ইমাম হুসাইন রা.’র শাহাদাত_মিজানুর রহমান
১০ই মুহাররম পবিত্র আশুরা। মুসলমানদের কাছে এটা অত্যন্ত বেদনার দিন। এ দিনেই রসুলুল¬াহ (সঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র, হযরত আলী (রাঃ) ও ফাতিমা (রাঃ)’র নয়নের মনি, মুসলমানদের হৃদয়ের ধন হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) দুরাচারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে সপরিবারে নিমর্মভাবে শাহাদাত বরণ করেন। তার শাহাদাতের ঘটনা এতই তাৎপর্যমন্ডিত যে, চৌদ্দশত বছর পর আজও তা অ¤¬ান। ১০ই মুহাররমের সাথে রাসুল (সাঃ) এর পূর্বেরও বহু ইতিহাস জড়িত। পৃথিবীর বহু ঘটনা, অনেক উত্থান পতন এ দিনেই সম্পাদিত হয়েছিল। ফলে প্রায় সব ধর্মাবলম্বীদের কাছেই এ দিনটি বহুল পরিচিত এবং তাৎপর্যমন্ডিত। রসুলুল¬াহ (সাঃ) মদীনায় হিজরত করার পর দেখলেন ইয়াহুদীরাও এ দিনটিকে সম্মান করে এবং এ দিনটিতে রোযা রাখে। রসুল (সঃ) এ দিনটির গুরুত্ব অনুধাবন করেই ইমাম হুসাইনের শাহাদাতেরও ৬০ বছর পূর্বে আশুরায় দুটি রোজা রাখার বিধান চালু করেছিলেন এবং তার অশেষ ফজিলতের কথা বর্ণনা করেছিলেন। এ আশুরার দিনেই মহান আল¬াহ তায়ালা মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন। এ দিনেই আদি পিতা আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। মহাকালের এ দিনেই নুহ (আঃ) তার অনুসারীদের নিয়ে মহাপ¬াবন থেকে নৌকা হতে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে সহিসালামতে নেমেছেন। এ দিনেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ভূমিষ্ট হন, এ দিনেই তিনি নমরুদের অগ্নিকান্ড থেকে উদ্ধার লাভ করেন। আবার এ দিনেই তিনি প্রাণধিক প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানী করতে উদ্যত হয়ে আল¬াহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং আল¬াহর বন্ধুুর মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। এ দিনেই আইয়ুব (আঃ) রোগ মুক্ত হন, ইউসুফ (আঃ) মাছের পেট থেকে মু্িক্ত লাভ করেন, ইয়াকুব (আঃ) ৪০ বছর পর পুত্র ইউসুফ (আঃ) কে ফিরে পান। এ দিনেই মুসা (আঃ) তাঁর নিপীড়িত জাতিকে মুক্ত করেন এবং সৈন্য সামান্ত সহ ফেরাউনের সলিল সমাধি ঘটে। হাদীসে এসেছে এ আশুরার দিনেই কেয়ামত সংঘটিত হবে।
কাজেই সৃষ্টির আদি থেকেই এ দিনটি তাৎপর্যমন্ডিত। সর্বপরি ইমাম হুসাইনের শাহাদাত এ দিনটিকে আরো স্মরনীয় করে রেখেছে।
কিন্তু কেন এই শাহাদাত? কি অপরাধ ছিল ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর। অসংখ্য শাহাদাত থেকে কেন এ শাহাদাত বিশেষ বৈশিষ্ট্যে আলোকিত? এ তথ্য অনুসন্ধানে ইতিহাস রচনা আমার উদ্দেশ্য নয়। এ নিয়ে বহু ইতিহাস ও সাহিত্য রচিত হয়েছে। আমরা দেখব কেন ইমান হুসাইন (রাঃ) এ রক্তাক্ত পথ বেছে নিয়েছিলেন। কিসের অভাব ছিল ইমাম হুসাইনের? অর্থ, বিত্ত-বৈভব, শ্রদ্ধা-ভালবাসা কোনটারই অভাব ছিলনা তাঁর। খাতুনে জান্নাত ফাতিমার (রাঃ) রক্তের ধারাহিকতার শত অধঃস্থন কাউকে যদি আজও পাওয়া যায় তবে তার কত সৌভাগ্য! কত শ্রদ্ধা ভালবাসা আর জনগণের বিত্ত বৈভব তাঁর পায়ের পিছু পিছু ছুটে। তাহলে বুঝতেই পারছেন বেহেশতার যুবকদের সর্দার রসুল (রাঃ) এর অতিপ্রিয় দৌহিত্রের জন্য সেখানে শ্রদ্ধা ভালবাসার কি কোন ঘাটতি ছিল? ক্ষমতার মোহ বা অর্থলিপ্সা এ মহান ব্যক্তিত্বকে স্পর্শ করতে পারে না। তখনও হাজার হাজার সাহাবী জীবিত ছিলেন এবং আহলে বাইতের জীবিত প্রথম পুরুষ হিসাবে তাঁকে মুসলমানরা মাথায় তুলে রাখতে প্রস্তত ছিলেন। তাহলে কেন তিনি অন্যান্যদের মত ইয়াজিদের আনুগত্য স্বীকার করলেন না, কেন কঠিন পথ বেঁছে নিলেন? শ্রদ্ধা ভালবাসা, ধর্মীয় নেতৃত্ব, বিত্ত বৈভব কোন কিছুরই অভাব তাঁর ছিলনা। তার দৃষ্টিতে একটি মাত্র অভাব ছিল, আর তা হল তাঁর শ্রদ্ধেয় নানাজান হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর রেখে যাওয়া আদর্শের অভাব। তিনি বিচক্ষন দৃষ্টিতে দেখলেন, ইসলামী খেলাফতে তার নানার প্রতিষ্ঠিত ও খুলাফায়ে রাশেদার পরিচালিত আদর্শের বিচ্যুতি ঘটেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ বিচ্যুতি অনেক সাহাবার (রাঃ) চোখেও হয়ত ধরা পড়েনি। আর এজন্যই তারা ইয়াজিদের হাতে বয়য়াত করতে অস্বীকার করেননি। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আদর্শ ও রক্তের যোগ্য উত্তরসুরী ইমাম হুসাইন দেখলেন এ বিচ্যুতি শুরুতে খুব কম হলেও ভবিষ্যতে তা মুল আদর্শ থেকে যোজন যোজন দুরত্বে চলে যাবে। যেমন একটি গাড়ী মুল রাস্তার সাথে সংযুক্ত ১০০ (ডিগ্রী) কোণের নতুন রাস্তায় চলা শুরু করলে সময় যত বাড়ে মূল রাস্তার সাথে নতুন রাস্তার দুরত্ব ততই বাড়তে থাকে। দূরদর্শী ইমাম হুসাইন (রাঃ) শুরুতেই বিপথগামী গাড়িকে মূল রাস্তায় তোলার চেষ্টা করলেন, সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন, এমনকি জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে মূল পথকে চিনিয়ে গেলেন। কেউ কেউ তাঁকে অপরিণামদর্শী বলতে পারে। ৪০০০ স্বশস্ত্র সৈন্যের সুশৃংখল বাহিনীর মোকাবেলায় ৭২ জনের একটি ক্ষুদ্র পারিবারিক বাহিনীর অসম যুদ্ধের ফলাফল তিনি খুব ভাল করেই জানতেন। কিন্তু তিনি যদি অন্যান্যদের মত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেন তবে আলো ও অন্ধকার আর কোন দিনই পৃথক হতনা, মিথ্যা থেকে সত্যকে আলাদা করা দুস্কর হয়ে যেত। ইমামের অবস্থান কেয়ামত পর্যন্ত সত্যকে আচ্ছাদিত করে রাখত। তাই ইমাম হুসাইন (রাঃ) দিব্য দৃষ্টিতে বুঝে-শুনে সত্যের মশাল জ্বেলে গিয়েছেন, তাঁর পবিত্র রক্ত দিয়ে সত্যের আনির্বান শিখা নির্মাণ করেছেন। সত্য পথের অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে তিনি নিজেকে উজ্জল আলোকবর্তিকা হিসাবে স্থাপন করে সত্যকে আঙ্গুল দিয়ে চিনিয়ে দিয়েছেন।
অনেকের চোখে ধরা পড়েনি অথচ ইমামের চোখে ধরা পড়া সেই বিচ্যুতিটা কি ছিল? সেই বিচ্যুতিটা কি এত বড় ছিল যে তার জন্য রক্তাক্ত পথ বেছে নেয়ার দরকার হলো! ওয়াজ নসিহত জাতীয় সহজ-শান্ত কোন পথ অনুসরণ করলে কি সংশোধন করা যেত না?
এ বিষয়গুলো বুঝতে পারলেই কারবালার বাস্তবতা আমরা বুঝতে পারব। এ বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য রাসুলুল¬াহ (সাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও খেলাফতে রাশেদা কর্তৃক পরিচালিত ইসলামী রাষ্ট্র ও সরকারের মূলনীতিগুলো জানতে হবে। মূলনীতিগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপ-
আল¬াহ রাব্বুল আলামীনই সর্বময় ক্ষমতার উৎস এবং মানুষ তার প্রতিনিধি মাত্র।
জনসাধারণ রাষ্ট্রের গোলাম নয়। খলিফা জনসাধারনের সেবক। খলিফা আল¬াহর বান্দাহদের উপর কেবল আল¬াহর আইনজারী করার ক্ষমতা রাখেন।
সৎবৃত্তিগুলো প্রতিষ্ঠা ও অসৎবৃত্তিগুলোর পথরোধ করাই ইসলামী সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য।
রাষ্ট্রের প্রাণশক্তি হবে তাকওয়া। তাকওয়া অর্থাৎ খোদাভীতিই হবে নেতৃত্বের প্রধান মাপকাঠি।
স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
রাষ্ট্র পরিচালিত হবে পরামর্শের ভিত্তিতে। সমাজের জ্ঞানী-গুনী ও আস্থাশীল ব্যক্তিরাই হবেন পরামর্শ সভার (পার্লামেন্ট) সদস্য।
মতামত প্রকাশে জনসাধারণের পূর্ণ সুযোগ থাকবে।
দুনিয়ায় জনসাধারণের কাছে এবং পরকালে মহান আল¬াহর কাছে সরকারের জবাবদিহিতার তীব্র অনুভূতি থাকবে।
বায়তুলমাল আল¬াহর সম্পত্তি; মুসলমানদের আমানত। খলিফা বায়তুলমালের তত্ত্বাবধায়ক মাত্র।
আইনের শাসন থাকবে। কেউ আইনের উর্দ্ধে থাকবে না।
অধিকার ও মর্যাদার দিক থেকে সবাই সমান হবে। একজন অন্যজন থেকে শ্রেষ্ঠ হবেন শুধু চরিত্র, নৈতিকতা এবং যোগ্যতার কারণে।
চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাঃ) এর সময়কাল পর্যন্ত রাষ্ট্র ও সরকারে এ মূলনীতিগুলো বহাল ছিল। কেন্দ্রীয় সরকারে এ মূলনীতিগুলো পূর্ণভাবে বহাল থাকলেও সিরিয়ায় তখন থেকেই এ মূলনীতিগুলোর বিচ্যুতি ঘটা শুরু করেছিল। রাজনৈতিক কুটকৌশলের কারণে হযরত আলী (রাঃ) প্রাদেশিক সরকারে পূনঃবিন্যাস করতে পারেন নি। ৪০ হিজরির ২১ শে রমযান ইবনে মুলজামের আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এরপরে ইমাম হাসান(রাঃ) স্বল্প সময়ের জন্য খলিফা হন এবং আমীর মুয়াবিয়ার সৈন্যবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে গুজব ও ষড়যন্ত্রের কারণে খুব সুবিধা করতে না পেরে আমীর মুয়াবিয়া (রাঃ)’র কাছে সন্ধির প্রস্তাব পাঠান। আমীর মুয়াবিয়া(রাঃ) তৎক্ষনাত সন্ধিতে সম্মত হন। সন্ধির শর্তাবলীর মধ্যে একটি উলে¬খযোগ্য শর্ত ছিল মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর ইমাম হাসানের (রাঃ) দ্বিতীয় ভাই ইমাম হুসাইন (রাঃ) খলিফা হবেন।
বনুহাশেম গোত্র ইমাম হাসানের (রাঃ) সন্ধিতে সায় দেয়নি। ইমাম হুসাইনও (রাঃ) হাসানকে (রাঃ) এ সন্ধি করতে নিষেধ করেছিলেন। যাহোক সময় দ্রুত গড়াতে থাকে। খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আদর্শ বিচ্যুতি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সর্বশেষে ইসলামী খেলাফতের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে সরকার গঠনের মূলনীতি, পূর্বে সম্পাদিত সন্ধি, সবকিছুকে উপেক্ষা করে ইয়াজিদকে পরবর্তী খলিফা নিয়োগ করা হয়। এতেও ইমাম হুসাইন বিচলিত হননি। তিনি যখন ইসলামী রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য, নেতৃত্ব নির্বাচন, আইনের শাসন, সাম্য, বায়তুলমালের যথাযথ ব্যবহার ইত্যাদিতে ব্যাপক পরিবর্তন হতে দেখেন তখন তিনি পেরেশান হয়ে যান ও শুরুতেই এর পথরোধ করতে উদ্যত হন। খেলাফতের আদর্শ বিচ্যুতি মোকাবেলা করতে তিনি সর্বপ্রথম যে পদক্ষেপ নিলেন তা হল ইয়াজিদের অনুগত্যে অস্বীকার। এতে ইয়াজিত বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। তিনি মদিনা ছেড়ে মক্কায় চলে আসলেন। খেলাফতের আদর্শ পূন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলেন।
কুফাবাসীদের আগ্রহ উদ্দীপনা ও বারে বারে আহ্বানের মধ্যে তিনি আশার আলো দেখতে পেলেন। তিনি কুফার সত্যিকার অবস্থা পর্যালোচনা করে মতামত জানানোর জন্য তাঁর বিশ্বস্ত চাচাত ভাই মুসলিম বিন আকিলকে কুফায় পাঠান। মুসলিম বিন আকিল জনমতকে আরো সংগঠিত করলেন এবং ইমামকে কুফায় আসার ইতিবাচক মতামত জানালেন। ইতোমধ্যে কুফায় স্বৈরশাসক ইবনে যিয়াদ ষড়যন্ত্র, ভীতি প্রদর্শন ও উৎকোচ প্রদানের মাধ্যমে মুসলিম বিন আকিলকে প্রথমে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেললো এবং সর্বশেষে তাকে নির্মমভাবে শহীদ করল। ইমাম হুসাইনকে এ সবকিছুই জানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তথ্য প্রযুক্তির ঐ অনগ্রসর যুগে বহু পরে ইমাম তা অবগত হয়েছিলেন। যখন তিনি তা অবগত হয়েছিলেন তখন তিনি কুফার কাছাকাছি ইবনে যিয়াদের সৈন্যদের কাছ কার্যত অন্তরীন অবস্থায় ছিলেন। তিনি ফিরে যেতে চাইলেন, তুর্কী সীমান্তে যেতে চাইলেন, ইরাকে গিয়ে ইয়াযিদের সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইলেন, কিন্তু ইবনে যিয়াদের বাহিনী কোন কিছুতেই রাজি হলনা। তারা তাঁকে বৃক্ষলতাহীন কারবালার ঊষর মরুভূমিতে নিয়ে গেল। ইমাম হুসাইন যুদ্ধ করতে আসেননি। তিনি এসেছিলেন কুফাবাসীর আবেগের মূল্য দিতে। খেলাফতে রাশেদার আদর্শকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। তাঁর সাথে ছিল ৭২ জন পারিবারিক সদস্য ও অনুরক্ত ভক্ত। তিনি যে যুদ্ধ করতে আসেননি তার বড় প্রমাণ তিনি স্ত্রী-কন্যা ও শিশুদের সাথে এনেছিলেন। তিনি বহু হৃদয় বিদারক ভাষণ দিলেন, একাধিক প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু তার ভাষণ বা প্রস্তাব ঐ পাষান্ডদের হৃদয়ে কোনই প্রভাব ফেলেনি। তারা নবী দৌহিত্র ও তার পরিবারের সদস্যদের ফোরাত নদীর তীরে ভীড়তে দেয়নি। ক্ষুধা পিপাসায় নবী পরিবারের শিশুদের ক্রন্দন তাদের মনে এতটুকু দয়া সৃষ্টি করেনি। তারা একে একে ইমাম হুসাইন (রাঃ)’র সব পুরুষ সহোচরকে শহীদ করেছে। ওরা ইমামের সদ্য প্রসুত শিশুর কন্ঠে তীর নিক্ষেপ করেছে। সদ্যজাত শিশুর রক্তে ইমামের দু হাত ভরে গিয়েছে। ওরা ইমাম হুসাইনের (রাঃ) দেহ থেকে তাঁর হাত বিচ্ছিন্ন করেছে, মস্তকে তরবারীর আঘাত হেনেছে, যে দেহখানিতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হাত বুলাতেন, যে গালে ও গলায় তিনি চুমা খেতেন, যার পিঠে বসে থাকার কারনে রসুল (সাঃ) সিজদা দীর্ঘ করতেন সেই পবিত্র দেহখানির উপর এ পাপিষ্ঠরা চেপে বসে দেহ থেকে মস্তক ছিন্ন করেছে। এমনকি দেহের কাপড় পর্যন্ত খুলে নিয়েছে পাষন্ডরা। সেনাপতি আমর ইবনে সাদ ময়দানে ফিরে এসে চিৎকার করে বলল, “হুসাইনের দেহ ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট করতে কে কে প্রস্তুত?”
দশ ব্যক্তি রাজী হলো এবং পবিত্র দেহকে ঘোড়ার পায়ের নিচে পিষ্ট করা হলো। রাসুলুল¬াহ (সঃ) এর ভালবাসার ধন, হযরত আলী (রাঃ) ও খাতুনে জান্নাতের নয়নের মনিকে দলিত মতিথ করা হলো। ১০ই মহররমের সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলল এ তান্ডব। পশ্চিমাকাশ রক্তিমাভ হলো, পাখি বিরহের গান ধরল, প্রকৃতি নিরব নিথর হয়ে গেল, আহলে বাইতের নারী শিশুদের কান্নায় বাতাস ভারী হয়ে গেল। ৬১ হিজরির আশুরার দিনে জোহর নামাজের পর এ শাহাদাত সংগঠিত হয়। হযরত ইমাম হুসাইনের (রাঃ) এর বয়স ছিল তখন পঞ্চাশ বছর।
কুফা গমন করতে আবদুল¬াহ ইবনে যুবাইর, আবদুল¬াহ ইবনে আব্বাসের (রাঃ) মত ব্যক্তিত্বরাও ইমামকে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু ইমাম সত্যের সাক্ষ্য দেবার জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। রাসুল (সাঃ)’র ওহুদ প্রান্তরে যাবার সিদ্ধান্তের মতই তিনি আর তার সিদ্ধান্ত পাল্টাননি। আপোষ করেননি ইমাম হুসাইন (রাঃ)। নিজের পবিত্র রক্ত ঢেলে জ্বেলে গেলেন সত্যের অনির্বান শিখা। যে শিখায় খেলাফত ও রাজতন্ত্রের পার্থক্য দিবালোকের মত স্পষ্ট দেখা যায়। লক্ষ কোটি ভক্ত-অনুরক্ত পরিবেষ্ঠিত শান্তিময় জীবন তিনি পরিহার করলেন মানবজাতিকে সত্যের পথ দেখাতে। তাই তাঁর শাহাদাত অন্যান্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। তাঁর শাহাদাত চির অ¤¬ান। তিনি অমর।
“যারা আল¬াহর পথে নিহত হয় তোমরা তাদের মৃত বলো না; তারা প্রকৃতপক্ষে জীবিত। কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোন চেতনা হয় না”- (সূরা বাকারা-১৫৪)। তাই ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর আত্মত্যাগ সত্যের এক জলন্ত সাক্ষ্য।
দীর্ঘ ১৪০০ বছর ইমাম হুসাইনের (রাঃ) এর জন্য বহু অশ্র“পাত হয়েছে এবং হচ্ছে। তাঁকে নিয়ে মার্সিয়া, কাব্য ও সাহিত্য রচিত হয়েছে, বহু লোক মিছিল করেছে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ তাঁর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি কতটা সচেতন হয়েছে? ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর প্রতি ভালবাসা তখনই যথার্থ বিবেচিত হবে যখন আমরা তার উদ্দেশ্য-খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবো। তাঁর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি উদাসীন থেকে তাঁর প্রতি নিছক আবেগ ও ভালবাসা পোষণ করলে ইমামের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হয় না। ষড়যন্ত্র, ভয়, লোভ ইত্যাদি কোন কিছুই যেন আমাদের আবেগ ও চেষ্টাকে কুফাবাসীদের মত নিঃশেষ করে না দেয়। ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর স্বার্থক অনুসারী হবার যোগ্যতা রাখেন তারা মহান আল¬াহর ভাষায়- “যারা দুনিয়ার জীবনের সুখ সুবিধাকে আখেরাতের বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে পারে, শুধু তারাই দ্বীনের জন্য সংগ্রাম করার যোগ্য। আর দ্বীনের পথে সংগ্রাম করে যারা শহীদ হয়ে যায় অথবা যারা বিজয়ী হয়; তাকে (তাদেরকে) অচিরেই আমি মহা পুরস্কার দান করব” (সূরা-আন্নিসা-৭৪)। খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে প্রত্যেক মুসলমান শরীক হোক এটাই আশুরার অপরিহার্য দাবী।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments