হযরত ঈসা ইবনে মারিয়াম আ. ও নিদর্শন_মুহিব্বুল্লাহ কাফি

 বাড়ির পুব দিকে পরিবার থেকে একটু দূরে একটি নির্ভৃত জায়গা অন্বেষণে পা বাড়ালেন মারিয়াম . জনশূন্য একস্থানে নিজকে নিরালা করলেন। পর্দা নিলেন সবার থেকে। এবার প্রয়োজন পুরা করার পালা। আকস্মিক বেষ্টনীর ভেতরে সুঠাম দেহী-সুডৌল এক পুরুষের অস্তিত্ব আঁচ পেয়ে আঁতকে ওঠেন মারিয়াম . নিজেকে গুছিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, তুমি যদি মুত্তাকী হও তাহলে আমি পরম করুণাময়ের কাছে তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আঁতকে ওঠা মারিয়াম .কে বরাভয় দিয়ে সহসা আগন্তুক নরম ভাষায় বললেন, আমি তোমার প্রভুর বাণীবাহক, একজন দূত মাত্র। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমায় দেব চক্ষু শীতল, নিখুঁত এক ছেলেসন্তান।
 
মারিয়াম . যেন আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি প্রস্তুত ছিলেন না এমন আজগুবি-আশ্চর্যকথা শোনার জন্যে। - কি সম্ভব! আশ্চর্যরকম এক ভীতিকর বাতাস খেলে গেল তাঁর মুখাবয়বে। মারিয়ার আগন্তুককে নিরাশ করার সুরে বললেন, আমাকে আজ-অবধি কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। এবং আমি অসতীও নই। তাহলে কীভাবে আমার ছেলেসন্তান হবে!? আগন্তুক আশ্বস্ত সুরে বললেন, এমনিভাবেই!
  তোমার খোদা বলেছেন, এটি আমার জন্য অতি সহজসাধ্য একটি কাজ। এবং ওই ছেলেসন্তান মানুষের জন্য হবে এক আশ্চর্যকর নিদর্শন।
 
অতঃপর আগন্তুকের ফুঁতে পোয়াতি হলেন মারিয়াম . তৎসহ তিনি দূরের এক নিরালা স্থানে সরে গেলেন। প্রসববেদনা তাঁকে খেজুরে ঝুঁকে থাকা খেজুরগাছের নিম্নদেশে বসাল। নিজকে ধিক্কার করে বলতে লাগলেন, হায়! আমি - আগে যদি মরে যেতাম। আমার স্মৃতিচিহ্ন যদি মানুষের স্মৃতিবিভ্রম হতো!
তাঁর নিম্নদেশ (স্থান) থেকেই আওয়াজ আসতে লাগল, তুমি দুঃখ করো না। অবশ্যই তোমার আল্লাহ তোমার নিচ দিয়ে (স্থান) একটি পবিত্র জলধারা তৈরি করে রেখেছেন। আর খেজুরগাছের ডালটি টানো, সে তোমাকে তাজা-টাটকা খেজুর দেবে বা ডাল তোমার ওপর টাটকা তাজা খেজুর ফেলবে। তুমি তা খাও। তৃপ্তি হও চোখ জোড়াও (তাঁকে দেখে) আর তুমি যদি কোনো লোক দেখতে পাও তাহলে বলবে, আমি পরম করুণাময় আল্লাহপাকের জন্য রোজা রেখেছি। তাই আমি কারো সঙ্গে কথা বলব না। ( তখনকারদিনে কথা না বলাটাই রোজা ছিল।)
 
মারিয়াম . এক বনজাত সন্তানকে প্রসব করলেন। যখন তাঁকে কোলে করে নিজ কওমের নিকট গেলেন তখন কওমের লোকেরা মারিয়া . কে ধিক দিয়ে-তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে লাগল, হে মারিয়াম! তুমি নিশ্চয়ই কওমে এক ফাসাদ নিয়ে এসেছ। হে হারুনের বোন! (সম্মান কর সম্মোধন)  তোমার বাবা তো অসৎ ছিলেন না। তোমার মা তো পাপিষ্ঠা-অসতী না। (তাহলে তুমি কেন এমনটা করলে) তাদের কথার জবাব না দিয়ে নবজাতকের দিকে ইশারা করে বুঝালেন তোমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলো।
 
তারা নিরাশ কন্ঠে বলে বসলেন, আমার কীভাবে কোলের শিশুর সঙ্গে কথা বলব! (যে কি-না সদ্য ভূমিষ্ট)  তাদের চিৎপটাং করে দিয়ে কোলের শিশু হযরত ঈসা . বলে ওঠলেন, নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার বান্দা। তিনি আমাকে (ইঞ্জিল) কিতাব দিয়েছেন। এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন। ততক্ষণে লোকেরা নির্বাক। কিংকর্তব্যবিমূঢ়। নির্নিমেষ নেত্রে তাকিয়ে রইল। তিনি আরো বললেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন  আল্লাহ তাআলা আমাকে মঙ্গলম করেছেন এবং আমার ওপর হুকুম আরোপিত করেছেন, দুনিয়াতে যতদিন অবস্থান করি যেন নামাজ আদায় করি জাকাত দিই। এবং আমি যেন আমার মায়ের অনুগত হই। আর তিনি আমাকে দাম্ভিক-হতভাগ্য করেননি। আমার ওপর শান্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মারা যাব আর যেদিন পুনরুত্থিত হব জীবিত অবস্থায়।
 
এই নবজাতই হলেন ঈসা ইবনে মারিয়াম . এটাই সুস্পষ্ট বিবৃতি। সত্য বর্ণনা। যে সম্মন্ধে মানুষ বিতর্ক করে। দুনিয়াতে ফাসাদ সৃষ্টি করে।
কোরআন
 
বি.দ্র.: অনেকে মনে করেন,বিশেষত খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা, শুধু মনে করেন না! তারা এমন এক অসত্য-জঘন্য কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাসও করেন যে, হযরত ঈসা . আল্লাহর সন্তান হযরত মারিয়াম . আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার বিবি। নাউজুবিল্লাহ?!
 
অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সূরা ইখলাসে বলেছেন, হে নবী আপনি বলেদিন, আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। তিনি আরো বলেন, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমাদের সববাইকে সঠিক বোঝ দান করুন। আমিন।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.