শেষ মারবেলা_সালেহা চৌধুরী : পর্ব-২৫

বাইরে অপেক্ষা করছিল টম জেসির বাক্স সঙ্গে। সুন্দর ফুটফুটে জমজ সন্তানের মা জেসি। এক থাবা উলের বলের মত দু দুটো মেয়ে তার। কয়েকদিন আগে টমের শোবার ঘরের আলমারির পেছনে এমনি এক মহাকান্ড ঘটিয়ে বসে আছে জেসি। গাড়ির পেছনের সিটে মস্ত এক প্যাকিংবাক্সে ওদের বসিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিল টম। কলি ফেরানো বাড়ির দৃশ্য তার দৃষ্টি এড়ায়নি। নিজের বাড়িতে এমন রং এ বাড়ি রঞ্জিত করবে না টম কিন্তু এই টিয়েপাখি বাড়ির জন্য এমন রং অনেকসময় বেশ মনে হয়। মধুভান্ড কুটির পাখার নাচন তুলে বসে আছে ঝোপবনের ভেতরে। খেলনা বাড়িতে চোখ রেখে ভাবছে টম আর কোন রং মানায় এই বাড়ির জন্য।
এ বাড়ির রূপচর্চার দায়িত্ব যদি তাকে কেউ দেয় প্রথমেই গ্রান্ডফাদার ফায়র প্লেসকে করবে বিদায়। আগুনের সামনে বসে উষ্ণতা সংগ্রহ নয় সমস্ত বাড়িতেই থাকবে সমান তাপ আর উত্তাপ। বারোমিটার সারাক্ষণ আটাত্তর ডিগ্রি হয়ে ঝুলবে দেয়ালে। এই সব ভাবছে জোরদার বাতাস শুরু হলো। আজকে জেসিকে এই বাড়িতে পৌঁছে দেবে এমন কথা হয়েছে গতকার। লনের সুচারু ঘাস এখনো লন কেয়ারিতে সবুজ কার্পেট। সেখানে অপেক্ষা করছে টম।
এখনো বেশ ঠান্ডা। মার্চের মাঝামাঝি হ্রদের দেশে ঝড় আর বৃষ্টির কমতি নেই। সকাল ধরে বৃষ্টি ঝরেছে। সঘন বরিষণ। কি সব ভাবতে ভাবতে চশমার কাচ মোছে টম। ওয়াইপারের গাড়ির কাচও মুছতে হয়।
আনন্দে আল্পুত এই তিনজন একই সঙ্গে জেসিকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে।
মেরীর গোল মুখ এখন শীর্ন। দুই সপ্তাহের ফ্লুতে রোগাও হয়েছে। তবে সমস্ত মুখে হাসি আর শান্তির স্বাক্ষর। এমনি সত্য সেখানে ছবি হয়ে আছে- আমি ফিরে পেয়েছি আমার একান্ত জগত। খরদাহের পর মেরী এবার সজলাভ মেঘ। একটু টোকাতেই ঝরে শিশির।
-হ্যালো মেরী। খুব কাছে দাঁড়িয়ে বলে টম।
-হ্যালো টম। মেরীর গলায় আনন্দ।
আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কুশলবার্তা বিনেময়ের পর একসময় প্রশ্ন করে টম- কবে থেকে আসছো তোমার কাজে মেরী?
-আমার চাকরি এখনো খালি আছে?
-আছে। বলে টম। -তোমার পর তিনজন এলো নকশা টকশায় তোমার ধারে কাছেও কেউ নয়। তোমার সৃজনশীলতার মত উৎকৃষ্ট নয় ওদের সৃজনশীলতা। ওদের কাউকে আমার পছন্দ হয়নি। খরিদ্দারেরও একই কথা।
মেরী ঠান্ডা বাতাসে কান ঢাকে। লাল শাল উড়ছে ঝড়ো হাওয়ায়। সেই শালের প্রান্ত ছুঁয়ে বলে টম- সামনের সপ্তাহ থেকে আসছো তাহলে?
-ঠিক আছে। ঘাড় কাত করে মেরী জানায়। বলে টম- তুমি কি একটু বেশি কাজ করতে পারবে? এ চাকরি এখন কি ওর পকেট মানি সংগ্রহের ব্যাপার? মেরীকে হয়তো কিছুদিন সারতে হবে সপ্তাহের বাজার। দুটো বাড়তি পোষ্য বৃদ্ধি পেল সংসারে। জেসির দুই তুলতুলি কন্যা।
জিনজার আর পিকল নাম ও ঠিক হয়েছে। আসতে আসতে সে কথা শুনেছে মেরী। বিয়াট্রিক্স পটারের বই ওদের মুখস্ত। নাম খুঁজতে বেশি দূর যেতে হয়নি। বলে মেরী- কিছু বেশি সময়?
-এই ধর দশটা থেকে তিনটা। পারবে না?
মেয়েদের দিঘল বাড়ন্ত শরীরের পানে চেয়ে জানায় মেরী- বোধহয। তারপর বলে- ওরা অনেক বড় হয়ে গেছে তাই না টম?
-তোমার ক্যামেলি ওফি? অসাধারণ মেয়ে তোমার। বলে সে হাসে। বলতে চাইছিলে আরো অনেক কিছু যেমন তোমার অবর্তমানে যে ভাবে নিজেদের দেখে শুনে রাখলো। কিন্তু বলে না। তোমার অবর্তমানে শব্দ দ্বয়ের মধ্যে যে ব্যথা টম তা অনুভব করতে পারবে না এমন নিরেট সে কোন কালেই নয়। শুধু বলে- তোমার এই দুই কন্যা একেবারে অতুলনীয় মেরী। এমন আমি দেখিনি।
জিনিষ পত্র গাড়ি থেকে ভেতরে নিয়ে যেতে ব্যস্ত ছিল ক্রিস। ক্যামেলি আর ওফি টমের গালে থ্যাংকুর চুমু খেয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল জেসি আর তার দুই মেয়ে সহ। নানা সব আলোচনা, নানা সব পরিকল্পনা। তাদের বিবিধ কথাবার্তার আওয়াজ ভেসে আসে বাতাসে। কোনখানে রাখা যায় মাদার জেসিকে তার দুই কন্যা সহ।
-কি ব্যাপার কেবল বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলবে? ভেতরে আসবে না? প্রশ্ন করে ক্রিস।
-আজ নয় ক্রিস। ম্যালা কাজ আজ।
-এখন কি সব ম্যালা কাজ? ব্যাক লগ?
-ও রকমই কিছু। আসলে আজ হানিপট কটেজে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তার। ওই বাড়িতে ওরা চারজন যাক আজ। যে দায়িত্ব সে কাঁধে তুলে নিয়েছিল তারই সুষ্ঠু সম্পাদনায় সত্যিই এখন হালকা লাগছে নিজেকে। জেসিকে খুঁজে পাওয়া থেকে যতসব কান্ড হলো সেসব ভেবে। বলে Ñ আর একদিন আসবো।
-অবশ্যই আর একদিন আসবে। এই ভাবে আজ চলে যাচ্ছো তুমি।
মেরীর কর্তা ব্যক্তিকে প্রসন্ন করবার মত ব্যাপার নয়। ক্রিসের ও পছন্দ টম। এমন এক একজন থাকে যাদের পছন্দ না করে উপায় থাকে না। টম তেমনই একজন।
-খুব তাড়াতাড়ি তুমি আসবে এমনই আশা করছি।
-খুব তাড়াতাড়ি। শিষে এক পরিচিত সুর তুলে ধাবমান গাড়িতে অদৃশ্য টম।
সেই ধাবমান দৃশ্যের দিকে ওরা দুজন একটু তাকিয়ে থাকে। তারপর? ঠিক প্রথম দিনের মত দুজনে বাড়িতে প্রবেশ করে।
যে বিস্ময় অপেক্ষা করছে রান্নাঘরের কাবার্ডে, টাইলসে, র্যাকে আর সিংকে, মেশিনে এবং আরো নানা পরিবর্তনে সেদিকে তাকিয়ে মুর্ছাহতের মত মাটিতে বসে পড়ে মেরী। -এসব কখন করলে তুমি?
এমনি অস্ফুট ধ্বনি তুলে। এত বড় বিস্ময় মেরীর ভাগ্যে অপেক্ষা করছিল? কোন এক ক্রিসমাসে চায়নার ডিনার সার্ভিস নয় যা সে একবারই পেয়েছিল, কিংবা বালিশের নিচে লুকিয়ে রাখা কোন লেসের কাজ করা ফুল ফুল নাইটি নয়। কিম্বা নকল মোতির দুল বা ঝুটমুট ব্রেসলেট নয়। কি করে সম্ভব করলে? কি করে-
বলতে বলতে থেমে যায় মেরী। এ মারবেলার হলিডের চাইতেও বিস্ময়কর। মারবেলার কারণে-। মেরী মুখ তুলে দেখে ক্রিস তখনো উজ্জ্বল হয়ে প্রশান্ত ভাবে হাসছে। ঝুলন্ত কর্নের নিচে। বাতির আলো পড়েছে তার প্রশান্ত মুখের উপর। তার এই মুখে বিন্দুমাত্র সংশয় বা অস্বাচ্ছন্দ্য নেই।
হাত ছুঁয়ে প্রতিটি জিনিষ পরখ করে মেরী। মসৃন সিল্কের মত টাইলস। আইভরি কাবার্ড। সাদা আর জলপাই রংএর দেযালে নানা সব শেল্ফ, কাবার্ড। ফ্রিজের গায়ে হ্রদয় আকৃতির নকশা। সবুজ চারাগাছ মাথা দুলিয়ে মেরীকে স্বাগতম জানাতে ব্যস্ত।
স্ত্রীকে খুব কাছে টেনে হেসে বলে ক্রিস Ñ ওয়েলকাম হোম মেরী।
এরপর মেরী যদি উত্তাল হয়ে ঝরিয়ে দেয় তার সমস্ত মেঘ, পুঞ্জিভুত জলকনা যদি একটা নদী তৈরী করে কে দোষ দেবে তাকে? সে নিজে ভাসে, ক্রিসকে ভাসায়। কি একটা কথা বলতে এসে দরজা থেকে ফিরে যায় ওফেলি। মা বাবার এমন মিলনঘন দৃশ্যে সে থাকতে চায় না। জেসিকে কোলে করে এক পলক দেখেছিল জলপাই আর সাদার রং এ নতুন রান্নাঘর। কিন্তু পিকল আর জিনজারের চাইতে আর কিছুই এখন বেশি আশ্চর্যজনক নয়। তাই এ নিয়ে ভাবেনি তেমন। ফিরে গেছে ক্যামেলি বাড়তি ঘরখানিতে যেখানে জেসি মেয়েদের নিয়ে চুপ চাপ শুয়ে আছে।
এখন কেবল ক্রিস আর মেরী। এখন কেবল ভাবাবেগের নদীর স্রোত, এখন কেবল প্রেম আর প্রত্যয়।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments