বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_মহরম পর্ব : ১০ম প্রবাহ

 
নূরন­বী মো­হা­ম্ম­দের রওজায় অর্থাৎ সমা­ধি প্রা­ঙ্গ­ণে হা­সান-হো­সেন, সহ­চর আব­দু­ল্লা­হ্ ওমর এবং আব­দুর রহ­মান এক­ত্র বসিয়া পরা­­র্শ করি­তে­ছেন। যখন কোন বি­­­ভার মস্ত­কে আসিয়া পড়ে, কো­নরূপ গু­রু­তর কা­র্যে হস্ত­ক্ষেপ করি­তে হয়, অথ­বা কোন অভা­­নীয় চি­ন্তা, সৎযু­ক্তি, সৎপরা­­র্শ করি­বার আব­শ্যক হইয়া উঠে, হা­সান-হো­সেন উভয়ে মা­তা­­হের সমা­ধি­প্রা­ঙ্গ­ণে আসিয়া যু­ক্তি, পরা­­র্শ এবং কর্ত­ব্য বিষয়ে মত স্থির করি­তেন। আজ কি­সের মন্ত্র­ণা? কী বি­পদ? বা­হ্যি­­ভা­বে, মু­খের আকৃ­তি­তে স্প­ষ্টই যেন কোন ভয়ানক চি­ন্তার চি­ত্র চি­ত্রিত। কী চি­ন্তা? পা­ঠক! দে­খুন, সমা­ধি­প্রা­ঙ্গ­ণের সী­মা­নি­র্দি­ষ্ট স্থা­নের নি­­টে দে­খুন, কে দাঁড়াইয়া আছে
পা­ঠক! যে লোক দাঁড়াইয়া আছে, উহা­কে কি কখ­নো দে­খিয়াছেন? এক­টু স্ম­রণ করুন, অব­শ্যই মনে পড়িবে। এই আগ­ন্তুক দা­মে­স্কের কা­সেদ। আর হা­সা­নের হস্তে যে কা­গজ দে­খি­তে­ছেন, ঐখা­নি সেই পত্র-যা­হা দা­মে­স্কের রা­­­­বা­রে মারওয়ানের মু­খে শু­নিয়াছি­লেন। ওমর বলি­লেন, "কা­লে আরো কতই হই­বে! এজি­দ্ মা­বিয়ার পু­ত্র। যে মা­বিয়া নূরন­বী হজ­রত মো­হা­ম্ম­দের প্র­ধান ভক্ত ছি­লেন, দেহ-মন-প্রাণ সক­লই আপ­না­দের মা­তা­­হের চর­ণে সম­র্পণ করিয়াছি­লেন, আজ তাঁহার পু­ত্র মক্কা-মদি­নার খা­­না চা­হি­তে­ছে, তা­হার না­মে খোৎবা পাঠ করি­তে লি­খিয়াছে। কী আশ্চ­র্য! কা­লে আরো কতই হই­বে, তা­হা কে বলি­তে পা­রে?"
আব­দুর রহ­মান বলি­লেন, "এজি­দ্ পা­গল হইয়াছে! নি­শ্চয় পা­গল! পা­গল ভি­ন্ন আর কী বলিব? এই অসীম জগ­তে এমন কে­হই নাই যে, আম­রা বাঁচিয়া থা­কি­তে মক্কা-মদি­নার কর চা­হি­তে পা­রে?এজি­দ্ যে মু­খে এই সকল কথা বলিয়াছে, সেই মু­খের শা­স্তি বি­শেষ করিয়া দেওয়া উচিত। ইহার পরা­­র্শ আর কি? আমার মতে, কা­সে­­কে পত্র­সহ অপ­মান করিয়া তাড়াইয়া দেওয়াই সমু­চিত বি­ধি। পা­পপূর্ণ কথা-অঙ্কিত পত্র পু­ণ্যভূমি মদি­নায় থা­কি­বার উপ­যু­ক্ত নহে।"
ওমর বলি­লেন, "ভাই! তো­মার কথা আমি অব­হে­লা করি­তে পা­রি না। দু­রা­ত্মার কী সা­হস!কো­ন্ মু­খে এমন কথা উচ্চা­রণ করিল; কি সা­­সে পত্র লি­খিয়া কা­সে­দের হস্তে দিয়া পা­ঠা­ইল! উহার নি­কট কি কোন ভাল লোক নাই? এক মা­বিয়ার সঙ্গে সঙ্গে দা­মে­স্ক হই­তে কি সক­লেই চলিয়া গিয়াছে?"
আব­দুর রহ­মান বলি­লেন, "পশুর নি­­টে কি মা­নু­ষের আদর আছে? হা­মা­ন্-না­­মা­ত্র মন্ত্রী। হা­মা­নের কোন কথাই এজি­দ্ শু­নি­তে চায় না। মারওয়ানই আজ­কাল দা­মে­স্কের প্র­ধা­­­ন্ত্রী, সভা­সদ, প্র­ধান মন্ত্র­দা­তা, এজি­দের প্র­ধান গু­রু; বু­দ্ধি, বল, যা­হা কি­ছু সক­লই মারওয়ান। এই তো লো­কের মু­খে শু­নি­তে পাই।"
হা­সান বলি­লেন, " যে মারওয়ানের কা­র্য তা­হা আমি আগেই জা­নি­তে পা­রিয়াছি। তা­হা যা­হাই হউক, পত্র ফি­রিয়া দেওয়াই আমার বি­বে­­না।"
হজ­রত ইমাম হা­সা­নের কনি­ষ্ঠ ভ্রা­তা হজ­রত হো­সেন এক­টু রো­­ভা­বে বলি­তে লা­গি­লেন, "আপ­না­রা যা­হাই বলুন, আর যা­হাই বি­বে­­না করুন, পত্র­খা­না শু­দ্ধ ফে­রত দেওয়া আমার ইচ্ছা নহে। কম­জাৎ বাঁদী­বা­চ্চা কী ভা­বিয়াছে? ওর এতদূর স্প­র্ধা যে, আমা­দি­­কে উহার অধী­­তা স্বী­কার করি­তে পত্র লি­খে?আম­রা উহা­কে শা­হা­­শা­হা (সম্রা­ট্) বলিয়া মা­ন্য করিব? যা­হা­দের পি­তার না­মে দা­মে­স্ক­রা­জ্য কাঁপিয়া উঠিয়াছে, তা­হা­দের আজ এতদূর অপ­মান!-যাঁহার পদ­­রে দা­মে­স্ক রা­জ্য দলিত হইয়া বে সি­­হা­সন পা­তিয়া বসি­বার স্থান দিয়াছে, নিয়মি­তরূপে কর যো­গাইয়াছে, আম­রা তাঁহা­রই সন্তান, তাঁহা­রই উত্ত­রা­ধি­কা­রী, আম­রাই দা­মে­স্কের রা­জা, দা­মে­স্কের সি­­হা­সন আমা­দে­রই বসি­বার স্থান। কম­জাৎ কা­ফের সেই সি­­হা­­নে বসিয়া আমা­দে­রই মক্কা-মদি­নার খা­­না চা­হিয়াছে, ইহা কি সহ্য হয়?" হা­সান বলি­লেন, "ভ্রা­তঃ! এক­টু বি­বে­­না করিয়া কা­র্য করাই ভাল; আম­রা অগ্রে কি­ছুই বলিব না, এজি­দ্ যা­হা লি­খিয়াছেন, তা­হার কোন উত্তরও করিব না! দে­খি, কো­ন্ পথে যায়, কি উপায় অব­­ম্বন কর!"
আব­দুর রহ­মান বলি­লেন, "ভ্রা­তঃ! আপ­নার কথা যু­ক্তি­­ঙ্গত। কি­ন্তু বি­­ধর সর্প যখন ফণা উঠাইয়া দাঁড়ায়, অম­নি তা­হার মা­থা চূর্ণ করা আব­শ্যক, নতু­বা সময় পা­­লে নি­শ্চয়ই দং­শন করে। এজি­দ্ নি­শ্চয়ই কা­­­র্প। উহার মস্তক প্র­থম উত্থা­নেই চূর্ণ করিয়া ফে­লা বি­ধেয়; বি­শে­­তঃ আপ­নার প্র­তি উহার বে­শি লক্ষ্য।"
গম্ভী­­ভা­বে হা­সান কহি­লেন, "আর এক­বার পরী­ক্ষা করিয়া দে­খি; এখ­নো সে সময় হয় নাই।এবা­রে নি­রু­ত্ত­রই সদু­ত্তর মনে করিয়াছি।"
হো­সেন বলি­লেন, "আপ­নার আজ্ঞা শি­রো­ধা­র্য। কি­ন্তু একে­বা­রে নি­রু­ত্তর হইয়া থা­কা আমার বি­বে­­নায় যু­ক্তি­যু­ক্ত নহে। আপ­নার আদেশ লঙ্ঘন করিব না। আমি কা­সে­­কে বি­দায় করি­তে­ছি। পত্র­খা­না আমার হস্তে প্র­দান করুন।"
হো­সে­নের হস্তে পত্র দিয়া হা­সান রওজা হই­তে নি­­­স্থ উপা­­না মন্দি­রা­ভি­মু­খে চলিয়া গে­লেন। কা­সে­দ্কে সম্বো­ধন করিয়া হো­সেন বলি­তে লা­গি­লেন, "কা­সে­দ্! আজ আমি রা­­নী­তির মস্ত­কে শত পদা­ঘাত করি­তাম, আজ আমি চি­­­দ্ধ­তি প্রা­চীন নী­তি উপে­ক্ষা করিয়া পত্রের সমু­চিত উত্তর বি­ধান করি­তে কৃ­­­ঙ্ক­ল্প হইয়াও ভ্রা­তৃ-আজ্ঞা লঙ্ঘন মহা­পাপ জা­নিয়া তো­মার প্রাণ তো­মা­কে অর্পণ করি­লাম। কম­জাৎ এজি­দ্ যে পত্র দিয়া তো­মা­কে মদি­নায় পা­ঠাইয়াছে, ইহার প্র­তি অক্ষ­রে শত শত বার পা­দু­কা­ঘাত করি­লেও আমার ক্রো­ধের অণু­মা­ত্র উপ­শম হয় না। কি করি, ধর্ম­গ্র­ন্থে লি­খিত ভা­ষার অক্ষর ইহা­তে সন্নি­বে­শিত আছে মনে করিয়াই তা­হা করি­লাম না। ফি­রিয়া গিয়া সেই কম­জাৎকে এই সকল কথা অবি­কল বলিয়ো এবং দে­খাইও যে, তা­হার পত্রের উত্তর এই।-"
এই কথা­গু­লি বলিয়া পত্র­খা­নি শত­­ণ্ড করিয়া কা­সে­দের হস্তে দিয়া হো­সেন আবার কহি­লেন, "যাও!-ঈশ্ব­­কে ধন্য­বাদ দিয়া যাও যে, আজ এই উপ­স্থিত সন্ধ্যা­তেই তো­মার জী­­নের শে­­­ন্ধ্যা হই­তে মু­ক্তি পা­­লে!" হো­সেন এই বলিয়া, কা­সে­দের নি­কট হই­তে ফি­রিয়া আসি­লেন
এদি­কে সন্ধ্যা­কা­লীন উপা­­না সময়ে আহ্বা­নসূচক সু­­ধুর ধ্ব­নি (আজান) ঘো­ষিত হইল; সক­লেই উপা­­না করি­তে গমন করি­লেন। কা­সে­দের প্র­ত্যা­­­নের পূর্বেই এজি­দ্ সম­­­জ্জায় প্র­বৃ­ত্ত হইয়াছি­লেন। সৈন্য­­ণের পরি­চ্ছদ, অস্ত্র­­স্ত্রের পা­রি­পা­ট্য, আহা­রীয় দ্র­ব্যের সং­গ্রহ, পা­নীয় জলের সু­যোগ, দ্র­ব্য­জাত বহ­নো­­যো­গী বা­হন বস্ত্রা­বাস প্র­ভৃ­তি যা­হা যা­হা আব­শ্যক, তৎসম­স্তই প্র­স্তুত করিয়াছি­লেন। তি­নি নি­শ্চয়ই জা­নিয়াছি­লেন যে, পত্র পাইয়া হা­সান-হো­সেন একে­বা­রে জ্ব­লিয়া উঠি­বে। কা­সে­দের প্রাণ লইয়া দা­মে­স্কে ফি­রিয়া আসা সন্দেহ বি­বে­­না করিয়া গু­প্ত­চর নি­যু­ক্ত করিয়াছি­লেন। ভা­বিয়াছি­লেন, নি­শ্চয়ই যু­দ্ধ হই­বে। কে­বল সং­বা­­প্রা­প্তির অপে­ক্ষায় ছি­লেন মা­ত্র
এক­দিন আপন সৈন্য-সা­­ন্ত­­­কে দুই শ্রে­ণী­তে বি­­ক্ত করিয়া প্র­­­তঃ অশ্বা­রো­হী সৈন্য­দি­গের যু­দ্ধ­কৌ­শল অস্ত্র­চা­­না দে­খিয়া পরে পদা­তিক সৈন্যের ব্যূহনি­র্মা­ণের নৈপু­ণ্য, আত্ম­­ক্ষা করিয়া বি­­ক্ষের প্র­তি অস্ত্র­চা­­নের সু­কৌ­শল এবং সম­­প্রা­ঙ্গ­ণে পদ­চা­­নার চা­তু­র্য দে­খিয়া এজি­দ্ মহা­­ন্দে বলি­তে লা­গি­লেন, "আমার এই শি­ক্ষিত সৈন্য­­ণের অস্ত্রের সম্মু­খে দাঁড়ায়, এমন বী­­পু­রুষ আরব দে­শে কে আছে?এমন সু­শি­ক্ষিত সা­­সী সৈন্য কা­হার আছে? ইহা­দের নি­র্মিত ব্যূহ ভেদ করিয়া যু­দ্ধ জয়ী হওয়া কা­হার সা­ধ্য?হা­সান তো দূরের কথা, তা­হা­দের পি­তা যে অত বড় যো­দ্ধা ছিল, সেই আলীও যদি কবর হই­তে উঠিয়া যু­দ্ধে­ক্ষে­ত্রর সম্মু­খীন হয়, তা­হা হই­লেও তা­হা­দের পরাজয় ভি­ন্ন জয়ের আশা নাই।"
এজি­দ্ এইরূপ আত্ম­গৌ­রব আত্ম­প্র­শং­সায় মত্ত ছি­লেন, এমন সময়ে মদি­না হই­তে কা­সেদ আসিয়া সমু­চিত অভি­বা­­নপূর্বক এজি­দের হস্তে প্র­ত্যু­ত্ত­­­ত্র দিয়া, হো­সেন যা­হা যা­হা বলিয়াছি­লেন অবি­কল বলিল
এজি­দ্ ক্রো­ধে অধীর হইয়া কি­ঞ্চিৎ উচ্চৈঃস্ব­রে বলি­লেন, "সৈন্য­গণ! তো­­রা আমার দক্ষিণ বা­হু, তো­­রাই আমার এক­মা­ত্র ভর­সা। আমি তো­মা­দি­­কে যথা­যো­গ্য পু­­স্কা­রে পু­­স্কৃত করিয়াছি, পূর্ব হই­তেই বে­তন সং­খ্যা দ্বি­গুণ করিয়া দিয়াছি, যে যে­মন উপ­যু­ক্ত, তা­হা­কে সেই প্র­কার সম্মা­নে সম্মা­নিত করিয়াছি। এত­দিন তো­মা­দি­­কে যত্ন করিয়া প্র­তি­পা­লন করিয়াছি। আজ আমার এই আদেশ যে, এই সজ্জিত বেশ আর পরি­ত্যাগ করিয়ো না, হস্ত­স্থিত অসিও আর কো­ষে রা­খিয়ো না। ধনু­র্ধ­­গণ! তো­­রা আর তূণী­রের দি­কে লক্ষ্য করিয়ো না। মদি­না সম্মুখ ভি­ন্ন আর পশ্চাৎ করিয়ো না। এই বে­শেই এই যা­ত্রাই শু­­যা­ত্রা জ্ঞান করিয়া হা­সান-হো­সেন-বধে এখ­নই যা­ত্রা কর। যত শী­ঘ্র পার প্র­­মে হা­সা­নের মস্তক আনিয়া আমা­কে দে­খাও। লক্ষ টা­কা পু­­স্কার। আমি নি­শ্চয়ই জা­নি, তো­­রা মনো­যো­গী হইয়া এক­টু চে­ষ্টা করি­লেই উভয়ের মস্তক তো­মা­দের হস্তেই দা­মে­স্কে আনীত হই­বে। আমার মন ডা­কিয়া বলি­তে­ছে, তো­মা­দের তর­বা­রি সেই উভয় ভ্রা­তার শো­ণি­­পা­নে লো­লুপ রহিয়াছে।"
সৈন্য­­­কে ইহা বলিয়া মন্ত্রী­কে বলি­তে লা­গি­লেন, "ভাই মারওয়ান! তু­মি আমার বা­ল্য সহ­চর।আজ তো­মা­কেই আমার প্র­তি­নি­ধি­স্বরূপ এই বী­­­লের অধি­নায়ক হই­তে হই­বে। তো­মা­কেই সৈনা­­ত্যের ভার দিয়া, হা­সান-হো­সে­নের বধ­সা­­নের জন্য মদি­নায় পা­ঠা­­তে­ছি। যদি এজি­দের মান রক্ষা করি­তে চাও, যদি এজি­দের অন্ত­রা­গ্নি নি­র্বাণ করি­তে চাও, যদি এজি­দের মনের দু­ঃখ দূর করি­তে চাও, যদি এজি­দের জয়না­­লা­ভের আশা­­রী বি­ষাদ-সি­ন্ধু হই­তে উদ্ধার করি­তে চাও, তবে এখ­নই অগ্র­সর হও, আর পশ্চা­তে ফি­রিয়ো না।পূর্ব হই­তেই সক­লই আমি সমু­চি­তরূপে আয়োজন করিয়া রা­খিয়াছি, আজ এজি­দের প্রাণ তো­মা­রই হস্তে সম­র্পিত হইল। যে­দিন হা­সান-হো­সে­নের মৃ­ত্যু­সং­বাদ এই নগ­রে আসি­বে, সে­­দিন জা­নিও যে এজিদ পু­­র্জী­বিত হইয়া দা­মে­স্ক­রাজ-ভা­ণ্ডা­রের অবা­রিত দ্বার খু­লিয়া বসি­বে। সং­খ্যা করিয়া, কী হস্তে তু­লিয়া দি­বে না, সক­লেই যথে­চ্ছরূপে যথে­চ্ছ বস্তু গ্র­হণ করি­বে; কা­হা­রো আদে­শের অপে­ক্ষায় থা­কি­বে না। মারওয়ান! সকল কা­র্যে সকল কথা­তেই 'যদি' না­মে এক­টি শব্দ আছে। জগ­তে আমি যদি কি­ছু ভয় করি, তবে 'যদি' শব্দেই সময়ে সময়ে আমার প্রাণ কাঁপিয়া উঠে। যদি যু­দ্ধে পরা­স্ত হও, নি­রুৎসাহ হইও না, হা­সান-হো­সে­নের বধ-সঙ্ক­ল্প হই­তে কখ­নোই নি­রাশ হইও না, দা­মে­স্কেও ফি­রিয়ো না। মদি­নার নি­­­­র্তী কোন স্থা­নে থা­কিয়া তো­মার চি­­­ন্ধুর চি­­­ত্রুর প্রা­­সং­হার করি­তে যত্ন করিও। ছলে হউক, বলে হউক, কৌ­­লে হউক, কি­­বা অর্থেই হউক, প্র­­মে হা­সা­নের জী­বন-প্র­দীপ তো­মার হস্তে নি­র্বাণ হওয়ার শুভ সং­বাদ আমি শু­নি­তে চাই। হা­সা­নের প্রা­­বিয়োগ­­নিত জয়না­বের পু­­র্বৈধব্য­ব্রত আমি সা­­ন্দ­চি­ত্তে শু­নি­তে চাই। আর কী বলিব? তো­মার অজা­না আর কী আছে?"
সৈন্য­দি­­কে সম্বো­ধন করিয়া মারওয়ান বলি­তে লা­গি­লেন, "বী­­গণ! তো­মা­দের প্র­ভুর আজ্ঞা সক­লেই স্ব­­র্ণে শু­নি­লে আমার আর বলি­বার কি­ছুই নাই। ভ্রা­তৃ­গণ! এখন এক­বা­রে দা­মে­স্ক­রা­জের জয়না­দে আকাশ ফা­টাইয়া, জগৎ কাঁপাইয়া, মনের আন­ন্দে, দ্বি­গুণ উৎসা­হে এখ­নই যা­ত্রা কর। মারওয়ান ছায়ার ন্যায় তো­মা­দের সঙ্গে সঙ্গে থা­কি­বে।" সৈন্য­গণ বী­­­র্পে ঘো­­না­দে বলিয়া উঠিল, "জয় মহা­রাজ এজি­দের জয়!জয় মহা­রাজ দা­মে­স্ক­রা­জের জয়!!"
কাড়া-না­কাড়া, ডঙ্কা, গুড়গুড়্ শব্দে বা­জিয়া যেন বি­না মে­ঘে মে­­­র্জ­নের ন্যায় অবি­রত ধ্ব­নিত হই­তে লা­গিল। আজ অক­স্মাৎ বি­না মে­ঘে হৃদয়কম্পন বজ্র­ধ্ব­নির ন্যায় ভী­­নাদ শ্র­­ণে নগ­­বা­সী­রা ভয়াকু­­চি­ত্তে বা­হি­রে আসিয়া দে­খি­লেন, গগ­নে মে­ঘের সঞ্চা­­মা­ত্র নাই, কি­ন্তু রা­­পথ প্র­স্তর রে­ণু বা­লু­কা­­ণা­তে অন্ধ­কার; অসং­খ্য সে­না রণ­বা­দ্যে মা­তিয়া শু­ভসূচক বিজয় নি­শান উড়াইয়া মদি­না­ভি­মু­খে চলিয়াছে; নগ­­বা­সি­­ণের মধ্যে কা­হা­রো মনে ব্য­থা লা­গিল, কা­হা­রো চক্ষু জলে পূরিল, কেহ কেহ এজি­দের জয়রব করিয়া আন­ন্দা­নু­ভব করিল
এজি­দ্ মহোৎসা­হে নগ­রের অন্তঃ­সী­মা পর্য­ন্ত সৈন্য­দি­গের সঙ্গে সঙ্গে যাইয়া, মারওয়ান, সৈন্য­গণ সৈন্যা­ধ্য অলি­দের নি­কট বি­দায় হইয়া নগ­রে ফি­রিয়া আসি­লেন

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.