সন্ধ্যেটা জমে গেল
সমরজিতের সাথে গান
গল্প করে। প্রেম
ব্রেকআপ আবার প্রেম
আবার ব্রেকআপ এতো
লেগেই আছে। সমরজিতের বান্ধবী
সরস্বতী পুজো থেকে
ওর সাথে কথা বলছে না। ফেসবুকে
ব্লক করেছে মনটা
খারাপ তার। কেসটা ঘটেছে
রবীন্দ্র সদনে অন্য
একটা মেয়ের সাথে
ডেটিং করতে গিয়ে। খবর
টা তার গার্ল-ফ্রেন্ড
পেয়েছে।
-কি
করে লিক আউট
হল?
সমরজিৎ বলল; সন্দেহের
তীর টা; তার
বন্ধুর দিকে। যে কিনা
দুগ্যিপনা করছে। তাকে বলছে;
সকালে বিকালে কেমন
আছো? কি করছ
? কি খাচ্ছ? কোথায় আছো?
যেন কত কেয়ার
নিস এই ভাব
গুলো ছাড়; নাহলে
মেয়েরা লেজে খেলাবে
বুঝলি। ভালবাসবি সেটা ওপর
থেকে।পাগল আশিক দিবা না। দিল
থেকে ভালবাসলে মরবি। খুচরো
পয়সা হারালে কিচ্ছু
যাবে আসবে না। মূলধন
হারালে সব শেষ।
সমরজিৎ তাচ্ছিল্য করে
বলে;
-ধনয়ই
নেই তো মূল
ধন।
-ধন
নেই ? মানে নির্ধন
কিচ্ছুটি করতে পারবে
না। ধন চাইয়ই
চাই।
শালা গেরস্ত কে
সাবধান হতে বলছে। চোরকে
বলছে চুরি করতে। ডবল
গেম খেলছে।আমার গার্ল
ফ্রেন্ডকে উসকচ্ছে আমি
অন্য জায়গায় লাইন
মেরে বেরচ্ছি। আর আমাকে
বলছে চালিয়ে যা।
ফেসবুকে একটা মেয়ে
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে
সমরজিৎকে। বলেছে তার মাসতুতো
বোনের বন্ধু। চ্যাট হয়েছে
অনেক কথা হয়েছে। বারবার
তার একটাই কথা
তুমি এখন এনগেজ
না ফাঁকা আছো দাদা। সমরজিৎ
মেয়েটির কুরকুরানি দেখে
লোভ সামলাতে পারেনি। সে
সিঙ্গেল বলেছে। ব্যাস!
কেস খেয়ে গেছে।
-অ্যাকাউন্ট
টা ফেক ছিল বুঝলে
অপু-দা।
সমরজিতের ধারনা তার
বন্ধুর কথায় এসে
সমরজিতের গার্ল-ফ্রেন্ড
তাকে জাস্টিফাই করতে
গিয়ে এ কম্মটি
ঘটিয়েছে। বাপের একমাত্র
ছেলে। দেখতে শুনতেও সমরজিৎ
খারাপ নয় তবুও
গার্ল-ফ্রেন্ডের মার
আবার সমরজিৎকে পছন্দ
নয়। অসুবিধা কোথায়? সমরজিৎ
নিজেকে আকর্ষণীয় করতে
আজ কাল সন্ধেবেলা জিমে
যায়। এর মধ্যে আরো
একটা কেসও খেয়েছে। কেসটা
হল গিয়ে মা মেয়েকে
গৃহবন্দি করলে অ্যাপার্টমেন্টের
মেইন গেটের চাবিটা
ওপর থেকে ফেলে
দিয়েছিল মেয়েটা। আর চাবি
নিয়ে কলাপ্সিবল দরজা
খুলে সোজা ফ্লাটের
ছাদে উঠে গিয়েছিল
সমরজিৎ। তার পর ধরা
পরে কেলেঙ্কারি। ফোন করে
তার বাবা মাকে
ডেকে এনেছে মেয়ের
বাড়ির লোক।
-কি
সাহস দেখুন আপনাদের
ছেলের।
সমরজিৎ এর বাবা
সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
-আমার
ছেলেত ভালো নয়। কিন্তু
আপনাদের মেয়ও সুবিধার
নয়। ভালো মেয়েরা কি
বাড়িতে লুকিয়ে বয়ফ্রেন্ড
ঢোকায়!
লোক জানাজানি চিৎকার
চেঁচামেচি দশকান হলে
মেয়ের ও তার
বাবা মার সম্মান
যে বৃদ্ধি পাবে না
এব্যাপার বুঝে তারা
চেপে গেছে। কিন্তু
সমরজিৎ এর প্রতি
তাদের মনোভাব আরও
খারাপ দিকে এগিয়েছে।
সমরজিৎদের প্রথম সিগারেট
খাওয়ার ঘটনা শুনে
হেসে গড়িয়ে পড়লাম।
তখন ওরা ক্লাস
এইটে পড়ে। জয়ন্তদার কোচিনে
শেষ বেঞ্চে বসে
মোবাইলে লুকিয়ে পানু
ছবি দেখে সমরজিৎ,
গোরু আর বাপি।গরু
পল্টুর ডাক নাম। তো
ওদেরই এক বান্ধবী
রিয়ার বাবা সিগারেট
খায়। খালি পেটে খায়;
ভরা পেটে খায়;ঘুমাতে
যাবার আগে খায়;
পায়খানা যাবার আগে
খায়। চারমিনার সিগারেট। ইয়া
বড়।
রিয়াকে সেই সিগারেট
চুরি করে আনতে
বলে সমরজিৎ।
কিভাবে আনবে?
বইয়ের ভেতর আনলে
চেপটে যাবে। অবশেষে রিয়া
বাবার একটা সিগারেট
সরায়। পেন্সিল বক্সের ভেতরে
করে নিয়ে আসে এবং
কোচিনের শেষে রিয়া,
সমরজিৎ পল্টু ও
বাপি ঊষা কোম্পানির
ভাঙ্গা কারখানায় যায়। চাঁদা
তুলে একটা দেশলাই
ও কেনা হয়। এবার চার
জনে বসে একটা
সিগারেট নিয়ে তার
কাউন্টার হবে। মুশকিল হল
গরু হাতেই সিগারেটটা
ধরাতে গেল। সিগারেট তো
ধরে না।
সমরজিৎ কি সিগারেট
খাওয়া দেখেনি?
বহু দেখেছে। তবে খাতায়
কলমে; তার প্রাকটিক্যাল
অভিজ্ঞতা নেই। কৌশলটা রপ্ত
না করেই বেশ স্টাইল
করে নায়ক ছবির
উত্তম কুমারের মত
ঠোঁটের কোনে সিগারেটটা
ধরল সমরজিৎ। তারপর দেশলাই
কাঠি জ্বলে উঠলো
বাক্সের গায়ে দুইবার
টোকা খেয়েই। এক হাতে
এলো মেলো হাওয়া
আটকে সিগারেটের মুখে
আগুন জ্বালাতে ব্যস্ত
হল সমরজিৎ। দুই একটা কাঠি
নষ্ট হলেও অবশেষে
একটা লম্বা-টানে
দাউদাউ করে ধরে
গেল সিগারেট। কিন্তু সমরজিৎ
কিছুটা ধোঁয়া গিলে
ফেলে কেশে একাকার। অপরিপক্বতা ধরা পড়ায় সমরজিৎ
কিছুটা লজ্জা পেল। বাকিরা
পেল মজা।কিছুই মনে
করলো না। তারা সবাই
জানে তাদের আজ
সিগারেট খাওয়ার হাতেখড়ি
হচ্ছে। আয়েশ করে টানতে
লাগলো চার জনে। একটা
সিগারেট ঠোঁট বদল
হতে থাকল।
এতদূরই ঠিক ছিল।মুশকিলটা
হল মুখে গন্ধ হয়েছে
কিনা এ ব্যাপারটা
মাথায় আসতেই। মুখের সামনে
নিজেদের হাত পেতে
মুখের ভাব নিয়ে
চার জনে পরীক্ষা
করে দেখল। নিজের মুখের
গন্ধ নিজেদের তেমন
পাওয়া যাচ্ছে না। তবে
অপরের সামনে মুখ
নিয়ে গেলেই গ্যাস
করছে।
-রিয়া
বলল কি হবে?
গরু বলল;
-কি
আবার হবে। ছেলে মেয়ে
বড় হচ্ছে মা
বাবার বোঝা উচিত।
বাপিটা পাগল। চেঁচিয়ে ওঠে।
-কমপ্লেন। দেখ
আমি বাড়ছি মাম্মি।
সমরজিৎ বলে;
-বাড়ির
লোক চুমু না
খেলে বোঝার কোন
উপায় নেই; তুই
সিগারেট খেয়েছিস।
রিয়া বলে;
-পেয়ারা
পাতা চিবালে শুনেছি
মুখের গন্ধ চলে
যায়।
সমরজিৎ বলে;
-ঢপ
মারিস না। শুনেছিস কি। তোর
অনেক প্রাকটিক্যাল ক্লাস
করা আছে।
রিয়া নিজের কণ্ঠনালীতে
চিমটি কেটে ধরে
বলে;
-অন
গড; মা কালীর দিব্যি বলছি
এই প্রথম।
বাপি বলে;
-তুই
সেদিন ওটা করেও
বলেছিলিস প্রথম।
উৎসুক হয়ে পল্টু
ও সমরজিৎ বলেছিল;
-কি...
কি রে। কি প্রথম
করেছিলি।
রিয়া শাসিয়ে ছিল
বাপি কে;
-বাপি
ভাল হবে না
বলছি।
সমরজিৎ ও পল্টু
কেসটা জানতে উদগ্রীব
হয়ে উঠেছিল। বাপি কে
নিয়ে টানা হেঁচড়া
করতেই।
বাপি বলেছিল;
-আরে
সেদিন কোচিনে কারেন্ট
গেলনা। অন্ধকারে রিয়া কিস
করেছে আমাকে।
সমরজিৎ চেঁচিয়ে উঠেছিল।
-ফ্রেঞ্চ
না বাংলা।
বাপি বলেছিল;
-বিহারী
কিস ঠোঁট কামড়িয়ে।
রিয়া বাপিকে জুত
খুলে মারতে থাকে।
-শালা
পেট পাতলা কিছুই
হজম করতে পারেনা।
এত দূরও ঠিক ছিল। কিন্তু
বিপদ ঘটল মুখের
সিগারেটের গন্ধ দূর
করতে গিয়ে; পেয়ারা
পাতার বদলে বাপি
অন্য কি পাতা
চিবিয়ে ফেলল। সাথে সাথে
তার মুখটা ভিমরুলের
কামড়ের মত ফুলে
যেতে লাগলো লাল
গোটা গোটা হয়ে। ভীষণ
চুলকচ্ছিল মুখের ভেতরটা। তবে
কি বাপি পেয়ারা পাতার
বদলে বিছুটি পাতা
চিবিয়েছে। তা কি করে
হবে। পাড়ার পেয়ারা গাছ
গুলোকে ফাঁকা করে
দিতে বাপির জুড়ি
মেলা ভার। ওকে অনেকে
পেয়ারা চোর বলেই
ডাকে। পেয়ারা পাতা চিনতে
ওর কোন অসুবিধা হবার
তো কথা নয়। তবুও তারা
গাছটার কাছে গেলো। গাছটা
যে পেয়ারা সে বিষয়ে
সন্দেহ নেই।
তবে এমন বিপত্তি
ঘটল কি ভাবে?
যেখানে বাপি থুতু
সহ মুখের চিবানো পাতা
ফেলেছিল তা দেখে;
সরজমিনে তদন্তে চক্ষু
চরক গাছ হল!
শুয়া পোকার লণ্ডভণ্ড
শরীর বাপির চিবানো
পাতার সাথে।
পান, বিড়ি, সিগারেটের
দোকানে গেলো ওরা।
-কাকু
একটু চুন হবে।
-কি
করবে?
-এই
দেখুন না পাতা
খেয়ে মুখ ফুলেছে।
-এই
টুকু টুকু ছেলে
তোমরা পাতা খাও?
-এ
পাতা সে পাতা
নয় কাকু। পেয়ারা পাতা।
-তা
তো ছাগলে খায়।
লোক জানাজানি হলে
ব্যাপারটা আরও গোলমেলে
হয়ে যাবে। চার জনের
সিদ্ধান্ত ক্রমে তারা
ঠিক করলো। বাপি রিয়াদের
বাড়িতে এখন থাকবে। বাড়ির
লোক জানবে সে
পড়া পারেনি;তাই
কোচিনে আটকে রেখেছে। পড়া
তৈরি করে তবে
ফিরবে। রিয়াদের বাড়ি নিরাপদ
কারণ ওর মা
বাবা দুজনেই চাকরি
করে। তাই সারাদিন বাড়ি
ফাঁকা।
সমরজিৎ বলেছিল;
-ফাঁকা
বাড়ি পেয়ে তোরা
যেন আবার প্রাকটিক্যাল
ক্লাস করিস না।না
হলে আবার কোন
বিপদ ঘটে যাবে।
তারপর কি হয়েছিল
সমরজিৎ আর জানে
না; তবে রিয়ার মা
মেয়েকে আর কোচিনে
পাঠাত না। জয়ন্ত-দা
বেতের বারি মেরে
হাত লাল করে
দিয়েছিল তাদের তিন
বন্ধুর।
সমরজিৎ দীর্ঘ নিশ্বাস
ছেড়ে বলল;
-ছোটবেলার
প্রেম খুব কম
টেকে।
ক্লাস এইটেই সমরজিৎরা
যা জানে অনেক বুড়ো
বয়েসে তা আমি
জেনেছি বুঝেছি। ওরা
অনেক অ্যাডভানস। আমার প্রথম
প্রেম বড় বড়
চোখ মুখ খানা
নিটোল গোল আমার
পাড়া থেকে সে
যায়; দুই একবার
চোখের পাতা ফেলা
একটু মুচকি হাসি। পনের
ষোলর জন্য এটাই
যথেষ্ট ছিল। আমি চিরকাল
একটু বেশি মাত্রায়
লাজুক... সে হাসলে
আমার মাথা নুইয়ে
যেত... কখনো ভাবতাম
ভেংচি কাটছে নাতো। কারণ
আমার কালো দাঁড়কাকের
মতো রোগা লম্বা
চেহারা আর পোশাক
আশাক ও গরিবের
যেমনটি হয়।
দাদুর বাড়ির ব্যালকনিতে
দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটি;
চকচকে মুখ খুব
ফর্সা নয় তবে
একটা জৌলুস আছে!
বডি লোশন ইউজ
করে বোধয়। আমার ক্রিকেট খেলা
দেখছে; অভাগার তখন
পা কাঁপছে ব্যাট হাতে। বোলারকে
দেখে নয় গ্যালারিতে
চেয়ে। সিয়োর শটগুলো মিস
করছি। ভেতর থেকে শক্ত
হবার চেষ্টা করছি
কিন্তু পারছি না। সকলেই
প্রায় খেলায় অমনোযোগী
সারা মাঠের দৃষ্টি
কিন্তু তখন গ্যালারিতে।
আমার রানার ছুটে
এসে বলল এই
একটা শর্ট রান
নিয়ে আমায় দে। বুঝলাম
সে তার ব্যাটিং যাদু
দেখাতে চায়। কোনক্রমে ব্যাটে
বল লাগিয়ে ছুটলাম আর
হলাম রান আউট। কি
খারাপ লাগলো মেয়েটি
ব্যালকনি থেকে চলে
গেল।
রুমালটা রাস্তায় পড়ে
গেছিল নাকি ইচ্ছাকৃত
ফেললো। বলতে পারবো না। মনে
হল যাই রুমালটা তুলে
ছুটে গিয়ে দিয়ে
আসি; কে যেন
কান টেনে ধরল। মেয়েদের
নাক মোছা রুমাল;
লোকে দেখলে বলবে
কি। ভাবতে ভাবতে মেয়েটা
খটমট চোখে এসে
দাঁড়াল আমার সামনে। মুখ
বেঁকিয়ে রুমালটা তুলল
হাতে; দ্রুত বেড়িয়ে
গেল। বুঝলাম একটু খানির
জন্য হাত ছাড়া
হল বাংলা সিনেমার হিরো
হবার সুযোগ।
ওর দাদুর বাড়ির সামনে
পায়চারি করে অনেকে। বিশ্বাস
করুন আমি পায়চারি
করার ছেলে নয়। নিতান্ত
গোবেচারা মার্কা। খেলতে যাচ্ছি
দুপুর বেলা ফাঁকা
চতুর দিক; পিছন
থেকে আওয়াজ এলো
-"শোনো"।
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি
মেয়েটা। দাঁড়িয়ে পড়লাম।বুকের ভেতর
টা তখন হাপর উঠছে
নামছে।
-আমার
দিকে অমন বোকার
মত দেখ কেন?
-কই
নাতো।
-আমাকে
ফলো করো কেন
?
-কই
নাতো?
-ঠ্যাংগা...
ঠ্যাংগা বগের মত
পায়ে হাফ প্যান্ট
পরতে তোমার লজ্জা
করে না।
মেয়েটা মুচকি হেসে
বেরিয়ে গেল। আমি দাঁড়িয়ে
রইলাম গরু চোরের
মতো। লজ্জায় মাথা কাটা
যাচ্ছে। সেই থেকে
হাফ প্যান্ট পরা
ছেড়ে দিলাম।
সমরজিৎ খবর হয়ে
গেলো। বিরহবিধুর বেদনাবিধুর সমরজিৎ
কলেজে গিয়ে দেখল
কলেজের সামনে অনশন
হচ্ছে। প্রেমে ঘা খাওয়া
মনটা হঠাৎ মোচড়
দিয়ে উঠল। এক মাল
খেয়ে না হয়
অনশনেই যথার্থ প্রকাশ
হয় বিরহ যন্ত্রণার। কিন্তু
সমরজিৎ মদ খেতে
পারলেও না
খেয়ে একদম থাকতে
পারে না। যাই হোক
প্রেমে ব্যর্থতার জন্য
অনশন করা উচিত
ছিল। তই রাজনৈতিক
অনশনে সামিল হয়ে
একটু হালকা হতে
চাইল সমরজিৎ। অনশন মঞ্চের
পেছনে বসেছে গাঁজার
ঠেক। সেখানে থেকে
এক ছিলিম টান দিয়ে
এসে মঞ্চে বসে
বসে ঝিমতে ঝিমতে
কখন যে কেলিয়ে
পড়েছিল সমরজিৎ জানেনা। চোখ
খুলে দেখে সে
হাসপাতালের ইমারজেন্সি রুমে। পুলিশ
হাঙ্গার স্ট্রাইক করে
শারীরিক ভাবে ভেঙ্গে
পরা ছাত্রদের অ্যাম্বুলেন্সে
করে তুলে এনেছে
সরকারি হসপিটালে।
রাষ্ট্রের
কি কোন দায়িত্ব নেই
বাপু! ডাক্তার পালস
মাপছে। গাঁজা খেয়ে সমরজিতের
বিপি হাই। ওর ট্রলি
বেডের ওপর ঝুঁকে
পড়েছে পার্টির হেভি-ওয়েট
নেতা থেকে সাংবাদিকরা।
"আশুতোষ
কলেজের অনশন রত
ছাত্র সমরজিৎ মণ্ডলের
শারীরিক অবস্থার ক্রম
অবনতি ঘটে চলেছে।"
সব কটি খবরের চ্যানেলে
এই ক্যাপশন হয়ে গেল
নিমেষে।বাড়িতে সমরজিতের মা
হাউমাউ করে কেঁদে
উঠলো।বাবা ছুটলেন ছেলেকে
হাসপাতালে দেখতে।
সমরজিৎ একবার চোখ
খুলেছিল।এক সাংবাদিক বললেন;
-আপনাদের
দাবি দাওয়া গুলো
কি ছিল একটু বলবেন?
সমরজিৎ আবার চোখ
বন্ধ করে নেয়। তার
নেশা গাড়ো হলেও
এখন কেটে গেছে। কিসের
দাবিতে অনশন তা
কি সে জানে নাকি ছাই। ভুলভাল
না বকে চেপে যাওয়াই ভালো।
ডাক্তার বললেন;
-পেশেন্ট
কে প্রশ্ন করবেন না। ওকে
রেস্ট নিতে দিন। স্যালাইন
দিতে হবে।
স্যালাইনের কথা শুনে
সমরজিৎ লাফিয়ে উঠলো। ছোটবেলা
দিয়ে তার ছুঁচে
বড় ভয়। সমরজিৎকে লাফালাফি
করতে দেখে ডাক্তার
ভাবলেন স্যালাইনের মাধ্যমে
শরীরে লবণ ও
খাদ্যদ্রব্য পাঠানো হচ্ছে
তাই বুঝি অনশন
ভঙ্গের বিরোধিতা করছেন
রুগী। কয়েকজন বলিষ্ঠ
পুলিশ তাকে চেপে
ধরল; আর ডাক্তার
বাবু হাত বেঁধে
স্যালাইনের চ্যানেল করতে
কবজির একটু ওপরে
ফোটালেন সূচ।
সমরজিৎ বাবাগো বলে
চেঁচিয়ে উঠলো।
আর ঠিক সেই সময়
তার বাবা এসে
হাজির। বাবা সন্তানের কানের
কাছে মুখ নিয়ে
গিয়ে ফিসফিস করে
বললেন;
-এসব
আবার কি নাটক
বাঁধালি। অনশন টা করলি
কবে? বাড়ি থেকেত
মাগুর মাছের ঝোল
ভাত খেয়ে বেরলি। বাড়ি
চ পিঠের ছাল তুলে
দেব।
গতিক খারাপ দেখে
ইউনিয়নের ছেলেরা সমরজিতের বাবা
কে হাইজ্যাক করে ওখান
থেকে ওয়েটিং রুমে
নিয়ে গেল।
-মেশোমশাই
চিন্তা করবেন না।
ও ভাল আছে।
সমরজিতের বাবা রাগে
ক্ষোভে চেঁচাতে লাগলেন।
-ওর
যে কিছু হয়নি তাকি
আমি জানিনা ভেবেছ। হারামি
ছেলে মা টাকে
মেরে ফেলে দেবে। হার্টের
পেশেন্ট ছেলের খবর
শুনে সে বার
বার অজ্ঞান হয়ে
যাচ্ছে।
এদিকে যুব-নেতা
মদনা দা মিডিয়ায়
বাইট দিতে ব্যস্ত। সমরজিৎ
রা দেশের ভবিষ্যৎ পাটির
গর্ব। সমরজিতের কিছু হয়ে
গেলে কে দায়ী
হবেন?
কলেজে পৌঁছেই সমরজিতের
লাভার ব্রেকআপ ভুলে
চলে এসেছে এস
এস কে এম হসপিটালে। ক্যামেরার সামনে সমরজিৎ
এর নামে মদনা দার
সুখ্যাতিতে রেশমির চোখে
জল চলে এলো। এই প্রজন্মের
ইমোশন গুলোই ভীষণ
মেলো-ড্রামাটিক। হঠাৎ হঠাৎ
সুইং করে। আজ সকালেও
সমরজিৎ এর মুখ
দেখলেই অম্বল হবে
মনে হচ্ছিল রেশমির;
এখন হঠাৎ করে
সমরজিতের কথা মনে
করে তার বুক
ভরে যাচ্ছে। সুযোগ পেলে
সেও তো কত
ছেলের বাইকে উঠে
পড়ে। সমরজিৎ না হয়
কোন মেয়ের সাথে
রবীন্দ্র সদনে ভেলপুরি
খেতে গিয়েছিল। তার জন্য
এত বাড়াবাড়ি না করলেই
বোধহয় ভাল হত। অনুশোচনায়
বুকের ভেতরটা মোচড়
দিয়ে দিয়ে উঠছিল। মোবাইলটা
খুলে পটপট করে
ব্লকগুলো সব তুলেনিল
রেশমি। সমরজিতের বেডের সামনে
এসে যখন সে
দাঁড়ালো হিন্দি সিনেমার
হ্যাপি এন্ডিংও ব্যর্থ
হয়ে যাবে। আহা কি
আবেগ! রেশমির চোখ
দুটো ছল ছল
করছে জলে। সমরজিৎ পিট
পিট করে চেয়ে
হাতের আঙ্গুল গুলো
নাড়ল কিঞ্চিৎ। রেশমি
তার বাঁধা হাতের
আঙ্গুল গুলো ধরল
মুঠ করে। সহসা রেশমির
অনুভব হল যে
তার চোখ থেকে
গড়িয়ে পড়ছে জল। দুই
কোট মেকআপ যে
উঠে মুখটা ঘাবলা
হয়ে গিয়েছে বুঝতে
পেরে মুখে রুমাল
চাপা দিয়ে সে
বাইরে বেরিয়ে গেল
মেকআপ ঠিক করতে। সমরজিৎ
ভাবল তার কষ্ট
আর সাইতে পারছেনা রেশমি। বুঝল
আর একটু মরা মরা
ভান করতে হবে। এদিকে
সমরজিতের খিদে পেয়েছে
চনচনে। সেই কোন সকালে
খেয়ে বেরিয়ে ছিল। এখন
দুপুর গড়িয়ে বিকেল
হতে চলল। ধৃতিমান কে
দেখে ডাক পারলো। আস্তে
আস্তে বলল;
-শোন
খুব খিদে পেয়েছে।
ধৃতিমান বলল;
-বস
আর একটু কষ্ট সহ্য
কর। প্রিন্সিপাল ছাত্রদের সাথে
আলোচনায় বসতে রাজি
হয়েছেন।
সমরজিৎ চেঁচিয়ে ওঠে;
-নিকুচি
করেছে আলোচনা; আমার
খিদে পেয়েছে খাবার
ব্যবস্থা কর।
ধৃতিমান মুখ চেপে
ধরে;
-চুপ
চুপ।
অবশেষে একহাতে স্যালাইনের
বোতল নিয়ে হসপিটালের
বাথরুমে দাঁড়িয়ে নিজামের
বিরিয়ানি যখন উপভোগ
করছিল সমরজিৎ। জেন্টস টয়লেটে
রেশমি ঢুকে পড়ল। সমরজিতের
দিকে চেয়ে বলল;
-ও
তবে ঠিকি শুনেছি
সবটাই নাটক।
রেশমি দ্রুত বেরিয়ে
গেল।
সমরজিতের বুঝতে
বাকি রইল না
যে আবার কোন সহৃদয়
বন্ধু কাঠিটি করলো। আবার
ব্রেকআপ।
সন্ধ্যে বেলা বাড়ি
ফিরে সমরজিৎ আমার
কাছে মন মরা
হয়ে এলো। আমি সান্ত্বনা
দিয়ে বললাম সব
ঠিক হয়ে যাবে।
সে বলল;
-তোমার
মুখে ফুল চন্দন
পড়ুক।
ভাগ্য ভালো যে
বলে নি চোখে
তুলসী পাতা আর
নাকে তুল পড়ুক।
শ্রী রবি ঘোষ
ও কমলা ঘোষের তিন
পুত্রের মধ্যে মধ্যম
পুত্র অলভ্য ঘোষ
১৯৭৬ সালের ১০
জুন কলকাতার টালিগঞ্জে
জন্ম গ্রহণ করেন;
ছোট থেকেই একরোখা অলভ্য প্রথাগত
শিক্ষা সমাজ ব্যবস্থার
প্রতি অনাস্থাশীল-প্রতিবাদী। শিল্প কলা তার
উপজীব্য হলেও ব্যতিক্রমী
এই মানুষটি নিজেকে একজন
সৈনিক বলে মনে
করেন যার অস্ত্র
কালি মাটি কলম। দেশে বিদেশের পত্র
পত্রিকায় তার কাব্য,
ছোটগল্প, প্রবন্ধ সসম্মানে
প্রকাশিত হবার পর
তিনি স্বাধীন চলচ্চিত্র
নির্মাণে আত্মমগ্ন।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments