কোরবানীর গরু_মোনোয়ার হোসেন
বেশি মাঠ থেকে ঘাস সংগ্রহ করতে পারবে এবারের কোরবানী গরু তার বাড়িতে থাকবে এবং সেই পাবে গরুর চারটি পা। বেশ, আমাদের আর পায় কে? আনান্দে নাচতে নাচতে আমরা যে যার মত কাস্তে আর বস্তা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম মাঠে। তখনকার সময় কোরবানীর গরু নিজের বাড়িতে থাকা কী যে আনান্দের ছিল! প্রতিদিন ভোরে উঠে গরুকে কসমস সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দিয়ে গলায় সুন্দর করে মালা পড়িয়ে নরম ঘাস খেতে দেওয়া কী যে মজার আর আনান্দের ছিল! তা লিখে বুঝানো যাবেনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে পাড়ার সব ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে বেড়িয়ে পড়তো গ্রামের সবার কোরবানী গরু দেখতে। সকালে একঝাঁক ছেলেমেয়ে বাসায় এসে যখন কোরবানী গরু দেখার জন্য ভিড় করতো, আর ভালো কিছু মন্তব্য করতো তখন শরীর বেয়ে কী যে এক অজানা আনান্দের ঢেউ বয়ে যেত। বর্তমান আধুনিক ডিজিটাল ব্যস্ত জীবনে এসে সে অনুভূতি ছেলেমেয়েদের মাঝে বিলুপ্তপ্রায়।
যাক, চাচার ঘোষণার সাথে সাথে আমাদের সারাদিন মাঠে ঘাস সংগ্রহের প্রতিযোগিতা চললো বুশ -সাদ্দামের যুদ্ধ । আমরা ঘাস সংগ্রহ করছি আর চুপিচুপি বাসায় এনে লুকিয়ে রাখছি। যেন কেউ দেখতে না পায়; দেখলেই যে বিপদ !
চাচা আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করে আমার হাতে গরুর দড়ি তুলে দিলেন ।
গরু পেয়ে আনান্দে আমি যেন আকাশে উড়ছি।
লাল-নীল কাগজের তৈরী মালা গরুর গলায় পড়িয়ে গরুকে বাড়িতে নিয়ে আসছি আর হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো ছেলেমেয়েরা আমার পিছনে পিছনে হাঁটছে।
বাড়িতে গরু পৌঁছার সাথে সাথে আম্মারও যেন চঞ্চলতা বেড়ে গেল। বললেন, ইস! গরুটা এত রাস্তা হেঁটে এলো পিপাসায় বুঝি বুক শুকিয়ে গেছে। দে, দে, গরুটারে জলদি পানি খেতে দে। ছয়দিন গরুটাকে খুব স্নেহ, যত্ন করলাম। এরই মাঝে গরুটার সাথে আমার গড়ে উঠলো এক সখ্যাতা।
ঈদেরদিন নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে গরুটার দিকে তাকিয়ে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল । নামাজ পড়ে এলেই প্রিয় গরুটাকে জবাই করা হবে। ভাবতেই যেন নিজের বুকে ছুড়ি চরলো।
ঈদের নামাজ পড়ে এসে বড় চাচা হাসিমুখে আমাকে ডেকে বললেন, ছয়দিনে গরুটাকে খেয়ে দেয়ে তো হাতি বানিয়ে ফেলেছিস বাবা, এবার দে গরুটাকে আমাদের হাতে তুলে। বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে তো!
বড় চাচা হয়তো বুঝতে পারলেন আমার মনের অবস্থা।
কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, বাবা, এটাই যে কোরবানী। ত্যাগই যে কোরবানীর শিক্ষা। প্রিয়বস্তু আল্লাহর সুন্তুষ্টির জন্য হাসিমুখে আল্লাহর দরবারে দান করার নামই হচ্ছে কোরবানী। তুমি মন খারাপ করো না। আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য আমরা কোরবানী দিচ্ছি। তুমি গরুটাকে আমার হাতে তুলে দাও।
আমি গরুর দড়িটা চাচার হাতে তুলে দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম , গরুর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, শিং ডানে বায়ে দোলাচ্ছে , শিং দুলিয়ে আমাকে যেন বলছে “ বিদায় বন্ধু , বিদায় ”।
অবুঝ গরুর এই ভালোবাসা দেখে আমার চোখ অশ্রুতে ভরে উঠলো।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments