শওকত আলম'র সনেট
কাজল গোলাপ
কোমল কৃষ্ণ কেশেতে চন্দ্রমল্লিকার গন্ধ উড়ে;
সজীব তরুলতায় শ' শব্দের বেনারসি গড়ে
বাতাসে মেঘে গর্জন স্পন্দন ঢেউয়ের উচ্ছাস।
হাসনা হেনার মালা ভেসে যায় সমুদ্রের গর্ভে;
ঈশান কোনের ফনা ঝড় ঘুর্ণিতে আকাশ দম্ভে
নদীর কুলে আঁচল পেতে মানিকখোঁজে আশায়।
জোসনা ঘেরা তারায় কাজল গোলাপ হাসে রাত্রি;
রঙ্গিলা বৈশাখী স্মৃতি পান্তাভাতে নামে শিলাবৃষ্টি
আকাশ সাংস্কৃতিক ছোঁবলে দোলে পদ্মার ঘাট,
শাড়ী চুঁড়ি একতারা হৃদয় ছোয় রূপালী মাঠ;
বর বঁধুয়া পালকি, ইতিহাস গাঁথা আদি কৃষ্টি।
..................................................
দূর্বার গতিতে ভাঙ্গে যে সমুদ্রের তুফানে পাড়;
সে স্রোতের বিপরীতে মাঝি মাল্লারা চালায় দাঁড়
ঢেউয়ের টানে ভেসে যাওয়াটা মস্তবড় ভুল।
সবুজ পাতার আড়ে অযুত মুক্তা মানিক্য খুঁজি
বেলাভূমিতে বিজয় পিয়াস বাড়ে সঞ্চিত পুঁজি;
স্বর্ণপ্রভাত আনিতে আ-মরণ দেব রক্ত বলি।
অবুজ হৃদয় বুজ করে নেয় নবীনেরা শেখে।
সত্য ন্যায়ের বহিবে ধারা ধরার সামীয়ানায়;
মাথা খোঁটে শয়তানে, মারণ অস্ত্র যারা শানায়
ফুলের বুকে মৌমাছি, বিশ্ব হাসে মিনারে আজান।
..................................................
বুনো হাওয়া উড়ায় ধুলি মেঠো পথ ধরে চলে,
কালো মেঘ চোখাচোখি আকাশে হাজার কাব্য বলে;
ভোমরের গান থামে বৃষ্টির কেতন কাঁদে লাজে।
ভেসে যায় ঘাস খঁড় উড়ায় দেশেদেশে জঞ্জাল,
মাটিতে হলুদ পাতা প্রকৃতি শাসায় বি-অঞ্চল;
ধরা কাঁপায় বিজলী, বুকে বাজায় বিষের বাঁশি।
শুষ্ক চাষের জমিন বীজ তলা নদী খালবিল।
ইরিবরো ক্ষেতে পোঁড়ে জ্বলেফুল শিরিষের শাঁখা
উড়ে ঝড় ঝঞ্ঝা বায়ু ভাঙ্গে রাজ হংসীর পাখা;
হে দুরন্ত বীরাঙ্গনা বৈশাখ খাঁ খাঁ দুপুর বেলা।
..................................................
নির্বাসনে ধুকে ধুকে মারে,শয় কত অবিচার,
যুগযুগে অবতার জাগে প্রতিবাদে হাতিয়ার;
মশির খোঁচায় হাতে পরায় বিষাক্ত লাল রাখি।
বিষ জাল বুনে যায় অনল কবিতার শাখায়,
শিশির কনার মত সে আদর ভালবাসা চায়;
মিষ্টি প্রলেপ বুলিয়ে মাথায় করে না'ক আপন।
তিলে তিলে সাধনায় পোঁড়া মাটির প্রদীপ জ্বলে,
আকাশে জ্যোৎস্না জাগে যুগযুগ দাঁড়িয়ে নিখিল,
পাষাণ জালিম ছেড়ে, নীল ঘোন তারার মিছিল।
দিকেদিকে ত্যাগি তাই মহান কবি ধরণী তলে-
পুষ্পের মাল্য বরণ পোঁড়া চোখে সমাধির পরে।
..................................................
জলাশয় নদনদী ঢেউয়ের নবীন আমেজ,
অঙ্কুর স্বর্ণ লতায় জাগে হৈ চৈ প্রাণের সতেজ;
থৈ থৈ মেঘনা যমুনা ইছামতি বুড়িগঙ্গা ধায়।
কাঁদামাটি জলে ডোবা ঢউ খেলায় বস্তির বাসা,
খাদ্যের শানকি বান ডাকে ওড়ে বলাকার আশা;
শ্যামপুরে সবুজের সমারোহে ভাসে ছোট গাঁও।
বুকের শিশুর দুধ নোলকের বিনিময় আনে,
ছেঁড়া শাড়ী বলাকার গায়ে ধারা চোখ পানে
বাদলের ফোটা পড়ে নীড় হারা পাখি বোনে বাসা
জীবনের চাকা ঘোরে সময়ের হাতে অবিরাম।
..................................................
জোরদার জমিদার ইংরেজ চাবুক শাসায়,
সাওতাল কৃষকের নামে ওঠে খাজনা আদায়;
গো-ছাগ মহিষ-হাতি খুলে কেঁড়ে নিতে চায় ভূমি।
বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে দুমকা,পাকু,বীরভূম,গাঁ,
সাওতাল হাতে খুন বাবু মহেষ লাল দারোগা ;
তীর ধনু তাক করে,জমিদার পুঁজিবাদ কাল।
সিঁধু কানুর ভাষনে কাঁপে রাজ শাসন শোষন।
হাজার হাজার জন চলে কলকাতা অভিমুখে,
বড় লাটকে শুনাবে দুঃখ, সাহসের ফামুখে;
হিংস্র থাবা কেঁড়ে নেয়- সিঁধু রক্তাক্ত, ফাঁসিতে কানু।
..................................................
আঠারো বয়স নাড়ে নরকের ফুলকি ভূতল,
তার এক হাত নুলো, অপর হাতে বাঁধা পিস্তল;
গোলামুখি চারুগর্জে ওঠে ইংরেজ ভারত ছাড়।
ইংরেজ টনক নড়ে ! স্বাধীনতার সুরুজ ভাসে,
আকাশ বাতাস মাটি বন্দে ভারত উল্লাসে হাসে;
সে মৃত্যু দন্ড মাথায়- বিপ্লবী চারু কাঁঠগড়ায়।
শক্ত গড়ে প্রতিরোধ জ্বালাও বীর- ব্রিটিশ ঘাটি,
মুখে হাসি পরে ফাঁসি কাঁদে শ্যামল সবুজ মাটি;
চারু বসু জন্মাবে মা এই দেশে হাজারে হাজার।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস বিজলী, অন্ধকূঁপে ব্রটিশ শকুন।
..................................................
মেঘমালা ধুপছায়া ঘোরে কড়কড় চড়চড় পড়ে ডাক;
ঝিকিমিকি নায়ের বাদাম উড়ে শাইশাই শালিকের ঝাঁক,
দাঁড়ে বসে গায় জারিসারি আল্লাহ্ রাসূল করে নাম জব।
মাঝ গাঙ্গে ভীরুভীরু মন মেঘনা মেঘনা কুয়াশার দোর,
স্বর্ণপাখা নীল ছুইছুই ওঠে নামে তুফানে সুবর্ণা নাও;
সারিসারি শালবন দেখ ভাই দেখা যায় আমাদের গাঁও;
ছায়ানীড় দোলে গাছপালা বাতাসের গতিবেগ বাড়ে জোর।
কতশত ঘুর্ণি কাটে - ঘোল জোরসে রবের নামে উড়ে পাল।
নাও খানি বুড়ুবুড়ু যেই কাঁদোকাঁদো কারো চোখে অশ্রু ঝরে,
আলো ফোঁটে থামে ঝড়বৃষ্টি জাগে বুকে সুরের আলোক ধারা;
তীরে ভেড়ে আমাদের নাও দিকেদিকে ঝিলমিল পড়ে সাড়া;
মহা মিলনের বাঁশি বাজে সবাই যার সেই ফিরছে্
ঘরে।
..................................................
(কবি মতিউর রহমান মল্লিককে)
সাংকৃতিক ঐতিহ্য-স্বনামে রেখাটানে ঝলোকিয়া,
সমুদ্র গর্জনে বাক ফেরে টেকনাফ তেতুলিয়া;
সদা কন্ঠে ছিল তাঁর নাম, হে রহীম রহমান।
উতালা হাওয়া পাকখায় পদ্মা মেঘনার ঢল,
শব্দ নীহারিকা ছুয়ে যায় স্বর্গ মৃত্তিকা অমল;
অগ্রপথিক নব বন্দরে, অশ্রুতে ভেজে স্বজন।
হিম শীতল দেহ বিছানো, শুকতারা শুকরান।
জ্যোতিময় কাফনের ঘ্রাণ সাঁজে স্বহাস্য মল্লিক,
শোক মিছিলের মধ্যমনি দিক বিজয়ী নাবিক;
জান্নতি সুবাস দিও গোরে দোয়া মাগে জনতায়।
..................................................
কেউ দেখেনা, রাখেনা; বেখবর শীলা হয়ে গলে,
সবগুলো স্মৃতিপট,বিস্মৃতি খেয়ালী কথা বলে;
শ্রাবণ রজনীকলা পোঁড়ায় দুটি কাজল আঁখি।
ঘুমহীন তারা গোনে,কক্ষপথে আলো ছুটে পড়ে,
বেনোজ বাসনা কাটে,দেখে পরীর পলোক ঝরে;
রাতের প্রহর বোনে আতশির ব্যাথার বাদল।
বিষণ্ণতা পোঁড়ে ধুপ - চতুর পার্শ্বে সুবাস আনে,
আশির দশক কাটে- সুনামী কাল সাগর বানে;
উদাসী প্রেমের বিষে, সে সাঁজের পিয়ালায় বন্দী।
কোটরা চক্ষু ঝাবসা ছানি ভাঁজপড়া পাঁকা চুল,
চিতায় জ্বলে স্মৃতিরা, দীর্ঘ নিঃশ্বাস বিপন্ন কুল।
..................................................
বিরহী আঁধার ফুল শয্যায় ঝাঁঝাঁ পিজ্ঞির কাঁপে,
অন্ধকারে অলৌকিক নগর হাসে সনেট ধাপে;
শিমুল নাচে, অরণ্য,বিজলী, শিশিরের ঝলোক।
দৃষ্টিসীমার বাহিরে গ্রহ নক্ষত্র উল্কা হাওয়া,
ঝরনা নদী ধ্রুপদ সাগেরর টান নাশশীলা;
প্রবাহিত প্রাকৃতিক ধুষরিত মিছিলের রথ।
পোঁড়াচোখে পোঁড়ামাটি স্বরণীয় শুকতারা ডাকে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একা রাত টুকু আলোর ছায়ায়
আঁকা বাঁকা মহাশূণ্য চেয়ে দেখে চোখের তারায়
আলোর ছায়ায় তনু অণুচ্ছেদ শ্যামল নন্দিনী
জীবনের লেনদেন পৃথিবীর মমতায় আঁকে।
..................................................
জ্যোৎস্না প্লাবিত নীলাভ আসমান তারায় আঁকা,
আজব সাগর মাঝে দুলে ওঠে সফেদ ফেনায়;
আকাশ দিগন্তে পাখিরা ডানা মেলে রঙিন স্বপ্নে।
মেঘগুচ্ছ ছুয়ে যায় ঘাস, শিশিরের সুরজ্ঞনা,
নিলম্বরী পদ্মকুঁড়ি ফোটে, বাতাসও ঘোরে ফেরে;
কথার সুর ধ্বনি ছুটে যায় নদী হয়ে সাগরে।
জগত মাঝে তুমিতো স্মৃতি, নিঝর বিরলপতি।
তোমার মহান আদরে দুলে ওঠে ফুল বাগিচা
মরুর তপ্ত হাওয়ায় জাগে যত নতুন সাথী,
দিকহারা নাবিক খুঁজে পায় ধ্রবতারা,ঠিকানা;
তোমার নির্যাশ আদর স্নেহ ছাড়া কিছু বুঝিনা।
..................................................
পুরানো চালে ভাতে বাড়ে, তবুও কথা শুনছেনা।
বিদ্রোহী জনতা বলছে চালে ক্যাড়ি পোঁকা ধরেছে,
মৌসুমী ইরি বোরো কী আমনের বাম্পার ফলেছে !
জলস্রোতে ঘুরপাক খায় স্বদেশ কাঁদে শপাথে।
পিচ্ছিল রক্তের সিঁড়িতে নীল তুফানে ফোটে ফুল,
সন্ত্রাসী ফন্দির জাল থেকে মুক্তির দোলে নবকুল।
গোল্লায় দেশ বেড়া না দিলে ছাগলে ক্ষেত মাড়াবে।
শিল্প সাহিত্য উন্নয়ন যে,দেশ গড়ার সূচনা।
বহ্নিমান ঝর্ণাকে, বন্দির করো নীল আয়োজন,
দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments