সায়মন_মুহাম্মদ মিজানুর রহমান : পর্ব-১৪

 
মঞ্জুয়ারা সম্পর্কে সুমা প্রথমে কিছুই জানত না, জানার এমন কিছু ছিল না, যা তার মনে সংশয় এর সৃষ্টি করতে পারে, তারপরেও নিয়ে যা হয়েছে সবই অভাবনীয়। নিন্দুকের বিষোদগার আর নারী হয়ে নারীর প্রতি দুর্বলতা তাকে অনেক নিচে নামিয়েছে।
একজন নির্দোষ মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ঘরছাড়া করেছে। প্রতিহিংসায় অন্ধ হয়ে সে ভুলে গিয়েছে এই লোকটি আর কেউ নয়, তার স্বামী। তার ঘরেরই একজন। নিজের লোককে ছোট করে কেউ কখনো বড় হতে পারে না।
মঞ্জুয়ারার মতো একজন পবিত্র মানুষের গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে যে কিনা নিজের স্বামীকে সমাজের চোখে, পরিবারের কাছে ছোট করেছে। তার সম্মানের জায়গাটামাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। এখন যদি বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে দশ গ্রামের লোক জড়ো করে বলে, আমার স্বামী নির্দোষ, আমি তাকে অকারণে ভুল বুঝেছি, আজ কেউ তার কথা শুনবে না। বলবে, স্বামী সংসার নিয়ে এমন ছেলে খেলা কোরো না। তাই ঘরের কথা বাইরে আনার আগে ভালো করে ভাবতে হয়।
চোখের সামনে দিয়ে অবিশ^াসের কালো পর্দা সড়ে ধীরেধীরে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে সুমা। এখন সে বুঝতে পারছে, কী কারণে কেন হয়েছে এসব। বুঝতে পারা, আজ কারো জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। হয়তো ভাঙ্গা সম্পর্কটাকে একটু জোড়াতালি দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে।
যে মেয়েরা মা ভক্ত ছিল, মায়ের গোড়ামি তাদের মায়ের থেকে পৃথক করে দিলো। তারাই বাবার বিপদের সাথী হলো। সুমার মনে একথা একবারও দাগ কাটল না, আমি কি তাহলে ভালোবাসার মোহে অন্ধ হয়ে পড়েছি ? আমি কার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছি ?কেন করছি এসব ?
ভালোবাসা দোষের কিছু নয়। বিয়ের আগে তাদের মাঝে কী ছিল বা নাইবা ছিল সে তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমাকে ঘরে তোলার পরে সে এমন কোনো আচরণ করেনি, যাতে তাকে সন্দেহের চোখে দেখা যেতে পারে।
আবিদ না জানিয়ে তার ছেলেকে আশ্রয় দিয়েছে, হয়তো সেটা আমার কারণে। আমি বিষয়টিকে সাধারণভাবে নিতে পারব কি না। তাছাড়া বন্ধু বন্ধুর জন্য কত কী করে। মঞ্জুয়ারা হয়তো তার ভালো বন্ধু ছিল। আমি নষ্ট চোখে দেখেছি। অন্যভাবে ভেবেছি। কত অপমান করেছি। শেষপর্যন্ত বিনা দোষে বাড়ি থেকে বের করেও দিয়েছি। অনেক বড় ভুল করেছি। বড় অন্যায় হয়েছে আমার। এর প্রায়শ্চিত্য আমাকেই করতে হবে।
বিছানার উপর শুয়ে সুমা এসব ভাবছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলে উঠেছে। স্বামীর জন্য এখন বড়ই কষ্ট হয় তার। কোন মুখে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে।
পরিবেশটা একেবারে নীরব। সুমা বাসায় একা। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো জোরে দমকা হাওয়া বইছে। ঝাউ গাছটা নুয়ে পড়ছে ছাদের উপর। বৃষ্টির ছাপটার মতো তার মনের কষ্টও আজ তাকে বেশামাল করে তুলেছে। তার বুকের মধ্যে তুলেছে অশান্তির ঝড়।
এমন সময় মোবাইলের ভোঁ ভোঁ শব্দে কানটা অস্থির হয়ে উঠল। মনে হলো এখনি মোবাইলটাকে একটা আছাড় মেরে কয়েকটা টুকরোয় পরিণত করে ফেলি। তবু শত বিরক্তি নিয়ে চোখ রাখলাম স্কিনের উপর। একটা অপরিচিত নম্বর। বারবার ট্রাই করেই চলেছে। একবার তুললাম, আবার রেখে দিলাম। কিন্তু না শেষ অবধি আর পারলাম না।
হ্যালো! কে বলছেন ?
মা, তুমি ভালো আছো ?
মা! কার মা ?
তুমি আমায় চিনতে পারছো না ?
কে বলছেন আপনি ? কে ?
আমি তোমার ছেলে সায়মন।
বাবা, তুমি কি সত্যি আমার ছেলে!
মা, অমন করে বলছো কেন ?
এত বছর পর! তাই বিশ^াস করতে কষ্ট হচ্ছে। তুই কোথায় আছিস, কেমন আছিস ?
আমি ভালো আছি মা। অনেক ভালো আছি।
ক্ষণিকের আলাপে সুমা ছেলেকে অনেককিছু বলতে চায়। কত বছর পর ছেলের সন্ধান পেয়েছে। কোনোদিন ভাবেনি, আবারও সায়মন ফিরে আসবে। এই পৃথিবীর মুক্ত বাতাসে তার ছেলে ঘুরে বেড়াবে, তাকে মা বলে ডাকবে। সবই খোদার রহমত। তারই দয়া।
সুমা অনেকক্ষণ ধরে সায়মনের সাথে কথা বলার জন্য চেষ্টা করছে। সে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। ওদিকে বাইরে বাতাসের তীব্রতা ধীরেধীরে বেড়েই চলছে। দরজা জানালাগুলো বিকট শব্দে দেয়ালের গায়ে আছড়ে পড়ছে। আর কথা বলতে পারল না।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.