ত্রাণ বিতরণ- আমাদের করণীয়_সালমা বিনতে শামছ

 

কোন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে যাবো না। কথা হলো এই যে আমাদের দান, অনুদান, সাহায্য' এসবে নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। আমি মনে করি বাঙ্গালি জাতি বর্বর, নির্মম বা অত্যাচারী নয়। হতে পারে একটু আবেগী এবং হুজুগে। দেশের যে কোন দুর্যোগ, মহামারীতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়, প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক এবং ব্যক্তি বিশেষ বড় অংকের অর্থ দান করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যতটা অনুদানের জন্য নির্ধারণ করা হয়। তা কি সুষ্ঠু ভাবে সবটা কার্যকর করা হয়? হয়তো না। তার কারন এই সকল অনুদান বহু হাত ঘুরে এসে সাধারন জনগনের হাতে যায়। তবে সব এক নয়। এর মাঝেও অনেক ব্যতিক্রম আছে। যারা তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছে।
 
মূল কথা এটা নয়। কথা হলো- "সাহায্য করার নিতীমালা" আপনি কি জানেন এই যে ঢাক ঢোল পিটিয়ে আমরা যে সাহায্য দিচ্ছি জনগনকে, তারা লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকে আর আমরা এক কেজি চালের একটা প্যাকেট দিতে দশজন হাতে ধরিয়ে ক্যামরার হাসি মুখে পোজ নিচ্ছে? এটা কোন জাতীয় সাহায্য ভাই?
 
'শো-আপ' শব্দটা আমার অপছন্দনীয় নয়। ক্ষেত্রে বিশেষ আমি শো-আপের পক্ষ অবলম্বন করি। কিন্তু এটা কোন জাতীয় শো-আপ- পাঁচ জন মিলে একটা 'সাবান' তুলে দেন, আর সেটাকে হাসি মুখে ক্যামরায় বন্দি করেন। আমাদের সমাজে আমরা সাধারনত তিন শ্রেনীর মানুষকে দেখি .উচ্চবিত্ত .মধ্যবিত্ত .নিন্মবিত্ত। অভ্যন্তরীণ ভাবে এই তিন শ্রেনীর প্রত্যেক কে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়। অনেকটা 'Tence' তথা 'কালে' প্রকারভেদ এর মত। এর মধ্যবিত্ত টাই নিলাম- মধ্যবিত্তের তিনটা ভাগ হলো . উচ্চ মধ্যবিত্ত- . মধ্যম মধ্যবিত্ত- . নিন্ম মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্ত সম্পর্কে বিশাল রচনা লেখার প্রয়োজন নেই, সম্ভবত আমরা ৮০% মানুষ অবস্থান সম্পর্কে ভালোই জ্ঞাত।
 
আমাদের দেশে সাহায্য বা দান করার ধরণ এমন যে বিশাল একটা স্থান জুড়ে বড় বড় কিছু ব্যক্তিবর্গ এসে বসবেন তাদের সামনে সমস্ত দানের সামগ্রী এবং তারও সামনে মানুষের লম্বা একটি লাইন, একেক করে আসবে দানের সামগ্রী নিয়ে যাবে। এবার একটি আভ্যন্তরীণ কথা বলি, আশা করি কেউ মনে ক্ষোপ রাখবেন না, আমি কাউকে ছোট করে বা কটাক্ষ করে বলছি না- আমাদের সমাজে কিছু নিন্মবিত্ত রয়েছে যাদের ব্যক্তিত্ব বা আত্মসন্মান টা কম বা নাই বললেও চলে (আবারো বলছি নেগেটিভ ভাবে নিবেন না) এই যেমন ছিচকে চোর, পকেটমার, ছিনতাইকারী বা আরো কিছু ছোট খাট পেশার সাথে জড়িত যারা এক বেলা নেশা করার জন্য অনেক কিছুই করতে পারে। জাতীয় মানুষগুলো সহজেই তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করে নিতে পারে, যেভাবেই হোক। ব্যক্তিত্ব নেই বিধায় তারা যে কোন ত্রাণ বিতরণে তারা উপস্থিত থেকে তা সংগ্রহ করতে পারে।
এর মাঝে কিছু মানুষ আছে যাদের স্বভাবগত কারনে একের অধিক অধিক ত্রাণ সামগ্রী যোগাড় করে থাকে। অথচ তাদের ঘরে পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে। আমি বলছি না তাদের সাহায্য করা লাগবে না! অবশ্যই লাগবে।
 
কিন্তু একটু খোঁজ করে দেখুন আমাদের সমাজের আনাচে কানাচে বহু মধ্যম মধ্যবিত্ত নিন্মমধ্যবিত্তরা রয়েছে যারা একমাত্র ব্যক্তিত্বের ভয়ে পারে না স্বশরীরে গিয়ে ত্রান নিয়ে আসতে। এখন আপনি বলতে পারেন 'জীবন আগে কিসের ব্যক্তিত্ব' না ভাই এটা বলা যায় না। আপনার সন্তান স্কুলে পড়ছে, আপনি সামান্য রোজগার করেন, সন্তানকে আদর্শ শিক্ষা দেন এখন আজ সন্তানের সামনে আপনি লম্বা লাইনে অল্প কিছু সামগ্রী আনতে পারবেন না, আপনার বিবেকবোধ আপনাকে তা সায় দিবে না। তার চেয়ে বরং এক বেলা না খেয়ে থাকাটাকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
 
পরিশেষে প্রথম কথাটা আবার বলছি "সাহায্য করার নিতীমালা"  চার পাঁচ গ্রাম না জানিয়ে ব্যক্তি বিশেষ বা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিক কাউকে সাহায্য করতে চান তাহলে প্লিজ, নিরবে পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করুন। ভলান্টিয়ার রাখুন, তারা খোঁজ নিক। কে কষ্টে আছে। কার সাহায্য প্রয়োজন। নিরবে তার বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসুন, যাতে কাকপক্ষী না জানে। শুধু শুধু ক্যামরার সামনে তাকে কিছু দিয়ে লজ্জায় ফেলবেন না। আপনাদের এই ক্যমরার সামনে যাওয়ার ভয়ে বহু অভুক্ত মানুষ আছে, না খেয়ে থাকবে তবুও যাবে না। কি করবেন বলুন- তাদের আত্মসন্মান আছে। তারা তাদের সন্তানের কাছে আদর্শ পিতা হতে চায়। হাত পাত তে চায় না।
 
আরে ভাই ধর্মীয় বিষয় বাদ দিন (আপনি দিলে দিন, আমি পারবো না, দানের ক্ষেত্রে মূল্যবান সে বাণী "তুমি ডান হাত দিয়ে দান করো যাতে বাম হাত না জানে")  অন্তত মানবিক দিক বিবেচনা করুন। সমাজে অনেক মানুষ এখনো না খেয়ে আছে, হয়ত তারা বাহ্যিক ভাবে চাকচিক্য পূর্ন। খবর নিয়ে দেখুন খুব কষ্টে আছে। রাতের আধারে গিয়ে তাকে সাহায্য করুন। সবার সামনে লজ্জা দিয়ে নয়। 'সিক্রেট সুপারস্টার' হওয়ার চেষ্টা করুন দেখবেন কলিজা ঠান্ডা থাকবে।  মানুষ মানুষের জন্য, আজ আপনি একটি পরিবারের মুখে হাসি ফুটাচ্ছেন সৃষ্টি কর্তা আপনার জন্য এক সমুদ্র হাসি উপহার দিবেন।
 
একদিন করোনা শান্ত হবে। তার আগ পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন, যে যে ধর্মের আছেন, সে ধর্ম সঠিক ভাবে পালন করুন। পৃথিবী আবার জেগে উঠবে।
 
 
চার, এপ্রিল || বিশ
ধামরাই || ঢাকা

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.