'I grow into my death,
My life is small
and getting smaller,The world is green.
Nothing is all.'
(My Life: Mark Strand)
জীবন যে 'Nothing is all.'একথা কবেই বোঝা হয়ে গেছে। জীবন থেকে মৃত্যুর
দিকে বোধের ধাবিত
হওয়ার সময়টুকুই আমার কবিতার সময়।
জীবনপাত্র খালি, শূন্যতার
কলরোলে ভর্তি, সেখানে
এক নীরবতার সাধনা-ই শব্দ-ধ্বনির বাতাবরণ
তৈরি করে। কবিতা
সেই আত্মধ্বনিরই প্রাজ্ঞ
কুশল। একদিকে সময়ের
সংকেতে তার জাগরণ,
অপরদিকে নিজের সঙ্গেই
কথা বলার নিরবধি
প্রক্রিয়া। প্রতিটি মুহূর্ত
কীভাবে আমার কাছে প্রতিহত, ভাবনার
তরঙ্গগুলি কীভাবে বিস্তৃত,
অনুভূতির এক নিগূঢ়
সিদ্ধান্ত সেসবই একান্ত
আত্মগত বিবমিষায় কবিতায়
ছলকে ওঠে। যে সাবজেক্টিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কবিতার গীতল ধারাটি প্রবহমান,
সেখানে কোনো ছলনা থাকতে পারে না। শূন্যতার
বা নাথিংনেসের ভেতর তো অশ্রুধ্বনিও থাকে,
যেমন হর্ষধ্বনির থাকার
কথা। কিন্তু হর্ষধ্বনি কি কবিতা লেখাতে
পারে?
হর্ষধ্বনিকে আমি পার্থিব
জগতেরই নশ্বর অনুভূতি
বলে মনে করি। বস্তুগত চাহিদা
ও প্রাপ্তির জগতেরই
নশ্বর অনুভূতি বলে মনে করি। বস্তুগত চাহিদা
ও প্রাপ্তির মধ্যেই
তার সীমানা নির্দেশিত। কিন্তু দুঃখ বা কষ্ট যা মানসিকভাবে এক শূন্যতার
সৃষ্টি করে তা চিরন্তন। বস্তুসংকট আত্মিকসংকটের থেকে আলাদা
হতে বাধ্য। আত্মিকসংকট কখনো বস্তু দিয়ে
পূরণ করা যায় না। সুতরাং
তা আবহমান। তা এক মানবসঞ্চারের দ্বারাই বাহিত হয়ে চলে। নশ্বর
বা অনিত্য সাধনা
একজন প্রকৃত কবিতাকর্মীর হতে পারে না। সর্বদা আমার অস্তিত্বের মধ্যেই
বিরাজ করে এক গভীর শূন্যতা,
যা কোনোভাবেই তাকে পূরণ করা যায় না। পার্থিব বস্তুর সংকট বারবার আমাকে
তাড়িত করেছে , তবুও হৃদয়ের অন্তর্গত
না বলা অনির্ণীত
এক সংকটের দেখা পেয়েছি এবং সেই সংকটই
আমাকে কবিতা লিখিয়েছে। লক্ষ্য ও উপলক্ষ
কীভাবে এই সৃষ্টির
মহিমায় ব্যঞ্জিত তা উল্লেখ করা যেতে পারে।
ঘটনাক্রম : ১
১৯৮৩ সালে এক অন্ধ বন্ধুর
সঙ্গে মুম্বাই শহরে এসেছি। প্রায়
তিন দিন কিছুই
খাবার জোটেনি। অন্ধ বন্ধুটি বলল,
'এই চৌমাথায় গামছা
পেতে বসি, কিছুক্ষণ
ধান্দা করলেই খাবার
পয়সা জুটে যাবে।
তুমি ততক্ষণ অপেক্ষা
করো।'
সেই অন্ধ ভিক্ষুকটির কয়েক হাত দূরে আমি উদাসীন,
অপেক্ষা করছি। চেয়ে
চেয়ে দেখছি মুম্বাই
শহরের রঙিন পথচলতি
মানুষদের। অপেক্ষা করছি অনাহার জীর্ণতা।
ষোলো বছরের দৈন্যপীড়িত জীবনে সেদিনও আত্মিক
শূন্যতার নিদারুণ প্রেক্ষণটি আমাকে উদ্দীপিত করে। অনেকদিন পর এই বোধই কবিতা লেখায়:
খণ্ড-খণ্ড বিকেলের
চোখে দুঃখের মায়া
ভাসে
আলোকিত হইনি বলে আজও
স্মৃতির সিঁড়িতে নেমে যাই
সমস্ত রাস্তার পাখি-মানুষের ভিড়
ক্লান্তিহীন চিৎকার, বিস্ময়
উড়ান
আমার মরমি খাঁচা
শূন্য অবিরাম
(স্মৃতির ভ্রমর
ওড়ে)
মুম্বাই শহরের
খণ্ড-খণ্ড বিকেলে
আমাদের দুঃখের মায়ার
ভাসমান রূপটি আবহমান
হয়ে যায়। পেটের
খিদে মিটলেও আমরা যে প্রকৃত
অর্থে আলোকিত হইনি তা বলাই বাহুল্য। সেই বস্তুগত চাহিদার
সিঁড়িতে মাঝেমধ্যেই স্মৃতিসিক্ত হই। আজও দেখতে
পাই প্রবহমান মানুষের
গতিময়তা যা একটি মাত্র শব্দ
'পাখি-মানুষ' এবং তাদের প্রতিক্রিয়া যা 'ক্লান্তিহীন চিৎকার'
ও 'বিস্ময় উড়ানে'
নিষিক্ত। কিন্তু মরমি খাঁচার অবিরাম
শূন্যতা অস্তিত্বের অভিক্ষেপেই প্রতীয়মান। তাকে তো কোনোভাবেই পূর্ণ
করা যায় না।
ঘটনাক্রম : ২
জৈবক্রিয়ার সংরাগেই সিদ্ধ
হতে চায় প্রেম।
দৈহিক মায়া থেকেই
যৌনতার প্রবৃত্তি মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু এই প্রেমও যে অনিত্য, শুধু শারীরিক প্রশ্রয়েই এর তপ্ত হয়ে ওঠা তা সকলেই উপলব্ধি
করতে পারেন। কিন্তু
এর আবেগ, এর হিংস্রতা, এর আকাঙ্ক্ষার নগ্নতা
বিপথগামী করে তুলতে
পারে। কবিজীবনের যে চিরন্তন অনন্ত
সঞ্চারী প্রেমমহিমা তার রসায়নে এই প্রেম ক্ষণিক
অবলম্বন মাত্র। আমার ২৫ বছর পর্যন্ত জীবনে
এই নারীপ্রেম আকাঙ্ক্ষার বারুদের মতো জেগে থেকেছে। প্রেমিকার পথ চেয়ে থাকা,
তার হাত স্পর্শ
করা, এবং ভ্রু-পল্লবে ডুবে যাওয়া কবিতায়
স্থূল বিবৃতির আমদানি
ঘটিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই এক সংশয়ের পীড়ন
আমাকে প্রজ্জ্বলিত করেছে।
নির্ঘুমপাড়ার দোকানে আমি কী কিনতে
চেয়েছি তা নিজেই
জানি না। জীবনকে
নিরর্থ শূন্যতার ভেতর হাঁটাতে চেয়েও
পেছনে ফিরে তাকিয়েছি। আত্মহত্যার প্ররোচনা জেগেছে
বারবার। আবার নিজের
প্রতি করুণাও। কবিতায়
লিখেছি :
শোকের রোদ্দুরে পল্লবিত
হয় স্তব্ধতা
অচল মুদ্রার চাঁদে
জ্যোৎস্না নেই
আরোগ্যকেতনের
উচ্ছল সঙ্কেত নেই
বিরামহীন হিংস্রতার জ্বরে
কাঁপে ভোর
মুহূর্তপাখির
ডাকে উন্মনা হই
চেয়ে থাকি নিজেরই
করুণ বিপ্লবে…
(হাহাকারের দোকানে
কী কিনব আজ?)
স্তব্ধতা ভরে গেছে শোকের রোদ্দুরে,
অচল মুদ্রার চাঁদে
জ্যোৎস্না নেই, আরোগ্যকেতনে জয়ের আহ্বান নেই, এক বিরামহীন
হিংস্রতা নিজের মধ্যেই
টের পেয়েছি। মুহূর্তপাখি উচ্চকিত করলেও যে করুণ বিপ্লবে
সময়ের মঞ্জুরী ফুটে উঠেছে সেখানে
কি সেই অনন্ত
বসন্ত বিরাজ করেছে?
তা করেনি বলেই নারীপ্রেমও সংশয়
পীড়িত আত্মাকে শান্তি
দিতে পারেনি।
ঘটনাক্রম : ৩
জীবনের মধ্যবয়সে পৌঁছেও
সংসার-পরিজন, সামাজিকতা, ধর্ম, লৌকিকতা আমাকে
আশ্রয় দিতে পারেনি।
অর্থ-অভিজাত্য, পোশাক
ও আয়না তেমনভাবে
আমাকে প্রলুব্ধ করতে পারেনি। সর্বদা
একা হতে চেয়েছি।
একা। আর নীরবতার
এক অভিভাষা অন্বেষণ
করে চলেছি। স্তব্ধতার বাড়ি কোন দিকে
?
কবিতা স্লোগান থেকে বেরিয়ে এসেছে।
বস্তুধর্মের বিবরণে আর তার খোঁজ পাই না। এক নিরিবিলি
বিমূর্ততার হাতছানি প্রাজ্ঞবিষাদে আমাকে টানতে থাকে।
পার্থিব ইন্দ্রিয়গুলি হারিয়ে
যায়। নিভৃত এক ঈশ্বর মুখোমুখি
বসে থাকেন। নির্বাক
চৈতন্যের অভিনব বিশ্বাস
থেকে এই পথের দ্রাঘিমা নির্ণয়
করার চেষ্টা করি। কবিতা অলংকারের
পোশাক খুলে ফেলে।
অনুভূতির সারাৎসার থেকে নিবেদিত আত্মার
ধ্বনিময় বোধিতেই উত্থান
ঘটে তার। তখন লিখি :
নিজেই নিজের বৃক্ষ
ছায়ায় বিশ্রাম নিই
ফুল ফোটাই
রঙিন সব পাখিদের
ডাকি
(আত্মবৃক্ষ)
নিজের কাছেই ফিরে আসা। 'আত্মবৃক্ষ' হয়ে দাঁড়ানো নিজেরই
ছায়ার মঞ্চে। ফুল ফোটানোর ক্রিয়াকে লালন করার মধ্যেই
ফিরে আসে সাধনার
প্রক্রিয়াটি। রঙিন সব পাখিদের ডাকার
মধ্যেই আত্মমুখরিত প্রজ্ঞার
জাগরণটি ব্যঞ্জিত হয়।
যে নাথিংনেস্ থেকে বিচ্ছুরিত হয় জীবনধর্মের সন্নিধান
তা তো শূন্যতারই অভীপ্সা। সেখানে কীরূপে
পার্থিব নকশার প্রতিফলন
ঘটবে? তবু বলা যায় এই ধরণীর ক্লেশ-মাধুর্য ভোগ করার পর্যায়টিই কবিকে লিখতে হয়। কবিতা আমার কাছেও সেই আশ্রয়। নিজেকে
ধ্বনিময় করার এবং স্তব্ধ করে রাখার এক উপায় মাত্র।
জীবনকে বহন করে মহাকালের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেবার প্রয়াস
মাত্র। কতটুকু সফল তা মহাকালই
জানে। শুধু ক্ষণিকের
টংকারে আত্মগত শর যোজনা। হৃদয়ের
কথা যতখানি উচ্চারিত
হয় হোক। সাফল্য
সেখানে প্রত্যাশিত নয়।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments