বীররসের চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান_আমিনুল ইসলাম

 
আমরা বলি বাঙালি বীরের জাত কিন্তু বাস্তবে বাঙালি জাতির কোনো "বীররসের" কবিতা,গান বা শিল্পকর্ম ছিলো না। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এসে প্রথমবারের মতো এবং অতুলনীয় সাফল্যের সাথে বাংলা কবিতায়, গানে, প্রবন্ধে সেই বীররসের প্রবর্তন সংযোজন ঘটান,---- " আমি সহসা আমারে চিনেছি আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাধ" এই চেতনায় নিজেকে আবিস্কার করে ( ভাত খেয়ে খেয়ে "ভেতো ভীতু") বাঙালি প্রথমবারের মতো বলে উঠেছিল," বলো বীর, চিরউন্নত শির/ শির নেহারি আমারি নতশির শিখর হিমাদ্রীর! " বাঙালির আত্ম-উন্মোচনের আত্ম-উদবোধনের সেই পথ বেয়ে আল মাহমুদ রচনা করেন " সোনালি কাবিন" যেখানে গ্রামের কৃষাণ- কৃষাণীরা সাহসী, বলিষ্ঠবাহু এবং অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে অকুতোভয়---
" খোরাকির শত্রু আনে যত হিংস্র লোভের আঘাত,/
আমরা ফিরাবো সেই খাদ্যলোভী রাহুর তরাস।/
নদীর চরের প্রতি জলে-খাওয়া ডাঙার কিষাণ /
যেমন প্রতিষ্ঠা করে বাজখাই অধিকার তার,/
তোমার মস্তকে তেমনি তুলে আছি ন্যায়ের নিশান,/
দয়া দাবিতে দৃঢ় দীপ্তবর্ণ পতাকা আমার।" ( সোনালি কাবিন)
 
এই " বাজখাই অধিকার " প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই " খোরাকির শত্রু"দের প্রতিহত পরাজিত করার জন্য যেই "বলিষ্ঠবাহু কিষাণ-কিষাণী" প্রয়োজন, তাদেরই ছবি এঁকে গেছেন বাংলাদেশের গৌরব, বাঙালির গৌরব বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। আল মাহমুদের মতো তিনিও কৃষিপ্রধান গ্রামবাংলার কৃষিজীবী সাধারণ মানুষের বিজয় সুদিনের স্বপ্ন দেখেছেন। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল কারিগর কৃষকগণ। তাদের বাহুর উপর ভর করে টিকে থাকা বাংলাদেশের। নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে তারা টিকে থাকে। তাদেরকে বাঁশের কেল্লার তিতুমীর হতে হয়, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের " পদ্মানদীর মাঝি" হতে হয়। তারা দুর্বল হলে চলবে না। আর শোষণ নিপীড়ন বঞ্চনা এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য তাদের মানসিক শারীরিকভাবে বলশালী হওয়ার বিকল্প নেই। সেইজন্য তাঁর আঁকা গ্রামীণ নরনারী অমন মাংসল বলিষ্ঠপেশী। তাঁর পুরুষরা এক একজন বলশালী বীর। এবং তাঁর নারীরা ইউরোপের বলনৃত্যের ক্ষীণতনু পুতুল নয়, নয় বলিষ্ঠবাহু পুরুষ সালমান খানদের পাশে কারিনা কাপুরের মতো জিরো ফিগারের দুর্বল মানবী। তাঁর নারীরা পুঁথির বীরনারী সোনাভানের মতো। তাঁর নারীরা শক্ত পেশীবহুল। তাঁর নারীরা উন্নত বৃহৎ স্তনা যারা বীর সন্তান জন্মদানে এবং সন্তানদের পেটভরে বুকের দুধদানে সক্ষম। বিষয়টি না বুঝলে তাঁর আঁকা এসব ছবিকে উদ্ভট কিম্ভুতকিমাকার মনে হবে, মনে হবে আবোলতাবোল। কিন্তু এস এম সুলতান একজন " বিদ্রোহী চিত্রশিল্পী ", ঠিক কাজী নজরুল ইসলাম যেমন " বিদ্রোহী কবি" প্রাসঙ্গিকভাবে বলি, আগ্রহীরা প্রখ্যাত কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাই রচিত " সুলতান " উপন্যাসটি পড়ে দেখতে পারেন। বাংলার কৃষকরা আগে নীলকর দস্যু, জমিদার সামন্তদের দ্বারা শোষিত, নিগৃহীত অত্যাচারিত ছিল। আজও তারা অনেক দুর্বল, অর্থনৈতিকভাবে পরাজিত। বেণিয়া-বিশ্বায়ন প্রযোজিত "মুনাফাখোর প্রকট পুঁজিবাদ" আজ অনেক বেশি দাঁতাল আগ্রাসী। এই সময় এস এস সুলতানের স্বপ্ন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। তাঁর চিত্রশিল্পের পাঠগ্রহণ আরও বেশি তাৎপর্য বহন করছে। আজ সেই মহান শিল্পী এস এস সুলতানের ৯৫তম শুভ জন্মদিন। তাঁর এই শুভ জন্মদিনে তাঁর প্রতি, তাঁর সৃষ্টির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.