রাজনীতিতে নৈতিকতা_সৈয়দ নাজমুল আহসান

 
নৈতিকতা যার মূল ভিত্তি হলো নীতি। আর নীতি বা রীতি-নীতি এমন একটি আদর্শিক উপাদান যা ভালো-মন্দের সাথে সুস্পষ্ট পার্থক্য নির্ধারণ করে দিয়ে নৈতিকতাকে অর্থবহ করে তুলে। নৈতিকতা সমাজ,রাষ্ট, বিশে^ সকল মানুষের মানবিক মূল্যবোধকে সমৃদ্ধ করে থাকে। তাই সুখময় জীবন গঠনে নৈতিকতাকে অন্যতম উপাদান হিসাবে গন্য করা যায়। আর রাজনীতি যেহেতু মানুষের জীবনের সাথে জড়িত তাই রাজনীতিতে নৈতিকতার গুরুত্ব অপ্রাসংগগিক নয়। তবে রাজনীতির সাথে নৈতিকতা কথাটি বলতেই অনেকেরি ভ্রু কুঁচকে উঠতেই পারে। রাজনীতি বড় পরিধির বিষয় এর সাথে নৈতিকতাকে জড়িয়ে দেয়া হলে বিষয়টি হালকা হয়ে যেতে পারে বলে মনে করতে পারে অনেকেই। তাই রাজনীতি এবং নৈতিকতাকে আলোচনার টেবিলে আনতে নারাজ কেউ কেউ। রাজনীতিতে নৈতিকতা  কিংবা নৈতিকতায় রাজনীতির অবস্থান সম্পর্কে বলতে গেলে কেউ হয়তো কটাক্ষ করে বলবে সর্বক্ষেত্রে রাজনীতিকে টেনে আনা এটাও একধরনের অপপ্রয়াস। যে যাই বলুক রাজনীতি এবং নৈতিকতা নিয়ে এখন অনেকেই ভাবতে শুরু করেছে। বর্তমান সময়ে রাজনীতি এবং নৈতিকতার বিষয়টি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৈতিকতা বলতে এমন কতগুলো নিয়মকানুনকে বোঝায় যা মানুষের বাহ্যিক মানসিক আচার-আচরনকে নিয়ন্ত্রন করে। নৈতিকতা সভ্যতার অন্যতম প্রতিচছবি। নৈতিকতার উপর ভর করে মানব সমাজ সভ্যতার দিকে অগ্রসর হয়। অগ্রগামী সমাজ নৈতিকতার দিক দিয়ে অগ্রগামী থাকে। নৈতিকতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহান রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এরিস্টটল বলেছিলেন- মানুষ যখন আইন নৈতিকতা থেকে দূরে থাকে তখন সে নিকৃষ্টতম জীবে পরিণত হয়। নৈতিকতার বিষয়টি রাজনীতির অন্যতম উপাদান না হলেও রাজনীতিবিদদের জন্য নীতি-নৈতিকতা অনেক সময় বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। নীতিহীন নেতৃতের কোন মূল্য নেই কর্মী-সমর্থকদের কাছে। আর নৈতিতা বর্জিত নেতত্ব  আস্থাভাজন  হতে পারে না আমজনাতর কাছে। নীতি এবং নৈতিকতার একটা মানদন্ড আছে। এর ব্যতয় ঘটলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে রাজনীতি- রাজনৈতিক দল সর্বোপরি রাজনীতিবিদদেরকে দায়ভার বহন করতে হয়। রাজনীতির পরিধি ব্যাপক হলেও নৈতিকতায় ব্যক্তি-মানুষের চারিত্রিক বা সুকুমার প্রবৃত্তি প্রস্ফুটিত হয়। রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নীতিমালা থাকলেও নৈতিকতা রাজনীতিবিদদের জন্য প্রযোজ্য। নৈতিকতা সম্পূর্ণ ব্যক্তি কেন্দ্রীক। নীতিমালা ব্যক্তি-দল-বস্তু কেন্দ্রিক হয়। নৈতিকতা যেহেতু ব্যক্তিকেন্দ্রীক তাই নৈতিকতার স্খলন কিংবা নৈতিকতা বর্জিত নেতৃবৃন্দের কারনে দলকে খেসারত দিতে হয়, দলের প্রতি বিরুপ মনোভার তৈরী হয় সর্মথকদের। রাজনৈতিক দলগুলোকে যেহেতু জনকল্যানে কাজ করতে হয় তাই নৈতিকতার বিষয়টিতেও তাদের নজর রাখতে হয়। রাজনীতিতেও নৈতিকতাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। ইদানিং আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ দলগুলোকে ঘায়েল করতে গিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের প্রতি নীতিহীন নৈতিকতা বর্জিত বক্তব্য-বিবৃতি প্রদানের মাত্রা আংশকাজনক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। এই অপ-রাজনীতির চর্চা রাজনীতিকে কলুষিত করছে। হাসতে হাসতে কাশতে কাশতে একে অপরেকে নিয়ে যেভাবে টিট্কারি-খোঁচা দিচেছ তা কখনোই রাজনীতির সুস্থ চর্চা হতে পারে না। লজ্জাজনক হলেও বলতে হচেছ আজ রাজনীতিতে অভিজ্ঞ-সিনিয়রদের  মুখ নিঃসরিত  যে হালকা-রসাত্মক-কটাক্ষ ভাষার প্রয়োগ শোনা যায় তাতে দেশের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেকছে তা ভবিষ্যতই  বলে দিবে। রাজনৈতিক বক্তব্যের নামে রাজনীতিবিদরা যে ভাষায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করছে তা এখন  মাঠ পর্যায়ের সীমানা ছেড়ে সংসদে গিয়ে পৌঁছেছে। খোদ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নেতারা তীর্যক ভাষায় সমালোচনা করতে করতে একে জাতীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রুপ দিতে চাচেছন বলে ভবিষৎ প্রজন্ম মনে করছে। সংসদে আলোচনার চেয়ে সমালোচনা বেশি হচেছ তাও আবার ব্যক্তিকেন্দ্রিক সমালোচনা তাই এসব দেখে নৈতিকতা বর্জিত আচার আচরন শেখার ক্লাসে সময় নষ্ট না করে কষ্ট করে টিভির চ্যনেল ঘুরিয়ে ভিন্ দেশী নাচ গানে মাতোয়ারা হচেছ নবীন প্রজন্ম। কথায় আছে জল সব সময় নীচের দিকেই গড়ায়। সে মতে নেতাদের পরনিন্দা-পরচর্চার সংক্রমন কর্মীদের মাঝে সংক্রমিত হচেছ। এটা অশূভ লক্ষন। রাজনীতিতে নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারনে খুন-প্রতিহিংসা বৃদ্ধি পাচেছ। হত্যা-লাশ গুম এর সংখ্যার পরিসংখ্যান দেখলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। রাজনীতিতে মত-বিরোধ থাকতেই পারে ভিন্ন মত ভিন্ন দলের সমন্বয়েই বহুদলীয় গণতন্ত্র। তা না হয়ে সেখানে মত প্রকাশে বাধা দেয়া হলে, প্রতিহিংসার রাজনীতি কায়েম হলে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে বাধ্য। স্বচছ দৃষ্টিতে তাকালে আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নৈতিকতার অবক্ষয়ে কিসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়? এর শেষ কোথায় প্রশ্ন এখন অনেকেরি। আমাদের রাজনৈতিক অংগনে নৈতিকতার অবক্ষয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে শুধু রাজনৈতিক কারনে ব্যক্তি চরিত্র হননেও কুষ্ঠা বোধ করছেন না প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে বাবা-মার দেয়া নামকে নিয়ে টিট্কারি করা হচেছ যেমনটি গ্রামের অজ পাড়া গাঁয়ের শিশু-কিশোরার তাদের বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে থাকে। কিংবা কাউকে অযোগ্য হেয় করতে করে থাকে। ঠিক তেমনভাবে ইত্রামি ফ্রাামি এখন আমাদের রাজনীতির অপ-সংস্কৃতিতে পরিণত হচেছ। এমনও নজির দেখা যাচেছ যে, কোন প্রবীন রাজনীতিবিদকে কটাক্ষ করার প্রতিবাদে উক্ত ভূক্তভোগী তার প্রতিবাদের ভাষায় পবিত্র কোরআন এর পবিত্র বাণীকে উদাহরণ হিসাবে ধরে নিয়ে প্রত্যুত্তর দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। উক্ত ভুক্তভূগেী মুসলমানের নাম নিয়ে কটাক্ষ করা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী বিধায় নাম নিয়ে কটাক্ষ না করার জন্যও পরার্মশ দিয়েছেন। নৈতিকতার অবক্ষয়ের রাজনীতি আমাদের কোথায় নিয়ে ঠেকাচেছ? প্রশ্ন অনেকেরি। নৈতিকতার অবক্ষয়ের রাজনীতির কারনে মহামান্য আদালতও কথার লাগাম টেনে ধরাতে পারেনি আমাদের অনেক খ্যতিমান রাজনীতিবিদদেরও। নৈতিকতার অমূল্যায়নের কারনেই রাজনীতিতে হত্যা, গুম, প্রতিহিংসার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচেছ। নীতি-নৈতিকতা বর্জিত মাত্রাহীন চলমান রাজনীতির কারনে অন্যান্য ক্ষেত্রেও অবক্ষয় ঘটছে। রাজনীতিতে নৈতিকতার অভাবে সৎ যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হচেছ না। নৈতিকতার অভাব দেশপ্রেম বাড়াচেছ না। আবার দেশপ্রেমের অভাবেও নৈতিকতা বাড়ছে না কারন নীতি-নৈতিকতা দেশপ্রেমের পরিপূরক অর্থাৎ সবমিলিয়ে বলা যায় রাজনীতিতে নৈতিকতা একটি মূল্যবান বিষয়। একে উড়িয়ে দেওয়ার, অস্বীকার করার সুযোগ নেই। রাজনীতিতে নৈতিকতার অবক্ষয়ে দেশে সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত হচেছ। দূর্নীতির কালো থাবা গ্রাস করে খাচেছ গোটা দেশটাকে। রাজনৈতিক নেতাদের নৈতিকতার মান নি¤œমূখী হওয়ার ফলে রাজনীতির প্রতি দেশের জনগনের আস্থা, বিদেশীদের আস্থা কমে যাচেছ। আর নৈতিকতার অবক্ষয় কখনোই রাজনীতি তথা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। 
 
রাজনৈতিক দলগুলো তার অঙ্গ সংগঠন এর নামে চাঁদাবজি-টেন্ডারবাজি এসবিতো নীতি-নৈতিকতা চর্চার অভাবের কুফল মাত্র। এখন রাজনীতি চলে গেছে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে। কালো টাকার মালিক-আমলা গড ফাদারদের কেউ কেউ নিয়ন্ত্রন করছে জাতীয় রাজনীতিকে। অবস্থায় রাজনীতির নৈতিকতার অধঃপতন হওয়াটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিতে জন্ম নিচেছ সহিংসতার কালচার। স্বার্থসিদ্ধির মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজনীতিতে আজ আস্থা আর বিশ্বাসের চরম সংকট অনৈতিক রাজনীতিকে প্রসারিত করছে। নৈতিকতার অভাবে শ্রদ্ধা-সম্মান প্রদর্শনের সংস্কৃতি হারিয়ে গিয়ে একপক্ষ অন্য পক্ষকে শালীনতাবর্জিত মন্তব্য করতেও কুন্ঠিত হচেছ না। একসময় রাজনীতি-রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা-ভক্তি ছিল। এর বিপরীতে আজকে রাজনীতির প্রতি ভীত-অশ্রদ্ধ যে মনোভাব তার মূল কারন রাজনীতিতে নৈতিকতার অবক্ষয় নীতি-নৈতিকতার মূল্যবোধের অভাব। এই মূহূর্তেই দেশ-জনতা তথা রাজনীতির স্বার্থে রাজনীতিতে নৈতিকতার চর্চা করতে হবে। সেসাথে সততা-দেশপ্রেমের প্রতি আরো আন্তরিক হয়ে রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন এনে রাজনীতিকে তার কল্যাণকর ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাহলেই রাজনীতির প্রতি জনগনের আস্থা বাড়বে। দেশ উন্নয়নের রাস্তা তৈরী হবে।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com 

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.