মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৃষ্টিতে নারী ও শিশু ।। অধ্যাপক এ. কে. এম. ইয়াকুব হোসাইন
মানুষের জীবনযাত্রাকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সাবলীলভাবে পরিচালানার উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন মহানবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট ওহির মাধ্যমে ইসলামি জীবনাদর্শ দান করেছেন।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ভাষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার কোনো প্রকার সংকীর্ণতা ইসলামে নেই। নারী ও শিশু সকল শ্রেণীর মানুষের জন্যেই ইসলামে রয়েছে কল্যাণ। শান্তি ও মুক্তির বাণী। শৈশবকাল মানব জীবনের মূল ভিত্তি এবং শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। ইসলামের ধারক ও বাহক মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের অধিকার, শিশুর জীবনের নিরাপত্তা বিধান ও বিকাশ, শিশুর মন, মস্তিষ্ক শরীর গঠনে এর প্রভাব ইসলামের দৃষ্টিতে চরিত্র গঠন ও শিক্ষা-দীক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর কল্যাণেই নারীজাতি সর্বপ্রথম পরিবার ও সমাজজীবনে তাদের যথাযোগ্য মর্যাদার আসন অধিকার করার সুযোগ পায়। ইসলামের মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর জীবনের অধিকার, কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক অধিকার, তাদের মর্যাদা রক্ষায় পর্দা ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও চূড়ান্ত দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা
অমুসলমানদের মধ্যে একটা ব্যাপক বিশ্বাস রয়েছে যে, ইসলামের বিধান অনুসারে সমাজে নারীর অধিকার, অবস্থান ও মর্যাদা গৌণ (ঝবপড়হফধৎু)। শুধু অমুসলমান কেন, অনেক মুসলমানও এই ধারণা পোষণ করে থাকে। এই বিশ্বাসের মূলে রয়েছে প্রধানত: তিনটি কারণ।
প্রথমত ইসলাম সম্পর্কে অমুসলমানদের পক্ষপাতদুষ্ট (ইরধংবফ) লেখনী, বিশেষ করে ইসলামের আবির্ভাব থেকে ঊনিশ শতক পর্যন্ত খ্রিস্টান পাদ্রীদের রচনাবলী। এই লেখকরা ইসলামে নারীদের অধস্তন অবস্থার কথা বলেই ক্ষান্ত হয়নি। তাঁরা তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে ইসলাম এবং নবি মুহাম্মদ সম্পর্কে নানা প্রকার অবমাননাকর অপপ্রচার চালিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ ইসলামকে গড়যধসসধফধহরংস বলা। কুরআন খোদার ঐশী বাণী নয়। ইসলাম প্রতিক্রিয়াশীল ধর্ম ইত্যাদি। এমনকি এই বিংশ শতাব্দীর পশ্চিমা প্রাচ্যবাদীরা (ঙৎরবহঃধষরংঃং) মনে করে যে, “ইসলাম একটি ঐতিহাসিক ঘটনা মাত্র, যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে একটা বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আবির্ভূত হয়েছিল। (মরিয়ম জামিল, পৃ. ২৮)
তৃতীয়ত, সমস্ত মুসলিম বিশ্বে মেয়েদের বঞ্চিত ও নির্যাতিত অথবা সমাজে তাঁদের অধস্তন অবস্থানের বাস্তবতা তুলে ধরে পশ্চিমা লেখকরা। যাঁরা সাধারণত অল্প দিনের জন্য মুসলিম দেশে পরিভ্রমণে আসেন, তাঁরা ইসলামকে ঙনলবপঃরাবষু না দেখে বা সামাজিক অবস্থার বিচার-বিশ্লেষণ না করেই বিশেষ দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্যাতিত মুসলিম মহিলাদের অধস্তন সামাজিক অবস্থানকে সমগ্র মুসলিম নারীর সামাজিক অবস্থান বলে লিখে থাকেন।
আল্লাহ্ এক এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ নবিÑ এ বিশ্বাসই ইসলামের মূল কথা। তাঁর উপর কুরআন নাজিল হয়েছে। তিনি ইসলামের প্রধান প্রচারক ও পূর্ণতা দানকারী। তাঁর সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে যে, নবি কখনও নিজের ইচ্ছা বা পুরুষত্বের ‘জিদ’ (ঊমড়) অনুসারে ভুল পথে চলেননি। বরং তিনি সর্বদা আল্লাহ্র নিকট হতে অনুপ্রেরণা ও নির্দেশ পেয়ে সেভাবেই সঠিক পথে পরিচালিত হয়েছেন। (সুরা ৫৩ নাজম : ২-৪) নারীর প্রতি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটা তুলে ধরা যায়। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
২. বিশ্বাসীদের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে উৎকৃষ্ট, যার চরিত্র ভালো এবং তোমাদের মধ্যে তারাই সর্বোৎকৃষ্ট যারা তোমাদের স্ত্রীদের কাছে উৎকৃষ্ট।
৩. নারীরা হলো পুরুষদের একান্ত সাথী। (নাসায়ী)
ইসলামের মর্ম কথা হলো ন্যায়বিচার এবং খোদাভীতি বা ‘তাকওয়া’। ইসলাম একটি ধর্ম মাত্র নয়, এটা একটি সামাজিক শৃঙ্খলার নাম, যা মানব অস্তিত্বকে সর্বক্ষেত্রে কার্যকরী রাখে। (এ. ঐ. ঔবংবহ, চ. ১৭) সমাজে যেটা অন্যায় সেটাই অনৈসলামিক। সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাই ইসলামের লক্ষ্য। কুরআনে বলা হয়েছে, “তারাই আদর্শ মানুষ যারা ভালো কাজের নির্দেশ দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে।”
ইসলামে নারীর অধিকার
গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে মৌলিক যে অধিকারটি সেটি হলো বেঁচে থাকার অধিকার। এ অধিকারটি নিশ্চিত হলেই কেবল একজন নারী বা পুরুষ তার জন্য বরাদ্দ অন্যান্য অধিকার উপভোগ করতে সক্ষম হবে। পূর্বের আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাক্-ইসলাম যুগে অনেক জায়গায় কন্যা শিশুকে হত্যা করা হতো বা মাটি পুঁতে ফেলা হতো। ইসলাম মেয়ে শিশু হত্যার এই প্রথাকে প্রচণ্ডভাবে নিন্দা করেছে। কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের শিশু-সন্তানদেরকে হত্যা করো না।” (সুরা ১৭ বনি ইসরাইল : ৩৯) আরও বলা হয়েছে, “তোমরা যখন মেয়ে শিশুটিকে জীবন্ত প্রোথিত করো, শিশুটি প্রশ্ন করবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হলো? বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যদি একটি পরিবারে একের পর এক মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং পিতা-মাতা যদি মেয়েদের যত্ন ও স্নেহের সঙ্গে প্রতিপালন করে তবে মেয়েরা তাদের পিতামাতাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবে (আহমদ পৃ. ৮৮)। তিনি আরও ইরশাদ করেন, “যদি কোনো ব্যক্তি তার দু’টি কন্যাকে সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করে, তা হলে সে এবং আমি কিয়ামতে এমনভাবে আগমন করবো যেমন আমার দু’টি আঙ্গুল একত্র আছে। (মুসলিম)
নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় পর্দা
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে পর্দায় থাকতে বলেছেন। পর্দার অর্থ অবরোধ নয়। পর্দা মানে এই নয় যে, অবরোধ সৃষ্টি করে নারীকে কেবল মাত্র গৃহের চার দেয়ালের মধ্যে রাখা। ইসলামে পর্দার অর্থ নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করে সম্মান-সম্ভ্রম নিয়ে আপন আপন কর্মক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ থাকা। পরপুরুষের সংস্পর্শ থেকে নারী এবং পরনারীর সংস্পর্শ থেকে পুরুষ দূরে থাকবে। পর্দা সম্পর্কে কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে:
হযরত উমর (রা) হযরত শিফা (রা) নামে এক মহিলা সাহাবিকে বাজার ব্যবস্থাপনার কতিপয় দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। পুরোপুরি পর্দা মেনে চলেও তাঁরা তাঁদের এ দায়িত্ব সুষ্ঠভাবে পালন করেছিলেন। (ঝধৎধয ঝযবৎরভভ ঢ়. ১২)
পাশ্চাত্য নারীকে পুরুষ সাজিয়ে পুরুষরূপী মর্যাদা দিয়ে সমাজে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ইসলাম নারীকে তার প্রকৃতিগত স্থানে রেখে সামাজিক মর্যাদা, অর্থনৈতিক মুক্তি ও নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। কারণ নারীকে পুরুষ ও প্রকৃতিতে সাজানো যেমন সম্ভব নয়, তেমনি প্রযোজ্যও নয়। নারীর সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সর্বোত্তম বিধান ইসলামই দিয়েছে।
কাজেই দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে, একমাত্র নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামি সমাজব্যবস্থা এবং ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থায়ই নারী মুক্তি তথা বিশ্বমনাবতার মুক্তি সম্ভব।
পৃথিবীতে ‘নারী মুক্তির’ নামে নারীকে যেভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত করা হচ্ছে, তাতে নারীরাও এখন মুক্তির তিক্ত স্বাদে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নারী মুক্তির গননবিদারী শ্লোগান উচ্চারিত হয়ে আসলেও আজ নারী যেভাবে পুরুষের হাতের খেলনার বস্তুতে পরিণত হয়েছে, তাতে স্পষ্ট করেই বলা যায় যে, সুচতুর পুরুষ নারীর সস্তা আবেগের সুযোগ নিয়ে প্রকারান্তরে বাইরেও তাকে নিজের স্বার্থেই নির্বিচার যথেচ্ছাচার
ব্যবহার করছে।
প্রগতির নামে আধুনিক সমাজের যে বেগতি অর্থাৎ উলঙ্গপনা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতার গড্ডালিকা প্রবাহে যুবসমাজ যেভাবে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে সেক্ষেত্রে ইসলামের পর্দা প্রথাই এ সমাজের একমাত্র রক্ষাকবচ।
আবহমানকাল থেকে দেখা গেছে যে, পুরুষরা হাজার রকমের চক্রান্ত করে নারীদেরকে ঘর থেকে বের করে এনে কামনা চরিতার্থ করার প্রয়াস পেয়ে আসছে। দুনিয়ার সব সমাজের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, “নারীদের সতীত্ব সম্পদের উপর পুরুষ আক্রমণকারীর ভূমিকা নিয়ে থাকে আর নারীরা আত্মরক্ষার সংগ্রাম চালায়।”
ইসলামে শিশুর অধিকার
সন্তানেরা মনে হয় যেন আমাদের মাঝে,
দমকা হাওয়াও বয়ে যায় যদি কোনও সাঁঝে,
Ñ একটি প্রাচীন আরবি কবিতা।
ইসলাম যে শিশুর জন্ম মুহূর্ত থেকেই তার অধিকারসমূহ চিহ্নিত করে ক্ষান্ত হয়েছে তা নয়, বরং জন্মের পূর্ব থেকেই তার অধিকারসমূহ নির্ধারিত করে দিয়েছে। ইসলামে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৃষ্টিতে শৈশব হচ্ছে সৌন্দর্য, আনন্দ, স্বপ্ন, সৌভাগ্য ও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ এক চমৎকার জগৎ। কুরআনে বিধৃত শৈশব সম্পর্কিত সমস্ত আলোচনাই ভালোবাসা ও মহত্ত্বে পরিপূর্ণ। আল্লাহ্ নিজেই শৈশবের নামে শপথ করেছেন এভাবে:
ওহে যাকারিয়া! আমি তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছি এক পুত্র সন্তানের, যার নাম হবে য়াহ্য়া। ইতিপূর্বে আর কাউকেও এই নামধারী করিনি। (সুরা মারয়াম : ৭)
প্রভু হে! আমাদের স্ত্রীদের এবং সন্তানদের আমাদের জন্য নয়ন জুড়ানো করে দিন। (সুরা আল ফুরকান : ৭৪)
সম্পদ ও পুত্রসন্তান হচ্ছে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য বিশেষ। (সুরা কাহাফ :৪৬)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই এ ঘোষণা দিচ্ছেনÑ
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আলোকদীপ্ত অন্তর জুড়ে ছিল শিশুদের প্রবল ভালোবাসা। একদা তিনি ভাষণ দানের নিমিত্ত মিম্বরে আরোহণ করলেন। দেখতে পেলেন যে হাসান ও হুসাইন দৌড়াদৌড়ি করছে আর পা পিছলে পড়ে যাচ্ছে। তা দেখে তিনি ভাষণ দান বন্ধ করলেন আর নেমে পড়লেন মিম্বর থেকে। শিশু দু’টির দিকে অগ্রসর হয়ে এদেরকে দু’বাহুতে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর মিম্বরে আরোহণ করে বললেন:
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন নামাজ আদায় করছিলেন। তখন হাসান ও হুসাইন এসে তাঁকে সিজদারত অবস্থায় পেয়ে একেবারে পিঠে চড়ে বসলো। তিনি সিজদা দীর্ঘায়িত করলেন। আর তারা তাঁর পিঠ থেকে না নামা পর্যন্ত তিনিও তাদেরকে নামিয়ে দিলেন না। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম ফেরালেন পরে সাহাবিরা তাঁর নিকট প্রশ্ন করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল। আপনি দেখি সিজদাকে বেশ দীর্ঘায়িত করেছেন।” তখন তিনি জবাব দিলেন “আমার সন্তানদ্বয় (নাতি) আমাকে সওয়ারী বানিয়েছে। তাই তাদেরকে তাড়াতাড়ি নমিয়ে দেয়াটা আমার পছন্দ হয়নি। তিনি কখনও শিশুদের ক্রন্দন শুনতে পেলে নামাজকে সংক্ষিপ্ত করে দিতেন এবং বলতেন, “আমি চাই না যে, তার মায়ের কষ্ট হোক।” একদা সকালে তিনি হযরত ফাতিমার গৃহপার্শ্ব দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলেন। তখন তাঁর কানে এলো হুসাইনের ক্রন্দন ধ্বনি। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অপছন্দ হলো তা। তিনি ফাতিমাকে উদ্দেশ্য করে তিরস্কারের সুরে বললেন, “তুমি কি জানো না যে, তার ক্রন্দন আমার মনে ব্যথা দেয়?”
চুমু দেইনি।”
Ñ আমি মানুষকে (স্বামী-স্ত্রীর) মিলিত শুক্র থেকে সৃষ্টি করেছি। (সুরা দাহর : ২)
রুম : ২১)
- নিজেদের বীর্যের জন্য (ভালো মেয়ে) বেছে নাও। কেনোনা বাপ-দাদার অভ্যাস পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়।
- ময়লার স্তূপে উৎপন্ন সবজি থেকে দূরে থাক।
- তোমাদের কাছে দ্বিনদার পাত্রের প্রস্তাব এলে তার সাথে নিজেদের মেয়েদের
বিয়ে দাও।
- অনাত্মীয় পরিবারে বিয়ে করো এবং ক্ষীণ ও কৃশ নারী বিয়ে করো না।
ইসলামি সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে এর ভিত্তিমূলে প্রোথিত ইটকে যথাস্থানে স্থাপন করে দেয়া। বিবাহ হচ্ছে পরিবার গঠনের এক নতুন পর্যায় বিশেষ, আর এ পর্যায়ের ইট গ্রন্থনে ইসলামের বিশেষ গুরুত্বারোপ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার অর্থ হচ্ছে, এর উপরে প্রতিষ্ঠিত জীবনকে স্থিতিশীল, সুখী, সমৃদ্ধশালী এবং সুষ্ঠুভাবে গঠন ও সুস্থরূপে
প্রতিষ্ঠা করা।
শিশু হলো মাতা আর পিতার এক উষ্ণ মিলনের ফল। পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব দু’টি মহৎ অর্থ বিশেষ, যাদের মধ্যে আল্লাহ গচ্ছিত রেখেছেন তাঁর করুণা ও ভালোবাসার কিছু নিদর্শন, তাদের উপর বর্ষণ করেছেন আপন দয়া ও কল্যাণের বারিধারা, যদ্দরুণ তারা প্রাপ্ত হয় পারস্পরিক সুস্পর্ক ধারাবাহিকতার অনুভূতি। মহান আল্লাহ বলেন:
ইসলাম সন্তানদেরকে চোখ জুড়নো সম্পদ বলে বিবেচনা করে থাকে। আল্লাহর রাসুল একবার এমন এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন, যার ছিল দু’জন ছেলে। সে ব্যক্তিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি উভয়ের মাঝে সমতা বিধান করলে না কেনো? জনৈক মনীষী বলেছেন: ইসলাম শিশুদের মধ্যে সমতা বিধান করার নির্দেশ দেয়, এমন কি আদর-স্নেহ এবং চুমোর ব্যাপারেও।
ইসলাম ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য বিধানের অনুমতি দেয় না। তবে শুধুমাত্র যদি তাদের মধ্যে বিশেষ কোনো গুণ থাকে তা হলে তার ভিত্তিতেই এরূপ করা যেতে পারে। আল্লাহ ইরশাদ করেন :
- তোমাদের সন্তানদের মধ্যে মেয়েরাই উত্তম।
- কন্যা হলো সুগন্ধি ফুল। আমি তার গন্ধ নিই আর তার রিযিক তো আল্লাহর হাতে।
- তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম- যার প্রথম সন্তান মেয়ে।
- যে ব্যক্তি একটি কন্যাসন্তানের ভরণ-পোষণ করেছে তার বেহেশত নির্ধারিত
হয়ে গেছে।
- কোনো ব্যক্তি বাজারে গেল, একটি উপহার কিনে তা বহন করে নিজের সন্তানদের জন্য নিয়ে এল। তার এ কাজ দুর্ভিক্ষপীড়িত লোকদের জন্য দান-খয়রাত বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো মর্যাদাপূর্ণ। ছেলে সন্তানের পূর্বে মেয়েদের উপহার দিবে।
শিশু-জীবনের নিরাপত্তা ও বিকাশ
আল্লাহ ইরশাদ করেন:
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগে জীবন্ত শিশু হত্যার মতো জঘন্য প্রথা প্রচলিত ছিল। আরবদের এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের পিছনে দু’টি কারণ ছিল ১. কোনো কোনো আরব গোত্রের এই নিয়ম প্রচলিত ছিল যে, কন্যাসন্তান জন্ম হবার সাথে সাথেই কবর দিয়ে দিত। এই কারণে যে আশু খরচ দারিদ্র্য ও পরবর্তীতে বড় হলে বিবাহে প্রচুর ব্যয় ২. কোনো কোনো দুর্বল গোত্র সবল গোত্র কর্তৃক পরাজিত হয়ে লুণ্ঠিত হবার ভয়ে নিজ নিজ কন্যা সন্তানদের ভবিষ্যৎ অপমানের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জীবন্ত কবর দিয়ে হত্যা করতো।
আরব সমাজের এইরূপ বীভৎস কাজ জীবন্ত মানুষ শিশু হত্যায় মানবতার মহানবি আর স্থির থাকতে পারলেন না। তিনি মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, “সন্তান ভূমিষ্ঠকারিণী (গর্ভপাত) ও জীবন্ত কবর দাতা উভয় জাহান্নামে যাইবে।” এই ব্যাপারেও পবিত্র কুরআনে বর্ণনা আছে:
- শক্তিশালী মু’মিন দুর্বল মু’মিনের চেয়ে ভালো এবং আল্লাহ্র কাছে বেশি প্রিয়।
- ক্ষতি করো না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
- কিয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে প্রথম যে নিয়ামতের হিসাব চাওয়া হবে তা হচ্ছেÑ তাকে বলা হবে আমি কি তোমার শরীর সুস্থ রাখিনি?
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রার্থনার মধ্যে শারীরিক সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করাই ছিল তাঁর অধিক প্রিয়।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৃষ্টিতে শিশুর প্রশিক্ষণ
শিশুরা হচ্ছে জীবনের কিশলয়, আশার ফসল, মানবতার ভবিষ্যত যার উপর নির্ভরশীল, সত্যিকার প্রভাতের উদয় এবং উম্মাহর কীর্তিমান মর্যাদার শাসনকে সংরক্ষিত রাখার একটি মাধ্যম।
তাই ইসলাম এদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে গুরুত্ব দানের উপদেশ দিয়েছে, যাতে করে এদের মাধ্যমে সমাজ হয়ে ওঠে সৌভাগ্যশালী আর এরাও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সমাজের সাহায্যকারীরূপে।
ইসলাম ব্যক্তি গঠনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে এ জন্য যে, এ হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও জাতি গঠনের সর্বপ্রথম উপাদান, এ হচ্ছে একটি মৌলিক ইউনিট যা একটি গতিশীল জাতির বৃহত্তর অঙ্গ ও কাঠামো গঠনে মৌলিক বস্তু হিসেবে কাজ করে।
শিশুর প্রকৃতি প্রদত্ত ও অনুশীলনলব্ধ যোগ্যতা
কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :
আল-কুরআনে এমন কিছু উক্তি রয়েছে, যা একটি শিশু ও তার পরবর্তী ভাইবোনের জন্মের মধ্যে একটি সময়ের ব্যবধানকে অবশ্যম্ভাবী করে দেয়। এতে দু’টি সন্তান জন্মদানের মধ্যকার ব্যবধানের মূলে রয়েছে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষা। আল্লাহ্ ইরশাদ করেন:
কাফ : ১৫)
ইসলাম সকল প্রকার ছোঁয়াচে রোগ থেকে সতর্ক করে দিয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কলেরা ইত্যাদি জাতীয় মহামারী দেখা দেয়ার সময়ে সে অঞ্চল থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেন এ বলে যে, কলেরা জাতীয় মহামারী হচ্ছে আল্লাহ্র গযবেরই একটি নিদর্শন বিশেষ। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: প্লেগ মহামারী হচ্ছে আযাবের নিদর্শন। মহান আল্লাহ্ এর মাধ্যমে তার একদল বান্দার পরীক্ষা করেন। কোথাও এর প্রাদুর্ভাব হলে সেখানে যেয়ো না। আর তোমাদের এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব হলে সেখান থেকে পালিও না।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: প্রতিটি শিশু ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করে।
- শিশুর স্নেহ করো এবং তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন কর। তোমরা তাদের সাথে কোনো ওয়াদা করলে তা পূরণ করো। কেননা তাদের দৃষ্টিতে তোমরাই তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করছ।
- তোমরা সন্তানদের প্রতি সর্বদা দৃষ্টি রাখো।
- তোমরা নিজেদের সন্তানদের স্নেহ করো এবং তাদের ভালো ব্যবহার শেখাও।
- সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেয়া দান-খয়রাতের চেয়েও উত্তম।
ছেড়ে দাও।
- শরি’আত যাকে শিষ্টাচার শেখাতে পারেনি, আল্লাহও তাকে শিষ্টাচার শেখান না।
- ইসলাম আমাদের সন্তানদের জন্য স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রশিক্ষণের আহ্বান জানায়।
- সুসন্তান সুস্থ ও নির্মল পরিবেশের ফল।
ইসলাম ও শিশু শিক্ষা
আল্লাহ্ কুরআনে ইরশাদ করেন :
আলাক : ১৫)
জন্য সৃষ্ট।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
নারীর অধিকার, মর্যাদা ও সম্মান প্রতিষ্ঠায় মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কত সচেতন ও সহানুভূতিশীল ছিলেন, তার কিছু উদাহরণ পূর্বেই দেয়া হয়েছে। চৌদ্দশত বছর পূর্বের সামাজিক কাঠামোতে যদি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের অধিকার মর্যাদা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম হয়ে থাকেন, তবে বিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে এই প্রগতিশীল সমাজে সেটা কেন সম্ভব হবে না।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
#ধর্ম
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#Molakat
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#অধ্যাপক_এ_কে_এম_ইয়াকুব হোসাইন
No comments