বাংলা কবিতায় বসন্ত_মোহাম্মদ সফিউল হক
ধনধান্যে পুষ্পে ভরা বাংলাদেশ প্রকৃতির
এক অপূর্ব রঙ্গশালা। বাংলার প্রকৃতির রূপ, রস গন্ধ অবিরত রং বদলায়। ঋতুবৈচিত্র্যে বাংলার
প্রকৃতি সাজে নানান সাজে। অফুরন্ত এ রূপ সর্বদা নব নব সাজে সজ্জিত হয়। সুজলা -সুফলা, শস্য-শ্যামলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ বৈচিত্রময় দেশ
কখনো ভৈরবী রূপ নেয়, কখনো সজল কালো চোখ তুলে ভালোবাসার বান ছুঁড়ে দেয়
প্রকৃতির সন্তানদের দিকে। কখনো কিশোরী মেয়েদের মতো বাঁকা চায় , কখনো যৌবন রসে সিক্ত করে সবাইকে।
জীবনানন্দের রূপসী বাংলার অফুরন্ত রূপ কখনো ফুরিয়ে যায় না।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে অন্যতম
বৈচিত্রময় দেশ। অফুরন্ত এ রূপ নব নব সাজে সজ্জিত হয়। ছয়টি ঋতুতে প্রকৃতির ছয় রকম
অবস্থা দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে এক উদাসীন সন্ন্যাসীর
মতো। তার রুক্ষ রৌদ্রের দাবদাহে মানবজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময়ে কালবৈশাখি তার
উদ্দামতা নিয়ে আসে। গ্রীষ্মের পর আসে বর্ষা। বর্ষায় এ দেশের প্রকৃতিতে যেন নতুন
করে প্রানের সঞ্চার হয়। তখন প্রকৃতি হয়ে ওঠে সজীব ও সতেজ। ফসল ভরা ক্ষেতগুলো দেখলে
মনে হয় আবহমান। ধানসিঁড়ির সমুদ্র। তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন তার সমস্ত গ্লানি মুছে ফেলে।শরতের
শেষে, শীতের আগে আসে
হেমন্ত ঋতু। এ সময় সোনালী ফসলে ভরা থাকে মাঠ-ঘাট। আর সোনালি ধানের শীষে যখন বাতাসের খেলা চলে তখন
বাংলার নিসর্গে স্বর্গের ছোঁয়া লাগে। হেমন্তের পর শুষ্ক শীতল চেহারা নিয়ে আসে শীত।
এ সময়ে প্রকৃতি বিবর্ন ও বিষন্ন হয়ে পড়ে। শীতের বুড়ির কুয়াশার ঘোমটা খুলে
প্রকৃতিতে হাজারো ফুলে রং ধরিয়ে দিতে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। ঋতুরাজের আগমনে মৃদুমন্দ
দক্ষিণা বাতাসের যাদুস্পর্শে বর্ণবিরল পৃথিবীর সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব পুলক প্রবাহ, বনবীথির রিক্ত শাখায় জাগে কচি কিশলয়ের
অফুরন্ত উল্লাস। বাতাসের মৃদু মর্মর ধ্বনি এবং দূর বনান্তরাল থেকে ভেসে আসা
কোকিলের কুহুগীতি পৃথিবীকে সৃষ্টি করে এক অপরূপ মায়া নিকেতন। অশোক পলাশের রঙিন
বিহবলতায় ও শিমুল কৃষ্ণচূড়ায় বিপুল উল্লাসে, মধুমালতী ও মাধবী মঞ্জুরীর উচ্ছল গন্ধমদির প্রবলতায়
সারা আকাশ তলে গন্ধ, বর্ণ ও গানের তুমুল কোলাহলে লেগে যায় এক আশ্চর্য
মাতামাতি। প্রকৃতিতে কোনো কাঙালিপনা থাকে না; সে সাজে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। । সঙ্গে এ দেশের
কবিকুলও দুহাতে লিখে যান নতুন ঢঙে, নতুন আবহে।
সেই প্রাচীনকাল থেকেই কবিরা বসন্তেকে
নিয়ে কবিতার পঙক্তিমালা রচনা করেছেন। বসন্ত ঋতুটাকে বাংলার কবিরা তুলে ধরেছেন একটু
বেশি গুরুত্ব দিয়েই। মধ্যযুগের কবি বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে বসন্তের প্রভাব লক্ষ্য
করা যায় দারুণভাবে। এ কাব্যের নায়িকা রাধা বসন্তের সৌন্দর্যে প্রেমিক কৃষ্ণের
প্রতি আরও মোহিত হয়ে পড়ে। চারদিকে নানান পাখির গুঞ্জণে সে আরও আকুল ও ব্যাকুল হয়ে
পড়ে :
বসন্ত কালে কোকিল রাএ।
মনে মনমথ সে বাণ তাএ।
আম্মার বোল সাবধান হয়;
বাহির চন্দ্রকিরণে সোঅ।
কি সুতিব আম্মে চন্দ্রকিরণে।
আধিকে বড়ায়ি দহে মদনে।
[বিরহ খ- : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]
মধ্যযুগের অন্যতম কবি মুকুন্দরাম
চক্রবর্তী। তার নির্মিত অন্যতম চরিত্র নায়িকা ফুল্লরাও বসন্তকে অগ্রাহ্য করতে
পারেনি :
সহজে শীতল ঋতু ফাল্গুন যে মাসে।
পোড়ায় রমণীগণ বসন্ত বাতাসে।
[ফুল্লরার বার মাসের দুঃখ : কালকেতুর উপাখ্যান]
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তও বসন্তের
আবেগে নিজেকে জড়িয়েছেন। তিনিও পাখির কলরবে মুখরিত হয়েছেন। বসন্তের রঙে নিজের অন্তরকে
রাঙিয়েছেন বাংলা ভাষার এ অমর শিল্পদ্রষ্টা :
নহ তুমি পিক, পাখি, বিখ্যাত
ভারতে,
মাধবের বার্ত্তাবহ; যার
কুহরণে
ফোটে কোটি ফুল-পুঞ্জ
মঞ্জু কুঞ্জবনে! -
তবুও সঙ্গীত-রঙ্গ
করিছ যে মতে
গায়ক, পুলক তাহে জনমে এ
মনে!
[বসন্তে একটি পাখির প্রতি : চতুর্দশপদী
কবিতাবলী]
বাংলা ভাষার অসামান্য কবি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরও বসন্তে প্রভাবিত হয়েছেন। বসন্তকে বুকে ধারণ করে তিনি আরও বেশি আবেগায়িত
হয়েছেন। বলা যায়, তিনি এ ঋতুটি সম্পর্কে ভেবেছেন অনেক। নিজস্ব চিন্তার
অনেকখানিই ব্যয় করেছেন এ বসন্ত নিয়ে। তিনি বসন্তকে জানিয়েছেন :
অযুতবৎসর আগে, হে বসন্ত, প্রথম ফাল্গুনে
মত্ত কৌতুহলী
প্রথম যেদিন খুলি নন্দনের দক্ষিণদুয়ার
মর্তে এলি চলি-
অকস্মাৎ দাঁড়াইলে মানবের কুটির
প্রাঙ্গণে
পিতাম্বর পরি,
উতলা উত্তরী হতে উড়াইয়া উন্মাদ পবণে
মন্দার মঞ্জুরি
দলে দলে নরনারী ছুটে এল গৃহদ্বার খুলি
লয়ে বীণা বেণু,
মাতিয়া পাগল নৃত্যে হাসিয়া করিল
হানাহানি
ছুঁড়ি পুষ্পরেণু ।।
[বসন্ত : কল্পনা]
কবিতায় যার স্বল্প আয়ুষ্কালেই ঝরেছে
ভীষণ রকম ক্ষোভ , করেছেন যিনি তীব্র
প্রতিবাদ ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ
যেন ঝলসানো রুটি ’ চরণ লিখে। অতি প্রিয় সেই ক্ষণজন্মা কবি সুকান্ড ভটাচার্যও
বসন্তে উতলা হয়ে ঠিকই সুখের ডাক দিয়েছেন, প্রাণের দোলায়
দুলেছেন, অন্যকেও দুলিয়েছেন তার ‘ চৈত্রদিনের গান’ কবিতায়-
চৈতীরাতের হঠাৎ হাওয়া
আমায় ডেকে বলে,
“বনানী আজ সজীব হ ’ল
নতুন ফুলে ফলে৷
এখনও কি ঘুম-বিভোর?
পাতায় পাতায় জানায় দোল
বসন্তেরই হাওয়া৷
তোমার নবীন প্রাণে প্রাণে,
কে সে আলোর জোয়ার আনে?
নিরুদ্দেশের পানে আজি তোমার তরী বাওয়া;
তোমার প্রাণে দোল দিয়েছে বসন্তেরই
হাওয়া৷
ওঠ্ রে আজি জাগরে জাগ
সন্ধ্যাকাশে উড়ায় ফাগ
ঘুমের দেশের সুপ্তহীনা মেয়ে৷
তোমার সোনার রথে চ ’ড়ে
মুক্তি-পথের লাগাম ধ ’রে
ভবিষ্যতের পানে চল আলোর গান গেয়ে৷
রক্তস্রোতে তোমার দিন,
চলেছে ভেসে সীমানাহীন৷
তারে তুমি মহান্ ক’রে তোল,
তোমার পিছে মৃত্যুমাখা দিনগুলি ভোল॥”
বসন্তের সুর এমনই গহীন, রক্তস্রোতে ভেসা চলা দিনের বেদনা ভুলেও কবি বলেছেন ‘ভবিষ্যতের পানে চল আলোর গান গেয়ে ’।
বসন্ত এমনই, এ
যেন মুষঢ়ে পড়া মানুষকে সামনে ঠেলে দেয়ার কিছু ক্ষণ। প্রচন্ড বিপ্লব যার কবিতার
পরতে পরতে সেই বিপ্লবের কবি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘এলো
খুনমাখা তূণ নিয়ে, খুনেরা ফাগুন..। ’ শব্দ চয়নে তিনি বিপ্লবী সুর বজায় রেখেও বসন্তের
সেই একই ডাক, একই প্রাণ সঞ্চারী দোলার কথাই পক্ষান্তরে বলে গেলেন
কি সুন্দর। কেবলই বিপ্লবী সুরে নয় মিষ্টি সুরের বাঁশী বাজিয়েও নজরুল বসন্ত বন্দনা
করেছেন অন্য কোথাও অন্য কোন কবিতায়,
এমনই তার ‘এলো বনান্তে পাগল বসন্ত ’
কবিতা-
এলো বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে,চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,
পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব
অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।।
কবি সুফিয়া কামালও বসন্তকে আহ্বান জানিয়েছেন অমর পঙক্তিমালায়। তার ক্লান্ত-জীর্ণ মন বসন্তের নতুন বাতাসে নতুন করে জেগে ওঠে। তিনি আনমনা হয়ে যান। প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে তিনিও দুলে উঠেছিলেন যেন :
কখন হয়েছে শুরু বসন্তের পুস্প সমারোহ,
কেটে গেছে শিশিরের ব্যথাঘন কুয়াশার মোহ,
বুঝি নাই- ছিলাম উন্মনা!
অকস্মাৎ দেখি শুরু হইয়াছে কী সে
আনাগোনা
মধুপ অলির-
বাতায়ন পথে তারা করিয়াছে ভিড়
প্রভাতের স্বর্ণ আলো সাথে।
[বসন্তলিপি : মায়াকাজল]
বসন্তের পঙক্তিমালা লিখে যে ক’জন কবি
সবচেয়ে অধিক আলোচিত হয়েছেন পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় এদের অন্যতম। বলা যায়, অনেকটা
সাধ্যাতীত ভাষায় অলঙ্কৃত করেছেন বসন্তকে। তার কবিতায় বসন্ত পেয়েছে নতুন মহিমা :
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত
সান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
[ফুল ফুটুক না ফুটুক : ফুল ফুটুক]
বসন্ত নাগরিক কবি শামসুর
রাহমানকেও হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। বসন্ত বাতাস তিনি উপেক্ষা করতে পারেননি। বসন্ত সবাইকে সমানভাবে
রাঙায়। ধনি-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বসন্তের আগমনে
আপ্লুত হয়। কেননা বসন্তের সৌন্দর্য সর্বজনীন :
অকস্মাৎ প্রিয়মিলনের মতো রঙিন শাড়ির
ঝলক ছড়িয়ে আমাদের
দুঃখের ধূসর গুঁড়োগুলো বিস্মৃতির
অন্ধকারে ডুবিয়ে দাঁড়ায়
বসন্তের জ্বলজ্বলে আলো নিয়ে ধনীর প্রাসাদে,
দরিদ্রের বিরান আঙিনা আর ক্ষুধার্ত সংসারে।
[বসন্তের মায়া : না বাস্তব না দুঃস্বপ্ন]
বাংলার বসন্ত চিরকালই সৌন্দর্যে ঐশ্বর্যশালিনী হয়; রানীর চেয়ে ধনবতী আর রাজকুমারীর
চেয়ে রূপবতী হয় এ কথা স্বীকার করেছেন কবি পূর্ণেন্দ্র পত্রী। এ সময়েই প্রকৃতির
সমস্ত বৃক্ষরাজি নতুন করে যৌবনবতী হয়ে ওঠে :
শুনেছি বসন্তকালে বনভূমি অহংকারী হয়।
[বসন্তকালেই : প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ]
বসন্ত বাঙালির অতি প্রিয় একটি ঋতু। এ ঋতুতে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে
মানুষের মনেও নতুন আবহের সৃষ্টি হয়। এ ঋতু নিয়ে বাঙালির আগ্রহ চিরকালের। এ প্রিয়
ঋতুর আগমন উপলক্ষে নানা স্থানে বিশেষ উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। কবি জয়গোস্বামী বিষয়টি
স্বীকার করেছেন অকপটে :
অন্ধ যখন বৃষ্টি আসে আলোয়
স্মরণ-অতীত সাঁঝবেলারা সব
এগিয়ে দিতে এল নদীর ধারে-
নদীর ধারে বসন্ত উৎসব
[বসন্ত উৎসব : ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা ]
উত্তারাধুনিক কবিগণও বসন্ত বিহীন কেবল যান্ত্রিকাতার মাঝে চোখ বুজে থাকে নি, বসন্ত বারবার এ যুগের সব কবির মনের ভেতর দোলা দিয়ে বলে ওঠে একই কথা যা কবি চারু মান্নান তার ‘এবং কবিতা বসন্ত ’ তে বলেছেন-
‘আমার কবিতার গা এখন বসন্ত আবিরে ঢাকে
খোলা পায়ে নিত্য ফুলের পাঁপড়ি মাড়িয়ে
চলে
বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত মানে না কোন বাঁধা
একি মাতাল হাওয়ায়?
মাতাল নেশায় ছুটে,মানে
না বারন,মন যে উতল ’ '
আধুনিক কবিতায় অনেক কবিই চিরায়ত রূপে
বসন্ত না ভেবে প্রখা ভাঙার তীব্র প্রচেষ্টা দেখাতে চেয়েছেন। আধুনিকতার এই এক এক
বৈশিষ্ট্য অগ্রগামীতা, যেন প্রথার দেয়ালে হানি আঘাত...কবি
মাসুদ খানের 'বসন্তকাল'
কবিতায় তাই বসন্ত ভাবনা উঠে আসে
সম্পূর্ন ভিন্ন রূপে, এক নিবিষ্ট প্রতিবাদী সুরে-
মাথা কেটে পড়ে গেছে, কণ্ঠনালী
ফেটে ফিনকে উঠছে ঋতুরক্তলাভা,
লালের উল্লাসে আরো লাল হয়ে উঠছে
পালকপুচ্ছডানা।
তবুও চলেছে উড়ে বনমোরগ, ছিন্নমস্তা, ডাল থেকে ডালে...
মোরগঝুঁটির আঁকাবাঁকা উচ্ছ্বাস থেকে আজ
ডিমের গলিত কুসুমের মতো উৎফুল্ল সূর্যোদয়
ছোপ-ছোপ রজোবিচ্ছুরণ...
ছিটকে ছিটকে শিমুলে মান্দারে গিয়ে লাগে
ওই লাল
তুম-তানা-নানা ঘটিয়ে তোলে বনে বনে বিকল্প বসন্তকাল।
বসন্ত শুধু একটি ঋতুই নয়, এটি ভালোবাসার প্রতীক- নতুন
কুঁড়ি, নতুন চাঁদ, নতুন প্রেম,
নতুন ভাবনা, নতুন উন্মাদনা আর নতুন
উচ্ছ্বাস। জৌলুসময় এ ঋতুতে প্রকৃতি থেকে শুরু করে প্রতিটি জীবই আবেগায়িত হয়,
আপ্লুত হয়। কবিরাও এ ঋতুর সৌন্দর্যে প্রভাবিত হয়ে নতুন করে
উজ্জীবিত হন। কবিদের এ উজ্জীবনে বাংলা কবিতাও হয় ঋদ্ধ। জয় হোক বসন্তের, জয় হোক বাংলা কবিতার।
মনে মনমথ সে বাণ তাএ।
আম্মার বোল সাবধান হয়;
কি সুতিব আম্মে চন্দ্রকিরণে।
আধিকে বড়ায়ি দহে মদনে।
[বিরহ খ- : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন]
পোড়ায় রমণীগণ বসন্ত বাতাসে।
[ফুল্লরার বার মাসের দুঃখ : কালকেতুর উপাখ্যান]
প্রথম যেদিন খুলি নন্দনের দক্ষিণদুয়ার
মর্তে এলি চলি-
পিতাম্বর পরি,
উতলা উত্তরী হতে উড়াইয়া উন্মাদ পবণে
মন্দার মঞ্জুরি
দলে দলে নরনারী ছুটে এল গৃহদ্বার খুলি
লয়ে বীণা বেণু,
ছুঁড়ি পুষ্পরেণু ।।
[বসন্ত : কল্পনা]
আমায় ডেকে বলে,
এখনও কি ঘুম-বিভোর?
বসন্তেরই হাওয়া৷
তোমার নবীন প্রাণে প্রাণে,
ওঠ্ রে আজি জাগরে জাগ
সন্ধ্যাকাশে উড়ায় ফাগ
ঘুমের দেশের সুপ্তহীনা মেয়ে৷
তোমার সোনার রথে চ ’ড়ে
মুক্তি-পথের লাগাম ধ ’রে
রক্তস্রোতে তোমার দিন,
তারে তুমি মহান্ ক’রে তোল,
বসন্তের সুর এমনই গহীন, রক্তস্রোতে ভেসা চলা দিনের বেদনা ভুলেও কবি বলেছেন ‘ভবিষ্যতের পানে চল আলোর গান গেয়ে ’।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে,চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
কবি সুফিয়া কামালও বসন্তকে আহ্বান জানিয়েছেন অমর পঙক্তিমালায়। তার ক্লান্ত-জীর্ণ মন বসন্তের নতুন বাতাসে নতুন করে জেগে ওঠে। তিনি আনমনা হয়ে যান। প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে তিনিও দুলে উঠেছিলেন যেন :
মধুপ অলির-
প্রভাতের স্বর্ণ আলো সাথে।
[বসন্তলিপি : মায়াকাজল]
আজ বসন্ত
সান-বাঁধানো ফুটপাথে
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
[ফুল ফুটুক না ফুটুক : ফুল ফুটুক]
ঝলক ছড়িয়ে আমাদের
দুঃখের ধূসর গুঁড়োগুলো বিস্মৃতির
অন্ধকারে ডুবিয়ে দাঁড়ায়
বসন্তের জ্বলজ্বলে আলো নিয়ে ধনীর প্রাসাদে,
[বসন্তের মায়া : না বাস্তব না দুঃস্বপ্ন]
[বসন্তকালেই : প্রিয় পাঠক-পাঠিকাগণ]
স্মরণ-অতীত সাঁঝবেলারা সব
[বসন্ত উৎসব : ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা ]
উত্তারাধুনিক কবিগণও বসন্ত বিহীন কেবল যান্ত্রিকাতার মাঝে চোখ বুজে থাকে নি, বসন্ত বারবার এ যুগের সব কবির মনের ভেতর দোলা দিয়ে বলে ওঠে একই কথা যা কবি চারু মান্নান তার ‘এবং কবিতা বসন্ত ’ তে বলেছেন-
বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত মানে না কোন বাঁধা
একি মাতাল হাওয়ায়?
তবুও চলেছে উড়ে বনমোরগ, ছিন্নমস্তা, ডাল থেকে ডালে...
ডিমের গলিত কুসুমের মতো উৎফুল্ল সূর্যোদয়
ছোপ-ছোপ রজোবিচ্ছুরণ...
তুম-তানা-নানা ঘটিয়ে তোলে বনে বনে বিকল্প বসন্তকাল।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments