নীলোৎপল জানা’র কবিতা

 

নদী নারী
 
নদী নারীকে আলাদা ভাবিনি কখনও
তাই নারী যতই
নিজেকে গোপন করুক না কেন
সমস্ত শরীর তার
খোলা; সে যে সর্বংসহা মা।
 
যারা মাকে
মেয়ে মানুষ ভেবে চেটে নিতে চায়
তাদের জিভ খসে
যাক ধূসর পাতার মতো
গাভীর মতো
ভালোবাসা বুকে নিয়ে
যে রাত দিন
আগলে রাখে ছোট-বড় প্রাণ
তাকেই লজ্জিত
হতে হয় সন্তানের কাছে
আমার
তোমার পাপ
 
শান্তির
আশ্রয়ের জন্য যে কবি খুঁজেছিল বনলতাকে
সে নারী
আজ দ্রৌপদী, লাঞ্ছিতা
সভ্যতায়
নেমে আসবে দুর্যোগ, ঝড়
 
মাখনের
মতো সাদা চাঁদ বিবর্ণ হচ্ছে আজ
 
কে চলাবে
দেশ ?
কে বলবে
অন্যায় ?
বিদ্যান
কি পাবেনা মান ?
নদী
নারী সবকিছু ভুলে যায়
অবনী শুধু
ডেক যায় জলের মতো ঘুরে ঘুরে
..................................................
 
বহুরূপী শয়তান
 
কোনো কিছু বলার আগেই বজ্রের মতো ফেটে
পড়ল সে।
 
যে দেখা হলেই সহজে নত করত মাথা
প্রশংসার ফুল ঝুরি হত যার মুখে
ভালো মানুষ সেজে সে থাকে সিংহাসনে
আসলে এসবই তার ভালো মানুষী সাজা।
 
চোখ মুখ হাত পা সবই মানুষের মতো
কিন্তু আসলে মানুষ নয়;মানুষরূপী শয়তান।
ইতর কখনো মানুষ নয়
যতটুকু ভুল হয়েছ আমার
এভাবে আঘাত না পেলে
নিজের ভুল ধরা পড়ত না-
বেশি ভুল কারার আগে সামলে নিয়েছি আমি
 
শয়তানকে ধন্যবাদ আচমকা ফেটে পড়ে
ছিলে বলেই
..................................................
 
নারী নয়, মানুষ
 
‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেহ নাহি দিবে অধিকার
হে বিধাতা...’
কেউই অধিকার দিতে চায় না,ছিনিয়ে নিতে হয়
বলা যতটা সহজ করা ততটাই কঠিন
যারা বাস্তব বোঝে, সমাজ বোঝে
তারা জানে কতটা কঠিন কাজ।
হে নারী তুমি কন্যা, জায়া, জননী
যে হাতে গড়েছো সন্তানকে
খাইয়েছ বুকের দুধ
সে কেনো দেবে না সুযোগ ?
সে কেনো গড়েছে প্রাচীর নারী পুরুষে
শুধু ভালোবাসা নয় শক্ত হও মনে প্রাণে
জ্বলে ওঠ, বলে ওঠ, গর্জে ওঠ
বল আমরা নারী নয়, মানুষ
আমরা মানুষ
..................................................
 
নীলা
 
শুনেছি নীলা নাকি কারো সয় কারো সয় না
কী করে সইল
তার সারা জীবন ধরে
বুঝতে পারিনি
আমি
 
কত বার
বুঝিয়েছে সে আমায়
ধারণ করাতে
পারেনি
যে
অবিশ্বাসের কাজ করেছে সে
কী করে
বিশ্বাস করি বারবার।
 
তবুও তাকে
দেখে বিশ্বাসের বিন্দু একটুও বদলায়নি আমার।
নীলা যতই
দামি হোক আমার বিশ্বাস নেই তাতে
কারণ সে যে
বিশ্বাসঘাতক
..................................................
 
প্রথম দেখা
 
জানা
পাপিয়াকে দেখেই সেদিন খুব
ভালো লেগেছিল আমার
যা অচিরেই ভালোবাসায় পরিণত
হয়েছিল
 
হাতি মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম একা
হঠাৎ চোখে পড়লো পাপিয়া
মন্দিরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
হাতে ছিল পূজার প্রসাদ--
রাস্তার গাড়ির দিকে আনমনে
তাকিয়ে ছিলো সে
বাক্সী বাস আসতেই উঠে
পড়লো
আমিও উঠে পড়লাম-
অনেক দূর...
সে নামলো তালপুকুর পেরিয়ে;
আমিও...
এভাবেই কতগুলো দিন
এলোমেলো
পাপিয়া কবে যে অজান্তে
আমার হয়েছিলে জানি না-
আপনি থেকে তুমি হলাম
কবে ; সেও মনে নেই
আজ এত সহজে অনেক দূরে,
অভাব বুঝতে দিইনি কখনো
 
তবুও সে কাছে ছিলো
ভালোবেসে-
হয়তো ভুলেছে সে আমার মুখ;
তবু আমি তাঁর জন্য
অপেক্ষায়
নয়ন সম্মুখে তুমি নাই,
নয়নের মাঝখানে নিয়ছ যে
ঠাঁই ’’
..................................................
 
রাগ নয়; অভিমান
 
যখন মনের কথা বলব বলে বার বার ছুটে গেছি
তুমি অন্যমনস্ক হয়ে চলে গেছ।
 
তোমাকে দেখার পর কত রাত ঘুমাতে পারিনি আমি
যখন যা কিছু ভেবেছি
সব যেন বেঁকে গেছে তোমার দিকে
সকাল থেকে রাত্রি সমস্ত কথা তোমকে ঘিরে
কত কিছু ভেবেছি তোমাকে ঘিরে
আমার যা আছে তুমি তা নেবে
তোমার যা আছে আমি তা নেবো;এই ছিল আশা
এমন করে যে মুখ ফিরাবে ভাবতে পারিনি
কী এমন অপরাধ ছিল বুঝতে পারিনি !
 
তোমার শুভ্র হাসি যেন...
গভীর সমুদ্রে দেখা কোনো সবুজ দ্বীপ
তোমার রেগে ওঠা লাল মুখ যেন
অস্তমিত সূর্যের রক্তিম আকাশ...
মুখে কখনো রাগ মানায় না
আমার মনে হয় কোনো রাগ নয়, অভিমান
গভীর ভালোবাসা
 
জানিনা আজ সে আর কারে ভালোবসে কিনা
আমি এখনো একই ভাবে আছি তোমার প্রতিক্ষায়
একদিন বসন্ত নিশ্চয় আসবে
বসন্ত আসবে
..................................................
 
দুঃসময়
 
আজ আর কান্না পাচ্ছে না বলে
সামনের প্রতিটি বিষয় আজ বিরক্তকর মনে
হচ্ছে
আশা আর দুঃস্বপ্ন বিপ্রতিপ, মাঝে মধ্যে
বুঝতে ভুল হয় বলে
অনেক দুঃখ অপেক্ষা করে থাকে
প্রতিবাদের ভাষা নেই, শুধু ছলছল চোখে কিছু
বলা
আর কতটা বড় হলে হাত পাবে গিরি চূড়ায় ?
নাকি রাজনীতি ছোবল দেবে
বিষাক্ত ছোবলে আজ বড় ক্লান্ত
আজ বড় একা লাগছে আমার
বড় একা
..................................................
 
আলো
 
কতগুলো নক্ষত্র পতন হয়ে গেল আমার মাথার উপর
 
বুঝবো কী বুঝবো না কোনো দিন জানি না
তবুও যেটুকু বুঝেছি তাও এজীবনে কম নয়
মথার ভিতর সব এলোমেলো হয়ে যায় বুঝে ওঠার আগেই
নক্ষত্রগুলোর একদিন শক্তিশালী আলোছিল
ভাষাও ছিল; মুখ ছিল, চোখ ছিল...
তবুও থাকতে পারেনি অক্ষত, অমর
একদিন পড়তেই হল খাদে, মৃত্যুর মুখে
 
সব থেকেও যারা সর্বহারা তাদের একটি কথাই
আজ মহা মূল্যবান, পৃথিবীর কাছে
কারণ তারাযে মহামানব, নক্ষত্র
..................................................
 
উদ্বাস্তু
 
সকাল থেকে মন ভালো নেই আমার
আকাশও মেঘলা হয়ে আছে
চোখ আটকে যাচ্ছে কুয়াশায়
যেন ঘসা কাঁচ দিয়ে দেখা কোনো চিত্র
 
চার দিকে উলুধ্বনি
মাঙ্গলিক কিছু মনে হয়, কিন্তু
হৃদয়ের ঘরগুলো যন্ত্রণায় পূর্ণ; কারণ
চলে যেতে হবে বাসস্থান ছেড়ে, আর মাত্র কটাদিন
মনে পড়ে ছোট বেলার কথা
পদ্মার পার থকে ভেসে আসতো
আজানের ধ্বনি আর কাঁসরের শব্দ...
 
বাবা গভীর রাতে আমাদের সবাইকে নিয়ে
কাঁটাতার পেরিয়ে চলে এসেছিলেন
সঙ্গে একটি তুলসী গাছ
এটাই ছিল শেষ সম্বল আমাদের।
 
আজ এই মেঘলা দিনে বারবার মনে পড়ছে সেদিনের কথা।।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.