রোশনী ইয়াসমীন'র কবিতা

 

মানবতা আজ উনুনে
 
ভাঙা থালায় পড়ে আছে শস্যবীজ
অনাহারী জমি আগলে রেখেছে,
 অন্ধ সন্তানের মা
 
 ব্যবধান শুধু, একটি শূন্য ঘিরে-
 শতাব্দীর খিদে এখন পলাতক কয়েদি।
 
 কাগজের বৌ, পানিতে সিটিয়ে
 অকৃতজ্ঞ সিঁথি জুড়ে-
 চিরুনির আঁকাবাঁকা পথ
  অক্ষর বিক্রির মূল্য  সভ্য জাতি।
 
 আবার শুরু হলো-
 মোমবাতির মিছিলে মৃত প্রহসন- ,
কতটুকু দূরত্ব রেখে রাস্তা ধরে লিঙ্গপাদুকায়?
 
 মাটির বুকে অজস্র অসুখের অনল
  চরিত্র বুঝিনা একটুকুও,
শুধু সময়কে গোরস্থানে
 পরিচিত হতে দেখেছি।
 
আজ উনুন জ্বলছে সবখানে
 আঁচ পেয়ে -কেঁদে উঠছে
 কিছু নষ্ট পৃথিবীর
ভদ্র,ভাঙ্গা,মূক, বধির, মানবতা।
..................................................
 
--সে-এবং বাদবাকি
 
বৌশাখের ঝড়ে বিবেকের মুঠো ভর্তি
হঠাৎ ছন্দ পতন সময়ের,
 অনাবাদী স্রোতের সাথে নিরব-
 কয়েকটা স্রোত চলে,
আগাম বর্ষা-
উৎসবের শঙ্খরূপে পড়ে রয়।
 
হাতে হাত রেখে-
 প্রতিশ্রুতির জায়গায় জনশূন্য
 দেশের ওপর চাপানো শাসন,
লুকানো আছে ভয়!
প্রতীকের ওপর ভর করে
 ভাঙছে রোদের তাপ।
 নিয়তির মাটি ঝলসে অবাক...!
 
এটা গেলো আমার কথা,
এবার,তোমার কথা কিছু শুনি?
 
কবিতা কি ওদেশে রেখা টানে,
 বিভাজন আর বিভাজিতে?
কবিও তোমাদের ?
নীব ভেঙে ছড়িয়ে দেয় কালি স্ব-শব্দে!
এখনও তোমাদের দেশে
 রোদ উঠে?
 দিন হয়?
এখনও কি, সেখানে অন্ধকার আরো আঁধারযুক্ত?
সব শেষে একটি প্রশ্ন বাঁচিয়ে রেখেছি,
 
জানতে চাইনা...
কেমন আছ ওদেশেতে ?
সবাই কেমন আছে বলতে পারো?
--সে-উনারা, আর বাদবাকি!
..................................................
 
বুঝে উঠতে পারিনি
 
বুঝে উঠতে পারিনি-
কুয়াশার আস্তরণ সরিয়ে
শুকতারার আলোয়, রাত-তারার ছুটি ,
নিশুতির অবয়ব বিলীন ভোরে...
অবয়বের স্বপ্নমাখা চোখের জড়তায় ,
প্রভাতী দোটানায় জড়িয়ে তনু-মন
সে কি শ্রান্তি, নাকি সুখ ?
 
বুঝে উঠতে পারিনি, প্রশ্নের ঘেরাটোপ...
 
শিরা উপশিরায় অবিরাম
 পূর্ব-পুরুষের লোহিত স্রোত,
 পেশীতে বলীয়ান উদ্দীপনা।
আড়মোড়ার আমেজে সময়ের ছুটে চলা
উত্তাপ বাড়ে তপন-কিরণের।
 
বুঝে উঠতে পারিনি-
হাজারো হাতছানি
ভুল-ঠিক লাভ-ক্ষতির আঁকিবুকি
হাতঘড়িতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল ,
ভালো মন্দের অমূলক অনুভূতি,
আনমনে পথ চিনে ঠিক ঘরে ফেরা।
 
বুঝে উঠতে পারিনি...
রাত-সুখের নিত্য-নতুন শপথ...
নিয়ম মেনে ডাহুকের মাঝরাত
 
বুঝে উঠতে পারি না, মনোপ্রশ্ন-
 
অদেখা-অচেনা স্বপ্নেরা যখন ভিড় করে
 উপশিরায় তখনও জাগ্ৰত জীবন ,
তন্দ্রায় কি আশ্চর্য অনুভূতি !
ভোর থেকে দিন হারায় নিশুতি কুয়াশায়
প্রশ্ন করে মন... এখনও জেগে আছি ?
সে কি জীবনে নাকি স্বপ্নে !
..................................................
 
যে কোন ভাবে ঝড় উঠুক
 
মুঠো ভরা আলোয়,
ঝরে যাক কিছু ভয়
অন্ধকার জমে, বুনো ঝোপের মাঝে
 হিংসে গুলো যেমন, জমাট বাঁধে-
নিজেদের মৃত্যুগুলোর পঁচাগন্ধে,
একটু একটু করে
জন্মায় জীবানুর বংশধর ...
আজ সেগুলো বেরিয়ে আসুক।
জীবন্ত ফসিলে খুঁজে পাওয়া মানুষ
ডারউইনের তত্ত্ব প্রমাদের জীবন।
 
প্রকাশ করতে পারিনি ...
তিলতিল করে নিজের নিজেতে গুটিয়ে যাওয়া।
পরিত্যক্ত বুকের শিকড়ে ছড়িয়েছি, বারুদ!
প্রতিদিন নিঃশব্দ বিস্ফোরণে ভেঙে পড়ে ভেতরের পুরো শহর
নলীকাটা স্বরের গা বেয়ে ঝরা রক্তে, অসংখ্য বোঝাপোড়ার পাগড়ি।
 
এটাই আমি... এটাই নিজস্বতা-
যার মাঝে নতুন বিপ্লব জন্মায় না
স্বাধীনতা বন্ধ জানালায় আঁচড় কাটে, আকাশে অবাধ হয়না।
 
হতাশ হলাম তখন!
যখন তোমার মাঝে নতুন কিছু দেখতে চাই!
আশপাশের নিরীহ শান্তিতে যে ক্ষোভ লুকিয়ে আছে -
মুক্তি চাইলাম সেগুলো থেকে।
দেখলাম, কয়েক কোটি-
সন্দেহ জমিয়েছি তোমার তুমিতে!
 
গণতান্ত্রিক কোষাগার জুড়ে
 ক্ষমতার আস্ফালন!
 ভাঙন দিয়ে তোমায় গড়িনি।
দেখতে চাইনি এভাবে!
হয়তো আমি তোমার মাঝে আমি যা পারিনি, আমি যা পারবো না
তাই -দেখতে চেয়েছি বার বার।
যেকোনো ভাবে আজ ঝড় উঠুক।
ভেঙ্গে পড়ুক সকল মান-অভিমান...
..................................................
 
হৃদপিন্ডের শ্যাওলা পাচিঁলে কালো কাক
 
সময়ের পাতা কুড়িয়ে রেখেছি
দেখেছি, দৃশ্য ভরা অদৃশ্যতা!
বুকের পাঁজরে সাদা কালো গাও,
পাশের পরিখায় ডুবে যায়
অতীতের সব বন্ধনী !
চোখের ঘটি থেকে গড়িয়ে পড়ে...
একটু করে সন্ধ্যের অক্ষর
এলোমেলো এঁকে চলি জোনাকির আলোয়।
 
তারাদের সাথে দেখা হয়নি বহুদিন
ছায়াপথের বিষাদে একলা দাঁড়ায়,
সেসময়  দক্ষিণের জানলায়
ঝোড়ো হাওয়ার চিৎকার নিয়ে
হাজির হয় কাল - বৈশাখ!
লিখে রাখা পাতাগুলো পালায় পলকে। তখন,অমাবস্যার অভিযোগে
জমে ওঠে দহনের রাত।
 
 আর,আয়ুরেখা হেঁটে যায় দুঃস্বপ্নে!
 পিছু পিছু ধেয়ে আসে ভয়
 আর কিছু ভয়াবহ সময়।
 
রক্তশূন্য ছোয়াগুলো গভীর হয়
পাঁজরে নখের আঁচড়ে
কিছু কথা খুঁজে বলা হয়নি
বা সেগুলো ভুল দাঁড়ি কমাতে
সার্থক সংলাপ তৈরী করতে পারেনি! মৃতকথা মালা  শ্বাসনালীতেই সমাধী রচেছি
বিশ্বাসের চিতাগুলোও পুড়ে ছায়!
তুমিও পুড়ছো, সেই আজন্ম স্মৃতির মাঝে।
 
বারবার উড়ে আসা স্মৃতির কালো কাক অভিশাপ রেখে যায় হৃদপিণ্ডের শ্যাওলা পাঁচিলে!
তুলে নিয়ে দেখি, কয়েকটায় তুমি!
 আর কয়েকটায় আমি!
..................................................
 
বাগানের সর্বশেষ ফুল
 
দৈবক্রমে দেখা হলো আমাদের গোধূলী বেলায়,
সবকিছু জানার পর একটি গোলাপ,হৃদয়ের
রক্তসেচে বেড়ে -ওঠা, দিলাম তোমায়
তুমিও আমার চোখে চোখ রেখে কী- যে
আবৃত্তি করলে হে আমার প্রিয়তমা ভাষ্যহীন,
ফুটলো শুধু অপূর্ব আভা অন্তরঙ্গ আঙ্গিকে নীরবে।
 
কথা বলি দুজনে, মাঝে মাঝে নেপথ্যে চলা-
চোরা টান; আপাতত বুঝি না কিছুই শুধু চেয়ে
থাকি সবসময় মুগ্ধবেশে তোমার মুখের দিকে।
এভাবে তাকিও না,বলে তোমার কপট শাসনে
উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে শিরায় শিরায় কী মদির।
নীরবতা গান গেয়ে ওঠে,অপরূপ উন্মীলনে।
 
এভাবে কি যাবে দিন- চিরদিন?
ভয়ে ভয়ে চুপিসারে মাঝে মাঝে
সবকিছু তাচ্ছিল্যের ফুঁয়ে বাতাসে উড়িয়ে
কখনো কখনো ভাবি,  তুমি-
আমাকে নিভিয়ে কখনো হঠাৎ,যাবে কি চলে
উজাড় করে বাগান হে আমার সর্বশেষ ফুল?
..................................................
 
অনামিকা
 
প্রিয় অনামিকা-
যুদ্ধের মাঝে বসে লিখছি যখন
হাতে রাইফেল, রক্তে ভেজা জামাশুদ্ধ গা
কাগজ কিংবা কাপড়ে মুড়িয়ে বহন করা কাস্তের মতো
ভারী বুটে মোড়ানো দুটি পা-
নিত্যই দেখি চারপাশে শকুন শেয়ালের লাশের মার্গণ
ছিঁড়ে খাচ্ছে বীর সিপাহির গলিত শবদেহ
বাতাসে বয়ে বেড়ায় উটকো বারুদের বিষ-
ভয়াল নাগের বিষাক্ত ছোবলে
প্রশ্নবিদ্ধ আজ পৃথিবীর যোনিপথ।
অনামিকা-
তোমার মধুর হাসিমাখা সে অধর
আমাকে জিইয়ে রাখে যুদ্ধের রক্তাক্ত মাঠে।
মনের গভীরে গুন গুন করে
পত্রে ভেসে আসা তোমার গানের কলি।
অনামিকা-
হিংস্র নিরবতার মাঝে মাটি ফুঁড়ে
আগামী প্রজন্ম আসতে চাই শকুনের
বিকৃত কলেবরে।
 
বুলেট বিদীর্ণ হৃদয়ের বাগিচায়
তখনো তোমায় দুচোখ জুড়ে দেখতে চায়।
..................................................
 
বৃষ্টিতে ছুঁয় শাখা-প্রশাখা
 
লিলুয়া আজ বড্ড অভিমানে-
স্পর্শ করতে দেইনি, প্রশাখা ?
পাকুড় পাতার পাশ ছুঁয়ে,
মিছে কান্নায়, অভিযোগের হাজার চিঠি
প্রতিনিয়ত বিচারের ডাক বাক্সে।
 
হাতে কাঁকর মাখা টোপর
গায়ে ধোঁয়াটে পোশাক,
তীব্র মেজাজে যাকেই পেয়েছে কাছে
মিশিয়ে দিয়েছে রিমঝিম গণনার
'ফোঁটা মেঘের লালা।
 
ভুলে গেছো হয়তো...
পরী পূর্ণিমাটাও ,এবার নিকটে
 উৎসব উৎযাপনের উপোসি দালাল,
পথ খুঁজে পায়নি।
তাই,অভিমানে গাল ফুলিয়ে চন্দ্র
কাঁদা মেখে গোমড়া মুখে।
 
যদি পারো- এক ঝাঁক জলে ডুব দিয়ে
মেখে দেখো -লিলুয়া বাতাস...
সেই প্রেম তার শৃঙ্খলার বেঁড়িতে
মধু মেখে আছে সৌজন্যে।
 
আজ- বাঙালী কর্তার ভীষণ গর্ব-
ডায়রির পাতায় ছদ্দবেশে ,
লিখে গেছেন কিছু ছন্দ
লুকোনো প্রেম বোঝাবে বলে।
 
কিছু তাল দিও, সুর দিও-
বাতাস আজ শুধুই তোমার পক্ষে,
রাত দিন এক করেছে চেষ্টায় ,
তোমার প্রশাখা স্পর্শ করার আশায়।
..................................................
 
ভালোবাসার পলিতে আত্মবিশ্বাস জন্মাক
  
রক্তের শরীরে বিভীষিকা-
নিরন্তর মহামারি গিলে খাওয়ায় ব্যস্ত
মাতৃস্থানীয় সৌজন্য।
সততার বাণী এখন দাঁতের ফাঁকে আটকে
আটপৌরে-জীবনে পা দিয়ে,ভয়ে -
আঁটোসাঁটো সেই- গিন্নী।
 
মাঝ দুয়ারে অখণ্ড বাতিটা লটকে-
ত্রেতা যুগের কিছু কাল সৈনিক।
নিভাবার শখে নিতান্ত রেষারেষি,
দৃঢ়- দুর্জয় ডুব দিয়েছে
জড়তার কুঁয়োর মাঝে।
 
যুগ অবতারে শ্রেষ্ঠার-
হাঁপিয়ে উঠেছে তলবারি।
মুখে এবার তুই তুকারি করে
যুগের শেষ সন্ধ্যা দিলো নামিয়ে।
 
চলো না এবার- নতুন জন্ম আনি...
 
জলে ঢোক গিলুক ধরা-
শাপান্বীত আচরণ কুরে কুরে
মাটির আভিজাত্য খেয়ে
এতটুকুও বাকি রাখতে চাই না।
 
যদি পারো হাতের দু মুঠোয়
ভালোবাসার পলিতে বীজ বপন করে
সন্ধ্যা বাতিটা জ্বালিয়ো-
তবেই, ওই -গাঢ় কালো রাত
পার করার আত্মবিশ্বাস জন্মাবে।
..................................................
 
এতটুকুই ভুলতে চাওয়া
 
ফাটলের মাঝে নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে দংশিত -
কারো হেয়ালিপনায় , কারো ব্যকা চাহনিতে ,
 তিরস্কার হবার পরই দৃশ্যপটে ভেসে উঠে
 কারণগুলি কাঁচের মতো ঝকঝকে।
 
জগৎসংসারের তাবৎ-
 বলদের তাজ আমার শিরে,
আমাকে আশ্বস্ত করে ঝরা পালকের দল
লুকিয়ে পড়েছে আজ হিসাবের ভাঁজে।
 
পুরানো সেই হারানো খাতা খুঁজে- চোখে পড়ে
পরিযায়ীর ডানায় এখন নতুন পালক
বিন্দু পরিমাণ কোথাও নেই -
আমি কিংবা আমাদের সুবাস।
 
সযত্নে ট্রাংকে তোলা বিবেকবোধ-
 তোলপাড় করে আসে দীর্ঘশ্বাসের নামে।
সাময়িক চলাচল মিথ্যা নয়,
পলির স্তরের উপর স্তর
তার ওপর চরা -
এর উপর গড়ে তোলা আমার বসত
 আজ টলমল...
শুধু এতটুকুই ভুলতে চাওয়া!
..................................................
 
যোগসূত্রের সংবাদ
 
নরম বালিশ থেকে মাথা নামালেই
ভেঙে পড়বে মুন্সিয়ানা
 নিস্তব্ধ চোখে এখন আগুন
রক্তের তেজে নাচে বাজেটের পেন্ডুলাম
 সূর্যটাও হেঁটে গেছে অবেলায়।
 
এখানে নিন্দুক হাজারে হাজার
 ঝাঁপিয়ে পড়েছে বনের সজারু
তমাল এখন কোলে বসে
চর্বচোষ্য আগুনের উষ্ণতা খায়।
সুখের শেষ পাতাটির কোনই চিহ্ন নেই।
 
জীবন যখন এঁটো-বাসি ফেলার চেষ্টায়
প্রতিবেশী ঢের মগ্ন পরচর্চায়
 সংক্ষিপ্ত অক্ষরে সাজায়
আপনি, তুমি, তুই সব একসাথে।
 
সমাজ চাইলেই দেখতে পেতো-
দু'ফোঁটা জল কী করে সাগর বানায়
সে সাগর চোখ মুদে নেচে ওঠে তা ধিন তা ধিন
মেতে ওঠে ধূলীস্মাত খেয়ালে।
 
যদি পারো-
ভয়ের সাথে উপায়টা খুঁজে রেখো
 না হলে অকাল বৃষ্টি হবে
চোখের আড়ালে ভেসে যাবে
এই যোগসূত্রের সমূহ সংবাদ।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.