আফসার নিজাম’র কিশোর কবিতা

 
চিঠি
 
আব্বু তুমি কেমন আছো
আসবে কবে বাড়ি
শুক্রবারে না এলে ঠিক তোমার সাথে আড়ি
 
আম্মুর নামে অনেক বিচার জমা করা আছে
বিচার তোমায় করতে হবে সালিশ তোমার কাছে
প্রতিদিন- আম্মু আমায় জাগায় সকাল ভোরে
কান ধরে কয়- ‘ডাকবো কবার তোরে
ধমক মেরে ওঠিয়ে দিয়ে
হাত পা এবঙ মুখ ধুয়ে
জোর করে সে খাইয়ে দেবে তিন পরোটা আস্তা
পায়নি ক্ষুধা তবুও খাই সকাল বেলার নাস্তা
 
আরো অনেক জুলুম আছে
বিচার তোমার কাছে
নাস্তা শেষে আম্মু আমায় কাধে দেবে
আমার চেয়েও একটা বড় ঝুলি
আমি যেনো সদরঘাটের কুলি
 
আম্মু আব্বু তোমরা দুজন মানুষ করার নামে-
আমায় মারছ প্রতিদিন-
ছোট্ট আমার জীবন নিয়ে করছো ছিনিমিনি
 
একটা কিছু কর তুমি কাজটা তোমার সোজা
আর পারি না আব্বু আমি বইতে বইয়ের বোঝা
জ্ঞানের চেয়ে বইয়ের বোঝা অনেকখানি ভারি
বইয়ের বোঝা বইবো না আর- বইয়ের সাথে আড়ি
আব্বু তুমি আসবে কবে বাড়ি
ঠিঠি পাওয়ার সাথে সাথে আসবে তুমি আসবে
যদি- আমায় ভালোবাসবে
আরো অনেক কথা আছে বলব তুমি এলে
হৃদয় দুয়ার মেলে
 
আজকে রাখি ইতি
তোমার ছোট্ট মা-মনী
নাম প্রিতি।
..................................................
 
স্বপ্ন
  
আছে কি তোর মনে-
ঘাস-বিচালির বনে
ঘাসফড়িং আর প্রজাপতির কনে
বলেছিলো আশা
তোমার জন্য কৌটা ভরা রাখছি ভালোবাসা।
 
ফড়িং ছিলো দূরে
আসলো কাছে উড়ে
একটুখানি বেঁকে
বলল আমায় ডেকে-
তুমি কি ভাই আমার মতো ফড়িং হবে বলো
                                          চলো
উড়ার জন্য ডানা দেবো জোছনা ঝলোমলো।
 
প্রজাপতি বলেছিলো সেদিন
                       যেদিন
রোদের কণা খেলেছিলো বনে
আছে কি তোর মনে-
প্রজাপতির ডানা দুটি আমায় দেবে খুলে
বলেছিলো হাওয়ায় দুলে দুলে
আমি নাকি বাতাসে ঢেউ তুলে
              উড়ব ফুলে ফুলে।
 
আমার তখন স্বপ্ন অচিনপুরী
রঙধনু আর নীলের সচীনঘুড়ি
আমার তখন রঙিন দুটি ডানা
উড়তে আমায় কেউ করে না মানা
উড়ে উড়ে যাচ্ছি অনেক দূরে
হঠাৎ শুনি একটা করুণ সুরে
                আমায় ডাকে-
যাচ্ছো কোথায়- আমার সোনামণি
সেই কথাটা আকাশ-বাতাস
                পাহাড়-নদী
                বন-বনানী
                হচ্ছে প্রতিধ্বনি।
 
আমার তখন স্বপ্ন গেলো উড়ে
বাবার কোলে ঘুমচ্ছি অঘোরে।
..................................................
 
কাক পাখি
  
ভোর বিহানে
তুবরী হানে
দুপুর বেলা
যেমনি গেলা
ঘরের চালে বিকাল বেলা
এবঙ আবার ফি-কাল বেলা
ডাকতে থাকে
কা-কা-কা-কা- ডাক
সেই পাখিটা
এই পাখিটা
এই শহরের আদিবাসী
তোমার আমার প্রতিবেশী
কেউ বা বলে অতি বেশি
নগর পাখি- কাক।
 
কেউ বা বলে
        কালো পাখি
        বিশ্রি পাখি
        তার কাছে ভাই কেমনে থাকি
        সারাটাদিন ময়লা ঘেটে
                খাচ্ছে সে যা পাক
        তার কথাটা কেমনে বলি
                হচ্ছে যে না-পাক।
 
যাক-
তোমরা যারা কালো বলো
মন্দ কথা গালও বলো
তাদের কথা থাক
আমার কাছে কাকপাখিটা
বৃষ্টি ধারা ঢলের মতো
ঝর্ণা ঝরা জলের মতো- পাক
 
এই যে পাখি
কাক পাখ্খি
আমার কাছে কাজের পাখি
কাজের বেলা দেয় না ফাঁকি
        কাজ করে নেয় ভোজ
এই শহরের ময়লাগুলো
এঁটো সেঁটো জয়লাগুলো
        সফ করে দেয় রোজ
তুমি কি তার খোঁজ নিয়েছো?
তোমার খাবার ভোজ দিয়েছো?
        দেওনি তারে
        নেওনি তারে খোঁজ
 
এই পাখিকে গাল দিয়ে কি
বলতে পারি অপয়া অপ্সরী
তোমরা যারা বকা দিলে
              জকা দিলে
আজকে সবাই একসাথে কও- সরি।
..................................................
 
পা
 
রোদ ঝলমল রোদের মাঝে
যে ছেলেটি থাকতো কাজে
হঠাৎ সেদিন-
        মেশিনে পাকাটে
        বেধে গিয়ে নাটে।
তার-
কাটা পাটা
হয় না ভালো আর
একটি পায়ে চলতে হবে তার।
এক পা'য়ে সে
লাফ দিয়ে যে
লাফ দিয়ে সে হাঁটে
এমন করে সময় যে তার কাটে।
 
পা'য়ের শোকে ঘুম গেলো তার উড়ে
তার মনে হয়-
নিজের থেকে নিজেই থাকি দূরে
পা ছাড়া কি একটি জীবন চলে
এমনিভাবে
আমার জীবন গেলোই বুঝি জলে।
 
সেই ছেলেটি
এই ছেলেটি
        পা'য়ের শোকে
        মনের দুখে
                মৃত্যুটাকে ডাকে
মৃত্যু কোথায়! মৃত্যুটাকে হাঁকে।
ঠিক তখনি- টিভির ভেতর দেখে
        এক পা'য়ে এক শিশু
দৌড়ে গিয়ে পাথর ছুড়ে মারে
ইসরাইলি হানাদারের ঘাড়ে
যেনো-
এক পা'য়ে তার হাজার পা'য়ের রেশ
এক পা'য়ে সে যুদ্ধ করে
        করবে স্বাধীন দেশ।
 
এমনতর দৃশ্য দেখে
                তার-
        পা হারাবার
দুঃখ গেলো ভুলে
শোকের ছায়া মুছে গেলো
হাজার রঙিন ফুলে।
..................................................
 
লেজকাটা শিয়াল
 
মুরগি চুরি করতে শিয়াল
গেল চলে ফার্মে
দুইটা কুকুর করল তাড়া
আটকে গেলো তার'মে
 
হেঁচকা টানে খুলতে গিয়ে
কাঁটা তারের পেঁচটা
তারের ফলায় গেলো কেটে
লম্বা প্রিয় লেজটা
 
লেজের শোকে কাঁদে শিয়াল
একা বসে ঘরে
এই অপমান যায় না সওয়া
বুদ্ধি ফিকির করে
 
আমার যখন থাকবে না লেজ
থাকবে না আর কারো
কাটতে হবে সবার লেজা
যেমন করে পারো
 
সভা ডেকে বুঝায় শিয়াল
লেজের তো নেই দরকার
এতো বড় লেজের জন্য
টেক্স ধরে সরকার
 
শুধু শুধু লেজটা রাখা
সম্মান হানিকার
তারচে সবাই লেজটা কেটে
আমার সমান কর
 
দেখনা চেয়ে মানুষ জাতির
একটুও নেই লেজ
মহাবীরের মতোই তারা
দেখায় কতো তেজ
 
লেজটা থাকা আমার মতে
ছোট লোকের স্বভাব
তার পরেও লেজা ছাড়া
শিয়াল বড় অভাব।
..................................................
 
বিচার
 
বিড়াল ভাবে আমার কেনো
চিকন হলো স্বর
আমায় দেখে বাঘের মতো
        পায় না কেনো ডর
কুকুরটাও দেখলে আমায়
ঘেউ করে কয়সর
দেখলে কুকুর তাইতো আমার
             গায়ে আসে জ্বর।
 
প্রভূ তোমার বিচারখানা
সমান হলো না
কাউকে দেবে তামাম জাহান
কাউকে দেবে না।
 
প্রভূ বলে- ‘দিচ্ছি তোমায়
বাঘের মতো ডাক
বাঘের মতো কণ্ঠ দিয়ে
     বিড়াল দিলো হাক
ঘরের মানুষ ভয় পেয়ে কয়
বাঘ পড়েছে বাঘ
লাঠি-বেন্দা-শাবল নিয়ে
     করলো সবাই তাক।
 
বাঘ হয়েছে বাঘের মামি-
বিড়ালটাকে মার
ভণ্ড বিড়াল বাঘ সেজেছে
ভেঙ্গে ফেলো ঘাড়।
 
মারের চোটে ভণ্ড বিড়াল
ক্ষত দিলো তার নাক
বলল আরো- বাঘের চেয়ে
        ভালো আমার ডাক
প্রভূর বিচার ঠিক ছিলো ভাই
আমার চাওয়াগুল
আমার মতো কেউ বল না
        প্রভূর বিচার ভুল।
 
যার যা যেমন আদল হবে
যার যা যেমন রূপ
মহান প্রভূ সব দিয়েছেন
রূপ সে অপরূপ।
..................................................
 
নীলপাখি
  
নীল পাখিরা উড়াল দিলো
জানলা খুলে
নীলাকাশে মেঘের ভেলা
যেমনি করে যায় হারিয়ে
স্বপ্ন ভুলে
তেমনি করে নীল চাষীরা
থাকলো চেয়ে আউলা চুলে
 
নীলের জন্য নীল চাষীদের
স্বপ্নগুলো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
        -আগ বাড়িয়ে
যায় না কোথাও উড়াল দিয়ে
 
উড়াল দিলে
স্বপ্ন নীলে
নীলকরেরা ঝাপটে ধরে
-বলবে এবার যা
নীলাকাশে
     নীলচাষীরা
     নীল পাখিরা
     শূন্য করমচা।
..................................................
 
নীল পরীদের দল
 
নীল পরীদের দল
জোছনা রাতে বলল আমায় চল
কোথায় যাবো-     ছোট্ট পরী কনে
          প্রশ্ন জাগে মনে
নীলকুমারী বলল হেসে
আমার রঙিন দেশে
               আমি বলি না
                           না
আম্মু দেবে বকা
       তখন আমার কান্না পাবে
       আম্মু বলে আর না যাবে
                            দূরে
খুঁজবো আমি কেমন করে
          নীল দুনিয়া ঘুরে
তাইতো বলি না
আম্মু ছাড়া আমারতো ভাই
ভালো লাগে না
পরী তখন রঙিন পাখা দোলায়
           মনটা আমার ভুলায়
হাত ধরে কয়-           চল
এমন সময় না করা যায় বল।
..................................................
 
মেঘনার জন্য ছড়া
  
কালো চুলের পেখম মেলে
মেঘনা নদীর তীরে
                      কীরে
আসবি আবার ফিরে
আসলে তোকে গড়িয়ে দেবো
                 পরিয়ে দেবো
                            দুল
দোল দোলনী খেলবে তখন
         কানের সোনা-ফুল
আর কি চাবি
আর কি পাবি
          বল
          চল
তোকে দেবো আর যা আছে
                তার যা আছে
                এবঙ আমার সব
দেখবি তখন জগৎজুড়ে
                সোনালি উৎসব।
..................................................
 
আমার কলম খাতা
  
আমার কথা কেউ শোনে না তাই
একলা একা মনের কথা
              খাতায় লিখে যাই
 
সবাই ভাবে কেমন বোকা ছেলে
সময় কাটায় খাতার সাথে খেলে
 
আমি তো ভাই খাতায় আমায় এঁকে
              কথার কথা লেখে
              খেলতে পারি মাঠে
              পায়ে কাদা মেখে
              হাঁটতে পারি হাটে
আবার-
ইচ্ছে হলে বৃষ্টিতে যাই ভিজে
কি যে মজা বৃষ্টিতে না ভিজে
মনে মনে ভিজছি আমি নিজে
 
তোমরা কি তা পারো?
 
মনে মনে মন্ডা মিঠাই খেতে
পাখনা মেলে নীল আকাশে যেতে
                    আমি পারি
                           পারি
কারণ আমার কলম খাতা
              আমার- সঞ্চারী।
..................................................
 
রাজার রাজা
  
এক যে ছিলো রাজার রাজা রাজ্য পড়ার ঘর
প্রজারা সব সুখেই থাকে খোস থাকে অন্তর।
 
প্রজা হলো চেয়ার টেবিল খাতা কলম বই
আরো আছে পুষি বিড়াল ছাদে ওঠার মই।
 
রাজ্যপটে মহান রাজা
কাউকে তিনি দেন না সাজা
উদার রাজার মন
প্রজার সেবা করে রাজার কাটে সারাক্ষণ।
 
কলম খাতার সেবা করে লিখে প্রতি বেলা
রঙ-তুলিটার সেবা করে আঁকে ছবি মেলা
সেবা করে চেয়ার টেবিল- মুছে নিজের হাতে
বিড়ালটাকে খাবার দেবে সকাল দুপুর রাতে
সেবা করে নিজের পোষাক নিজে নিজে পরে
সেবা করে ছোট্ট মইয়ে ছাদের ওপর চড়ে।
 
এমন রজার সেবা পেয়ে- প্রজারা খুব খুশি
আনন্দে তাই নাচতে থাকে চেয়ার টেবিল পুষি।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.