ভয়ংকর জিনের আছর_কবির কাঞ্চন : পর্ব-১

 

সূর্যটা ঠিক মাথার ওপর থেকে কিরণ দিচ্ছে। রোদের তীব্রতা ক্ষণেক্ষণে বাড়ছে। এইমাত্র মিশা ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরেছে। সায়েন্স ফিকশন পড়তে পড়তে ভূত ভীতি ওর মন থেকে সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেছে। ঝটপট দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে সোফায় ক্লান্ত শরীরটা আলতোভাবে রেখে চোখ বুজে সে। মুহূর্তে দুচোখে ঘুমের স্নিগ্ধ পরশ নেমে আসে। বিকেলে সে তার প্রিয় বন্ধু জামালকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আজ সেখানে তার প্রাইভেটের ছাত্রী বিন্দুর বোন হয়েছে। দীর্ঘদিন প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদে টিউশন বাসার সবার সাথ তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠেছে। তারপর বিন্দুর মা তাকে নিজের আপন ভাইয়ের মতো জানেন। মিশাও তাকে আপন বোনের মতো জানে। তাই তো নিজের সকল ব্যস্ততার ইতি টেনে মেডিকেলের দিকে ছুটে আসছে সে।
 
মেডিকেলে পৌঁছে প্রিয় মানুষের সাক্ষাৎ লাভ করে তারা। আপুর পাশে ফুটফুটে সুন্দরী একটি মেয়েশিশুকে দেখে কিছুক্ষণ আনমনে চেয়ে থাকে সে। যেন আপুরই প্রতিচ্ছবি। তোয়ালে মোড়ানো মেয়েকে কোলে নিয়ে আদরে আদরে বলতে লাগলো, -আপু, মেয়ে কিন্তু আপনার ফটোকপি হয়েছে।
 
মিশার এমন মন্তব্যে উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। এরপর মিশা বিন্দুর মায়ের পাশে গিয়ে বসলো। আপুর দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-এখন কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। কে? ওকে আগে কখনও দেখেছি বলে মনে হয় না।
-না, আগে কখনও দেখেননি। আমার বন্ধু, জামাল। সিটি কলেজে ম্যানেজমেন্টে পড়ছে।
 
বিন্দুর মা তড়িগড়ি করে বললেন,
-এই জামাল, দাঁড়িয়ে কেন? বসো।
-ধন্যবাদ, আপু।
এই বলে জামাল পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো। এরপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার পর আপুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আগ্রাবাদ পর্যন্ত এসে দুজনে গাড়ি থেকে নেমে গেল। বাদামতলী বাস স্ট্যান্ডে উদ্দেশ্যহীনভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। মিশা জামালকে দাঁড় করিয়ে পাশের ছোট্ট পান-সিগারেটের দোকান থেকে একটা বেনসন সিগারেট নিয়ে তা জ্বালিয়ে নিলো। এবার পরপর কয়েক টান নিয়ে জামালের সামনে এসে বলল, - খাবি, দোস্ত কী যে মজা! তাছাড়া এতক্ষণ কোনদিকে যাবো ব্রেইনে আসছিল না। এখন সিগারেট ধরালাম অমনি মাথায় গিজগিজ করে বুদ্ধি এসে গেল। দোস্ত মাত্র সাড়ে ছয়টা বাজছে। চল, আমরা কিছু সময় আক্তারুজ্জামান সেন্টারে গিয়ে সুন্দরী মেয়েদের খুঁজি। হয়তো মনের মতো কাউকে পেয়েও যেতে পারি।
জামাল ভর্ৎসনার হাসি দিয়ে বলল,
-সিগারেট খেলে বুদ্ধি আসে না। আসে কুবুদ্ধি। খারাপের কাছে ভালো কিছু আশা করা বোকাদের কাজ। তোকে কতোবার বলেছি, সিগারেট খাসনে। কিন্তু আমার কথা শুনলি না। আবার সিগারেট মুখে দিয়েছিস। তুই এভাবে সিগারেট খেলে আমি কিন্তু আর তোর সাথে আর মিশবো না। যে বন্ধু নিজে সিগারেট খায় এবং বন্ধুকেও খেতে উদ্বুদ্ধ করে সে তো ভালো বন্ধু হতে পারে না।
জামালের কথাগুলো মিশা অপকটে সত্য ন্যায্য বলে মেনে নিয়ে বলল,
-দোস্ত, আমি দুঃখিত। এই তোকে ছুঁয়ে আমি কথা দিলাম আর কোনদিন সিগারেট ছুঁবো না।
 
জামাল মিশার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে মনে মনে ভাবলো-
ওর মুখের উপর এভাবে খোঁচা মেরে বলা ঠিক হয়নি। বন্ধু মানুষ। পরেও বলতে পারতাম।
আবার ভাবলো-
না বলে তো উপায় নেই। এসব ক্ষেত্রে সামনাসামনি লজ্জা দিলে ঔষধে ধরে।
এই ভেবে মিশাকে আবার বলল,
-সিগারেট ফেলে দে। চল, আক্তারুজ্জামান সেন্টারের দিকে যাই।
-আচ্ছা।
দুজনে গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। হঠাৎ একটি মেয়ের সাথে জোরে ধাক্কা লাগে মিশার। সে একটু ব্যথা পেয়ে মেয়েটির ওপর চটে যায়। মেয়েটিও যে ব্যথা পেয়েছে তা তার মনে হলো না।
 
মেয়েটি মিশার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল,
-এই যে ভাই, আপনি নিজে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে আমাকে ব্যথা দিলেন। আবার আমার ওপর রাগছেন। এটা কেমন ভদ্রতা!
জামাল বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য করলো। সে দেখলো এতে মেয়েটির কোন দোষ নেই। তার বন্ধুই মেয়েটির সাথে অসতর্কতা বশতঃ ধাক্কা খেয়েছে। এবং মেয়েটির সাথে অশোভন আচরণ করেছে। এবার মেয়েটির সামনে এসে বলল,
-আপু, রাগ করবেন না। খেয়াল করেনি। অসতর্কতা বশতঃ আপনার সাথে ধাক্কা লেগেছে। সরি, উয়ী আর রিয়ালী সরি।
মেয়েটি আর কোন কথা বাড়ালো না। কিন্তু মিশা পাশ থেকে বলে উঠলো,
-এই জামাল, তুই আবার কার কাছে সরি বলছিস। মেয়ে মানুষের কাছে সরি বলে ভীরু কাপুরুষেরা। ছেলেরা দোষ করলেও মেয়েরাই সরি বলবে। এটাই নিয়ম।
মিশার এমন কথায় মেয়েটি রক্ত চোখে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। জামাল ওর হাত ধরে জোর করে তাকে বাইরে নিয়ে এলো।
ইতোমধ্যে একখানা সিএনজি খালি দেখে তা ভাড়া করে নিলো।
সিএনজি ছুটছে বন্দরটিলা বাজারের দিকে। মিশাকে জামাল তার ভুল ধরিয়ে দিতে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় আলোচনা করলো।
মিশা উত্তজিত হয়ে বলল,
-তুই বেশি বেশি বলছিস। সামান্য একটা মেয়ের সামনে তুই বারবার সরি বলেছিস। আরে বেটা, এইসব মেয়েদের বেশি প্রশ্রয় দিতে নেই। আমি যদি প্রথমেই সরি বলতাম তো দেখতি ইজ্জত নিয়ে বাসায় ফেরা কষ্টসাধ্য হতো। দুনিয়ার আর সকলকে তোর মতো ভাবিস না। শেষে ফসলাতে হবে।
জামাল মন খারাপ করে বলল,
-আমি মানছি মেয়েটার কাছে সরি বলেছি। কিন্তু মেয়েটি তো নির্দোষ ছিল।
-আরে বেটা, আবার একই কথা বলছিস। এই তোদের মতো বোকাসোকা ছেলেদের কারণেই আমাদের ছেলেদের মানসম্মান বলে কিছুই থাকে না।  ওসব বাদ দে।
মিশার এমন মন্তব্যে জামাল সিএনজির এককোণে মন খারাপ করে বসে রইলো।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.