আনোয়ারা_মোহাম্মদ নজিবর রহমান : অষ্টম পরিচ্ছেদ

 

নুরুল এস্লামের চিকিৎসায় আল্লার ফজলে আনোয়ারার জ্বর বন্ধ হইয়াছে, শিরঃপীড়া আরোগ্য হইয়াছে, সে এখন স্বেচ্ছায় উঠা-বসা চলা-ফেরা করিতে পারে; তথাপি নুরুল এস্লামের ব্যবস্থানুসারে শরীরের বলধারণের জন্য এখনও সে নিয়মিতরূপে ঔষধ সেবন করিতেছে। হামিদা অহরহঃ তাহার কাছে আসে, বসে, প্রাণ খুলিয়া কত কথা বলে; আনোয়ারা কিন্তু অল্প কথায় সইএর কথার উত্তর দেয়। তাহার স্বভাবসুলভ সরলতায় গাম্ভীর্য্য প্রবেশ করিয়াছে, যোগাভ্যস্তা তাপসবালার ন্যায় সে অধিকতর স্থিরা ধীরা ও সংযতভাষিণী হইয়া উঠিয়াছে, দূর ভবিষ্যৎ সুখ-দুঃখের চিন্তায় সে যেন সর্Ÿদা আত্মহারা হইয়া আছে; সে এক্ষণে কেবল নির্জনতা চায়, নির্জনে বসিয়া চিন্তা করিতে ভালবাসে। সুখের সংসারে চির-সোহাগে পালিতা অনূঢ়া কুমারী তাহার আবার নির্জ্জনচিন্তা কি? চিন্তাÑনৌকার সেই সুন্দর মুখখানি! সেই সুঠাম সুন্দর প্রশান্ত সৌম্য মৃর্ত্তি! সেই প্রেম-পীযূষবর্ষিণী অনাবিল করুণ দৃষ্টি! তেমন সুন্দর মুখ, তেমন প্রেম-মাখান-জ্যোতিজড়ান শান্তিপ্রদ মুখের চাহনী, সে এ পর্য্যন্ত কখন দেখে নাই; তাই নির্জনে দেখিয়া সাধ পূর্ণ করিতে চায়, তাই তাহার নির্জ্জনতার এত প্রয়োজন। যখন সে নৌকার কথা মনে করে, তখনি সেই মুখখানি তাহার চোখের সাম্নে ভাসিয়া উঠে; বালিকা তখন লজ্জায় অবনত-আঁখি হয়। তখন সে ভাবে, তাঁহাকে দেখিতে এত সাধ যায় কেন, আনন্দই বা হয় কেন? বালিকা ফাঁফরে পড়িয়া আবার ভাবে, ভালবাসিলে কি পাপ হয়? লাইলী, শিরিঁ, দময়ন্তী, সাবিত্রী, ইঁহারাও ত সতীকুলোত্তমা। বালিকা হর্ষোৎফুল্ল হইয়া আবার ভাবে, আহা কি সুন্দর কোরাণ পাঠ, কি মোহন উচ্চারণ! তেমন সুমধুর স্বরে কোরাণ পাঠ বুঝি আর শুনিতে পাইব না;-ভাবিতে ভাবিতে যুবকের পবিত্র মূর্ত্তি বালিকার মানসপটে প্রকট মূর্ত্তিতে প্রকাশিত হয়; মোনাজাতের বিশ্বজনীন মহত্ত্বে বালিকার ক্ষুদ্র হৃদয় ভরিয়া যায়। তখন সে যুবকের মোনাজাত-ভক্তিতে ভক্তি মিশাইয়া নির্জ্জনে চোখের জলে বুক ভাসাইতে থাকে, আর ভাবে-এমন জগৎ-মঙ্গল বিধায়ক, এমন ধর্ম্মভাবে পূর্ণ এমন উদারতার চরম অভিব্যক্তি মোনাজাত, কেবল ফেরেস্তাগণের মুখেই শোভা পায়, খোদার প্রতি এমন স্তুতি-ভক্তি কেবল ফেরেস্তারাই করিয়া থাকেন।
বালিকা কখন ভাবে, যিনি নিঃস্বার্থভাবে এ জীবন রক্ষা করিয়াছেন, তাঁহারই চরণতলে প্রাণ উৎসর্গ করিলাম; কিন্তু অযোগ্যা জ্ঞানে উপেক্ষা করিলে যে, মরমে মরিয়া যাইব। আবার ভাবে, উৎসর্গের বস্তু হেয় হইলেও ত কেহ ফেলিয়া দেয় না; কিন্তু ফেলিয়া না দিলেও যদি মনঃপূত না হয়, তবে দিয়া লাভ কি? না, না, উৎসর্গ করাই ত স্ত্রীলোকের ধর্ম্ম, লাভ চাহিব কেন?
ক্রমশঃ মন এইরূপে বালিকাকে স্বর্গীয় প্রেমের পথে টানিয়া লইয়া চলিল। একদিন জোহরের নামাজ বাদ আনোয়ারা শিশি হইতে একদাগ ঔষধ ঢালিয়া সেবন করিল। শিশির গায়ে লেবেলে লেখা আছে, “প্রাতে, মধ্যাহ্নে ও বৈকালে এক এক দাগ সেবনীয়।” লেখা দেখিয়া আনোয়ারা ভাবিতে লাগিল, ‘এ লেখা নিশ্চয়ই তাঁহার নিজ হাতের, না হইলে এমন সুন্দর লেখা আর কাহার হইবে? জগতে যাহা কিছু সুন্দর, তাহা তাঁহারই।’ আনোয়ারা আত্মহারা হইয়া, তখন সেই পবিত্র মূর্ত্তি ধ্যান করিতে লাগিল, হাতের শিশি হাতেই রহিয়া গেল। এই সময় একখানি কেতাব হাতে করিয়া হামিদা আসিয়া তাহার পার্শ্বে দাঁড়াইল। আনোয়ারার বহির্জগৎ তখন বিলুপ্ত, সে পার্শ্বে দণ্ডায়মানা হামিদাকে দেখিতে পাইল না। হামিদা পূর্ব্বেই রকম-সকমে বুঝিয়াছিল, সই ডাক্তার সাহেবের প্রতি অনুরাগিণী হইয়াছে। এক্ষণে তাহাকে আত্মহারা ভাবে দেখিয়া কহিল,- “সই, ঘরের ভিতরও কি নৌকা প্রবেশ করিয়াছে?” আনোয়ারার তখন চমক ভাঙ্গিল। সে হামিদাকে পাশে দেখিয়া লজ্জায় ম্রিয়মাণা হইয়া হৃদয়ের ভাব চাপা দেওয়ার জন্য কহিল,- “সই, হাতে ওখানা কি বই?” হামিদা হাসিয়া কহিল,- “বইয়ের কথা পরে কই, র্কা ভাবনা ভাব্ছ সই?” প্রেম-প্রফুল্ল আনোয়ারা তখন লজ্জা দূরে সরাইয়া উত্তর করিল,- “কতক্ষণে আস্বে সই, ধ্যান করছি বসে তাই।” হামিদা কহিল, “অনেকক্ষণ ত  এসেছি সই, তবে কেন সাড়া নেই?” আনোয়ারা দেখিল আর চাপিয়া গেলে চলিবে না, তাই সে সইএর নিকট দেলের কথা আভাসে জানাইল। হামিদা শুনিয়া কহিল,- “সই, অজ্ঞাতকুলশীল বিদেশী লোককে ভালবাসিলে কেন? তাঁহার সহিত তোমার বিবাহের সম্ভাবনা কোথায়?” দর্পণে হাই দিলে তাহা যেমন সজল ও মলিন হইয়া উঠে, হামিদার কথায় আনোয়ারার মুখের অবস্থা সেইরূপ হইল, তাহার ইন্দ্রীবর-নিন্দিত আয়ত-আঁখি অশ্রুভারাক্রান্ত হইয়া উঠিল, সে কোন উত্তর করিল না। হামিদা দেখিল, সই একবারে মজিয়া গিয়াছে, পুষ্পাঘাতও বুঝি আর সহ্য হইবে না; তাই তাহার ভাবান্তর উৎপাদনজন্য বইখানি হাতে দিয়া কহিল,- “এখানা তুমিই বাবাজানকে আনিতে দিয়াছিলে?” আনোয়ারা বই খুলিয়া দেখিল ‘ওমর-চরিত’; মুখে কহিল,- “হাঁ।”
অনন্তর হামিদা কহিল,- ‘সই, মানুষের মত যে মানুষ থাকে আগে তাহা জানিতাম না। তোমার ডাক্তার সাহেবকে তোমার সয়া মনে করিয়া সেদিন খিড়কীর দ্বার হইতে দৌড়িয়া বাড়ীতে আসি, মনে নানারূপ সন্দেহ হওয়ায় সঠিক খবর জানার নিমিত্ত ভোলার মাকে তখনই নৌকার কাছে পাঠাইয়া দিই। পোড়ারমুখী ফিরে আসিয়া বলিল, ‘নৌকার আরোহী বেলতার দুলামিঞা।’ কথা শুনে প্রাণ উড়িয়া গেল।” আনোয়ারা সইএর মুখে নিজের প্রিয়তমের সম্বন্ধে বিরুদ্ধকথা শুনিয়া এতক্ষণ আকাশ-পাতাল ভাবিয়া স্তব্ধনিশ্বাসে চুপ করিয়াছিল। সইএর এত কথার পর আর কথা না বলিলে সে অসন্তুষ্ট হইতে পারে; তাই পরিহাসচ্ছলে কহিল,- “সই উল্টা কথা কহিলে, স্বামীর আগমনসংবাদে উড়া প্রাণ ত আবাসে বসিবার কথা।”
হামিদা। “তা ঠিক, কিন্তু এবার তাঁর কলিকাতা যাইবার সময় ঝগড়া করিয়াছিলাম।”
আনো। (স্মিতমুখে) “লাইলীর সহিত মজনুর বিবাদ! কেন- কি লইয়া?” হামিদা বেপর্দায় বেড়ান লইয়া স্বামীর সহিত যে সকল কথা হইয়াছিল, খুলিয়া বলিল। আনোয়ারা শুনিয়া বলিল,- “জয় ত তোমারই, তবে ভয়ের কারণ কি?” হামিদা কহিল,- “আমি তোমার ডাক্তার সাহেবকে স্বামী মনে করিয়াছিলাম।” এই বলিয়া সে জিভ কাটিল। কিন্তু কথাটি সইকে বুঝাইয়া বলিতে হইবে বলিয়া কহিল,Ñ“তিনি যখন আমাকে তোমাদের খিড়কী-দ্বারে অনাবৃতমস্তকে তোমার সহিত কথা কহিতে দেখিলেন, তখন ভয় না হইয়া যায় না। বিশেষতঃ বেপর্দ্দায় বেড়াই না বলিয়া বিবাদের দিন তাঁহার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাইয়া দিয়াছি, এমতাবস্থায় বেপর্দ্দায় দেখিয়া তিনি নিশ্চয় আমাকে অবিশ্বাস করিবেন, তাই প্রাণ উড়িয়া গিয়াছিল।”
আনোয়ারা স্মিতমুখে কহিল,-“এদিকে বেপর্দ্দায় চলিয়া, ওদিকে চলি না বলিয়া স্বামীর মনে বিশ্বাস জন্মান কি প্রবঞ্চনা নয়?”
হামিদা। “যদি প্রবঞ্চনা হয়, তবে তুমিও এ প্রবঞ্চনার জন্য দায়ী।”
আনো। “উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে?”
হামি। “তোমাকে একদণ্ড না দেখিলে, তোমার সহিত কথা বলিতে না পারিলে, আমি যে থাক্তে পারি না। সেদিন ভোরে যখন তোমাকে তোমাদের বাড়ীতে পাইলাম না, তখন খুঁজিতে খুঁজিতে তোমাদের খিড়কীর ঘাটে উপস্থিত হই। তখন হইতেই এ অসুখ, এ অশান্তি।”
আনো। “এরূপ স্থলে তোমার প্রবঞ্চনা-পাপের অংশভাগিনী হইতে রাজী আছি, কিন্তু সই, বিধির বিধান সেরূপ নয়? তাহা হইলে দস্যু নিজাম আউলিয়া হইতে পারিতেন না।”
হামি। “নিজাম আউলিয়ার কথা কিরূপ?”
আনো। “তোমার পিতা একদিন আমাদিগকে উক্ত মহাত্মার বিবরণ শুনাইয়াছিলেন। নিজাম প্রথমে ভীষণ দস্যু ছিলেন, তাঁহার প্রতিজ্ঞা ছিল, রোজ একটি করিয়া খুন না করিয়া পানি স্পর্শ করিবেন না। একদিন তিনি শাহ ফরিদকে খুন করিতে উদ্যত হন, তাপসশ্রেষ্ঠ ফরিদ নিজামকে বলেন, ‘তুমি নরহত্যা করিয়া যাহাদের গ্রাসাচ্ছাদন সংগ্রহ করিয়া থাক, তাহাদিগকে একবার জিজ্ঞাসা করিয়া আইস, তাহারা তোমার এই মহাপাপের ভাগী হইবে কি না?” এমন কথা নিজাম জীবনে কখন শুনেন নাই। হঠাৎ তাঁহার ভাবান্তর উপস্থিত হইল, তিনি দ্রুতপদে পরিজনদিগকে যাইয়া ঐ কথা জিজ্ঞাসা করিলেন; তাহারা কহিল, ‘এক জনের পাপের জন্য অন্যের কি শাস্তি হয়?’ এই কথায় নিজামের তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হইল। অতঃপর তিনি সৎসঙ্গে থাকিয়া অশেষবিধ পুণ্যানুষ্ঠান দ্বারা ভীষণ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিতে লাগিলেন।”
হামি। “তবে সই, আমার এ প্রবঞ্চনা-পাপের প্রায়শ্চিত্ত কিরূপে হইবে?”
আনো। “তুমি সয়ার নিকট কোন কথা গোপন না করিয়া বা মিথ্যা না বলিয়া সব খুলিয়া বলিবে।”
হামি। “তাহাতেই কি আমার দোষের প্রায়শ্চিত্ত হইবে?”
আনো। “হাঁ, তাহাই যথেষ্ট।”
হামি। “তিনি যদি তাহাতেও সন্তুষ্ট না হইয়া আমাকে ঘৃণার চক্ষে দেখেন, বা আমার সহিত কথা না বলেন?” স্বামীর অবহেলা কল্পনা করিয়া মুগ্ধা হামিদার চক্ষু অশ্রুভারাক্রান্ত হইয়া উঠিল।
আনো। “তুমি ত এমন কিছু গুরুতর দোষ কর নাই-যাহাতে তিনি তোমাকে ঘৃণার চক্ষে দেখিতে পারেন বা তোমার সহিত কথা না বলিয়া থাকিতে পারেন। তথাপি তিনি যদি অবস্থা বুঝিয়াও ঐরূপ কোন ভাব প্রকাশ করেন, তাহা হইলে তুমি ধীরে ধীরে তাঁহার নিকট হইতে চলিয়া আসিবে। আর তাঁহার নিকটে যাইবে না, কথাও বলিবে না। কিন্তু দূরে থাকিয়া যতদূর পার তাঁহার স্নান-আহার সেবা-শুশ্রুষার ত্রুটি করিবে না।
এইরূপ করিলে সয়া যখন নির্জ্জনে বসিয়া তোমার অভাব মনে করিবেন, তখন বিবেক তাঁহাকে প্রবুদ্ধ করিবে। সামান্য কারণে নিদারুণ উপেক্ষার জন্য অনুতাপ আসিয়া তাঁহার হৃদয়ে কশাঘাত করিতে থাকিবে। তখন উল্টা পালা আরম্ভ হইবে।” এই বলিয়া আনোয়ারা হাসিতে লাগিল।
হামি। “লোকে কথায় বলে-‘কারো সর্ব্বনাশ, কারো মনে মনে হাস।’ সই তোমার দেখিতেছি তাই।”
আনো। “উল্টা পালার ফল মনে ভাবিয়া হাস্য সম্বরণ করিতে পারিতেছি না।”
হামি। “সই, উল্টাপালা কেমন?”
আনো। “অর্থাৎ তখন তোমার মান ভাঙ্গাইতে সয়ার যে আমার প্রাণান্ত উপস্থিত হইবে?”
হামি। “আমি মান চাই না। তিনি সরল মনে দাসীর সহিত কথা বলিলে হাতে স্বর্গ পাইব।”
আনো। “তর্কস্থলে ঘটনা যতদূর দাঁড়াইল, আসলে ততদূর গড়ান সম্ভব নয়। কারণ তোমার প্রবঞ্চনা ত হৃদয়ের নহে, বাহিরের ঘটনার জন্য। আর বেপর্দ্দাভাবও ত তেমন কিছু হয় নাই। প্রয়োজনবশতঃ আমরা অনেক সময় খিড়কীর দ্বারে আসিয়া থাকি। তবে তিনি (ডাক্তার সাহেব) যে আমাদিগকে কিছু অসাবধানভাবে হঠাৎ দেখে ফেলেছেন তাহাই দোয়ের কথা হইতেছে। যাহা হউক, সয়া যদি তোমাকে এ পর্য্যন্ত না চিনিয়া থাকেন, তবে তোমাদের উভয়েরই পোড়া কপাল বলিতে হইবে।”
হামিদা আনোয়ারার কথায় অনেকটা আশ্বস্ত হইয়া কহিল,- “সই, তোমার ত বিবাহ হয় নাই, তবে তুমি স্বামী স্ত্রীর সম্বন্ধে এত কথা কিরূপে জান?”
আনো। “দাদিমার মুখে গল্প শুনিযা, আর আমার মা ও মামানীদিগের ব্যবহার দেখিয়া।”
এই সময় আনোয়ারার দাদিমা তথায় উপস্থিত হওয়ায় তাহাদের কথোপকথনের স্রোত প্রতিহত হইল।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.