বাংলাদেশে মিডিয়ার রাজনীতি_সাইফ বরকতুল্লাহ পর্ব-১

 
বাংলাদেশে এখন চলছে মিডিয়ার যুদ্ধ। সাংবাদিক বনাম সাংবাদিক, পত্রিকা বনাম পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল বনাম টেলিভিশন চ্যানেল- যুদ্ধ এখন প্রকাশ্য বিরাজমান। জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রায়ই দেখা যায়, সাংবাদিকদের একপক্ষ যখন বন্ধ মিডিয়ার খুলে দেয়ার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে, তখন অপর পক্ষ সাংবাদিকরা হাসাহাসি, ঠাট্টা-মসকরা নিয়ে ব্যস্ত।
 
দুই.
মিডিয়ার স্বাধীনতা আজ বিপন্ন। সাংবাদিক সংবাদপত্রসহ অন্যান্য মিডিয়াকর্মী মিডিয়া প্রতিষ্ঠান আজ হুমকির মুখে। সাংবাদিকেরা হামলা-মামলা আর হত্যার শিকার হচ্ছেন। বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সংবাদপত্র। বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ভিন্ন মতের টিভি চ্যানেল। পত্রিকা সম্পাদকদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাচ্ছেন। রিমান্ডে নিয়ে তাদের অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সাগর-রুনির মতো খুনের শিকার সাংবাদিকদের হত্যাঘটনার বিচার হচ্ছে না। এসবই এখন বাংলাদেশের মিডিয়ার নিত্য ঘটনা। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে?
 
তিন.
যুদ্ধটা শুরু ফেব্রুয়ারি থেকে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে সরকারবিরোধী মতের মিডিয়া বন্ধের দাবি জানানো হলো। এরপরই শুরু। গ্রেফতার করা হলো আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। বন্ধ করা হলো আমার দেশের প্রকাশনাও। এখানেই থেমে নেই। রাতের আঁধারে বন্ধ করে দেয়া হলো এসময়ের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল দিগন্ত টিভিকে। সাথে ইসলামিক টিভিও। সাথে সাথে বেকার হয়ে পড়ল কয়েক হাজার মিডিয়াকর্মী। কিন্তু কেনো? এর উত্তর এখনো প্রশ্নই!
 
চার.
এহেন পরিস্থিতিতে অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ পাল্টে গেলো। প্রতিবাদ জানাল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মালিকরাও। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশের কয়েকজন সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, বন্ধ টিভি চ্যানেল আমার দেশ ছাপাখানা খুলে দেবার জন্য বিবৃতি দিলেন। বিবৃতি নিয়েও শুরু হলো পাল্টাপাল্টি রাজনীতির খেলা। তথ্যমন্ত্রী বললেন, না বুঝেই সম্পাদকরা বিবৃতি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বিবৃতির পক্ষে বিপক্ষে সংবাদপত্রের উপসম্পাদকীয় পাতায় এবং টেলিভিশনেরটকশো’-তে তুমুল আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।
 
পাঁচ.
এই পরিস্থিতিতে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারকৈফিয়তনয়- শিরোনামে দৈনিক সমকালে বিশেষ সম্পাদকীয় হিসেবে কলাম প্রকাশ করলেন। সেখানে তিনি লিখলেন, ‘১৫ সম্পাদকের বিবৃতি সম্ভবত কিঞ্চিৎ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বেশ কিছু সংগঠন বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়ে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য প্রকাশ করে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কারও ভাষা নমনীয়, কারও বেশ শানিত।মনে হচ্ছে, বিবৃতি দেয়াটাও ভুল হয়েছে।
 
ছয়.
দেশে মিডিয়া সাংবাদিকদের নিয়ে যখন এই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তখন সংবাদপত্রের পূর্ণ-স্বাধীনতা মতপ্রকাশের অধিকার সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন, সাংবাদিকতার মানোন্নয়ন সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সম্পাদক পরিষদ গঠন করা হলো। ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সম্পাদকদের এক বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে এই পরিষদ গঠন করা হয়। এর সভাপতি হয়েছেন দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। দেশের প্রায় সব টি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকেরা এর সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এটাও কারো কারো চোখে বিষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশাখী টেলিভিশনের সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল আবার পত্রিকায় লিখলেন, বিনীত অনুরোধ অভিভাবকদের প্রতি শিরোনামে লেখা। সেখানে তিনি বলেন, ‘সম্পাদক পরিষদ নিয়ে বিবৃতি দিয়ে ১৫ সম্পাদক কতোটা অর্জন করেছেন তাঁর মূল্যায়ন হয়তো একদিন হবে কিন্তু তাঁদের দীর্ঘদিনের পেশাগত জীবনের ধারাবাহিকতার প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই যে হোঁচট খেয়েছেন সে কথা বলাই বাহুল্য। বিবৃতিদাতা অনেক সম্পাদকই যেহেতু অভিভাবকতুল্য; সে জন্যই প্রত্যাশা করি তাঁরা যেনো হঠাৎ করে আমাদের কাছে অচেনা না হয়ে যান। অভিভাবকরা প্রশ্নবিদ্ধ হলে পরিবারের নিষ্ঠাবান সদস্যরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন, সে জন্যই এই রচনা। আশা করি এই রচনায় তাঁরা বিরূপ হবেন না। এই ধৃষ্টতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
এখন প্রশ্ন হলো, কেনো এই অভিভাবকরা প্রশ্নবিদ্ধ হবেন? বৈশাখী টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতি কিংবা প্রতিথতযশা সাংবাদিক সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল-এর সাথে আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভির সম্পাদকীয় নীতি হয়তো মিল নেই, তাই বলে কী মিডিয়া বন্ধ করতে হবে? তাহলে গণতন্ত্র আজ কোথায়? কোথায় মিডিয়ার স্বাধীনতা?
 
সাত.
বাংলাদেশের মিডিয়া এখন দুঃসময়ের মুখোমুখি- উদ্বেগ শুধু দেশের ভেতরে নয়, দেশের বাইরেও। লন্ডনের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্ট গত ২৫ মে এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মিডিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে- বাংলাদেশের মিডিয়া এখন দুঃসময়ের মুখোমুখি। ইকোনমিস্টের এই প্রতিবেদনে মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার, আমার দেশ পত্রিকা, পত্রিকার প্রেসে তালা দেয়া, দিগন্ত টিভি ইসলামিক টিভি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
 
আট.
আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, আমাদের হলো সবচেয়ে বড় সমস্যা। হঠাৎ করে বেকার হয়ে পড়ার চিন্তায় পড়ে আমাদের পরিবার। কিন্তু তবুও বাস্তবতা হলো বর্তমানে বাংলাদেশে মিডিয়া দুইভাগে বিভক্ত। ফলে সরকার পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে আমাদের মতো সাধারণ মিডিয়াকর্মীর চাকরি। তবে একথাও সত্য, দেশের উন্নতি, অগ্রগতির পেছনে মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের উন্নতি অগ্রগতি ঐক্য সঙ্গতির আবিষ্কারক আমাদের মিডিয়া। কিন্তু মিডিয়া অতিমাত্রায় রাজনীতিকীকরণে মিডিয়ার ভবিষ্যৎ শঙ্কিত হয়ে উঠছে। মিডিয়ার রাজনীতি বন্ধ না হলে সামনে গণতন্ত্র ব্যাহত হবে।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.