কবি আরিফ মঈনুদ্দীনের কাব্য ‘একজন রোহিঙ্গার স্বগতোক্তি’ ।। মাইন সরকার

 
আরিফ মঈনুদ্দীনের কবিতা প্রসঙ্গে সব্যসাচী লেখক প্রত্যয় জসীম বলেন - "আরিফ মঈনুদ্দীন এর কবিতায় বহুমান এক বিষয় স্থান পেলেও মূল বিষয় হিসেবে মানুষ, প্রকৃতি, প্রেম, প্রতিবাদ, দ্রোহ, সামষ্টিক মুক্তি।
সাম্যবাদ মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এসব অঙ্গীকৃত। বাংলা কবিতায় এক ভিন্ন যাত্রাপথ। যাত্রাপথের সাহসী সারথী কবি আরিফ মঈনুদ্দীন।"
 
আরিফ মঈনুদ্দীন কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেন, "কবিতা প্রেম এবং অপ্রেমের অভিশাপের কথাও বলে। ভালোবাসার যেমন জয় আছে, আছে ফুলেল শুভেচ্ছা। ভালোবাসাহীনতায় আছে যুদ্ধবিগ্রহ অশান্তি, আছে বারুদের অভিশাপ।"
 
যুদ্ধ কখনো শান্তি আনতে পারে না, বৌদ্ধ প্রধান মিয়ানমারে দীর্ঘকালীন সময় ধরেই যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলমান রোহিঙ্গারা। তাদের মধ্যে প্রাণের ভয়ে প্রায় ১১ লক্ষ্য রিফিউজি আমাদের দেশে প্রবেশ করেছিলো, আর তা দেখে মানুষ হিসেবে আমরা চুপ থাকতে পারিনি। চুপ থাকাটা মানবতা বিরোধী কাজ, আর সব থেকে বড় ব্যাপার হলো এই রোহিঙ্গাদের সাথে আমাদের রয়েছে সহস্র বছরের বন্ধন ঐতিহ্য আর এই বন্ধন বহুমাত্রিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক পারিবারিক।
 
শুধু হত্যা জখম বা নির্যাতনই নয় মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা নারীদের সাথে চলছিলো ধর্ষণের মতো অপরাধও।
অস্ত্রের মুখে তারা তরুণীদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে যেতো। এরপর আর কোনো খবর পাওয়া যেতো না তাদের। বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা নারীরা বলে ছিলেন আমরা এখানে ক্ষুধার্ত অবস্থায় থাকলেও অন্তত রাতের বেলায় নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারছি। কোনো অসহায় মেয়ের আর্তচিৎকার কিংবা সেনাদের বুনো উল্লাসের শব্দ শুনতে পাই না।
 
আরিফ মঈনুদ্দীনের "একজন রোহিঙ্গার স্বগতোক্তি " কবিতার বইটির সূচিপত্রে রয়েছে--
একজন রোহিঙ্গার স্বগতোক্তি, একমাত্র মৃত্যুই আমার অব্যক্ত অস্ত্র, আমার মৃত্যু বিশাল এক ভূখণ্ড সমান্য, আমার কৃতজ্ঞতা, মানবিক বাংলাদেশ।
 
একজন রোহিঙ্গার স্বগতোক্তি কবিতায় কবি বলেছেন --
 
"এখানে আমার জন্যে কেউ নেই
এখানে আমার বাবার জন্যে কেউ নেই
এখানে আমার মায়ের জন্যে কেউ নেই
এখানে আমার ভাই- বোনের জন্যে কেউ নেই।
এখানে আমার সন্তানের জন্যে কেউ নেই,
আমাদের জন্যে আছে শুধু বুলেট বোমা,
চাপাতি, খঞ্জর আর তীক্ষ্ণ তলোয়ার।"
 
উপরিউক্ত এই লাইনগুলো আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি, এখানে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কিছু নেই। আরো বলা হয়েছে --
 
"ধর্ষণ - তা যদি হয় সন্তানের সম্মুখে মাকে।
ধর্ষণ - তা যদি হয় বাবার সামনে আদরের কন্যাকে।
ধর্ষণ - তা যদি হয় ভাইয়ের সামনে বোনকে।
ধর্ষণ - তা যদি হয় স্বামীর সামনে স্ত্রীকে।
ধর্ষণ - তা যদি হয় বাবা মায়ের সামনে পাঁচ বছরের শিশু সন্তানকে।"
তোমরা ইহাকে কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করবে?
 
একমাত্র মৃত্যুই আমার অব্যর্থ অস্ত্র কবিতাটিতে বলা হয়েছে,
 
"আমার সহ্যের সীমা ভেঙ্গে চুরমার আমার হাতে এখন একমাত্র অব্যক্ত অস্ত্রটির হলো মহামহিম
মৃত্যু। এছাড়া আমি আর কি নিয়ে কী দিয়ে বন্ধ করবো বাঁধভাঙা বেদনার স্রোত। "
 
এই লাইনগুলোর ভেতর উঠে এসেছে আর্তচিৎকার বাঁধ ভাঙা বেদনার ঢল।
শান্তিতে নোবেল জয়ী সুচির দেশে মানবতা যেভাবে কলঙ্কিত হয়েছে, সেখানে কুটনৈতিকরা
শুধু আলোচনা করতে পারে তখন পুরো বিশ্বও
অসহায় লজ্জিত হয়ে উঠে।
 
কবি আরিফ মঈনুদ্দীনের -- একজন রোহিঙ্গার
স্বগতোক্তি প্রকৃতপক্ষে বর্ণনামূলক কবিতার বই
যার যার ভেতর দিয়ে সময়ের কালো চেহারা
চিত্রায়ন করেছেন কবি, একজন রোহিঙ্গার স্বগতোক্তি বইটি প্রকাশ করেছেন বিশ্বসাহিত্য ভবন, বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মাসুম রহমান।
বইটিতে উৎসর্গ করা হয়েছে "বিশ্বের সকল নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষদের " আরিফ মঈনুদ্দীনের এই কবিতা সময়ের প্রতিবাদের পুরাণ হয়ে বেঁচে থাকুক এই প্রত্যাশা।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

#গ্রন্থালোচনা
#বইআলোচনা
#বইপত্র
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#Molakat
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#আরিফ_মঈনুদ্দীন
#মাইন_সরকার

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.