পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশের একটি ইতিহাস সম্মৃদ্ধ দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত এই নদীমাতৃক সবুজ দেশে কালের বিবর্তনে যাতায়াত মাধ্যমে ঘটেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।একসময়ে মানুষ গরু,মহিষের গাড়ীতে করে যাতায়াত করেছে মাইলের পর মাইল পথ।ঘোড়ার গাড়ীর প্রচলন ও ছিলো চোখে পড়ার মত।পালকীর ব্যবহার আজও মানুষের স্মৃতির দরজায় কড়া নেড়ে যায়। কিন্তু সময়ের সাথে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন মানুষের কাছে যাতায়তের সেইসব মাধ্যমগুলিকে পুরানো সংস্কৃতির খাতায় লিপিবদ্ধ করেছে।এই আধুনিক যুগে সেইসব বাহনের কথা মানুষ ভাবতেই নারাজ। তবে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে একটি বাহন আজও ৪০% বাঙালীদের যাতায়তের প্রধান মাধ্যম হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় যদিও তা স্বল্প দূরত্বের যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেই বাহন এর নামটি এতোক্ষনে নিশ্চয় আঁচ করতে পেরেছেন। হ্যাঁ, আমি রিকশার কথায় বলছি!
“রিকশা” শব্দটা এসেছে জাপানী ভাষা থেকে। জাপানী শব্দ ” জিন – রিকি-শা” শব্দ হতে।যার জিন শব্দের অর্থ -মানুষ, রিকি=শক্তি,শা=বাহন অর্থাৎ, রিকশা শব্দের আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় -“মানুষ্য বাহিত বাহন”।রিকশার উৎপত্তি নিয়ে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মতবাদ হলো- জাপানে বসবাসরত আমেরিকান মিশনারি জোনাথন স্কোবি নামক একব্যক্তি সর্বপ্রথম রিকশা উদ্ভাবন করেন।তিনি জাপানের ইয়োকোহামা শহরে থাকতেন। তার স্ত্রী অসুস্থ থাকায় স্ত্রীকে বহনের জন্যে ১৮৬৯ সালে সর্বপ্রথম দুই চাকা বিশিষ্ট হাতেটানা রিকশা উদ্ভাবন করেন। রিকশা আবিষ্কারের পর খুব অল্পসময়েই জাপানে রিকশা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।১৮৭৪ সালের দিকে চীন সর্বপ্রথম জাপান থেকে রিকশা আমদানি করে। চীনেও এর জনপ্রিয়তারর কমতি ছিলো না। এরপর ১৮৯০ সালের দিকে চীনে বসবাসরত আমেরিকান -মিস বেটি গর্ডন খেয়াল করলেন এরুপ হাতেটানা দ্বিচক্রযানে থেকে হেটেই দ্রুত যাতায়ত করা যায়। তখন তিনি তার পুরানো সাইকেলের প্যাডেলসহ সামনের চাকা এই রিকশায় জুড়ে দিলেন। সেই থেকেই এই ত্রিচক্রযান এর বহুল ব্যবহার শুরু হলো।
১৯০০ সালের দিকে কলকাতায় মালপত্র বহনের জন্যে সর্বপ্রথম দুই চাকা বিশিষ্ট ঠেলাগাড়ির ন্যায় রিকশার প্রচলন শুরু হয় যা এখনও চোখে পড়ার মত। ১৯১৪ সালে কলকাতা পৌরসভা সর্বপ্রথম এই বাহনে যাত্রী বহনের অনুমতি প্রদান করে।এই সময়ে মায়ানমারের রেঙ্গুনে রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯১৯ সালের গোড়ার দিকে মায়ানমারের রেঙ্গুন থেকে এই সোনার বাংলার ঐতিহ্যবাহী বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম রিকশা আমদানি করা হয় তখনও ঢাকায় রিকশার প্রচলন হয়নি। এরপর নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ইউরোপীয় পাট ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবহারের জন্যে কলকাতা হতে দুই চাকার রিকশা ঢাকায় আনেন। এর অনেকদিন পর ১৯৩০ অথবা ১৯৩১ সালের দিকে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে সাইকেল রিকশার প্রচলন শুরু হয়। সেই থেকে বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে রিকশা মানুষের যাতায়তের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে শুরু করে। রিকশার আগমনের ইতিহাস ১০০ বছরের পুরানো হলেও রিকশার জনপ্রিয়তা ঢাকাকে পৃথিবীর কাছে আজ রিকশার রাজধানী হিসেবে পরিচিত করেছে।
গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এর মতে- বর্তমানে ৫ লক্ষাধিক রিকশা এই জনবহুল শহরের ৪০% মানুষের যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম। ২০১১ সালের বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজিত ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাইতো রিকশাকে দেওয়া হয়েছে তার জনপ্রিয়তার স্বীকৃতি। তবে রিকশার এতো জনপ্রিয়তার পরেও রিকশা নিয়ে তেমন কোন গবেষণা চোখে পড়ে না। তাইতো রিকশার গঠনগত তেমন উন্নতি লক্ষ্য করা যায় না। কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালী আর কর্মসংস্থানের ঘাটতি রিকশাকে একদিকে যেমন যাতায়তের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় করেছে তেমনি বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উপার্জনের মাধ্যম করেছে। আবার,উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মানুষের বিনোদন মাধ্যম হিসেবে এর যথেষ্ট ব্যবহার বেড়েছে।
আমার মতে, রিকশার এই জনপ্রিয়তা শুধুই সুখের নয় এর পেছনে রয়েছে এক যন্ত্রনাদায়ক গল্পের বিশদ বর্ণনা। কয়েক কোটি মানুষের কান্নার উপাখ্যান। অবহেলিত ক্ষুধাতুর জনগোষ্ঠীর একমাত্র উপার্জন মাধ্যম। রিকশার প্যাডেলে ঘূর্ণায়মান জীবনের করুণ আর্তনাদ। তাদের নিষ্পাপ চোখে আশার আলোর নাম এই রিকশা! এই রিকশা যেন পৃথিবীকে প্রতিনিয়ত জানিয়ে দিচ্ছে রিকশার রাজধানী ঢাকা নয়, ঢাকা হলো এক দারিদ্র্যতার রাজধানী!!
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments