লন্ডনে যাপিত জীবন_সাঈদ চৌধুরী : পর্ব-১৬
বিসিএ নেতা পাশা খন্দকার একজন পরিতৃপ্ত মানুষ
নেতৃত্ব একটা সহজাত ব্যাপার। অনুকূল পরিবেশ পেলে নেতৃত্বের সুপ্ত গুণাবলি প্রকাশ পায়। তবে চেষ্টা করে খুব একটা বড় হওয়া যায়না। অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা সকলের হয় না। একজন কবি কিংবা শিল্পী যেমন শুধু সাধনার ফসল নয়। সঙ্গীত শিল্পির সুর লহরি বা তরঙ্গ সৃষ্টির যে ক্ষমতা আর কবির শব্দকোষের জ্ঞাত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ অনুধাবন- এসব স্রষ্টার বিশেষ দান।
পাশা খন্দকার প্রভাব বিস্তারকারী সংগঠক। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দিক থেকেও। তিনি বুদ্ধিমান, কৌতূহলী, আত্মবিশ্বাসী ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। নেতৃত্বের সঙ্গে সমাজের পরিবর্তন ও উন্নয়নের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিসিএ নেতা হিসেবে সে চেষ্টাই চালিয়েছেন অবিরাম। তার নেতৃত্ব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
পাশা খন্দকার সিলেট শহরের একটি বনেদি পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছেন। বাবা খন্দকার আব্দুল মুছাব্বির ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক ছিলেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশ নেভীতে কাজ করেছেন। ষাটের দশকে লন্ডন চলে আসেন। উষ্টার শায়্যার তাজ মহল রেষ্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী ছিলেন তিনি।
ছেলেবেলায় চট্টগ্রামে চাচার কাছে বড় হয়েছেন পাশা খন্দকার। চাচা খন্দকার আব্দুস সবুর সিভিল সার্ভেন্ট ছিলেন।
পাশা খন্দকার ৮ম শ্রেণী থেকেই চাত্র রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। এক সময় বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন চট্রগাম সিটি কমিটির এসিস্টেন সেক্রেটারি ছিলেন। পরবর্তীতে সিলেট এমসি কলেজে চলে আসেন। এখানে বাংলাদেশ চাত্রলীগ (জাসদ) সিলেটে শাখার আহবায়ক কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্র লীগে তখন জাসদ নেতা লুকমান আহমদ, ম আ মুক্তাদির প্রমুখ সামনের কাতারে ছিলেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন রাশেদ খান মেনন এমপি।
চাত্র জীবনেই মাওলানা ভাসানীর সাহচর্য পেয়েছেন পাশা খন্দকার। বাংলাদেশের রাজনীতির অবিসংবাদিত নেতা মওলানা ভাসানী। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভারত-পাকিস্তান আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন আপোষহীন রাজনীতিক।
পাশা খন্দকার এমসি কলেজের ছাত্র অবস্তায় ১৯৮০ সালে লন্ডন আসেন। ১৯৯০ সালে গোলাপগঞ্জ ফুলবাড়ী গ্রামের সুহেল আহমদ চৌধুরীর মেয়ে দিপিকা চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন তারা ঢাকার ধানমন্ডিতে বসবাস করতেন।
ব্যবসায়িক জীবনে পাশা খন্দকার ১৯৮৪ সালে কেন্টে গান্ধি তান্দুরী প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নিউ রমনি এলাকায় কারি লাউঞ্জ সহ কেন্ট ও সারেতে পর্যায়ক্রমে ৭টা রেস্টুরেন্ট করেছেন।
পাশা খন্দকার সেবামূলক কার্যক্রমের সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিসিএ সহ বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ভেলরি টেইলরের জন্য বিভিন্ন রেষ্টুরেন্টে চ্যারেটি ফান্ড রেইজ করেছেন। ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের ’ভীষন বাংলাদেশ’ প্রকল্প বাস্তবায়নেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এই প্রকল্পের জন্য বিলেতের বিভিন্ন এলাকায় বছরব্যাপী ফান্ড সংগ্রহ করেছেন।
পাশা খন্দকার লেবার পার্টির সিনিয়র এক্টিভিস্ট। দুই বছর সিএলপি’র দায়িত্বে ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে জড়িত ছিলেন। লেবার পার্টির সিনিয়র নেতা হিলারী বেন ও বর্তমান লিডার স্যার কেয়ার স্টারমার জন্যও কাজ করেছেন।
২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল ট্রাফালগার স্কোয়ারে পাশা খন্দকারের বক্তব্য যারা শুনেছেন, তাদের নিঃসন্দেহে মনে আছে। অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মত প্রাঞ্জল ভাষায় হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য রাখেন তিনি। সম্ভবত তার জীবনে এটা সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত ছিলো। বহু জাতির হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিসিএ দীর্ঘদিন থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সমূহে কারি শিল্পের স্টাফ সংকট নিরসনের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করছে।কারি ইন্ডাস্ট্রির বিবদমান সমস্যা কাটিয়ে উঠা ও বৃটেনের ‘কারি লাভারস‘দের কাছে এর স্বাদ পৌছে দেয়া আমাদের কাজ। আমরা কারি ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে আরও জোরালো অবদান রাখতে চাই।
বৃটিশ পার্লামেন্ট মেম্বার ও পলিটিকেল লিডার সহ হাজার হাজার রেস্তোরা শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন সেখানে। বাংলাদেশী ছাড়াও ছিলেন ভারতীয়, পাকিস্তানি, চীনা, তুর্কি ও থাই ক্যাটারিং ব্যবসার মালিক-শ্রমিক সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। তাদের দাবি ছিল ৩.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের শিল্প পঙ্গু হয়ে পড়ছে। আমরা মাদক ব্যবসা করছি না, আমরা প্রাত্যহিক খাবার বিক্রি করছি। অবৈধ শ্রমিক সন্ধানের নামে রেস্তোরা গুলিতে বর্ডার অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এজেন্সির পুলিশী অভিযান বন্ধ করতে হবে। এটা ব্যবসাকে মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। কর্মচারি সংকট এড়াতে সরকারকে নতুন অভিবাসন বিধি শিথিল করতে হবে। করতেই হবে।
লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে এথনিক ক্যাটারিং অ্যালায়েন্স এসোসিয়েশন (Ethnic Catering Alliance Association) নামে যেসব সংগঠন সমবেত হয়েছিল, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ) তার অন্যতম। বৃটেনে এশিয়ান ১৮ হাজার রেষ্টুরেন্টের মধ্যে সাড়ে নয় হাজার বাংলাদেশী। অবশ্য অনেকে অনুমান নির্ভর ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা বলেন। আমি ২০০৭ সালে ইউকে এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট ডাইরেক্টরিতে সকলের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেছি। প্রমানিত হয়েছে ভারতীয়,পাকিস্তানি, চীনা, তুর্কি ও থাই মিলেও আমাদের চেয়ে কম রেষ্টুরেন্ট। ফলে ক্যাটারিং ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের মানুষ বেশী এবং ট্রাফালগার স্কোয়ারেও বাংলাদেশী মানুষের উপসস্থিতি ও নেতৃত্বের অবস্থান শক্তিশালী ছিল।
চলমান অভিবাসন নীতিমালার ফলে কারি ইন্ডাস্ট্রি যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে সেদিকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই বিক্ষোভের লক্ষ্য ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের শ্রমিকদের জন্য নতুন পয়েন্ট-ভিত্তিক অভিবাসন ব্যবস্থার অধীনে শেফদের ইংরাজীতে কথা বলা এবং বৃটেনে কাজ করার এবং থাকার জন্য একাডেমিক যোগ্যতা দরকার বলে যে আইন হয়েছে তার অবসান ঘটানো এবং অননুমোদিত শ্রমিকদের নিয়মিত করাই হল উদ্দেশ্য।
লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ের স্টারমার এর সাথে পাশা খন্দকার বেশ ঘনিষ্ট। গত ১ মার্চ ২০২০ ক্যামডেন আসনের এমপি স্টারমারের প্রচারের জন্য তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে তিনি ভোজ সভার আয়োজন করেন।বিভিন্ন শহর থেকে আসা লেবার সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার মেয়ে বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক সহ বেশ কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্য, কাউন্সিলর এবং কমিউনিটি নেতা এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
লেবার পার্টির নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য দলের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সদস্যদের সমর্থন চান স্যার কিয়ের স্টারমার। স্টিভেন টিমস এমপি, টিউলিপ সিদ্দিক এমপি, সীমা মালহোত্রা এমপি, ব্যারোনেস মনজিলা পলা উদ্দিন, নিউহ্যাম কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র রোকসানা ফিয়াজ, কাউন্সিলার আব্দুল হাই, বিসিএ’র প্রেডিডেন্ট এম এ মুনিম, সাবেক সেক্রেটারি ওলি খান প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য দেন পাশা খন্দকার।
২০১৮ সালে বৃটেনের রাণীর জন্মদিনে পাশা খন্দকার ‘মেম্বার অব দ্যা বৃটিশ অ্যাম্পায়ার (এমবিই)’ খেতাব পেয়েছেন। বাংলাদেশি ক্যাটারিং ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নের বিশেষ অবদান ও তার স্থানীয় এলাকা কেন্টের আইলসফোর্ডে কমিউনিটিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এমবিই খেতাব প্রাপ্তির পর পাশা খন্দকারের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্টানের আয়োজন করে জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকে। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর সোমবার জাঁকজমকপূর্ন এই অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও কমিনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন।
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকের প্রেসিডেন্ট মুহিবুর রহমান মুহিবের সভাপত্বিতে এবং বাংলাদেশ সেন্টারের সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় শুরুতে সংবর্ধিত অতিথি পাশা খন্দকারকে ফুল দিয়ে বরণ করেন এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ।
অনুষ্টানে পাশা খন্দকারের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন চ্যানেল এস’র চেয়ারম্যান ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা আহমদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কামাল ইয়াকুব, সেক্রেটারি অলি খান, জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকে’র সহ-সভাপতি এম এ মুনিম, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা, সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক নবাব উদ্দিন, সাংবাদিক-কলামিষ্ট নজরুল ইসলাম বাসন ও জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকের কোষাধ্যক্ষ এনামুল হক চৌধুরী।
এদিকে পাশা খন্দকার এমবিই খেতাবে ভূষিত হওয়ায় কার্ডিফ বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে গত ৯ ডিসেম্বর কার্ডিফ বাংলাদেশ সেন্টারে এক সংবর্ধনা প্রদান করা হয় । কার্ডিফের ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কাপ্তান মিয়ার সভাপতিত্বে ও রফিকুল ইসলামের পরিচালনায় সভায় পাশা খন্দকারের কর্মময় জীবনের উপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন কার্ডিফ কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটী লর্ড মেয়র কাউন্সিলার আলী আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা আনা মিয়া, বিসিএ নেতা এম এ মুনিম, আমিনুর রশিদ, হারুন তালুকদার, আলী আকবর, জয়নাল উদ্দিন শিবুল ও ফয়ছল আহমেদ ।
বক্তারা বলেন কমিউনিটির গুণী ব্যক্তিদের নিরলস পরিশ্রমে আজ বিলেতের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ব্যবসার অনুকুল পরিবেশ, গড়ে উঠেছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কমিউনিটি স্কুল। তাদের কর্মময় জীবন সর্ম্পকে নবাগাত এবং জন্মসূত্রে বেড়ে উঠা বিলেতের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। তাহলে এই প্রজন্ম একদিন আমাদের কমিউনিটির সেবায় বৃহত্তর ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments