নারিকেল এবং ডাবের পুষ্টিমানের উপকারিতা ও অপকারিতা_ডা. মিজানুর মাওলা

 
নারিকেল একটি সুস্বাদু ফল। এর ইংরেজি নাম Coconut বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Cocos nucifera. নারিকেল বাংলাদেশের অন্যতম একটি অর্থকরী ফসল। কাঁচা অবস্থায় একে ডাব বলা হয় যার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু পুষ্টিগুণে ভরপুর। পাকার পর এটাকে ঝুনা নারিকেল বলা হয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই নারিকেল খাওয়ার প্রচলন আছে। বাংলাদেশের সর্বত্রই নারিকেল গাছ জন্মায়। তবে উপকূলীয় জেলাসমূহে বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর যশোর জেলায় নারিকেলের উৎপাদন বেশি হয়।
 
জেনে নিন ডাবের পানির উপকারিতা অপকারিতা!
ডাবের ভেতরের স্বচ্ছ সুপেয় পানি নিয়ে আমাদের কৌতুহলের শেষে নেই। আসুন জেনে নেই ডাবের কিছু উপকারিতা অপকারিতা।
 
ডাব নিয়মিত খেলে কিডনি রোগ হয় না। আবার কিডনি রোগ হলে ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ কিডনি অকার্যকর হলে শরীরের অতিরিক্ত পটাশিয়াম দেহ থেকে বের হয় না। ফলে ডাবের পানির পটাশিয়াম দেহের পটাশিয়াম একত্রে কিডনি হৃদপিণ্ড দুটোই অকার্যকর করে। অবস্থায় রোগীর মুত্যু অনিবার্য। তাই যাদের দেহে প্রচুর পটাশিয়াম আছে এবং বের হয় না তাদের ডাবের পানি পান করা ঠিক না৷ ডাবের পানি রোগীকে পান করানোর আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
 
দেহে ক্যালসিয়াম পটাশিয়ামের অভাব হলে এবং বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ হলে ডাক্তার ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেন।  ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘনঘন পাতলা পায়খানা বমি হলে দেহে প্রচুর পানি খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা যায়। ডাবের পানি এই ঘাটতি অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং কিডনি সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধ হয়৷ আয়রনও রয়েছে ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে। রক্ত তৈরি করার জন্য আয়রন হলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত তৈরি হলে প্রতিটি অঙ্গ হবে বেশি শক্তিশালী, ফলে কর্মশক্তিও বাড়বে। দেহে আয়রনের পরিমাণ ঠিক থাকলে ত্বক হবে উজ্জ্বল মসৃণ।
 
ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ফসফরাসের উপস্থিতিও উচ্চমাত্রায়। এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। অনেকের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। মাড়ি কালচে লাল হয়ে যায়। হাসি বা কথা বলার সময় তা দেখা যায়। অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেবে খনিজ লবণ। পাশাপাশি হাড় মজবুত থাকলে হাঁটাচলাও হয় আত্মবিশ্বাসী ধরনের।
 
এই গরমে ছোট-বড় সবারই দেহের অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে ত্বকে ফুটে ওঠে লালচে কালো ভাব। ডাবের পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে রাখে ঠান্ডা। তারুণ্য ধরে রাখতে এর অবদান অপরিহার্য। ডাবের পানি যেকোনো কোমল পানীয় থেকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ। কারণ, এটি সৌন্দর্যচর্চার প্রাকৃতিক মাধ্যম চর্বিবিহীন পানীয়। ডাবের পানি মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী
 
প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যায় ডাবের পানি পানে উপকার পাওয়া যায়। মুখে জলবসনন্তের দাগসহ বিভিন্ন ছোট ছোট দাগের জন্য সকাল বেলা ডাবের পানি দিলে দাগ মুছে এবং মুখের লাবণ্য উজ্জ্বলতা বাড়ে। গ্লুকোজ স্যালাইন হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়। ডাবের পানিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পুষ্টি না থাকলেও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই  উপকারী।
প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থ . গ্রাম, আমিষ . গ্রাম, শর্করা . গ্রাম, চর্বি . গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস .০১ মিলিগ্রাম, আয়রন . মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি -.১১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২ .০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি মিলিগ্রাম খাদ্যশক্তি ২৩ কিলোক্যালরি।
 
নারিকেলের জাত:
নারিকেলের অনেক স্থানীয় উচ্চফলনশীল জাত আছে। এসব জাতের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বারি নারিকলে- বারি নারিকেল- উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া স্থানীয় জাতের মধ্যে রয়েছে:
টিপিকা সবুজ, টিপিকা বাদামি দুধে প্রভৃতি। এসব জাতের ফলন তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
নারিকেলের পানি, নারিকেলের শাঁস, নারিকেলের দুধ নারিকেলের তেল পুষ্টিগুণে ভরপুর এক উৎকৃষ্ট খাবার। নারিকেলের শাঁসে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, প্রোটিন, ভিটামিন বি১,বি২, বি৩, বি৫, বি৬,বি৯, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিংক পর্যাপ্ত ক্যালরি।
 
পুষ্টিমান:
প্রতি ১০০ গ্রাম নারকেলে আছে ৩৫৪ ক্যালরী, ৩৩ গ্রাম ফ্যাট, ২০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩৫৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট . গ্রাম প্রোটিন আছে। এছাড়াও ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি- বি-১২ আছে।
 
একটি সাধারণ কচি ডাবে আকারভেদে ২শথেকে ১হাজার মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। কেননা ডাবের ৯৫ শতাংশই পানি। আর সোডিয়াম, পটাশিয়াম অন্যান্য লবণের পরিমাপ স্থানভেদে একেক রকম। তবে সাধারণভাবে এক লিটার ডাবের পানিতে পটাশিয়াম আছে ৩৫ থেকে ৮২ মিলিমোল, সোডিয়াম . থেকে . মিলিমোল শর্করা . থেকে . মিলিমোল। আর এক লিটার স্যালাইনে পটাশিয়ামের পরিমাণ ২০ মিলিমোল, সোডিয়াম ৭৫ মিলিমোল শর্করা ৭৫ মিলিমোল।
 
নারিকেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা:
গবেষণায় দেখা গেছে যে পলিনেশিয়া শ্রীলঙ্কায় যেখানে প্রধান খাবার হলো নারিকেল সেখানেকার মানুষের কোলেস্টেরল বা হার্টের সমস্যা অনেক কম। এর কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে নারিকেলে যে ফ্যাটি এসিডের চেইন গুলো আছে সেগুলো কোলেস্টেরল বাড়ায় না বরং আথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে। এমনকি কিছু কিছু নারিকেলে লরিক এসিড পাওয়া গেছে যা মায়ের দুধে থাকে।
 
১। নারিকেল শরীরের শক্তি বাড়িয়ে দেয় এবং কর্ম উদ্দিপনা জাগাতে সহায়তা করে।
২। হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল এমিনো এসিড শোষন করে নিতে সহায়তা করে।
৩। নারিকেল রক্তের ইন্সুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখে এবং ডায়াবেটিস জনিত কারণে শরীরের ক্ষতি রোধ করে।
৪। নারিকেল শরীরে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করতে সহায়তা করে এবং দাঁত হাড়ের গঠনে ভূমিকা রাখে।
৫। গলব্লাডারকে বিভিন্ন ধরণের অসুখ থেকে রক্ষা করতে নারিকেলের ভূমিকা অনেক।
৬। নিয়মিত নারিকেল খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার অন্যানো আরো কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায় অনেকখানি।
৭। নারিকেল দাঁতের ক্ষয় রোধে সহায়তা করে।
৮। নারিকেল প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া রোধ করতে ভূমিকা রাখে।
৯। কিডনীতে পাথর আছে যাদের তাঁরা নিয়মিত খাবার তালিকায় নারিকেল রাখলে ধীরে ধীরে পাথর মিলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১০। নারিকেল থাইরয়েড হরমোনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
১১। নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বক কোমল সুন্দর হয়। এছাড়াও নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বকে সহজে বয়স জনিত বলিরেখা পড়ে না।
১২। নারিকেল অতিরিক্ত ওজন কমাকে সহায়তা করে। নারিকেল খুব অল্প ক্যালোরিতেই মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে অল্পক্ষণের মধ্যেই শরীরে শক্তি যোগায়। নারিকেল খেলে সহসা ক্ষুধাও লাগে না। তাই গবেষনায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত নারিকেল খাওয়া শুরু করে তাদের বেশ খানিকটা ওজন হ্রাস পায়।
১৩। নারিকেলে থাকা পর্যাপ্ত খাদ্যআঁশ কোষ্টকাঠিন্য রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
১৪। চিকন হাড্ডিসার রোগীদের মাংশপেশী গঠনে, পাকস্থলীর ক্ষত গলার ঘা সারাতে নারিকেল অত্যন্ত কার্যকর।
১৫। জলবসন্ত হামের দানা কমাতে নারিকেলের পানি ভূমিকা রাখে।
১৬। বহুমুত্রে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী।
১৭। এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের ভাইরাস এর মাত্রা কমাতে নারিকেল ভুমিকা রাখে বলে প্রমাণ আছে।
১৮। নারিকেলে থাকা অরগানিক আয়োডিন সাধারণ গলগণ্ড রোগ প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে।
১৯। নারিকেল প্রস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া রোধ করতে ভূমিকা রাখে।
২০। নারিকেল থাইরয়েড হরমোনের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
২১। পেটের কৃমি দূর করতে প্রতিদিন সকালে নাস্তার পর এক চামচ নারিকেল খান। এতে পেটের কৃমি দূর হয়ে যাবে।
২২। বাদাম, আখরোট এবং মিশ্রির সঙ্গে নারিকেল মিশিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
২৩। খালি পেটে নারিকেল  খেলে নাক দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
২৪। গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ৫০ গ্রাম নারিকেল খাওয়া সন্তানের জন্য ভালো। এতে সন্তানের গায়ের রঙ ফর্সা হয়।
২৫। রাতে খাওয়ার পরে প্রতিদিন আধাগ্লাস নারিকেলের পানি পান করা উচিত। এতে ঘুম ভালো হবে।
২৬। নারিকেলের মধ্যে বাদাম পেষা মিশিয়ে মাথায় লাগানো ভালো। মাথা যন্ত্রণা কমে যায়।
২৭। নারিকেল তেলের মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগালে খুশকি দূর হয়ে যায়।
২৮। ক্লান্তি অবসাদ দূর করতে, পানিশূন্যতা প্রতিরোধ এবং শক্তির উৎস হিসেবে কচি ডাবের পানি ভীষণ কার্যকরী।
২৯। পায়ে ফাংগাস ঘটিত কোন ঘাঁ হলে, সেখানে নারিকেল তেল দিলে তা ফাংগাসের মোকাবেলা করে।
৩০। প্রাকৃতিকভাবে উকুন দূর করতে ব্যবহার করা যায়। এজন্য যা লাগবে তা হল , আপেল সিডর ভিনেগার নারিকেল তেল।
৩১। ন্যাচারাল পারসোনাল লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায় এটি এবং এটি নরমাল ভ্যাজাইনাল ফ্লোরাকে ডিস্টার্ব করেনা, তাই ব্যবহার করা সেফ।
৩২। ন্যাচারাল এন্টিব্যকটেরিয়াল স্কিন ক্রীম হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়।
৩৩। ন্যাচারাল সেভিং ক্রীম এবং আফটার সেভিং ক্রীম হিসেবেও এটি ব্যবহার করা যায় বিশেষ করে প্রাইভেট পার্টে।
৩৪। লবণের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে পা ঘষলে পায়ের মরা কোষগুলো দূর হয়।
৩৫। গর্ভাবস্থায় পেটের চামড়া ফেটে গিয়ে দাগ হয়। এসময় নিয়মিত নারিকেল তেল পেটে মালিশ করলে এই দাগ গুলো দূর করা যায়।
৩৬। এটির ন্যাচারাল সান প্রটেক্টর হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা আছে।এর SPF 4 , তাই সানস্ক্রীন হিসেবেও কাজ করে।
৩৭। যৌনাঙ্গে ঈস্ট বা ঈস্ট ইনফেকশন হলে ওই জায়গায় বাহ্যিকভাবে নারিকেল তেল লাগালে উপকার পাওয়া যায়। নারিকেল তেল ঈস্ট কে ধ্বংস করে।
৩৮। চুলের ফ্রিজি ভাব কমায় নারিকেল তেল।
৩৯। গোসলের আগে সমপরিমাণ নারিকেল তেল চিনি মিশিয়ে শরীরে ঘষা যায়। এটি একটি স্ক্যাবার হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে শীতকালে এটি খুবই উপকার করে
৪০। কোন স্থান হালকা পুড়ে গেলে তাতে অনেকক্ষণ পানি দিয়ে ধুয়ে নারিকেল তেল লাগালে জ্বালা পোড়া কম হয়।
৪১। বমি হলে মানুষের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ডাবের পানি পূরণ করে ঘাটতি। অতিরিক্ত গরম, ডায়রিয়া, বমির জন্য উৎকৃষ্ট পানীয় ডাবের পানি।
৪২। ডাবের পানি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
৪৩। ডাবের পানি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
৪৪। ত্বক পরিষ্কার করতেঃ ত্বকের যে কোন ধরনের দাগ দূর করতে নারিকেলের জুরি নেই। মুখের ব্রণ এর দাগ দূর করতে নারিকেল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন শুধু নারিকেলের পানি দিয়ে মুখ ধৌত করুন। এটি মুখের টোনার হিসেবে কাজ করে। মুখের ত্বককে ময়শ্চেরাইজার করে।
৪৫। ক্লান্তি দূর করেঃ  সারারাত পার্টি করার পর, ক্লান্তি দূর করতে নারিকেলের পানি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। পেটে ব্যথা দূর করে। নারিকেলের পানি শরীরের ইলেক্ট্রলাইটের পরিমাণ সঠিক রাখে। মদ্যপান এর কারনে শরীরে যে ক্ষতি সাধিত হয় তা নারিকেলের পানি দূর করতে সাহায্য করে।
৪৬। পেশীর বাধা প্রতিরোধ করেঃ নারিকেলের পানি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। যা আমাদের পেশীর বাধা কে মুক্ত করতে সাহায্য করে। তাই, পেশীর যেকোনো সমস্যা হলে নারিকেলের পানি পান করুন। এতে সমস্যা দূর হতে সাহায্য হবে।
৪৭। চুলের কন্ডিশনার হিসেবেঃ  চুলের জন্য সব থেকে বেশি উপকারী নারিকেলের পানি। নারিকেলের পানি পান করলেও চুলের জন্য ভালো। আবার নারিকেলের পানি দিয়ে চুল ধৌত করলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। নারিকেলের পানি চুল ধৌত করার পর ব্যাবহার করলে কন্ডিশনার এর মত উপকারিতা পাওয়া যায়।
৪৮। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ  নারিকেলের মধ্যে চর্বি কন্টেন্ট অত্যন্ত কম। তাই, যত ইচ্ছা নারিকেলের পানি খেতে পারেন। এর সমৃদ্ধ প্রকৃতির কারনে আপনার ক্ষুদার পরিমাণ কমবে। আপনি আরও বেশি সক্রিয় হতে পারবেন।
৪৯। বিষণ্ণতা দূর করে রক্তচাপ হ্রাস করেঃ  নারিকেলের পানিতে যে পটাশিয়াম প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে তা বিষণ্ণতা মুক্ত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর স্বাদ আপনাকে পরিতৃপ্ত করবে। এতে আপনার মনোভাব ভালো থাকবে। এতে যে ইলেক্ট্রোলাইট রয়েছে তা রক্তচাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে একটি নারিকেলের পানি খেলে রক্তচাপের সমস্যা দূর হবে।
৫০। পুষ্টিতে সমৃদ্ধঃ  বাজারের অন্য যেকোনো পানীয় থেকে নারিকেলের পানি অনেক বেশি কার্যকরী। এতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি জরুরি উপাদান রয়েছে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস সোডিয়াম রয়েছে। যে কোন ধরনের রোগ থাকুক নারিকেলের পানি সবসময় কার্যকরী।
৫১। ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধিঃ  এটিতে রিবোফ্লাভিন, থিয়ামিন, নিয়াসিন   পাইরিডক্সিন এর মত নানা পুষ্টিগুণ ভিটামিনে সমৃদ্ধ।  এতে এন্টি-ভাইরাস এন্টি ব্যাকটেরিয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি করে এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মত বিভিন্ন ভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়।
৫২। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনঃ   নারিকেলের পানি ব্লাড সার্কুলেশন উন্নত করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায় হার্ট অ্যাটাক এবং অন্যান্য হৃৎপিণ্ড সংক্রন্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। এটি রক্তে সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
 
নারিকেল বা ডাবের  পানির পুষ্টিগুণ:
১। কম ক্যালোরিঃ  প্রচলিত বেশিরভাগ পানীয়তেই প্রচুর ক্যালোরি আর চিনি থাকে। নারিকেলের পানিতে তুলনামূলক কম ক্যালোরি থাকে। যেমন: ২৪০ মিলি নারিকেলের পানিতে থাকে মাত্র ৪৫ ক্যালোরি।
২। পটাশিয়ামঃ  কলার থেকেও বেশি পরিমাণে থাকে। তাই এটি শুধু পানি শূন্যতা পূরণেই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। উল্লেখ্য স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক এমন কি পেশির শক্তি ঠিক রাখার জন্য পটাশিয়াম প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
৩। খনিজ উপাদান:  অন্যান্য খনিজের পাশাপাশি নারিকেলের পানিতে থাকে ম্যাগনেশিয়াম এবং কপার যা আমাদের নিয়মিত খাবারের তালিকায় খুবই কম পরিমাণে থাকে। দুর্বলতা অবসাদের কারণ হতে পারে ম্যাগনেশিয়ামের অভাব। দাঁত হাড় শক্ত রাখতেও ম্যাগনেশিয়াম জরুরি। কপারের অভাবে আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ বিপাক ক্রিয়ার স্বাভাবিক কার্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।
৪। তারুণ্য ধরে রাখতে:  নারিকেলের পানিতে আছে সেইটোকাইনস যা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি উপাদান ক্যান্সার দমনেও সহায়তা করে। শরীরের পিএইচয়ের ভারসাম্য বজায় রেখে দেহের বিশেষ সংযোজক টিস্যুগুলোকে মজবুত করে। এমনকি বার্ধক্যজনিত রোগের ঝুঁকিও কমায় নারিকেলের পানি।
৫। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের বিষাক্ত মৌলগুলোকে শোষণ করে। নারিকেলের পানিতে থাকে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা এসব মৌলের ক্ষতিকর প্রভাব রোধ করে।
৬। রোগ প্রতিরোধে সহায়ক:  নারিকেলের পানিতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান ভিটামিন থাকে, যেমন রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, থায়ামিন পাইরিডক্সিন, ফোলেটস ইত্যাদি। তাছাড়া ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধের গুণাগুণ রয়েছে পানীয়ের যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৭। হজমে সহায়ক:  নারিকেলের পানিতে প্রাকৃতিকভাবেই উপস্থিত থাকে বিশেষ কিছু বায়োঅ্যাক্টিভ এনজাইম যেমন: এসিড ফসফেটেস, ক্যাটালেস, ডিহাইড্রোজেনাস, ডিয়াজটেজ ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো হজম বিপাকে সহায়ক।
 
উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম রয়েছে ডাবের পানিতে, যা হাড়কে করে মজবুত। সেই সঙ্গে জোগায় ত্বক, চুল, নখ দাঁতের পুষ্টি। এতে চিনির পরিমাণও অল্প। তবে ডায়াবেটিসের রোগীরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে ডাবের পানি খাবেন।
 
এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম, যা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু যারা সুস্থ, তাদের কিডনির জন্য ডাবের পানি আশীর্বাদস্বরূপ। প্রচন্ড গরমে ডিহাইড্রেশনে ভুগছেন? এই সমস্যার সমাধানে আছে ডাবের পানি। যা পান করলে আপনার পানিশূন্যতার সমস্যা দূর হবে। ডাবের পানি পান করলে হজম শক্তি বাড়ে। নাক দিয়ে রক্ত পড়লে ডাবের পানি রোজ খাওয়া উচিত।
 
ডাবের পানি ঘামাচি, ত্বক পুড়ে যাওয়া এবং ্যাশের সমস্যা হলে আক্রান্ত স্থানে লাগালে আরামদায়ক হয়। রক্ত সঞ্চালন শরীরের বৃদ্ধির জন্য ডাবের পানি অনেক উপকারী। ডাবের পানি বদহজম, গ্যাসট্রিক, আলসার, কোলাইটিস, ডিসেন্ট্রি এবং পাইলসের সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করে।
 
তবে নারিকেলের পানি বের করার পর যত তাড়াতাড়ি খাওয়া যায় ততই ভালো। বেশি সময় গেলে বাতাস উষ্ণতার কারণে এর পুষ্টিগুণ কমে যায়।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.