আবদুর রাকিব’র প্রতি শ্রদ্ধা ।। আলি আসগার

আবদুর রকিবশ্বেত শুভ্র পাজামা পাঞ্জাবী, সাদা চুল দাড়ি সম্বনিত এক সৌম্য চেহারা। রজগ্রাম চারইবেতি বীরভূম প্রান্তিকএই দুই সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠনের প্রাণ পুরুষ। চরেইবেতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই মহতী মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। শামসুর রহমানের কবিতা বাংলাভাষা উচ্চারিত হলে তিনি যখন বিশ্লেষণ করছিলেন, তখন যেন নিকন উঠোনে ঝরে পরছিল রোদ, অন্ধ বাউলের একতারা বেজে উঠছিল উদার গৌরিক মাঠে, পুকুরে ভাসছিল কলস। চোখে ভেসে উঠছিল.. একুশের প্রথম প্রভাত ফেরি, অলৌকিক ভোর। তার সঙ্গে আলাপের আগেই তার সোনালী দিনের লেখা, চারণ কবি গুমাণী দেওয়ান গোগ্রাসে পড়ে ফেলেছি। গ্রাম বাংলার লোক গানের মরমী শিল্পী গুমনি দেওয়ান কে যে আবেগ মথিত হৃদয়ে তিনি চিত্রিত করেছেন, তার তুলনা নেই। জীবনে যদি তিনি আর কিছু নাই লিখতেন, তবু এই চারণ কবির গ্রন্থনায় তিনি অমর হয়ে থাকতেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোক সংস্কৃতি আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র এই গ্রন্থটি নির্বাচিত প্রকাশিত করে। ওই কেন্দ্রে সচিব প্রদীপ ঘোষ উচ্ছাসিত ভাষায় লেখকের চারণ কবির চরিত্র চিত্রণে ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই গ্রন্থ রচনায় আব্দুর রাকিব দিনের পর দিন কবিয়ালের বিভিন্ন কবিগানের আসরে উপস্থিত থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন। রাকিব সাহেবকে অনুরোধ করেছিলাম, গুমনী দেওয়ানের দ্বিতীয় পর্ব লেখার জন্য। কিন্তু তিনি আকালে চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। তার মত নিরহংকারী অমায়িক মানুষ খুব কম দেখেছি। এত বড়ো মাপের মানুষ,অথচ সাদাসিধে জীবন যাপন, সবার সঙ্গে দিল খোলা ব্যাবহার। মনে পড়ে, বীরভূম প্রান্তিক Rajgram চরেওবেতি ব্যবস্থাপনায় কবি নজরুলের জন্মভিটা চুরুলিয়া ভ্রমণে আমরা অংশ নিলাম। রাকিব সাহেব আমাদের সঙ্গী হলেন। আসানসোল নেমে নব নির্মিত কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করে বাসে করে আমরা চুরুলিয়া পৌঁছুলাম। কবির ভাইপো কাজী মাজহারুল ইসলাম আমাদের আমাদের স্বাগত জানালেন। অতিথি শালায় আমরা বিশ্রাম নিলাম। রাকিব সাহেব মাজহার সাহেবের সঙ্গে আলাপ জুড়ে দিলেন। বিকেলে আমরা রাকিব সাহেবকে নিয়ে নজরুল লাইব্রেরী, মসজিদ কবরস্থান পরিদর্শন করলাম। সন্ধ্যায় রাকিব সাহেবের সভাপতিত্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হল। সহযোগীতায় সুনীল সাগর দত্ত কুদ্দুস আলি। আবৃত্তি গান আলোচনায় অনুষ্ঠান প্রানবন্ত হয়ে উঠল। আমরা ছাড়াও স্থানীয় নজরুল প্রেমীরা অংশগ্রহণ করলেন। রাতে ক্লান্ত শরীরে আমরা বাড়ির পথে রওয়ানা দিলাম। এই যাত্রায় রাকিব সাহেব ছিলেন সবার বড় অথচ ক্লান্তি যেন তার শরীর স্পর্শ করে নি।
এই ক্লান্তি হীন সাহিত্যিক যদি কলকাতার আশপাশে থাকতেন, তাহলে তার সাহিত্য কিরণে অনেকে আলোকিত হতেন। কলম পত্রিকা একসময়ে তাকে আহ্বান করেছিল। কিন্তু শহুরে জটিলতা তার সহ্য করতে পারেন নি। ফিরে এসেছিলেন বীরভূমের ইদ্রাকপুর গ্রামে।
তার শেষ যাত্রায় কুদ্দুস, অভিলাষ, মন্টেন আমি উপস্থিত ছিলাম। অনেক কবি সাহিত্যিক ছিলেন। প্রচুর মানুষ জমায়েত হয়েছিল। তিনি আজ যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন। তাঁর সাহিত্য কীর্তি তাঁকে চিরকাল অমর করে রাখবে।
 
প্রাণী চিকিৎসক সাহিত্য পাঠক

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.