সায়মন_মুহাম্মদ মিজানুর রহমান : পর্ব-১৩

দিন যত বাড়তে থাকে পলকে নিয়ে জারিফার চিন্তাভাবনা আরো প্রসারিত হতে থাকে। এখন তার মনে হয়, পল তাকে এড়িয়ে চলে। যদিও এ ব্যাপারে সে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল না। তবু তার মনের ভিতর এটাই সত্য হয়ে দাঁড়াতে থাকে।
পল নিজের সব কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিল। জারিফার অস্থিরতা সত্ত্বেও সে নিজেকে স্থির রেখেছে। তার মতো চলছে। না সে বিচলিত হচ্ছে, না রয়েছে কোনো ব্যস্ততা। জারিফাকে সে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে সত্যি, এখন তার দৃষ্টিভঙ্গি আগের মতো নেই। তার পক্ষে অনেক কিছুই এখন অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা-ও খুঁজে পায় না জারিফা।
পলকে নিয়ে বহু আগেই সন্দেহ হয়েছিল তার। কিন্তু সে জট খোলা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। সে পলের মধ্যে কিছুটা সায়মনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিল। মানুষ মাত্রে মানুষের সাথে মিল থাকতে পারে, তাই বলে সাদৃশ্যতার বিচারে তাকে সায়মন ভেবে ভুল করার মতো মেয়ে জারিফা নয়। তাছাড়া অবয়ব গত দিক থেকে সায়মনের দাড়ি-গোঁফ ছিল। চেহারায় খুব একটা লাবণ্য ছিল না। আর পলের মতো কথা বলায় এতটা পারঙ্গম সে ছিল না কোনো কালেই। সুতরাং তাকে সায়মনভেবে বোকামির পরিচয় দেয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়। তবে ইদানীং অনেক কিছুই তার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। অসম্ভবকেও সম্ভব বলে মনে হচ্ছে।
একটু একটু করে মুখ খুলতে শুরু করেছে পল। জারিফাকে বিয়ে করতে তার অমত নেই, একথা সে এখনো স্বীকার করে। তবে তার ছেলের দায়িত্ব নিতে সে এখন কোনোমতেই রাজি নয়। সামাজিকতা, বন্ধুবান্ধব এখন তার সামনে অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পল, তুমি কী শুরু করলে ? এমনতো কথা ছিল না।
পরিবেশ-পরিস্থিতি মানুষের অনেক করণীয় নির্ধারণ করে দেয়। কালকে যেকথা ভাবিনি, আজকে সেকথা ভাবতে হচ্ছে। কারণ, আমার চারপাশের মানুষগুলো আমাকে ভাবাতে বাধ্য করছে। নইলে আজকে যে আমার পরম আপন, দুদিন বাদে সে-ই আমার বড় দুশমন হয়ে দাঁড়াবে। পদে পদে আমাকে অপমানিত হতে হবে মানুষের কাছে।
তাহলে এতদিন যা বলেছিল, সবই কি আবেগতাড়িত ? মিথ্যে ছিল ?
আজকে যদি আমি এভাবে সিদ্ধান্ত নেই, তাহলে আপনজন, পাড়া-প্রতিবেশী কারো কাছে মুখ দেখাতে পারব না। তাই আমি অনেক ভেবে দেখেছি, এছাড়া আমার সামনে অন্য কোনো উপায় নেই।
জারিফা পলের কথা শুনে নিশ্চুপ হয়েবসে রইল। কিছুক্ষণ এভাবে বসে এবার একটু এগিয়ে পলের হাতটি ধরে বলল, কী চাও তুমি ?
সেকথা তো আমি তোমাকে অনেক আগেই বলেছিলাম। কিন্তু তুমিই আমায় বাধা দিয়েছিলে, অথচ এখন তুমিই আবার মত ঘুরিয়ে নিয়েছ।
জারিফা একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেল। সন্তানের মায়া তাকে কিছুটা কাঁদায়। কেবল সন্তানের জন্য সে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট করতে পারে না একথাও সে ভাবে। তাই নিজের ভবিষ্যত চিন্তা করে সন্তানকে তার দাদার কাছে পাঠিয়ে দিলো। এই নিষ্পাপ ছোট শিশুটিকে একটা অচেনা-অজানা পরিবেশকে বেছে নিতে হলো। অন্যদিকে সায়মনের সাথে তার বৈবাহিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে নিজেকে দায়মুক্ত করে নিল জারিফা। যদিও মনের মুক্তি মিলেছে বহু আগে। কাগুজে বন্ধনটুকু ছিড়তে কেবল বাকি ছিল। তারও শেষ আহুতি বেজে উঠল।
জারিফার বাবা তার এ সিদ্ধান্তকে কিছুতেই মেনে নিতে পারলেন না। এ নিয়ে বাবা মেয়ের মধ্যে অনেক ঝগড়া হয়েছে। তবু জারিফা তার মতে অবিচল। এখন তার করার কিছু নেই। যা হবার তা হয়ে গেছে।
পলের উপর পুরো ভরসা নিয়ে সবই করেছে জারিফা। অথচ স্বামীর উপর এতটুকু ভরসা সে করতে পারেনি। ক্রমে ক্রমে পলও বুঝতে পারল জারিফা আসলে একটা লোভী মেয়ে। যে নিজের যৌন লালসার জন্য, নিজে ভালো থাকার জন্য, সবই করতে পারে। যে নিজের স্বামীকে অপর একজন পরপুরুষের প্রলোভনে তালাক দিয়ে দিতে পারে তাকে বিয়ে করার আগে অন্তত দুবার ভাবার প্রয়োজন।
বেশ কিছুদিন হলো পলকে আর দেখছে না জারিফা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারল, সে বিশেষ এক কাজে দেশের বাইরে চলে গেছে। বহুদিন পরে এটাই প্রথম, পল জারিফাকে না জানিয়ে কিছু করল। এর আগে ছোট-খাটো অনেক বিষয়েও সে জারিফার পরামর্শ নিত। তাকে বলত। ভালো-মন্দের দিকটা আলোচনা করত দুজনে।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments