব্দের ফুলও পাঠকের চিত্তকে
নাড়া নেয়। একটি লেখায় শব্দের এই ফুল বেশি থাকে না। লেখার মাঝে চমকপ্রদ কিছু শব্দ, বিষয়
বা উপস্থাপনা থাকে এগুলোকে বলা হয় ‘অলঙ্কার’। অলঙ্কার দুই ধরনের ‘শব্দালঙ্কার’ ও ‘অর্থালঙ্কার’।
অলঙ্কারশাস্ত্রের নানা গুরুগম্ভীর কিতাব আছে বাজারে। অনেক জ্ঞানীজনদের লেখা সেুগলো।
প্রতিটি ভাষারই রয়েছে নিজস্ব বৈভব। ব্যাকরণ যেমন ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা করে, অলঙ্কার
করে ভাষাকে সুশোভিত।
নারীকে অলঙ্কার পরালে যেমন তার রূপলাবণ্য ফুটে ওঠে, লেখার গায়ে অলঙ্কার পরালেও
লেখা হয়ে ওঠে সৌন্দর্যময়।কিন্তু কাব্যের অলঙ্কার আর নারীদেহের অলঙ্কার এক জিনিস নয়।
নারীদেহের অলঙ্কার বাহ্যিক; লেখার অলঙ্কার অভ্যন্তরের।
‘অলঙ্কার’ শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ সুসজ্জিতকরণ বা বিভূষিতকরণ। প্রাচীন অলঙ্কারশাস্ত্রবিদগণ
বলেছেন- ‘সৌন্দর্যম্ অলংকারঃ’। অর্থাৎ সৌন্দ্যর্যই অলঙ্কার (Rhetoric)। কেউ কেউ মনে
করেন, অলঙ্কারের কাজ আনন্দবর্ধন করা। অর্থাৎ ‘অলঙ্কারোহি চারুত্বহেতুঃ’। মোট কথা লেখার
ভিতরে সাধারণ অর্থের অতিরিক্ত এক চমৎকারিত্ব সৃষ্টিই হলো অলঙ্কার। ড. শুদ্ধস্বত্ত্ব
বসু বলেন, ‘অলঙ্কার শব্দের একটা ব্যাপক অর্থ আছে যার দ্বারা রস, রীতি, ধ্বনি, গুণ,
ক্রিয়া, অনুপ্রাস, উপমা, বিরোধ, বক্রোক্তি প্রভৃতিকে বোঝায়, কারণ কাব্যসৌন্দর্য বলতে
এগুলোকে অবশ্যই ধরতে হবে।’
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments