আলিফ লায়লা : আরব্য রজনী_পর্ব-৪৯

ইংরেজি অনুবাদ : ডঃ জে. সি. মারদ্রুস
বাংলা অনুবাদ : ক্ষিতিশ সরকার
বৃদ্ধ বিচিত্র ভঙ্গী করে কয়েক পা হেঁটে দেখিয়ে দিলো। তাজ আর হাসি চাপতে পারে না, ঠিক আছে দাদীমা, একেবারে নিখুঁত করে হাঁটবো, দেখে নিও।
প্রাসাদের অন্দরমহলে ঢোকার মুখেই বসেছিলো খোজার সর্দার। এই-রোখে।
বৃদ্ধা হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, কেন, ‘রোখো’ কেন?
–তা কি তল্লাসি করবে শুনি, খানদানি ঘরের জেনানা। গায়ে হাত দেবে নাকি।
—দরকার হলে, তাও দিতে পারি।
–ওরে আমার কে রে, গায়ে হাত দেবে! হাত ভেঙ্গে দেব না।
–সে যাই বলো, দাদীমা না দেখে ছাড়তে পারবো না।
–তাই বলে আমিরের ঘরের লেড়কী। তোমার সামনে বেহায়ার মতো বোরখা খুলে দাঁড়াবে? মান ইজ্জৎ বলে কি আর কিছু নাই।
খোজা বলে, বোরখানা খুললে হাত চালাবো। আমাকে তো বুঝতে হবে, আসলি মেয়েছেলে কিনা।
—আসলি না তো কি নকলি নাকি খোজা সর্দার। আচ্ছা তুমি কী? সারাটা জীবন আমার এই প্রাসাদে কেটে গেলো। মাথার চুল সব সফেদ হয়ে গেছে। এই বয়সে তোমার কাছে মিথ্যে বলে দোজকে যাবো?
খোজা পথ ছেড়ে দেয়। বৃদ্ধ তাজকে নিয়ে হলঘরের ভিতরে ঢুকে যায়। অদ্ভুত কায়দায় তাজ পাছা দোলাতে থাকে। সদরের যত খোজা সবাই লোলুপ নয়নে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। এমহল ওমহল পার হতে হতে এক সময়। শাহজাদীর মহলের সামনে এসে হাজির হয়। বৃদ্ধ বলে, এই যে লাল রেশমী পর্দা দেওয়া দরজা দেখছো, এই রকম ছ’খানা দরজা পার হওয়ার পর যে দরজাটা পাবে, খেয়াল রেখো, সেই দরজাই দুনিয়ার। আমি এখানে দাঁড়ালাম। তুমি দরজাগুলো গুণতে গুণতে চলে যাও। দুনিয়ার ঘরে ঢুকে দেখবে সে এখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। তার পরের ব্যাপার যা করার তুমি করবে—আমি আর বলে দেব না।
তাজ গুণে গুণে ছ’খানা দরজা ছেড়ে দিয়ে পরে দরজার পর্দা তুলে দেখলো, পালঙ্কে মখমলের শয্যায় শাহজাদী ঘুমে বিভোর। কামিজের বোতাম খোলা, পায়ের ওপরে উঠে এসেছে শালোয়ার। এলোমেলো চুলের খুচরো দু’এক গাছি এসে পড়েছে। চিবুকের পাশে। তাজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে। জাগাবে কি জাগাবে না—ঠিক করতে পারে না। একবার হাত দিয়ে মুখের চুলগুলো সরিয়ে দিতে যায় আবার কি ভেবে হাতখানা সরিয়ে নেয়। আস্তে আস্তে ওর পাশে এসে বসে। চাঁদের শোভা দেখতে থাকে। অপলক নয়নে। আপনা থেকেই মুখটা আনত হয়ে আসে। কি সুন্দর পাকা আঙুরের মতো ঠোট। তাজ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। আপনা থেকে হাত দু’খানা উঠে আসে ওর দেহে।
শাহজাদীর ঘুম ছুটে যায়। কিছুই বুঝতে পারে না–স্বপ্ন না। সত্যি। ঝটিকা মেরে উঠ পড়তে চায়। কিন্তু তাজের বজমুঠিতে বাঁধা আছে তার দেহ। দুনিয়া চিৎকার করতে চায়। কিন্তু ওর ঠোঁট চাপা আছে আর এক ঠোঁটে। তার পৌরুষের কাছে হার মানতে হয় তাকে। হার মানতে হয় সব নারীকেই।
দুনিয়া এতক্ষণে বুঝতে পারে। ওর চোখ হেসে কথা বলে, তুমি-তুমি এসেছে। আমি তো সারাটা রাত তোমার কথাই ভেবেছি প্রিয়। তোমার স্বপ্নেই এতক্ষণ আচ্ছন্ন ছিলাম। তুমি কখন এলে?
দুনিয়া দু’হাত বাড়িয়ে তাজকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ওরা কামনার বন্যায় কোথায় যে ভেসে যায় তার বিশদ বিবরণ এখানে আর নাই বা দিলাম।
পুরো একটা মাস দুনিয়ার ঘরে তাজ রয়ে গেলো। সারাদিন ধরে খায় দায়, নাচ-গান হৈ-হল্লা করে কাটায়। তাজ-এর হৃদয় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। দুনিয়াও নিজেকে নিঃশেষ করে বিলিয়ে দেয়। তাজ-আর দুনিয়া-দুই-এ মিলে এক সুখের নীড় রচনা করতে থাকলো।
এদিকে উজির আর আজিজ। সারাটা রাত উদগ্রীব হয়ে বসে থাকে। কিন্তু তাজ আর ফেরে না। একদিন দুদিন করে এক সপ্তাহ কেটে যায়। কিন্তু তাজ-এর কোন সন্ধান নাই। সেই বৃদ্ধাও আর আসে না। উজির ভাবলো, নিশ্চয়ই সে ধরা পড়েছে। এবং সুলতান তাকে কোতল করে ফেলেছে। ভাবতেও গা শিউড়ে ওঠে।
আজিজ বললো, একমাস বাদে আবার বিলাস মহলের ফটক খুলবে। শাহজাদী বিহারে আসবে। ততদিন পর্যন্ত কি অপেক্ষা করবেন?
আর দেরি না করে পরদিনই তারা যাত্রা করলো। কয়েক দিন পরে সবুজ শহরে পৌঁছে কাঁদতেকাঁদতে জানালো, তাজ অল মুলুক কপূর প্রবাল সুলতানের প্রাসাদে বন্দী হয়ে আছে। আজ প্রায় দু মাস তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
সুলতান আর্তনাদ করে ওঠে। মনে হয় তার পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। দু’হাতে মুখ ঢেকে শিশুর মতো কাঁদতে থাকে।
কিন্তু বসে বসে কাঁদলে তো ছেলেকে ফেরৎ পাওয়া যাবে না। একটা ব্যবস্থা করতে হবে। কপূর দ্বীপের সুলতান ভেবেছে কি? আমার হুঙ্কারে ইস্পাহান পাহাড় কেঁপে ওঠে। আর ওই সামান্য কপুর-সুলতান? ওকে আমি রেণু রেণু করে গুড়িয়ে দেব।
উজির বললো, এখনি ব্যবস্থা কর। সেনাপতিদের খবর পাঠাও। কপূর দ্বীপ আক্রমণ করতে হবে। সারা শহরে সােজ সাজ রাব পড়ে গেলো! ঢাল তরোয়াল, বর্শা, সড়কী নিয়ে বেরিয়ে এলো হাজার হাজার সৈন্য। আল্লাহ আকবর, আল্লাহ আকবর ধ্বনি করতে করতে এগিয়ে চললো।
এদিকে দুনিয়া আর তাজ সুখের সায়রে ভাসছে। একদিন তাজ দুনিয়াকে আদর করতে করতে বললে, সোনা, তুমি আমাকে অনেক দিয়েছ, আমিও দিয়েছি সাধ্যমতো। কিন্তু একটা জায়গায় একটু খুঁত রয়ে গেছে। সেই জন্যেই স্বস্তি পাচ্ছি না।
—কি সোনা? তুমি যাচাও যেভাবে আমাকে পেতে চাও আমি কি সেভাবে দিতে পারছি না। তাজ ওকে বুকে টেনে নেয়। না, সোনা, ওসব কিছু না। ওদিক থেকে আমার কোন কিছুর অভাব নাই। তুমি আমাকে দু’হাত ভরে উজাড় করে দিয়েছে। আমিই তোমার কাছে খানিকটা চেপে গেছি।
দুনিয়া অবাক হয়, সে কী?
–মানে?
দুনিয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। তুমি সুলতান সুলেমানের ছেলে। তোমার উজিরই না আমার বাবার কাছে এসেছিলো শাদীরা
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে তাজ বলে, শাদীর প্রস্তাব নিয়ে উজিরই এসেছিলো তোমার বাবার কাছে। তোমার বাবা দারুন খাতির যত্ন করেছিলেন, কিন্তু তুমিই বেঁকে দাঁড়িয়েছিলে। মনে আছে খোজকে খাড়া নিয়ে তাড়া করেছিলে!
তাজ বললো, আজ কামাস হয়ে গেলো, উজির কোন খবর না পেয়ে কি যে ভাবছে, কি যে করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমিও এমন নেশায় মত্ত হয়েছিলাম ওদের কথা মনেই ছিলো না। কিন্তু এত দিনে কি আর তারা এখানে আছে?
তাজ বলে, সর্বনাশ হয়েছে।
–কেন?
দুনিয়া আঁৎকে ওঠে, তা হলে কি হবে?
এই সব কথা বলতে বলতে রাত প্রায় শেষ হয়ে আসে। দুনিয়া বলে, এখন একটু ঘুমিয়ে নাও। কালই আমরা রওনা হয়ে যাবো।
দু’জনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। এই ভাবে অনেক বেলা পর্যন্ত তারা সুখনিদ্রায় বিভোর হয়ে থাকে।
সেই দিন সকালে সুলতান সারিমানের দরবারে এক জহুরী এসে কুর্নিশ জানালো। জহুরীর হাতে একটা গহনার বাক্স। সুলতানের হাতে তুলে দিয়ে বলে, পারস্য থেকে এক সওদাগর নিয়ে এসেছে, জাঁহাপনার যদি প্রয়োজনে লাগে এই ভেবে নিয়ে এসেছি।
সুলতান সারিমান দেখলো, মূল্যবান জড়োয়া গহনা। নানা রকম হীরা চুনী মুক্তো পান্না বসানো বাহারী কাজ করা। লক্ষাধিক মোহর দাম হতে পারে। সুলতান ভাবে, দুনিয়ার যদি পছন্দ হয় রেখে দেবে। খোজা সর্দারকে ডেকে বলে কাফুর, অন্দরমহলে শাহজাদীকে গহনাগুলো দেখিয়ে আয়, তার যা পছন্দ-সে যেন রেখে দেয়।
গহনার বাক্সটা হাতে নিয়ে কাফুর শাহজাদীর মহলে চলে আসে। বৃদ্ধ দাদীমা দুনিয়ার সামনে একটা গালিচা পেতে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল। কাফুর তাকে ডিঙিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে। সঙ্গে সঙ্গে কাফুরের চোখের সামনে সারা ঘরটা যেন দুলতে থাকে। মাথাটা ঝিমাঝিম করে ওঠে। চোখ দুটো হাত দিয়ে ডলে আবার দেখে, নাঃ, সে তো স্বপ্ন দেখছে না। সত্যি সত্যিই শাহজাদী উলঙ্গ হয়ে একটি ছোকরাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমে অচেতন।
এতক্ষণে কাফুরের সামনে সব খোলসা হয়ে যায়। এই জন্যেই শাহজাদী শাদীর নাম শুনলে ক্ষেপে যেত। এই জন্যেই তাকে সে একদিন ছোরা নিয়ে তাড়া করেছিলো। ইম, এতদিনে বোঝা গেলো, রহস্যটা কোথায়। কাফুরের মনে প্রতিশোধ প্রবৃত্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আমাকে ছুরি নিয়ে তেড়ে এসেছিলে? দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি।
বাক্সটা হাতে নিয়ে, ঘর থেকে পা টিপে টিপে বেরিয়ে, উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসে কাফুর। সুলতান জিজ্ঞেস করে, কি খবর কাফুর?
–কী ব্যাপার, একটাও পছন্দ হলো না শাহজাদীর?
সুলতানের ইশারায় দরবার ফাঁকা হয়ে গেলো। কাফুর গলা খাটো করে বললো, শাহজাদীর ঘরে ঢুকে দেখি একটা খুবসুরৎ নওজোয়ানকে নিয়ে শুয়ে আছে। এর বেশি আর জিজ্ঞেস করবেন না, হুজুর।
সুলতান হুঙ্কার ছাড়ে, কী? কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে আমার অন্দরমহলে ঢোকে। তোরাই বা সব কি করিস। বাইরের পুরুষ মানুষ অন্দরে ঢুকলো কি করে? তুই ঠিক দেখেছিস তো কাফুর?
তাজ আর দুনিয়াকে এনে দাঁড় করানো হলো সুলতানের সামনে। সুলতান চিৎকার করে উঠলো, তা হলে কাফুরের কথা মিথ্যে নয়। তরে রে শয়তান—
এই বলে সুলতান নিজে হাতেই একখানা বর্শা ছুঁড়ে মারে। কিন্তু ক্ষিপ্রগতিতে দুনিয়া তাজকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে, মারতে যদি হয় দু’জনকে এক সঙ্গেই মারুন জাঁহাপনা। দোষ তো ওর কিছু নাই। আমি একে আমার ঘরে না আনলে আসতে পারে কখনও?
তাজের কথায় দিশাহারা হয়ে পড়ে সুলতান! কি করা উচিৎ কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। উজিরকে জিজ্ঞেস করে, কি করা যায় বলতো। ছেলেটা যা বলছে তা যদি ঠিক হয় তাহলে তো সমূহ বিপদ।।
উজির বলে, লোকটা একেবারে ফেরেববাজ। ওর কথা বিলকুল বিশ্বাস করবেন না, হুজুর। ধাপ্পাবাজির আর জায়গা পায়নি। সুলতান সুলেমানের পুত্র। তার ছেলে এই রকম বেলেল্লাপনা করতে আসবে? আপনি ওরা ওসব ভাওতায় ভুলবেন না, জাঁহাপনা, কোতল করে ফেলুন। শত্রুকে বেশিক্ষণ জিইয়ে রাখতে নাই।
—তুমি ঠিক বলেছ উজির, সুলতান সুলেমানের পুত্র এই রকম বেলেল্লা হতে পারে না। এই কুকুরের বাচ্চাটার মৃত্যুই একমাত্র সাজা।
এই সময়ে রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
পরদিন রজনীর দ্বিতীয় প্রহরে আবার কাহিনী শুরু হয়।
সুলতান যখন বললো, এই কুকুরের বাচ্চাটার মৃত্যুই একমাত্র সাজা, ঠিক সেই সময় প্রহরী এসে খবর দিলো, সবুজ শহরের সুলতানের প্রতিনিধি এসেছেন সুলতানের সঙ্গে দেখা করতে।
সুলতান উজিরকে বললো, ওদের সসম্মানে নিয়ে এসো।
উজির এবং আজিজ এসে কুর্নিশ জানিয় দাঁড়াতেই তাজ অল মুলুককে দেখে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে, শাহজাদা—
তাজ-আল-মুলুক বলে, কে বললে আমি শাহজাদা। আমি তো একটা ধাপ্লাবাজ মিথ্যেবাদী, শয়তান।
সুলতান স্বয়ং সিংহাসন থেকে নেমে এসে তাজকে বুকে জড়িয়ে ধরে–আমি উজিরের কথায় তোমার উপর অবিচার করেছি। বাবা। অনেক কটু কথা বলেছি। তুমি কিছু মনে করো না। আমি ঐ উজিরটাকে শূলে চাপবো। মাথা মোটা একটা হাঁদা কোথাকার! সারিমান ভাবে ভাগ্যে জল্লাদকে সে হুকুম দিতে দেরি করেছিলো। আর এক দণ্ড পরে যদি এঁরা আসতেন তা হলে তাজ-এর কাটা মুণ্ডু এতক্ষণে মাটিতে পড়ে থাকতো। উফ ভাবতেও শরীর শিউরে ওঠে সারিমানের। উজির জানায়, সুলতান সুলেমানের সেনাবাহিনী জোর কদমে এগিয়ে আসছে কপূর দ্বীপের দিকে। ওদের খবর পাঠাতে হবে। নইলে শহরের ভিতর ঢুকে সব ধুলোয় মিশিয়ে দেবে-এই রকম হুকুমই তাদের দেওয়া আছে। সুতরাং আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। সেনাপতিদের সঙ্গে দেখা করে সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিতে হবে।
ভয়ে সুলতান সারিমানের হাত পা কাঁপতে থাকে। উজির বলে, আপনি আশ্বস্ত হোন জাঁহাপনা, আমি সব ব্যবস্থা করছি। আর আপনি আপনার বৃদ্ধ উজিরকে এর জন্যে কোন তই শাস্তি দেবেন না। এই আমার আর্জি। কারণ সে নিজের স্বার্থের জন্য কিছু করতে চায়নি। যা কিছু করেছে সুলতানের মঙ্গল চিন্তা করেই করেছে। হয়তো তার বিচারে ভুল হতে পারে। এর জন্য প্রাণদণ্ড হয় না।
আমিও সেই কথাই বলি, জাঁহাপনা, ওকে আপনি এযাত্রা রেহাই দিন। ভুল মানুষ মাত্রেরই হয়।
সুলতান সারিমান বলে, ঐ ব্যাটা খোজা কাফুর, সব নষ্টের গোড়া সে। ওকে আমি ক্রুশে গেঁথে মারবো।
তাজ বলে, সে আপনার ইচ্ছা। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে লোকটার জন্যেই যে আমার গর্দান যেতে বসেছিলো, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই।
উজির এবং আজিজ দুজনেই এগিয়ে এসে বলে, শুভকোজ সামনে। এখন আর নরহত্যা না হয় নাই করা হলো। এ যাত্রা ওকে ক্ষমাঘেন্না করে না হয় ছেড়েই দিলেন।
সুলতান সারিমান বললো, এ ব্যাপারে আপনারা যা বলবেন আমি তাই করবো। খোজাকে শূলে চাপাতে বলেন শূলে চাপাবো। ছেড়ে দিতে বলেন ছেড়ে দেব।
তাজ বলে, ঠিক আছে, এবারের মতা ওর বেয়াদপি মাফ করেই দিন।
সুলতান সারিমান বলে, আর বাবা, আমার গুনাহর কে বিচার করবে?
সারিমান তাজকে বুকে জড়িয়ে ধরে। উজির আর আজিজ সেনাপতিতদের সঙ্গে দেখা করতে চলে যায়। আমির ওমরাহ এবং দরবারের সচিবরা তাজকে নিয়ে যায় হামামে। এদিকে কাজীদের খবর পাঠানো হয়। সারাপ্রাসাদে হৈচৈ পড়ে যায়। শাহজাদী দুনিয়ার শাদী।
সুলতান সারিমান এবার কন্যা দুনিয়ার ঘরে আসে। মেয়ে হয়তো মনে আঘাত পেয়েছে। দরবারে ডেকে উজিরের সামনে তাদের এইভাবে হেনস্থ করা হয়েছে। অভিমানী মেয়ের মনে চোট লাগা স্বাভাবিক।
ঘরে ঢুকতেই চমকে ওঠে। শাহজাদী দুনিয়া একখানা ছুরি হাতে বাগিয়ে ধরেছে। আর এক মুহূর্ত দেরি হলে নিজের বুকে বসিয়ে দিত। সুলতান ক্ষিপ্রহাতে ছুরিখানা ছিনিয়ে নিয়ে বলে, এ কি করছিলে, মা।
দুনিয়া কেঁদে ওঠে, এ জীবন আমি আর রাখবো না বাবা।
সুলতান সারিমান আকুল হয়ে বলে, ও কথা মুখে আনতে নাই মা। তুমি আমার একমাত্র সন্তান। তুমি না থাকলে আমি বাঁচবো কি নিয়ে?
তাজ-আল-মুলুক হামাম থেকে ফিরে আসে। সুলতান নিজে হাতে ধরে তাজকে নিয়ে এলো দুনিয়ার ঘরে।–এই দেখো, মা। তাজ বেঁচে আছে।
দুনিয়া ছুটে এসে তাজ-এর হাত ধরে, আনন্দে তার দু’চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রুধারা। সুলতান ঘরে ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
তাজ দুনিয়াকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে।-ওরা আমাকে মারতে চেয়েছিলো, সোনা। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা আমাকে রক্ষা করেছে। চলো, আর দেরি করবো না। বাবা বড় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। আজই আমরা সবুজ শহরের পথে রওনা হবে।
সেই দিনই তাজ, দুনিয়া, উজির, আজিজ এবং সুলতান সারিমান সবুজ শহরের পথে যাত্রা করে। কিছুদিন বাদে যখন তারা এসে পৌঁছয় সারা সবুজ শহর তখন আনন্দের বন্যায় ভেসে চলেছে। দূত এসে আগেই সুলতান সুলেমানকে খবর দিয়েছিলো, শাহজাদা তাজ-আল-মুলুক পাত্রী শাহজাদী দুনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসছেন।
শহরের প্রবেশ মুখে বিরাট তোরণদ্বার তৈরি করা হয়েছিলো। হাজার হাজার নরনারী এসে সমবেত হয়েছে। তাদের ভাবী সুলতান আর তার ভাবী বেগমকে সাদর অভ্যর্থনা জানাতে সবুজ শহর। আজ ভেঙে পড়েছে। কাঁড়ানাকাড়া বাজিয়ে চলেছে সেনাবাহিনী। রাস্তার দুপাশে
ফুলের মালায় সাজানো হয়েছে প্রাসাদ। সুলতানের হুকুমে জনে জনে দান করা হচ্ছে নতুন পোশাক, খানাপিনা, ফল ফুল, আতর, গোলাপজল।
তাজ প্রাসাদে ঢুকেই প্রথমে সুলতান সুলেমানকে জড়িয়ে ধরে।—আব্বাজান, আমার জন্যে বড় দুশ্চিন্তায় দিন কেটেছে আপনার। অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আমাকে ক্ষমা করুন।
ছেলেকে বুকে জড়িয়ে সুলতান বলে, আল্লাহ যখন যাকে যে ভাবে রাখেন। তাই থাকতে হয় বাবা। ও নিয়ে আমার কোনও দুঃখ নাই। আজ যে আবার তোমাকে ফিরে পেয়েছি। এজন্যেই তাকে আমার হাজার হাজার সালাম জানাই।
দুই সুলতান এবং তাজ একসঙ্গে বসে খানাপিনা করলো। কাজীরা এসে শাদীনামা তৈরি করে দি নানারকম সাজপোশাক এবং নগদ অর্থ উপহার নিয়ে বিদায় নিলো। সেনাবাহিনীর মধ্যে দু’হাতে ধনদৌলত বিতরণ করা হতে থাকলো। নাচ গান বাজনা হৈ-হল্লায় মেতে উঠলো। শহরবাসী। চল্লিশ দিনব্যাপী চলতে থাকলো এই আনন্দ উৎসব। দুনিয়া আর তাজ ভালোবাসার সায়রে গা ভাসিয়ে দিয়ে স্বৰ্গ-সুধা পান করতে লাগলো।
তাজ কিন্তু আজিজকে ভোলেনি। দামী দামী সাজপোশাক, মূল্যবান গালিচা পর্দা, খটপালঙ্ক নানা রকম শৌখিন বিলাস সামগ্ৰী এবং প্রচুর ধনরত্ন সহ দাসদাসী নফরবাদী উট খচ্চর গাধা। ঘোড়া সঙ্গে দিয়ে আজিজকে তার মার কাছে পাঠিয়ে দিলো। আজ কতকাল তার মা ছেলেকে
ট্রক্ট চোখে দেখেনি। হয়তো সে ব্যাচারী কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয়ে গেছে।
সুলতান সুলেমানের মৃত্যুর পর তাজ-আল-মুলুক সুলতান হলো। আজিজকে করলো তার উজির। আর সেই বাগানের বৃদ্ধ মালির কথাও ভোলেনি তাজ। সবুজ শহরে এক বিরাট রেশমী কাপড়ের দোকান করে দিলো তাকে।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments