মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ'র কবিতা

 
অভাব
 
বড় কষ্ট!
অভাবী এ জীবন।
 
কত লোকে ছনের ঘরে
টিনের চালা তুললো,
কিন্তু
আমার এ জীবন
নিশ্চল স্থবিরই রইলো।
 
বড় কষ্ট!
জীবন যাত্রা
পাল্টাতে পারিনি কিছুই তার,
অভাব মোরে গ্রাস করেছে
ছন্নছাড়া এ সংসার।
 
বড় কষ্ট!
জীবন প্রবাহ
যাবো কোথা খুঁজে নাহি পাই,
এ সুখের পৃথিবীতে
সুখ যে আমার নাই।
 
আধুনিক এ যুগে
শহর গ্রামাঞ্চলে,
সবার জীবনে এলো বদল
আমার নাহি এলে।
 
বড় কষ্ট!
জীবন কষ্টের
অভাব মোর সাথী,
পদ্য লিখি গদ্য লিখি
কাটাই দিবস রাতি।।
……………………………………………
 
জীবনের পঙক্তিমালা
 
জীবনটা তো হাসি কান্নার
প্রাচীর দিয়ে ঘেরা,
চপল প্রহর ঢেউ খেলে যায়
দেয় যে মনে নাড়া।
 
••
দুঃখটাকে সঞ্চি করেই
কাব্য আমার লেখা,
শৈল্পিক মনে রঙ ঢেলে
নিত্য বেঁচে থাকা।
 
••
যাকেই বেসেছি ভালো
জীবন চলার পথে,
সে- দিয়েছে ব্যথা
অশ্রু আঁখি পাতে।
 
••
ফুল নদী যা- বলো
দেখায় উদার তারা,
মিথ্যে ওসব ভালোবাসা
জীবন কষ্টে ঘেরা।
 
••
নীলাকাশ আর সবুজ জমিন
আমার মরন সাথী,
ঘাস মাড়িয়ে চোখ তুলে চাই
যখন দুখের রাতি।
 
••
চাঁদের আলোয় সান্তনা পাই
নরম ঘাসের ছোঁয়া,
খেদ মিটে যায় মনের যত
চেয়ে... না পাওয়া।।
……………………………………………
 
মায়ের স্মৃতিময় দিন
 
সেই স্মৃতিই বার বার জ্বালাতন করে
ভাস্কর হয়ে যা দেদীপ্যমান
হৃদয় মোহনায়।
 
প্রাত: ভোজন মুড়ি নাস্তার জন্য
পড়ার ঘরে মার
বার বার আনাগোনা।
 
মৃদ স্বরে মা বলতো
মুড়ি খাবি গেন্দা? এনে দেবো?
ব্যস্ত সকাল কুরআন পড়ার ফাঁকে
ফুসরত করে বলে দিতাম
খাবো-- দিয়ে যান।
 
আবার কোন দিন
কবিতা লেখায় ব্যস্ত থাকতাম,
তখন মা এসে নাস্তার কথা বললে
খারাপ লাগতো।
কারণ,
কবিতার চরণে ব্যাঘাত ঘটে।
 
বলতাম, দেরি হবে মা
খিদে লাগেনি।পেরেশান হবেন না
মা নিঃশব্দে বের হয়ে যেতেন।
 
কবিতা লেখা শেষ হলে
নিজেকে অপরাধী মনে হতো
মা কি মনে কষ্ট পেলো?
কষ্ট পেলে তো জীবনের পথ রূদ্ধ।
 
কিন্তু
মা ওসব ভুলে গিয়ে
প্রতিদিন প্রাত: ভোজ মুড়ি নাস্তার জন্য
ডেকেই যেতেন।।
……………………………………………
 
জীবনের জন্য
 
জীবনের জন্য চাই কাজ আর কাজ,
কাজের মাঝে কারো নেই মনে লাজ।
 
অলসতা বাড়ায় মনে যত কুটিলতা,
দারিদ্রতা কুড়ে খায় জীবনের খাতা।
 
যেজন করে কাজ কাটায় না বসে,
সুখি তবে সেই জন সমাজে মিশে।
 
কাজকে করো না   কভূ অবহেলা,
জীবনের জন্য কাজ   শত চারুমেলা।
 
অলসতা না করে   করো বেশি কাজ,
অনুরোধ সবাইকে করে গেলাম আজ।।
……………………………………………
 
নতুন বছর
 
কিভাবে যে দিন খসে খসে যায়,
তার সে হিসাব রাখে কে কোথায়।
 
গোলক ধাঁ ধাঁয় পড়ে আছে সবে,
কমে যাওয়া দিন কে ভেবেছে কবে।
 
আনন্দ উৎসবে দিন বর্ষ বরণ,
বরণ তো নয় সে আসছে মরন।
 
দিন যায় মাস যায় বছর তো যায়,
মরণের পালকি কাছে যে আগায়।
 
এইটুকু ভাবে না বুঝে না কিছু,
নতুনের আশাতে ছুটছে পিছু।
 
আনন্দের বদলে কাঁদা প্রয়োজন,
হারিয়ে গেছে কতো দিন- অনুক্ষণ।
 
তা যে আর ফিরবেনা নেই মাথা ব্যথা,
কিভাবে যে শেষ হলো হিসেবের খাতা।।
……………………………………………
 
যেতে হবে পরপাড়ে
 
আশায় ঘর বাঁধছি
আশায় আশায় দিন চলেছে
মনের তাগাদায় বুঝি
এইতো গন্তব্য
 
আর একটু আর একটু
ছুঁই ছুঁই করেও সামান্যের জন্য
যেন হয় না ছোঁয়া।
 
এইভাবে ক্ষয়িঞ্চু বছর
কতটি যে পার করে এসেছি
তার হিসাব কষতে কষ্ট লাগে।
 
আশা থেমে থাকে না
মনে হয় কষ্টেই মিলবে, কিন্তু
জীবন থেকে খসে গেছে 'টি পর্ব
তার হিসেব তো লিখে রাখিনি।
 
হঠাৎ মনের গহীনে হুইসেল বাজে
যাবার সময় হয়েছে,
আশায় ঘর বেঁধে লাভ কি
প্রস্তুত হও, যেতে হবে পরপাড়ে।।
……………………………………………
 
পৌষ মাসের পঙক্তি
 
পৌষ আসে বাংলায়
হিম আর কুঁয়াশার শুভ্র চাদর পড়ে,
অনেক বৃক্ষের পত্র -পল্লব
অকাতরে পড়ে ঝরে ঝরে।
 
সারা মাঠ ফাঁকা ফসল কেটে ঘরে তুলেছে
যতদূর চোখ যায় জানি,
ফাঁকা মাঠে কুঁয়াশার মেলা
শিশিরে ঘাসের ডগা রূপোর খনি।
 
পথে বের হয়না কোন পেশার মানু্ষ
দক্ষিণা বাতাস দম যায়,
লেপ কাঁথার নিচে কাটায় ঘরে
প্রভাতী সূর্যের আশায়।
 
ঘড়ির কাটায় বেলা বাড়ে
সূর্য দেয় না উঁকি,
পৌষের আকাশ গোমরো করে
কালো হয়ে যায় থাকি থাকি।
 
একটানা এভাবে পুরো মাস
বড় কষ্টে কাটে হাড় কাঁপানো শীতে,
তবু বাংলায় পৌষ আসে -যায়
খবর রাখে কে তাতে।।
……………………………………………
 
পালাবদল
 
ঘূর্ণায়নে চলছে সবি
জগৎ সংসার,
আজকে ধনী কালকে কেহ
নিঃস্ব হাহাকার।
 
হতাশ হয়ে আস্থা হারায়
পায় না কেহ কুল,
দুঃখটাকে কেমনে সে
করবে উসূল।
 
টানা পোড়েন অনেক করে
না হয় প্রসার,
অসৎ পথে পা বাড়িয়ে
করে সে রোজগার।
 
কেউ বা আবার সৎ পথে
ভাগ্য পোয়াবারো,
সপে দেয় প্রভূর তরে
চিন্তা করে না কারো।
 
যাদের পেটে সেই দিনে
পায়নি অন্ন দানা,
তাদের দ্বারেই আজকে যে
গরীব-দুঃখীর খানা।
 
লুকিয়ে থাকে কষ্ট মাঝে
সুখের ঠিকানা,
অন্ধমোহে অনেক মানুষ
যে বুঝে না।
……………………………………………
 
হঠাৎ করে আড়াল হলো
 
পাশাপাশি যে জন রয়
সুখে- দুখে সাথী,
হঠাৎ কোথাও আড়াল হলে
অশ্রু ঝরায় আঁখি।
 
বুকের মাঝে স্বজন হারা
ব্যথা অনুভব,
খাদ্য-পানি যায় না পেটে
খানিক নিরব।
 
ভেসে ভেসে ওঠে স্মৃতি
কেমনে কাটবে দিন,
কি দেখে চোখ জুড়াবো
সবই তো মলিন।
 
পারিনা বুঝাতে মন
ব্যথায় ফাটে বুক,
হঠাৎ করে আড়াল হলো
চির চেনা মুখ।
 
যদি জানতাম চলে যাবে
হঠাৎ করে দূরে,
বেশি করে দেখে নিতাম
নয়ন দু'খানি ভরে।
 
সবই রইলো স্মৃতির পাতা
আর হবেনা দেখা,
এই পৃথিবীর এমন খেলা
এমনি বেঁচে থাকা।
 
সায় দিয়ে মন মানিয়ে রাখি
দুঃখ চাপা দেই,
কাঁন্নায় যখন বুক ফেটে যায়
হাপিয়ে উঠি যেই।
……………………………………………
 
আবেদন
 
হে কায়কোবাদ!
ফুকাও তোমার আযান ধ্বনি
জেগে উঠুক নিদ্রিত সব মুসলমান,
 
ফররুখ
তোমার ছেড়া নোঙরে পাল তোল
সাত সাগরে উঠছে বান।
 
নজরুল
তোমার বিদ্রোহী বাণী শোনাও
নিস্তব্ধ রক্তে উঠুক তেজ,
 
বাতিলের ধ্বজাধারীরা
কুফুরী মন্ত্রে দিচ্ছে সেচ।
 
গোলাম মোস্তফা
মোনাজাত শিখাও
আত্মভোলা সব মুসলিম আজ,
 
শাহানশাহ ছেড়ে গাইরুল্লাহর কাছে
হাত পাতে নাই যে লাজ।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.