শেষ মারবেলা_সালেহা চৌধুরী : পর্ব-২৪

কি আছে আমার যা দিয়ে মেরীর এক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারি আমি। ভাবতে ভাবতে মাঝ রাতে বিছানায় উঠে বসে ক্রিস। মায়ের সেই কৌটো যা রয়ে গেছে ব্যাঙ্কের লকারে। যেখানে মায়ের কিছু গয়না, সোনার টাকা যাকে বলে সভারিন, পাথরের দু একটা আংটি আর কানের দুল। মায়ের সম্পদ। খুব বেশি দাম হবে বলে মনে হয় না। তবে মূল্যায়ন হয়নি কখনো। ক্রিস ব্যাংকের লকারে রেখে এসেছিল সেই কবে। এখন সেখানেই আছে। মনেও ছিল না পুরণো রং জ্বলা টফির কৌটোর কথা। আরো আছে। নিজের সংগ্রহিত পঞ্জরাস্থির মত প্রিয় কিছু মূল্যবান টিকিট। যে গুলো সে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিল বাবার কাছ থেকে। বাবার কাছ থেকে পাওয়া সেই পুরণো খাতায় পোস্টম্যান ক্রিস আরো কিছু নতুন টিকিট জমিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। সে জানে এর মধ্যে তিনটে কিম্বা চারটে ডাক টিকিট অত্যন্ত মূল্যবান। একটি টিকিটে রানী ভিক্টোরিয়ার মুখ দুবার বসানো হয়েছে। বাবা যাকে আগলে রেখেছিলেন যক্ষের ধনের মত। আরো তিনটে গোলমেলে স্টাম্প। ও গুলোকে কোনদিন বিক্রি করে ফেলবার কথা ভাবেনি। যেন ও গুলো চলে গেলে তার পাঁজড়ার হাড় চলে যাবে। কিন্তু এখন তেমন মনে হয় না আর। যদি যায় যাবে। মেরীর একটা ইচ্ছে পূর্ন করবেই সে। যেমন করে হোক। মেরীর স্বপ্ন কিচেন। জানালার ওপারের রহস্যগাঢ় উপত্যকার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে ক্রিস। মনে হয় বাঁকি জীবন এ গুলোকে যক্ষের ধনের মত আগলে রাখার প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে?
বাঁকি জীবন?
গাছের মাথায় আটকে আছে প্রভাতি আলো। ক্রিস জানালা থেকে মুখ ফেরায়। গতরাতে ভেবেছিল ক্রিস দোর খুলে ঝিমঝিম সময়ের মধ্যে বসতে। সে ইচ্ছে বাতিল করেছে। আর প্রসারিত হাত খুঁজেছে মেরীর সুঘ্রাণ জড়িত বালিশের অস্তিত্ব। কি এক পারফিউম ব্যবহার করে মেরী। যেতে যেতেও রয়ে যায়।
এতদিন পর এক পরিচিত সুবাসে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে ক্রিস। কিম্বা ঘুমের ভেতরে হারিয়ে মেরীর মনের মত একখানি ফিটেট কিচেনের নকশা তৈরী করে। কিচেনেট। নভেলেটের মত অনুপম কোন সৃষ্টি। কোথায় বসাবে ছাঁদ ছোঁওয়া আইভরি কাবার্ড? কোথায় বসাবে কাপড় ধোবার মেসিন? কোথায় বসাবে ফ্রিজ আর ডিশ ওয়াশার, কোথায় রচনা করবে বোয়াম ও জারের এক সার পংক্তির মত কোন সুনিপির তাক। কোথায় ঝোলানো যায় ক্যাপ আর চামুচের র্যাক, স্পাইস বা মসলার সঘন ডালাপালা তাই ভাবছে মনে মনে। মানি প্লান্ট, বা মিন্ট প্লান্ট মেরী রেখে দেয় সিংকের পাশে। সবুজ হয়ে ওঠে সেগুলো ওর আদরে আর যতেœ। রোজমেরি আর থাইমের পট গুলো ঘুম থেকে জেগে ওঠে একসময়। রান্নাঘর আলো করে। এক গাদা ছোটখাটো চারা গাছ ট্যপ্লে বিন্দু বিন্দু সিন্ধুতে প্রাণ পায়। মাথা দোলায় মেরীর রান্নাঘরের ক্যাসেটের সঙ্গে। আন্দোলিত হয় সময়ে অসময়ে। এই সব ভাবতে ভাবতে সত্যিই ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ে ক্রিস।
হাতে হাত লাগায় সহকর্মী একজন। বলে- তুমি চাকরি ফিরে পাবে ক্রিস।
-সে নিয়ে পরে ভাববো। আগে বাড়ি ঠিক করি।
রান্নাঘরের কলি ফেরাতে সময় লাগে অনেক। ভাগ্যিস বন্ধুর পিকআপা পাওয়া গেছে যা দিয়ে নানা সব জিনিষ ফেলা যায় আনা যায়। কাবার্ডের বোতল খুঁজে পাওয়া গেল মেরীর সঞ্চয়ের দশ পেনি আর বিশ পেনির কয়েনের বোতল। প্রায় পরিপূর্ন বোতল। বোতলটাকে সরিয়ে রাখে শোবার ঘরে। ঝুরঝুরে পলেস্তারা ফেলে নতুন পলেস্তারা লাগানো। নতুন টাইলস বসে ঘরে, কিছুটা টাইলস কিছুটা কাগজের উপর নরম মিষ্টি রং। এই সব করতে করতে ক্রিস জোরে নিঃশ্বাস নিতে মাঠের মাঝখানে দাঁড়ায়। আজকাল কেন যে হঠাৎ করে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় ও বুঝতে পারে না। বোধহয় অক্সিজেন ফুরিয়ে গেছে। পিঠের অদৃশ্য থলিতে অক্সিজেন ভরে নিতে দাঁড়ায় মাঠের মাঝখানে। বেশ কিছু সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর আবার ঘরে ফেরা ধাতস্থ হয়ে।
রান্নাঘরের রূপ খুলেছে। চন্দন আর উপটানে ঝলমল করছে। দুচোখ ভরে তাই দেখে ক্রিস। চেয়ে দেখে মস্ত আইভরি কার্বাডের সোনালি নব, নতুন স্পাইস আর মগ র্যাক। সব কিছুই অপরূপ। নিজের কাজে নিজেই খুশী এবার।
এমনি এক এস ও এস, ফ্লূ থেকে সদ্য সেরে ওঠা মেরী উঠে বসে। শরীরে তখনো জোর কম। গ্যালন গ্যালন রাইবিনা আর গ্যালন গ্যালন ফলের রস যদিও তখন তাকে সচল রেখেছে কিন্তু তখনো বেশ দুর্বল লাগছিল। কি এক গালভরা নাম ফ্লু। একেবারে গভীর ভালবাসায় ওকে প্রায় চলৎশক্তিহীন করেছে। কিন্তু দু পংক্তি চিঠি, একটা মিলিয়ন পাওয়াযারের ভিটামিন পিলের মত তার তোবড়ানো মন আর দোমড়ানো শরীরটাকে মুহূর্তে সচল করে। একেবারে জেগে উঠে বসে আছে মেরী নিজের বিছানায়। আর মন যদি জেগে ওঠে শরীর আর কতক্ষণ বেবলগা অশ্বের মত বেদখলে থাকে?
-আজকেই যাবি? প্রশ্ন করে পল।
চৌদ্দদিনের ফ্লু আক্রান্ত মেরীকে লক্ষ্য করে, লক্ষ্য করে ওর গোছগাছ।
-আজই।
সুটকেস গোছাতে গোছাতে মাথা নিচু করে বলে মেরী। -ও স্টেসনে অপেক্ষা করবে। ব্রীড়াবনতা কিশোরীর মত হাসছে মেরী। যে স্টেসনে অপেক্ষা করবে সে ক্রিস। যাকে দেখতে মাসে দুবার লন্ডনের মাটি কামড়ে পড়ে রইলো মেরী।
অযতœ বর্ধিত দাড়ি গোঁফ ট্রিমিং করেছে ক্রিস। কিন্তু সমুলে উৎপাটিত নয়। মেরীর মনে হলো এমন দৃশ্যই ওকে মানায়। এই ওর আসল চেহারা হওয়া উচিত। পাঁচ ফুট নাথিং মেরীকে প্রাণপনে নিজের দুহাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে ক্রিস। গাঢ় হ্রদয় মথিত আবেগ মন্দ্রিত স্বরে ডাকে Ñ মেরী অব ম্যাগডালা।
-ক্রাইস্ট অব আম্বারলী! মেরীর হ্রদয়ের ভেতর থেকে উঠে আসা সন্বোধন। মেরীর ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে বলে ক্রিস- সুস। পঞ্জরাস্থির অংশ বিশেষ মেরী ক্রিসের বক্ষ লগ্ন হয়ে তার পঞ্জর পরিপূর্ন করে। মেরী অব ম্যাগডালার এর চাইতে বেশি কিছু চাইবার নেই। এর চাইতে বেশি কিছু ভাবেও না সে। হানিপট কটেজের জানালার পাশে বসে সিমোন ডি বোভেয়ারের নারী শক্তি চেতনা সম্বলিত গ্রন্থ পাঠ ওর জীবনের গল্প নয়। তার চাইতে বারাবারা কার্টল্যান্ড বা ড্যানিয়েল স্টিল খুলে বসবে মেরী সময় পেলে। পছন্দ প্যাচ ওয়ার্ক লেপ, নিটিং এ জাম্পার পুলোভার শাল ও দস্তানা, যখন তখন ভরে উঠবে আচারের বোয়াম, পার্টি হোক বা না হোক সুশোভিত ফেয়ারি কেকেরা খিল খিল হাসিতে ভরে তুলবে খাবার টেবিল, এইসব। আর সময় পেলেই ক্রিসের হাত ধরে বাগানে, বনে, পর্বতে, ঘুরে বেড়ানো। কোন কোন নারীর কেশ পরির্চায় ডাক পড়লে হাসতে হাসতে ছুটে যাবে। বাগানের আপেল পাই হবে। আর কাজের জগতে তিন টিয়ারার কেক বানানো। সুখ কি সাধারণ শব্দ ওর কাছে, কি সহজ ঘটনা ওর জীবনে। আর এভনলীর বৃষ্টি ভেজা প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আর একবার জেনে যায় মেরী ওর পৃথিবীর সীমারেখা কোথায়। যে সীমারেখাকে মেরী সাধারনী কখনো অতিক্রম করতে চাইবে না।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments