ইদানীং বিভিন্ন স্থানে ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগে ইরাকে এক ব্যক্তি নিজেকে ‘খলিফা’ বলে ঘোষণা করেছেন। কিছু রাজনৈতিক দলও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই খিলাফতের ধারণা আমাদের সামনে সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
ইসলামে খিলাফত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দল রয়েছে, যারা খিলাফত প্রতিষ্ঠাকে তাদের কর্মসূচির অংশ করে নিয়েছে। খিলাফতের তিনটি প্রধান দিক রয়েছে, যার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।
প্রথমত, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে খিলাফত অর্থ হলো, পৃথিবীর সব মানুষ আল্লাহ তায়ালার খলিফা বা প্রতিনিধি। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আমরা দুনিয়ায় আমাদের প্রতিনিধি (খলিফা) প্রেরণ করতে যাচ্ছি।’ (সূরা বাকারা : ৩০)।
সব মানুষ যদিও আল্লাহর খলিফা; তবে তাদের অনেকেই নানা ধরনের পাপে জড়িত হয় এবং খলিফা বা প্রতিনিধির মতো কাজ করে না। (সূরা আনআম : ১৬৫, সূরা নামল : ৬২ ও সূরা ফাতির : ৩৯)। এটি হলো ইসলামী খিলাফতের প্রাথমিক দিক।
দ্বিতীয়ত, ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও খিলাফতের একটি তাৎপর্য রয়েছে। এটি হলো খিলাফতের সবচেয়ে বেশি আলোচিত দিক। রাসূল সা. এবং তার সাহাবীদের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার অংশ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা হিসেবে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। খিলাফতে ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূল দিকগুলো নিম্নরূপ-
ক. আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, যার অর্থ হলো শরিয়ার (কুরআন ও সুন্নাহ) শ্রেষ্ঠত্ব। অর্থাৎ রাষ্ট্রের মৌলিক আইন কুরআন ও সুন্নাহর ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে। ওলামা বা ইসলামী পণ্ডিতদের সহায়তায় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি বা দল অথবা বর্তমান সময়ের সংসদ এর বিস্তারিত সহযোগী আইনকানুন ইজতেহাদের মাধ্যমে প্রণয়ন করবে।
খ. জনগণের মুক্ত বাছাইয়ের মধ্য দিয়েই সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এটি হলো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামত। বর্তমান বিশ্বে এর অর্থ হলো, ‘সরকার নির্বাচিত হয় জনগণ দ্বারা। এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মৌলিক ক্ষেত্রে খুব কম মতপার্থক্য রয়েছে। মুসলিম বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সংবিধানে এ ব্যবস্থাকে গ্রহণ করা হয়েছে।
গ. মৌলিক অধিকার, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা বা লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকের মানবাধিকার থাকবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামী সংবিধানে মৌলিক অধিকার কিংবা সব নাগরিক ভোগ করবে- রাষ্ট্রের এমন অধিকারের ব্যাপারে একটি অধ্যায় রয়েছে। এ অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে। দীর্ঘ বিতর্কের পর আলেম-ওলামা এসব অধিকারের ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
ঘ. ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আইন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ঙ. সংসদসহ বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে জনগণের সাথে এবং সরকারের কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে শূরা বা পরামর্শ করা ইসলামী রাজনৈতিক তত্ত্বের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এগুলো হলো ইসলামী গণতন্ত্রের ভিত্তি। ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, ‘গণতন্ত্র’ পরিভাষা ইসলামী কাঠামোর মধ্যে ব্যবহার করা যায়। কোনো কোনো দেশের ইসলামী সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘ইসলামে গণতন্ত্রকে যেভাবে ঘোষণা করা হয়েছে, রাষ্ট্র তা সেভাবে পালন করবে’-আলেমরা এ কথা গ্রহণ করেছেন। এসব হলো ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিভিন্ন উপাদান, যা খিলাফতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
তৃতীয়ত, খিলাফতের মাধ্যমে ইসলামী সরকারের ধরনকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মোটাদাগে আলেম-ওলামা একমত যে, এখনকার রাষ্ট্রপতিশাসিত বা সংসদীয় ব্যবস্থা ইসলামী রাজনৈতিকতত্ত্ব কাঠামোর সাথে অনেকাংশেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। খিলাফত মানে এটি বোঝায় না যে, শুধু প্রেসিডেন্টকে ‘খলিফা’ বলতে হবে; এটি এর চেয়ে অনেক বড় কিছু। এটি হলো ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বিষয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামী মূলনীতি বা উপরের রূপরেখা অনুসারে খিলাফতের প্রকৃত নীতির ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বমূলকভাবে নিজ নিজ রাষ্ট্র চালানোর চেষ্টা করা মুসলমানদের কর্তব্য। বাস্তবে বিশ্বের প্রায় সব প্রধান ইসলামী রাজনৈতিক দল এ আলোকেই কাজ করছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে সঠিক রাজনৈতিক পন্থা হিসেবে গ্রহণীয়।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments