ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কিছু কথা_সুমাইয়া সুলতানা সালওয়া

 
গ্রীক শব্দ Kallos (সুন্দর) এবং  Grafein (লেখা) থেকে ক্যালিগ্রাফি শব্দটির উৎপত্তি। এককথায় সুন্দর হস্তলিপিকে ক্যালিগ্রাফি বা চারুলিপি বলা হয়। তবে পাশ্চাত্য গবেষকরা ক্যালিগ্রাফির সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন যেগুলো পরবর্তী বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো।
 
ক্যালিগ্রাফির জনক :
আরবী ক্যালিগ্রাফির মূল যাত্রার জনক "আবু আলী মুহাম্মদ  ইবনে আলী ইবনে আল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মুকলা আল বাগদাদী" সংক্ষেপে তিনি ইবনে মুকলা নামে প্রসিদ্ধ
 
ফ্রন্ট :
রাজ প্রধান ফ্রন্ট হচ্ছে সুলুস লিপি। এছাড়া নাসখ, দিওয়ানি, কুফি ইত্যাদি লিপি।
 
ক্যালিগ্রাফি আঁকার মৌলিক নিয়ম :
১. ফ্রন্ট/হরফের স্টাইল
শিল্পী কি ট্র্যাডিশনালে ক্যালিগ্রাফি করবেন নাকি ফ্রি-হ্যান্ডে করবেন সেটি একান্তই শিল্পীর উপর নির্ভর করবে।
২. কম্পোজিশন/ফ্রন্টের বিন্যাস
নিজ থেকে কম্পোজিশন করার চেষ্টা করতে হবে। নিজস্ব স্টাইল তৈরী করতে হবে এমনভাবে যেন পৃথিবীর অন্যকোনো ক্যালিগ্রাফারের সাথে না মিলে যায়। তবে কম্পোজিশনে "আল্লাহ" শব্দ থাকলে তা সবার উপরে রাখতে হবে। ক্যালিগ্রাফির কম্পোজিশনের জনক আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সা.
৩. ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইন
ক্যালিগ্রাফির অর্থের উপর ডিপেন্ড করবে এটি। এটি চার প্রকার : এবস্ট্রাক্ট/বিমূর্ত ডিজাইন, সিনারী, জিওম্যাট্রিক্যাল/জ্যামিতিক ডিজাইন (ট্রাডিশনাল) এবং মুনামনামাত/ফুল-লতা-পাতা ডিজাইন (ট্রাডিশনাল)
৪. ফিনিশিং কম্বিনেশন কালার (টোটাল লুকিং)
শিল্পীর মূল লক্ষ্য থাকবে ফ্রন্টের কালার এমন ভাবে ফুটিয়ে তোলা যাতে ব্যাকগ্রাউন্ড কালারের সাথে একদম মানানসই হয়। সবমিলিয়ে দেখতে চমৎকার দেখায়।
 
ক্যালিগ্রাফি যিনি করেন তাকে আরবীতে বলা হয় "খত্তাত/খত্তাতী", বাংলায় "লিপিকার/লিপিশিল্পী, ইংরেজীতে "ক্যালিগ্রাফার"/ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্ট
 
ক্যালিগ্রাফির বৈশিষ্ট্য :
১. সিম্বল/প্রতীক/চিহ্ন/তাশকীল
২. অখন্ডতা
৩. হারমোনি/সাদৃশ্য/মিল
৪. এনসেসট্রি/ক্যালিগ্রাফির ঐতিহ্য
৫. রিদম/ছন্দ
৬. প্রাধান্য
৭. সৃজনশীল স্ফুলিঙ্গ/নিজস্ব সৃজনশীলতা
এই বৈশিষ্ট্যগুলো অবশ্যই ক্যালিগ্রাফিতে থাকতে হবে, তবেই সেটি পারফেক্ট ক্যালিগ্রাফি হবে।
 
কালার/রঙ্গের ভাষা/প্রতীক/অর্থ কি তা জানতে হবে:
১. লাল
প্রত্যয়ী, সাহসিকতা, উত্তেজনা, প্রবলতা, উদ্দীপ্ততা, কর্মশক্তি, যুদ্ধ বিপদের প্রতীক।
২. সবুজ
একঘেয়েমী, কমলতা, সজিবতা, সুস্বাস্থ্য, নিরাময়, প্রশান্তি, উৎপাদন, স্নিগ্ধতা, টাটকা/তাজা/জীবন্ত, নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক ছন্দের প্রতীক। জান্নাতের পোষাকের রং সবুজ।
৩. সাদা
আলো, নিরাপত্তা, শুভ্রতা, সততা, নির্দোষ অবস্থা, সৎগুনাবলী পবিত্রতার প্রতীক।
৪. নীল
বুদ্ধিদ্বীপ্ততা, যোগাযোগ দক্ষতা, প্রশান্তভাব, আস্থা, প্রত্যয়, নির্মলতা, বিশ্বাস, নির্লুপ্ততা, আবেগশুন্যতা।
৫. আসমানী
পরিপূর্ণতার জন্য সংগ্রামী মনোভাবের প্রতীক
৬. বেগুনী
সর্বদা হাসি-খুশি থাকার প্রতীক।
৭. কমলা
ত্যাগের প্রতীক, জ্ঞানপিপাসু এবং গাম্ভীর্যতার প্রতীক।
৮. কালো
বোল্ডনেস, কর্তৃত্ব, বিশুদ্ধতা, নিয়মানুগত্য, রহস্য, ভয়, নিপীড়ন, উদাসীনতার প্রতীক।
৯. হলুদ
আত্নমর্যাদা, বুদ্ধিদীপ্ততা, আগ্রহ, আনন্দ, ইতিবাচকতা, সূর্যোদয়, নির্লিপ্ততা আবেগশুন্যতার প্রতীক।
১০. বাদামী
 গুরুত্ব, আন্তরিকতা, প্রাকৃতিক, নির্ভরতা, সাপোর্টের প্রতীক।
১১. গোলাপী
কোমলতা সৌন্দর্যের প্রতীক।
১২. চকোলেট
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধা,  সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার প্রতীক।
উপরিউক্ত কালারগুলো প্রয়োগের সময়- ফ্রন্টের কালার ব্যাকগ্রাউন্ডের কালার করতে হবে ক্যালিগ্রাফির অর্থের উপর ভিত্তি করে।
 
আরবী ক্যালিগ্রাফি আঁকার ক্ষেত্রে কিছু আদব এবং জরুরী মৌলিক কিছু বিষয়:
১. কোরআনের আয়াত/আরবী ক্যালিগ্রাফির ক্ষেত্রে শিল্পীকে অবশ্যই শারীরিকভাবে পবিত্র থাকতে হবে এবং ওজু করে নিতে হবে। আর্ট করার জায়গা পবিত্র পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হবে।
২. কম্পোজিশন ডান থেকে শুরু করতে হবে। যেহেতু আরবী হাতের লিখা ডান থেকে শুরু হয়। অনেককেই দেখেছি বামথেকে শুরু করছেন। আল্লাহ (swt) মাফ করুন! বাম থেকে শুরু করলে ভুল হবে, বড় ধরনের গুনাহ হবে, বেয়াদবী হবে এবং আল্লাহর কাছে কখনই গ্রহণযোগ্য হবেনা বরং শাস্তি পেতে হবে! এইধরনের কম্পোজিশন যে আবিস্কার করেছে এবং যে ছড়িয়ে দেবে তাকে সবার গুনাহের ভাগিদার হতে হবে!
৩. "আল্লাহ" শব্দটি অবশ্যই উপরে রাখতে হবে কম্পোজিশনে। দুটি "আল্লাহ" শব্দ থাকলে একটি মাঝে, অপরটি উপরে এভাবে রাখতে হবে। রাসুল সা. সিলমোহরের কম্পোজিশনে এটা প্রস্তাবনা দিয়েছেন যে "আল্লাহ" শব্দটি সর্বদা উপরে থাকবে। সেজন্য রাসুল সা.কে আরবী ক্যালিগ্রাফির কম্পোজিশনের জনক বলা হয়।
৪. আয়াতের অক্ষরের সংখ্যা ঠিক রাখা। বানান চেক করা। অক্ষরের মৌলিক শেপ ঠিক রাখা, যেমন- লামকে যেন নুন অথবা অন্য কোন শেপে না বোঝায়। কেউ মৌলিক ভুল ধরিয়ে দিলে, অযথা তর্ক না করে কাজটি সংশোধন করা।
৫. আয়াতের অর্থের সাথে সামন্জস্য রেখে কালার ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইন করা প্রতিটি কালারের অর্থ আছে। যেমন: কেউ যদি জাহান্নামের আয়াতে ফুলের ডিজাইন দেয় তবে সেটি ভুল হবে।
৬. আঁকার সময় ক্যানভাস/কাগজটি অবশ্যই শিল্পী এমনভাবে রাখবেন যাতে বেয়াদবী না হয়। শিল্পের পা এবং হাঁটু থেকে অবশ্যই কাগজ বা ক্যানভাসটি একটু উচ্চ স্থানে থাকতে হবে।
 
একটা বিষয়ে খুব বলতে ইচ্ছে করছে... কিছু ক্যালিগ্রাফি আর্টিস্টদের দেখলাম.. .ফ্লোর বরাবর তাদের ক্যালিগ্রাফি আর্ট হাটু/পা বরাবর আগে-পিছে রেখে অথবা হাতে নিয়ে পায়ের সামনে দাঁড় করিয়ে সেলফি তুলছে ! ফ্লোরে ফেলে আর্ট করছে!
ইস! কি দুঃখজনক! তারা কি এই কোরআনের আর্টকে সাধারণ আর্টের খাতায় নাম তুললো নাকি! আল-কুরআনের আয়াতের  আদব-কায়দা রক্ষার কথা কি তাদের মনে নেই! ভাবতেই শিউরে উঠি! কোরআনের শিল্প শিল্পীকে ভালোবাসুন, সম্মান করুন, মহান আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসবেন।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.