চেনা দিনের ভোলা গন্ধে_সাবরিনা চৌধুরী

 

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশের একাত্মতা মিশে আছে প্রতিটি বর্ণে, প্রতিটি বোধগম্য শব্দভাণ্ডারে। যেখানে অবারিত ভাবেরা জমজমাট ভালোবাসা নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে দু,ঠোঁটের শ্বাস নাসিকায়,কিংবা ভালোলাগার প্রচ্ছায়ায়।
আমাদের প্রণম্য ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, গাজীউল বা তাজুলদের মতো সূর্যসন্তানদের জন্যেই আমরা এখনো পাখির মতো গান গাই, ঝর্ণার মতো কথা বলি বা নদীর কূলকূল ধ্বনির মতো আবৃত্তি করি। তাঁদের প্রজ্বলনে জেগে আছে ৫২,৬৯,৭১
কবি মহাদেবের ভাষায়...
একুশ মানেই আসছে
সালাম ফিরে আসছে, বরকত ফিরে আসছে তাজুল ফিরে আসছে...
একুশ মানেই মুক্তিযুদ্ধ ফিরে আসছে
সেই সাহসে বুক-পেতে-দেয়া তারুণ্য ফিরে আসছে
তারুণ্যের চোখে দুর্জয় শপথ ফিরে আসছে,
শহিদেরা ফিরে আসছে
স্বাধীনতা ফিরে আসছে,
বাংলাদেশ ফিরে আসছে,
এই পদ্মা-মেঘনার দেশে আবার ৫২, আসছে
৬৯, আসছে
৭১, ফিরে আসছে
প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের দুটি ভিন্ন ভাষার জাতিসত্তাকে মিলিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম থেকেই মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে সূচনা হয়েছিল ভাষা আন্দোলন। ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন আহমদ রফিক তাদের "ভাষা আন্দোলন-ইতিহাস তাৎপর্য" বইয়ে লিখেছেন "প্রথম লড়াইটা ছিল সাহিত্য- সংস্কৃতি অঙগনেই সীমাবদ্ধ "
এদিকে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন নিশ্চিত হওয়ার পর উর্দু- বাংলা বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। সে সময়ের মিল্লাত পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল" মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষাতে বরণ করার চাইতে বড় দাসত্ব আর কিছুই হতে পারে না।"
আবদুল লতিফের একুশের গান কবিতায় সে উপলব্ধিটুকু প্রকাশ পায়...
"ওরা আমার মুখের কথা
কাইরা নিতে চায়।
ওরা, কথায় কথায় শিকল পরায়
আমার হাতে পায়।।
কইতো যাহা আমার দাদায়
কইছে তাহা আমার বাবায়
এখন, কও দেখি ভাই মোর মুখে কি
অন্য কথা শোভা পায়।
সইমু না আর সইমু না
অন্য কথা কইমু না
যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান।।
জানের বদলে রাখমু রে
বাপ দাদার জবানের মান।।
তবে এখন ভাষার জন্যে আমাদের জীবন দেয়ার প্রোয়োজন না থাকলেও গৌরবোজ্জ্বল, সংগ্রামী মাসটি আসলেই একটা আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। এই দীর্ঘ সময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়ে কি কি কাজ করার প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছে।ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যে সীমিত ছিল না।এর সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিল বাঙালি জাতির স্বাধিকার আত্মপরিচয়ের প্রত্যয়।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথে হেঁটেই ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে।১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করার পর পৃথিবীর প্রায় সবদেশ দিনটিকে মাতৃভাষার স্মারক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করে থাকে।ফলে একুশে ফেব্রুয়ারির মাহাত্ম্য দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আলো ছড়াচ্ছে বিশ্বঘরে। এমন সীমাহীন আনন্দ বিস্তৃত উদযাপন যে কোন জাতির জন্যেই অত্যন্ত গর্বের।
ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস বিশ্ববাসীকে জানাবার সময় এসেছে। বিষয়টি নিয়ে কবি, সাহিত্যিক, গল্পকার, নাট্যকার, সুরকার, গীতিকার, প্রাবন্ধিকসহ আরো অনেকেই নিজস্ব কর্মযজ্ঞ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন বা হবেন।
তবে নাম মাত্র কোন আন্তর্জাতিক ভাষা ইন্সটিটিউট খুলে রাখলেই আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।
তার জন্যে থাকা যাই সুদূরপ্রসারী কর্ম পরিকল্পনা ভাষার প্রতি গভীর মমত্ববোধ।
আজ শুধু নয়, প্রতিটি দিনই মূলত হোক ভাষার জন্যে অকাতর প্রাগ্রসর।
চেনা দিনের ভোলা গন্ধ নিয়ে মিশে থাকি, শহিদদের আত্মত্যাগের সুবাস নিয়ে।
চন্দনের ঘ্রাণ নিয়ে বেঁচে থাক জাতি জীয়নকাঠের ভিতরে।
প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়.....
তোমার পায়ের নিচে আমিও অমর হব,
আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও।
এই নাও আমার যৌতুক, এক বুক রক্তের প্রতিজ্ঞা।
ধুয়েছি অস্থির আত্মা শ্রাবণের জলে, আমিও প্লাবন হব,
শুধু চন্দনচর্চিত হাত একবার বোলাও কপালে।
আমিও জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে উড়াব গাণ্ডিব,
তোমার পায়ের কাছে নামাবো পাহাড়!
আমিও অমর হব,
আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও।
 
২১/০২/২০২১

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.