ভাষা আন্দোলনের মহান অর্জন ম্লান হবার নয়_মহিউদ্দিন আকবর
বাংলা ভাষা শুধু একটি ভাষারই নাম নয়, এটি এখন রক্তের আঁখরে লেখা একটি রক্তাক্ত ইতিহাস। বাংলাভাষা মানে শাণিত সংগ্রাম এবং অনিবার্য বিজয়। বাংলাভাষাকে এখন আর উপেক্ষা করার দুঃসাহস কেউই রাখে না। বাংলাদেশে বাংলা ভাষা আন্দোলন একটি স্মরণীয় ও বহুবর্ণিল অধ্যায়। সে এখন নিজেই একটি স্বতন্ত্র উজ্জ্বল ইতিহাস।
স্মর্তব্য যে, ১৯২০ সাল। কোলকাতার শান্তি নিকেতনে একটি সভা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বাংলা ভাষার সপক্ষে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ একটি অনবদ্য প্রবন্ধ পাঠ করেন। এছাড়াও বাংলার বহু লেখক বুদ্ধিজীবী বাংলা ভাষার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্নভাবে লেখা ও বক্তৃতা-ভাষণের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। এভাবেই হাঁটি হাঁটি পা ফেলে চলছিল বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠার এক অমোঘ আন্দোলন।
দিন বদলের সাথে সাথে প্রচন্ড গতিতে দুর্বার হয়ে উঠছিল কোটি বাঙালির ভেতরের সুপ্ত স্বপ্নগুলো। তারই এক অধ্যায়Ñ এলো ১৯৪৭ সালের ১৪আগস্ট। এই দিনে ইংরেজ বেনিয়া শোষকদের শোষণের নাগপাশ মুক্ত হয়ে আমরা পেলাম একটি অদ্ভূত ফেডারেল রাষ্ট্র। পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে দু’টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হলো এই অদ্ভূত ফেডারেল রাষ্ট্র, যার নাম পাকিস্তান। মূলত এতে পশ্চিমারাই ছিল শাসনকর্তা। তাদের স্বৈরাচারি মনোভাব দেখে আমাদের পূর্ব বাংলার লেখক-বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বাংলা ভাষার প্রসঙ্গটি আবার প্রচন্ডভাবে সামনে চলে এলো। শুরু হলো আন্দোলন। ব্যক্তি থেকে পরিবার এবং সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়তে থাকলো ভাষার দাবি।
আমরা জানি যে, ইংরেজ শাসনামলে এদেশে চেষ্টা চলেছিল রাষ্ট্রভাষা হিন্দি করার জন্য। আবার পাকিস্তান অর্জিত হবার পর পশ্চিম পাকিস্তান চেষ্টা চালালো উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য। অথচ জন্ম নিয়েই আমরা যাদেরকে দেখিÑ তাদের ভাষা বাংলা। আমরা কথা বলি, ভাব বিনিময় করিÑ সে কেবল বাংলাতেই। তবে কেন বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা এখানে রাষ্ট্রভাষা হবে?
১৯৪৭ সালের ১সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাসেমের নেতৃত্বে গঠিত হয় পাকিস্তান তমদ্দুন মজলিস। এই প্রতিষ্ঠানই সর্বপ্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলে। তারাই প্রথমত উন্মোচন করে ভাষার দাবিতে সংগ্রামের উত্তপ্ত পথ। সুতীব্র বাতাস বয়ে চলে দেশের ছাত্র-শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীর চেতনায়।
১৯৪৭ সালের ১৫সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস প্রকাশ করে বাংলাভাষা আন্দোলনের প্রথম পুস্তিকা। নামÑ “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু ?” এটি সম্পাদনা করেন প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম। এই পুস্তিকায় লিখেছিলেন অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, ইত্তেহাদ সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদ ও আবুল কাসেম। তাদের লেখায় প্রমাণ করা হয় যে, বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হবার উপযুক্ত। সুতরাং বাংলাই হবে আমাদের রাষ্ট্রভাষা।
এই পুস্তিকা প্রকাশের পর- রাষ্ট্রভাষা বাংলার সপক্ষে বিপুল জনমত গড়ে তুলতে তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে এক স্বাক্ষরতা অভিযান পরিচালিত হয়। দেশের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদসহ বহু ব্যক্তি এতে স্বাক্ষর করেন। মেমোরেন্ডামের একটি কপি সরকারের কাছে পেশ করা হয়। আর তার অন্য কপি পত্র-পত্রিকায় দেয়া হয় প্রকাশের জন্য।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিকে আরো সোচ্চার ও বলিষ্ঠ করার জন্য একটি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর নূরুল হক ভূঁইয়া। প্রথমদিকে কিছুটা গোপনে। পরে অবশ্য প্রত্যক্ষ ও জোরালোভাবেই কাজ চলেছে। তখন তাদের কোনও ভয়ই আর বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি।
১৯৪৭ সালের ১৭নভেম্বর তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় যে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু নয়, বরং বাংলাই হতে হবে।
এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় প্রথম সংঘর্ষ বাধে ১২ডিসেম্বর ঢাকার পলাশী ব্যারাকে। এই দিনে বাংলা বনাম উর্দু বিতর্কে বাঙালি ও অবাঙালি কেরানীদের মধ্যে সংঘষের্র সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ এক পর্যায়ে তীব্রতর হয়। এতে ২০জন আহত এবং ২জন নিহত হয়। এর প্রতিবাদে ১৩ডিসেম্বর ছাত্র ও সেক্রেটারিয়েট কর্মচারীরা ধর্মঘট করে। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার লক্ষ্যে ঢাকা শহরে ১৫ দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের ১১মার্চ রাষ্ট্রভাষার দাবি নিয়ে সংগ্রামের শুরু হয় নতুন আমেজে। কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা এ ব্যাপারে বলেছেন, বস্তুত ’৪৮-এর ১১মার্চই ছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম সংগঠিত গণবিক্ষোভ। আর কামরুদ্দীন আহমদ বলেছেন, “এ আন্দোলন তৎকালীন সরকারকে রাষ্ট্রভাষার সপক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছিল। অথচ রক্ত দিয়েও ৫২ সালে সরকারকে টলানো যায়নি। ভাষার দাবি উঠাবার নৈতিক বল যতটুকু এসেছিল তা ১১ই মার্চের চুক্তির ফলে সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ চুক্তি লংঘিত হয়েছিল বলেই ৫২ সালের আন্দোলন মূলত ২১, ২২, ২৩ এবং ২৪শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত উত্তপ্ত ছিল। এরপর পুলিশী ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার এটাকে তছনছ করে দেয়।”
লিয়াকত আলী খান তার বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেন, ওঃ রং হড়ঃ ঢ়ৎড়ারহপরধষরংস, ঃযবহ যিধঃ রং ঢ়ৎড়ারহপরধষরংস? তাঁর এ কথাগুলো শুনে মনে হয়েছিলো, তিনি হয়তো রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু না, তিনি কিছু বলেননি। গোটা প্রসঙ্গটাই এড়িয়ে যান।
১৯৫২ সালের ২৬জানুয়ারি পল্টনের এক জনসভায় খাজা নাজীমুদ্দিন পুনরায় ঘোষণা করেন, “উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে।” তার এই ঘোষণা ছিল ৪৮ সালের ১৫মার্চে গৃহীত রাষ্ট্রভাষা চুক্তির সরাসরি খেলাফ। ফলে তার এই ঘোষণার প্রতিবাদে ৩০জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
একই দিন বিকালে বার লাইব্রেরি হলে ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা ও সংস্কৃতিকর্মীদের এক বৈঠকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন পরিচালনার জন্য ৪০জনের অধিক সদস্য নিয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ। এর আহ্বায়ক নিযুক্ত হন কাজী গোলাম মাহবুব। এই কর্মপরিষদের উদ্যোগে ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ ঢাকা শহরে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। এই দিন বিকালে কর্মপরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এক জনসভা। সভায় মাওলানা ভাসানী, আবুল হাশিম ও অন্যান্য রাজনীতিক ও ছাত্রনেতা লীগ সরকারের চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের নিন্দা করেন। তারা বাংলা ভাষার দাবি সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আরও ঘোষণা করা হয় যে, ২১ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রদেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট পালিত হবে। কিন্তু স্বৈরাচারি পাক সরকার ২০ফেব্রুয়ারী রাত থেকে পরবর্তী এক মাসের জন্য ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সকল প্রকার ধর্মঘট, সভা, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
ফলে সাহসের সাথে সামনে এগুবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন নেতৃবৃন্দ। সিদ্ধান্ত নিলেন, যে কোনও মূল্যে ১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে। এবং ২১ফেব্রুয়ারী প্রচন্ড কর্মসূচি পালিত হবে।
সে হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারী ঘন কুয়াশা ঘেরা সকালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা দলে দলে জমায়েত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায়। বিপুল সংখ্যক উপস্থিতির এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করলেন ভাষা সৈনিক গাজীউল হক। দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটায় সমাবেশ শুরু হলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের শপথে সংগ্রামী ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তাল হয়ে ওঠেন। চলতে থাকে ক্রমাগত প্রতিবাদী শ্লোগান এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের প্রচেষ্টা। ছাত্র-ছাত্রীদের সংগ্রামের উত্তাল সমুদ্রের গর্জনে কেঁপে ওঠে শাসকের ভিত। দিশা না পেয়ে তারা পুলিশকে নির্দেশ দেয় গুলির। বিক্ষুব্ধ মিছিলের ওপর পুলিশের নির্বিচার লাঠি চার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গুলিতে মুহূর্তই রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মাটিতে ঢলে পড়লেন শফিক, সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সালাউদ্দিনসহ অনেকেই। আর এভাইে তাঁদের রক্তের আঁখরে লেখা হলো ২১ ফেব্রুয়ারী।
এই সব মহান শহীদের তাজা খুনের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের বাংলা ভাষার মর্যাদা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং একই সাথে রাষ্ট্রভাষা।
কিন্তু পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলনের এই ইতিহাসকে একটি বিশেষ মহল বিকৃত করতে শুরু করে। বাংলা ভাষা নিয়ে যেমন ছিনিমিনি খেলা হয়েছে, তেমনি ভাষা আন্দোলন ও ভাষা সৈনিকদের ইতিহাস নিয়েও চলছে এক ধরনের ঘৃণ্যতম ষড়যন্ত্র। প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের আড়ালে রাখার এটা একটা ন্যক্কারজনক কূটকৌশল। সেইসাথে এমন অনেককেই ভাষা সৈনিক বানানো হয়েছেÑ যারা বিতর্কিত। ভাষা আন্দোলনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এধরনের নিষ্ঠুর পরিহাস জাতির জন্য সত্যিই লজ্জার বিষয়! এ সম্পর্কে ভাষা সৈনিক এম. শামসুল আলমের (১৯২৬-১৯৯৪) বক্তব্য স্মরণ করা যেতে পারে। ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিলোÑ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন : “ভাষা আন্দোলনের একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বলে ভাষা আন্দোলনকে বায়ান্নোর একুশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত হবে না। এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ‘৪৭ থেকে। এমনকি দেশের শিক্ষাবিদগণ রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটি বিভিন্নভাবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু কোন নির্দিষ্ট কর্মপন্থা এবং সংগঠন না থাকায় ভাষার প্রশ্নটি একটি আন্দোলনের রূপ পেতে পারেনি। এই দুরূহ কাজটি করতে এগিয়ে এসেছিলো ‘তমদ্দুন মজলিস’ নামে একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান; ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাসেম ও অন্যান্য কয়েকজন অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রের উদ্যোগে এই মজলিস গঠিত হয়। তবে অধ্যাপক আবুল কাসেমই মূল উদ্যোক্তা ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ‘৪৮-এর এগারই মার্চের আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। সত্যি বলতে কি, এগারই মার্চের আন্দোলন না হলে, বায়ান্নোর আন্দোলন হতো না। এগারই মার্চ রাষ্ট্র ভাষার দাবি নিয়ে যে সংগ্রাম শুরু হয় বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারীতে তা পূর্ণতা পায়। বস্তুত ’৪৮-এর এগারই মার্চ ছিলো ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম সংঘাত ও গণ বিক্ষোভ এবং এরই ফলশ্রুতিতে তৎকালীন সরকার বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। কাজেই বলা যায়, ভাষার দাবি উঠাবার নৈতিক বল যতটুকু এসেছিল, তা এগারই মার্চের চুক্তির ফলে সৃষ্ট। আর এই চুক্তি সংগঠিত হয়েছিল বলেই বায়ান্নোর আন্দোলনের সূত্রপাত্র।”
বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস প্রণয়ন সম্পর্কে রাজনীতিবিদ আতাউর রহমান খান বলেন : “না, ভাষা আন্দোলনের শুদ্ধ ইতিহাস লেখা হয় নাই। শিল্পী সাহিত্যিক যারা একুশের পদক লাভ করেছেন, তাদের উচিৎ এ বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তা ছাড়া যারা অংশগ্রহণ করেছেন কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী তারাও এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারেন।”
ভাষা আন্দোলনের ফলে কাগজে-কলমে বাঙলা শিক্ষার মাধ্যম, আইন-আদালতের ভাষা ও রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করল বটে, কিন্তু প্রতি বছর ভাবপ্রবণতার মধ্যে মহাসমারোহে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস পালন সত্ত্বেও পাকিস্তান আমলেÑ এমনকি যুক্তফ্রন্টের আমলেও এই স্বীকৃতিকে কার্যকরী করার কোন লক্ষণ দেখা যায় নাই। ’৪৮-এর আন্দোলনের ফলে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমিতে এবং আইন সভার কার্যক্রম ও কার্যবিবরণীও ইংরেজীতে পরিচালিত হত। বাংলা একাডেমির কার্যকরী সংসদের সদস্য হিসাবে আমি এই প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বাঙলার মাধ্যমে কাজকর্ম পরিচালনার প্রস্তাব পাস হয়। ১৯৫৪ সনে আমি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও আইন সভার কার্যবিবরণী বাংলায় পরিচালনা করতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তফ্রন্টের নেতাদের অনিচ্ছা ও বাধা সত্ত্বেও ১৯৫৬ সনের সেপ্টেম্বর মাসে অবিলম্বে সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম ও সরকারী ভাষা হিসাবে বাংলাকে চালু করার আমার প্রস্ত—াব আইন সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাস করাতে সমর্থ হই। অবশ্য এর সাথে ১৯৫৪ সনে শেরে বাঙলা ফজলুল হক ও মাওলানা ভাসানীর মুখবন্ধ সমৃদ্ধ “একুশ দফার রূপায়ণ” নামক আমার বইটিতে সর্বস্তরে বাংলাকে চালু করার সমস্যা ও তার সমাধান প্রদর্শন করেছিলাম। এতকিছু সত্ত্বেও শিক্ষা বিভাগ কিংবা অফিস-আদালতে বাংলা চালু না হওয়ায় বহু চিঠিপত্র ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সরকারের কাছে রাষ্ট্রভাষারূপে বাঙলাকে সর্বত্র চালু করার জন্য তাগিদ দিতে থাকি। তাছাড়া ১৯৪৯ সন থেকে আমার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ‘সাপ্তাহিক সৈনিকেও’ এজন্য বারবার কঠোর সমালোচনা করে সর্বত্র বাংলা প্রচলনের দাবি জানাতে থাকি।
মন্ত্রীসহ সরকারী মহল যে সময় বাংলাকে সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম ও রাষ্ট্রভাষা হিসাবে চালু করার অনুপযুক্ততা আলোচনা করে বলতেন : বাঙলায় তো এখনো পর্যন্ত উচ্চতর ক্লাসগুলোÑ বিশেষ করে বিজ্ঞানের উপযুক্ত পাঠ্য বইও রচিত হয় নাই; এ ছাড়া টাইপ রাইটিং ও টেলিপ্রিন্টিং-এর মত অত্যাবশ্যকীয় কাজে বাঙলাকে সঠিকভাবে চালু করা যায় না। সেই সংগে তারা উপযুক্ত পরিভাষার অভাবের কথাও উত্থাপন করতেন। তার উত্তরে আমি মাতৃভাষা চালুর ব্যাপারে বিদেশের উদাহরণ ও অন্যান্য যুক্তি দিয়ে তাদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করতাম : বৈজ্ঞানিক বিষয়সহ সবকিছু দৈনিক পত্র-পত্রিকায় বাঙলায় রিপোর্ট আকারে প্রকাশের ক্ষেত্রে পরিভাষার সমস্যা দেখা দেয় না; কলেজ হাসপাতাল, আওয়ামী লীগ, ইত্তেফাক, অক্সিজেন, টেবিল, চেয়ারসহ হাজার হাজার অন্য ভাষার শব্দ যে বাংলা ভাষার শব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে তো বাংলাকে সমৃদ্ধই করছে। আর সহজ-সুন্দর বাংলা প্রতিশব্দ না থাকলে যে বিদেশী শব্দকে সহজরূপে বাংলায় ব্যবহার করা উচিত, সে যুক্তি প্রদর্শন করে বলতাম : আপনাদের ওসব খোঁড়া যুক্তি দিয়ে বাংলা প্রচলনকে বাধা দেয়া কোনমতেই উচিত নয়। কিন্তু আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ও উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের যুক্তির ব্যবহারিক প্রমাণ না থাকায় মন্ত্রী ও সরকারী আমলারা তাকে আমল দেয়া সংগত মনে করতেন না।”
(ক) ১৯৪৭-৪৮ সাল। বদরুদ্দীন উমর লিখিত “পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি” নামক পুস্তকের বিবরণ অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র ও অধ্যাপকের উদ্যোগে তমদ্দুন মজলিস নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। (২) ১৫ই সেপ্টেম্বর তারা “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু” এই নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। (৩) ১লা অক্টোবর প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং অধ্যাপক নূরুল হক ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক নিযুক্ত করা হয়। সেই মাসে ফজলুল হক হলে এ ব্যাপারে এক বিরাট সভা অনুষ্ঠিত হয়। (৪) ৬ই ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষার দাবিতে সাধারণ ছাত্র-সভা অনুষ্ঠিত হয়। (৫) ৭ই ডিসেম্বর রেল কর্মচারীদের সভায়, এ. কে. ফজলুল হককে সভাপতি করার ব্যাপারে বাঙ্গালী-অবাঙ্গালীদের মধ্যে দারুণ গন্ডগোল হয়। (৬) ১২ই ডিসেম্বর ভাষা আন্দোলন বিরোধিরা পলাশী ব্যারাক ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এসে ছাত্রদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও কয়েক রাউন্ড গুলী ছুঁড়ে। এর প্রতিকার দাবিতে এক বিরাট মিছিল মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে সেক্রেটারিয়েট যায় এবং মন্ত্রী আবদুল হামিদ ও সৈয়দ আফজলের সমর্থন আদায় করে। (৭) ১৩ই ডিসেম্বর সেক্রেটারিয়েট কর্মচারীরা পূর্ণ হরতাল পালন করেন। সেদিন থেকে ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। (৮) ২৩শে ফেব্রুয়ারী ’৪৮ পাকিস্তানের গণপরিষদে উর্দুর সংগে বাংলাকে পরিষদের ভাষা করার ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের প্রস্তাব বাতিল হয়। ফলে (৯) উক্ত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২৬শে ফেব্রুরুয়ারী ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হয়। (১০) ২৬শে ফেব্রুয়ারী তমদ্দুন মজলিসের ডাকে পূর্ব পাকিস্তানের ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালন ও ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়। সে দিনই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপে বহু ছাত্র-জনতা আহত হয় এবং কিছু সংখ্যক লোককে জেলে প্রেরণ করা হয়। এই বিক্ষোভ ও গ্রেফতারের সংবাদ পেয়ে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীগণ তমদ্দুন মজলিসের সংগে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে আসেন। (১১) ২রা মার্চ ফজলুল হক হলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। (১২) ১১ই মার্চ সমগ্র পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকায় পুলিশের সংগে ছাত্র জনতার তীব্র লড়াইয়ে গুলী, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও পুলিশের অত্যাচারে ২০০ আহত ৯০০ জন ধৃত ও ৬৯ জনকে জেলে বন্দী করা হয়। (১৩) ১২ থেকে ১৫ই মার্চ পর্যন্ত ঢাকা ও অন্যত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে পূর্ণ হরতাল পালন করা হয়। (১৪) ১৫ মার্চ সংগ্রাম পরিষদের সাথে তথ্যমন্ত্রী নাজিমুদ্দীন সাহেবের ৮ দফা ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। (১৫) উক্ত দিনে ছাত্র-জনতার এক বিরাট মিছিল জগন্নাথ হলে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক পরিষদের সভার দিকে পুলিশের বেরিকেড ভেদ করে অগ্রসর হয় ও পরে উক্ত চুক্তির কথা জানতে পেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। (১৬) ১৯শে ’৪৮ মার্চ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিরাট জনসভায় জিন্নাহ সাহেব রাষ্ট্রভাষা ‘উর্দু হবে’ বলায় বিভিন্ন দিক থেকে নানা প্রতিবাদ ধ্বনি উচ্চারিত হয়।
২৪শে মার্চ কার্জন হলেও জিন্নাহ সাহেবের বক্তব্যের প্রতিবাদে ‘নো’ ‘নো’ ধ্বনি উচ্চারিত হয়।
এরপর ১৯৪৯ এবং ৫১ সালে ১১ই মার্চ দিনটি রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বস্তুত নাজিমউদ্দিন সাহেব চুক্তির ৩নং দফায় পরবর্তী প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভায় “বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপনের” অঙ্গীকার করায় ভাষা আন্দোলন স্থিমিত হয়ে আসে।
এই চুক্তিতে ২৯শে ফেব্রুয়ারী ’৪৮ থেকে ভাষার প্রশ্নে গ্রেফতারকৃত সকলকে মুক্তিদান অর্থাৎ আমাদের সকল দাবি মেনে নেওয়ায় ছাত্র-জনসাধারণ অনেকটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে। বস্তুত এ ছিল এক অনন্য বিজয়। এ ব্যাপারে তৎকালে কলকাতার আবুল মনসুর আহমদ সাহেবের “ইত্তেহাদ” পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পকদীয় নিবন্ধ থেকে আন্দোলনের প্রমাণ মিলে। তিনি লিখেছিলেন : “যে বিরাট শক্তি ও দুর্জয় বিরোধিতার মধ্যে সংগ্রাম করিয়া বাংলা ভাষা আন্দোলনকারীগণ যে সাফল্য লাভ করিয়াছেন তাহা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকিবে।”
দু:খের বিষয়, ভাষা আন্দোলনের যে কয়টি ইতিহাস বা দলিল প্রকাশিত হয়েছে তা পড়লে আমাদের বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়।”
ভাষার জন্যে সংগ্রাম করা আর জীবন দেবার ঘটনা এই পৃথিবীতে একটি বিরল ইতিহাস। এই ইতিহাসের স্রষ্টা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাদী লড়াকু, সংগ্রামী মানুষ। তারা বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে এবং অকাতরে নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে বাংলা ভাষাকে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। একইসাথে জাতিগত বৈষম্য ও দুরাচারি শাসন-শোষণের শিকার হয়ে অবশেষে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
বাংলা ভাষাকে তার আপন মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এদেশের মানুষ জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ভাষার জন্য এই সংগ্রাম ছিল অনিবার্য।
কিন্তু কি পেলাম? একটি রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে ভাষাকে আমরা স্বাগত জানিয়ে আপন বুকে স্থান দিতে চেয়েছিলাম, সেই বাংলা ভাষা এই দেশেই তৃতীয় ভাষা হিসাবে উঠোনে স্থান পেল।
কাগজে-কলমে বাংলা ভাষা এখন ‘রাষ্ট্রভাষা’ মর্যাদা পেলেও মূলত এটা আমাদের জন্য একটি মারাত্মক প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতারণা বলছি এই কারণে যে, একদিকে আমাদের অফিস-আদালতে প্রচলিত রয়েছে ইংরেজী ভাষা। আর অন্যদিকে আমাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্রাটের মতো বসে আছে ‘সংস্কৃতর্নিভর বাংলা।’ এই সংস্কৃত ভাষার দাপট এমনি যে, তার মধ্য থেকে আমাদের বাংলা ভাষাকে সনাক্ত করাই দুরূহ কাজ হয়ে পড়েছে। আমাদের শিশুদেরকে এখনো বর্ণজ্ঞান দিতে হয় বাংলা অক্ষরের সামনে-পেছনের সংস্কৃত শব্দ এবং বাক্যের মাধ্যমে।
তাই আমরা মনে করি, বাংলা ভাষা এখনো শত্রুমুক্ত নয়। এখনো নিরাপদ নয়। তবু তো আমাদের থেমে থাকলে চলবে না। সকল অবাঞ্ছিত শত্রুতাকে পদদলিত করে বাংলা ভাষাকে তার আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এদেশের ঐতিহ্যপ্রিয় জাগ্রত বিবেকদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। সুপরিকল্পিত কর্মপন্থা এবং সুসংহত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এগুতে হবে। তবে তার জন্যে প্রয়োজন :
খ) আমরা যে হীনমন্যতার শিকার হয়ে সংস্কৃত এবং ইংরেজি ভাষার তাবেদারি করছি, আমাদের মন থেকে এই হীনমন্যতা এবং তাবেদারি করার মানসিকতা পরিত্যাগ করে বাংলা ভাষার প্রতি অনুগত থাকতে হবে।
গ) বাংলা ভাষার একটি বিশাল অংশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে আছে আঞ্চলিক শব্দ। আটষট্টি হাজার গ্রামের ধূলা-মাটি থেকে উদারতা ও সচেতনতার সাথে আমাদেরকে সে সকল অবহেলিত শব্দ ভান্ডারকে খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে এবং তা কাজে লাগিয়ে বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে।
ঘ) সংস্কৃত, তৎসম বা আধা তৎসম শব্দকে উপড়ে ফেলে বিশুদ্ধ বাংলা ভাষার শব্দ দিয়ে ‘বাংলা অভিধান’ তৈরি করতে হবে। বাংলা বানানের সকল জটিলতা পরিত্যাগ করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য ‘বানান রীতি’ তৈরি করতে হবে।
ঙ) বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে হলে, প্রকাশনার প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। লেখক তৈরি করার একটি বিরাট মাধ্যম হলো সাহিত্য পত্রিকা। সুতরাং বেশি বেশি প্রকাশনাকেও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
চ) বাংলা ভাষা অকৃপণভাবে ধারণ করেছে ইংরেজি, আরবী, ফারসী, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ভাষার শব্দরাজি। বাংলা ভাষায় অনূদিত হচ্ছে পৃথিবীর অনেক ভাষার সাহিত্যকর্ম। বাংলা সাহিত্যকর্মকেও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপকভাবে বিশ্বের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ছ) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সমৃদ্ধির জন্য পৃষ্ঠপোষকতার মনোভাব নিয়ে সরকার এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।
জ) লেখকের সম্মাননা তাঁদের প্রাপ্য। যোগ্য লেখকদেরকে যথাযথ পারিশ্রমিক দিয়ে লেখাতে হবে এবং প্রকাশনা বৃদ্ধি করতে হবে। সেইসাথে প্রকৃত ঐতিহ্যবাদী যোগ্য লেখককে পুরস্কার প্রদানের যে ধারা চলছে তাকে আরো সচেতনতার সাথে জোরদার করে লেখকদেরকে সম্মানিত করতে হবে।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments