বিদগ্ধ বাবর_এইচ আই হামিদ
বাবরের রাজত্বকাল ২৭ এপ্রিল ১৫২৬ থেকে জানুয়ারি ১৫৩১ পর্যন্ত। পুরো নাম মির্জা জহিরউদ্দীন মুহাম্মদ বাবর। তৎকালিন মধ্য এশিয়ার মঙ্গল অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মোগল বলা হত। বাবর এই অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন বলেই, তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশকে মোগল রাজবংশ বলা হয়। তিনি সৃজনশীল শিষ্টাচারী লালিত্যময় সংস্কৃতির ঐতিহ্য সৃষ্টি করে গেছেন। তুর্কী সুলতান তৈমুরের লং বাবরের পঞ্চম পুরুষ ছিলেন। তৈমুর শব্দের অর্থ লোহ আর লং শব্দের অর্থ খোঁড়া, খোঁড়া হয়েও তার মনোবল ছিলো লোহার মতই দৃঢ় অটল। এই তৈমুর ছিলেন বিশ্বজয়ী নিষ্ঠুর এক বীর। তার কবরে তার ইচ্ছে অনুযায়ী লেখা আছে, ‘আমি যেদিন ফের জেগে ওঠব, সেদিন সমগ্র পৃথিবী আমার ভয়ে কাঁপবে।’ অন্যদিকে বাবরের মাতা ছিলেন কুলতুগ, তিনি চেঙ্গিস খানের বংশধর। চেঙ্গিস শব্দের অর্থ সারা পৃথিবীর শাসক। চেঙ্গিস তার নামের প্রতি সুবিচার করেছিলেন, তিনি চীন থেকে শুরু করে রাশিয়াসহ সারা পৃথিবীর বেশির ভাগ জায়গা দখল করে নেন। চেঙ্গিস খান ছিলেন রক্তপিপাসু এক বিশ্বত্রাস। বাবর তার জীবনী গ্রন্থ ‘তুজুকে বাবরী’তে তার নানা ভাই সম্পর্কে বলেন নানা প্রিয়ংবদা ভদ্র ও দূরদর্শী মানুষ ছিলেন। নানীর ব্যাপারে বলেন, আমার নানীমাতার ন্যায় অল্প নারীই বুদ্ধি-বিচারে ও শিষ্টাচারে তার সমতুল্য হবে। বাবর সুস্থ সুন্দর মার্জিত পরিবেশে বেড়ে ওঠেছিলেন বলেই বহু সৎ ও মহৎ গুণের অধিকারী ছিলেন। বাবর তার বাবার রাজ্য ফরগুনা হারিয়ে আফগানিস্তানে চলে আসেন। তার আরো বিশ বছর পরে ভারত আক্রমণ করেন। সেটা ছিলো পানি পথের প্রথম যুদ্ধ। পানি পথের প্রথম যুদ্ধে (পানি পথ কোন নৌপথ নয় এটা হলো হরিয়ানা রাজ্যের একটি জেলা শহর, এখানে ইব্রাহিম লোদির কবর আছে) ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে বাবর মোগল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ভারত উপমহাদেশের পানিপথের প্রথম যুদ্ধে (১৫২৬ সালে) বাবরই প্রথম কামান ও গোলাবারুদের ব্যবহার করে। এ যুদ্ধে লোদির সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০ হাজার। আর বাবরের ছিলো প্রায় ১০ হাজার। তবুও বাবর যুদ্ধে জয়ী হয়। আবার রানাসঙ্গের লক্ষাধিক সৈন্যের বিপরীতে বাবরের সৈন্য সংখ্যা ছিলো মাত্র ১২ হাজারের কাছাকাছি। তবুও বাবর জয়ী হয় অদম্য দৃঢ়তায়।
বাবরের আগমনের সময় ভারত জ্ঞান বিজ্ঞান সাহিত্য সংস্কৃতিতে পিছিয়ে ছিলো। তা আমরা বাবরের জীবনীগ্রন্থ থেকে জানতে পায়,ভারতবর্ষ সম্বন্ধে বাবর বলেন, ‘তাদের না আছে প্রতিভা না আছে ধীশক্তি না আছে শিষ্টাচার না কৃপা না মানবতাবাদ না আছে দক্ষতা।’ বাবর ‘সুহরা-ই আম’ এই বিভাগের মাধ্যমে বিদ্যালয় নির্মাণ করত, এই শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল অবৈতনিক। বাবর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতবর্ষকে বদলে দিয়েছিলো। পিছিয়ে থাকা ভারতবাসীকে মোগলরা জ্ঞান বিজ্ঞানে কত উন্নত করেছিলেন তার প্রমাণ পাই মোগল সম্রাজ্য পতনের ১০০ বছর পরও ইংরেজ সেনানায়ক শ্লীম্যানের কথায়, বিশ্বে অতি অল্প সমাজ আছে, যার মধ্যে ভারতীয় মুসলমানদের মত শিক্ষা বহু বিস্তৃত। যে মাসিক ২০ টাকা বেতন পায় সেও তার সন্তানকে প্রধানমন্ত্রীর মত শিক্ষা দেয়। উচ্চ শিক্ষিত ইংরেজরাও তাদের সাথে জানা শুনায় পেরে ওঠে না।
মোগল রাজত্বের সময় ইংলান্ডে তখন সপ্তম হেনরির টিউডর রাজবংশ রাজত্ব করছে। ইউরোপ তখন ধর্মীয় গোঁড়ামিতে অন্ধ,জার্মানীতে ক্যাথলিক ও প্রটেস্ট্যান্টদের মধ্যে ৩০ বছরের গৃহযুদ্ধে দেশের এক তৃতীয়াংশ লোক নিহত। রাশিয়াতে ধর্মের নামে ইহুদি নিধন ছিলো নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। তখন ডাইনী অপবাদে ইউরোপে নিরাপরাধ নারীদের পুড়িয়ে মারা হত। মুক্তিসংগ্রামী স্বদেশ হিতৈষী নারী জোয়ান অব আর্ককে পুড়িয়ে মারা হয়, খৃস্টান ধর্মযাজকদের মতে তিনি নাকি ডাইনি ছিলেন। তখন ভারতে সুফি সাধুতে আর বৈষ্ণব সন্ন্যাসীতে কোন বিরোধ ছিল না, বিরোধ ছিল না রাম রহিম আর শ্যামে। বাবরের দেখানো পথে পরবর্তী রাজারা মানবতাকেই সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বাবরের চরিত্রের একদিকে মধ্যযুগের বর্বরতা অন্য দিকে আধুনিক মননের উদারতা ছিলো। রাজপুতদের ছিন্নমস্তক দিয়ে মিনার বানানো অন্যদিকে পাগলা হাতির কবল থেকে নীচু জাতের শিশুকে উদ্ধার কিংবা পুত্র হুমায়নের জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন দানের স্পৃহা মহত্বের নির্ণায়ক।
আয়েশাহ সুলতানা বেগমসহ তার আরো ৮ জন স্ত্রীর নাম পাওয়া যায়। মির্জা হুমায়ন, কামরান মির্জা,হিন্দালসহ বাবরের মোট ৯জন পুত্রের সন্ধান জানা যায়। গুলবদন বেগম,মেহেরজান বেগমসহ তার মোট ৭জন কন্যার উল্লেখ আছে। বাবর সত্যান্বেষী মানুষ ছিলেন একবার গজনীর এক গ্রামে বাবর শুনল একটা মাজার কাঁপে। সরজমিনে গিয়ে দেখল ভন্ড খাদেমদের কারসাজি, তাদের শাসিয়ে দিল। বন্ধ করতে বলল আল্লার নামে ভন্ডামি।
আমেরিকা অধিকারের পর ইউরোপীয়রা তাদের দাশে পরিণত করেছিল কিন্তু মোগলরা তা করেনি। বিজয়ের পর পরাজিতদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ কিংবা তাদের উপর জিজিয়া করও আরোপ করেনি। বাবরের আগমনের পূর্বে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থান থাকলেও ঐক্য বা শান্তি ছিল না। ৫টি মুসলীম ও ২টি হিন্দু নৃপতির অধীনে ভারতবর্ষ ৭টি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিলো এসব রাজ্যকে বাবর এক শাসন ব্যবস্থার ছায়াতলে নিয়ে আসেন।
বাবরের সময় পারস্যে সাফাভী রাজবংশ ধর্মে শিয়া আর তুরস্কে অটমান সম্রাজ্য ধর্মে সুন্নী। তাদের রেষারেষির অন্ত ছিলো না। বাবর নিজে তুর্কী কিন্তু সংস্কৃতিতে ইরানী। বাবর এই শিয়া সুন্নী দুয়ের মধ্যে থাকলেন নিরপেক্ষ। বাবর ছিলেন ন্যাচারালিস্ট তার তৈরি উদ্যান ছিলো বেহেস্তের ভাবকল্পনায় সুরুচিসম্পন্ন ও মনোমুগ্ধকর। তিনি জ্ঞান বিজ্ঞান শিক্ষা সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি ছিলেন মানবতায় ও উদারতায় বিশ্বাসী এক মহৎ মানুষ।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments