গল্পকার_মাহমুদ মুযযাম্মিল
প্রাণপণ চেষ্টা আর ভাবনায় প্রতি রাতই কেটে যায় আশিকের ৷ কাগজ-কালি নষ্ট করছে অহরহ ৷ মোবাইলের নোটপেডে যা তা লিখে লিখে মোবাইলের চার্জ শেষ করে ফেলছে প্রতি দিন ৷ এদিকে ঘুম তাড়িয়ে নির্ঘুম থাকার কষ্ট-কসরতও কম করছে না আশিক ৷ তবুও একটা কবিতা বা গল্প লেখা হয়ে উঠে না তার ৷ আশিক কবি ও গল্পকার হতে চায় ৷ যেখানে তার সহপাঠী বন্ধুদের কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা ব্যারিস্টার হতে চায়, সেখানে আশিক নাকি রুটি-রুজিহীন কবি ও গল্পকার হবে ৷ এটাই তার সিদ্ধান্ত ৷ প্রথম যেই দিন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সে, সেই দিন থেকেই আশিক বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের বই সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করে দিয়েছে ৷ কবি ও গল্পকার হতে হলে যে প্রচুর পড়তে হয় এটা জানে আশিক ৷ মাঝে মধ্যে এবং ইদানিং প্রায় প্রতিদিনই কবিতা-গল্প লেখার জন্য চেষ্টাও করে যাচ্ছে সে ৷ কিন্তু এখনো সে লেখার মূল উপাদানগুলো ধরতে পারেনি ৷ থিমগুলো বোধহয় অগোছালো রয়ে গেছে ৷ তাই এখন নিজের ওপর খুব জিদ চেপে আছে ৷ যে কোনো মুহূর্তে কলম-কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কবি-গল্পকার হওয়ার শখ মাটি চাপা দিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকবে ভাবছে আশিক ৷ নিজের ওপর জিদ ক্রমশই বাড়ছে ৷ একটা বেখাপ্পা সময় যাচ্ছে আশিকের ৷ বন্ধুরা বলেছিলো প্রেম করতে ৷ প্রেম করলে নাকি মাথায় হরেক রকম কবিতা ও গল্পের আইডিয়া নাযিল হয় ৷ কিন্তু আশিকের মতো শান্ত-ভদ্র এবং নিতান্তই লাজুক ছেলে প্রেম-টেম করতে রাজি নয় ৷ প্রেমের কতো অফার সে পেয়েছে! কোনোটাতেই সে সায় দেয়নি ৷ কতো প্রেমনিবেদনপত্র তার বইয়ের পাতায় পাতায় লুকোনো পেয়েছে, সবই ছিঁড়েছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে ময়লার ঝুঁড়িতে ৷ ও বরাবরই মেয়েদের সংস্রব থেকে দূরে থাকার ছেলে ৷ কোনো মেয়ের দিকে আঁড়চোখেও তাকায় না কখনো ৷ বড্ড লাজুক ও কোমল প্রকৃতির ছেলে আশিক ৷ তার লাজুকতা ও শরমিন্দা গুণের কারণে এলাকার কোনো অনুষ্ঠান, পিকনিক ও কলেজের শিক্ষাসফরেও যাওয়া হয় না তার ৷ আত্মীয়-স্বজনদের বিয়ের দাওয়াতেও তাকে নেয়া যায় না ৷ গতবার তার একমাত্র মামাতো বোন সাবিহার বিয়ের সময় আশিক কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না ৷ যাবে কি যাবে না ৷ এদিকে বাড়ির সবাই তৈরি হয়ে বসেছিলো বিয়েতে অংশ গ্রহণের জন্য ৷ আশিক তো মহাবিপাকে পড়ে গিয়েছিলো ৷ ছোট বোন আতিকা বার বার এসে তাগাদা দিচ্ছিলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে, তার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে ৷ আশিক ভাবছিলো এবার কি তাকে মামাতো বোনের বিয়েতে যেতেই হবে? সেই মামাতো বোন সাবিহা, যে তার জন্য উজোরপ্রাণ ছিলো ৷ যে তাকে নিয়ে ঘর-সংসার বাঁধবে স্বপ্ন দেখে আসছিলো ৷ কিন্তু অাশিকের পক্ষ থেকে কোনো সাড়ানাড়া ছিলো না ৷ কোনো কেয়ারই করতো না মামাতো বোন সাবিহাকে ৷ সে তার কাজে মগ্ন থাকতো ৷ শেষমেশ সাবিহার বিয়ে অন্যত্র হওয়ার আয়োজন চলতে লাগলো ৷ এখন সে বিয়েতে না গেলে সাবিহা ভাববে সেই কারণেই বোধহয় আশিক আসেনি ৷ আশিক তার কাছ থেকে অনেক জ্বালা সহ্য করেছে ৷ তাকে সে অনেক ভুগিয়েছে ৷ যা আশিকের মননবিরুদ্ধ ছিলো ৷ যদিও আশিকের না যাওয়ার কারণ হবে তার লাজুকতা, তার শরম শরম ভাব ৷ কিন্তু এটা কি সাবিহা বুঝবে? সে যাই হোক, আশিক যাবে না যাবেই না ৷ এখন এই না যাওয়ার জন্য তাকে উপস্থিত কোনো বুদ্ধির আশ্রয় নিতে হবে ৷ তবে সেটা ফলপ্রসূ হবে কি না— ভাবতে ভাবতেই তার মাও এসে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছিলো ৷
'আশিক আশিক'
যতো তাড়াতাড়ি পারিস আয়, গাড়ি এসে গেছে সেই কখন ৷
'ঠিকাছে মা তুমি যাও'
' ও আম্মা গো! আমি মরে গেছি গো, আমাকে ধরো, আহহহহ!
আশিক চিন্তা করলো এতো বেশি ব্যথা পেয়েছি বোঝানোর দরকার নেই, পরে যদি এক্স রে রিপোর্টে ভাঙা-ফাটা কিছু ধরা না পড়ে তাহলে হয়তো সবাই সন্দেহ করে বসতে পারে ৷ মাঝারি চোট পেয়েছি এটা বোঝানোই যথেষ্ট ৷ ডাক্তার হয়তো কিছুদিন বিশ্রাম নেয়ার কথা বলবে ৷ এতেই আমার বিয়েতে না যাওয়ার ডিসিশান আসবে ৷
সে আলতো করে দরজার সিটকিনিটা খুলে দিয়ে ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠার মতো করে ৷ আশিকের মা তো কেঁদেই ফেললো আর চিৎকার করে বলছে, কীভাবে পড়ে গেলে বাবা? কোথায় আঘাত লেগেছে তোমার? আশিক কোমর ও তার নিচের অংশ দেখিয়ে আবার আহহহ করে উঠলো ৷ তাকে সবাই ধরাধরি করে ওই গাড়িতে নিয়ে উঠালো যেটা তারা সাবিহার বিয়েতে যাওয়ার জন্য ভাড়া করেছিলো ৷ এখন তাদের গন্তব্য সদর হাসপাতাল ৷ হাসপাতালে পৌছে যথারীতি তাকে ডাক্তার দেখানো হলো ৷ ডাক্তার সাহেব আশিককে এক নজর দেখেই এক্স রে করিয়ে আনতে বললেন ৷ এক্স রে শেষে রিপোর্টে তার কোমর ফ্রেশ দেখাচ্ছিলো ৷ আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই ৷ ডাক্তার সাহেব আশিকের মা বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, 'তার কোমরে গুরুতর কোনো আঘাত নেই ৷ হাড়ও ভাঙেনি ৷ আপনারা চিন্তা করবেন না ৷ ও কিছু দিন বিশ্রাম নিলে আর এই ওষুধ কটা খেলেই পুরোপুরি সেরে উঠবে ৷ আমি তাকে ব্যথানাশক মেডিসিন স্প্রে করে দিয়েছি ৷ এখন তাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন' ৷ তাই করা হলো ৷ আশিককে বাসায় নিয়ে আসা হলো ৷ আশিককে আর মামাতো বোন সাবিহার বিয়েতে যেতে কেউ পীড়াপীড়ি করেনি ৷ পরদিন আশিকের বাবা ও ছোট বোন আতিকা বিয়ে খেয়ে চলে এসেছিলো ৷ বাড়তি কোনো ফূর্তি-মৌজ করা হয়নি ৷ আশিকের এই অনাকাঙ্খিত 'দূর্ঘটনা'র কথা শুনে অনেকেই মনের আনন্দ হারিয়েছে ৷ অনেকেই তাকে দেখতে এসেছে ৷ সান্ত্বনা দিয়েছে ৷ আশিক জানে এ ঘটনা নিছক তার বানানো ৷ শুধুমাত্র এক বিয়েতে অংশগ্রহনের লজ্জা থেকে বাঁচতে তাকে এটুকু সাজাতে হয়েছে ৷
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments