কেন শিল্প করি আর কিভাবে করি_অর্পিতা মন্ডল

 
শিল্প নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় শিল্প কি? সম্পাদক মহাশয় নিজামবাবুর আমাকে প্রশ্ন ছিল -"আমার কাছে শিল্প কি আমি কিভাবে শিল্পকে দেখি বা করি"
 
দুটি প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই মিল কিছু আছে।
কারুশিল্প, চারুশিল্প, ললিতকলা এসব কঠিন শব্দে আমি যাবোনা। আমার কাছে শিল্প হলো একটি ছোট্ট পাথর, যাকে ছুঁড়ে দিলে অনেকদূর চলে যাবে, ধরে থাকলে স্তব্ধ হয়ে যাবে আর পিছনে ফেলে দিলে উধাও হয়ে যাবে। শিল্প হলো সেই কলা যাকে ভালোবেসে করলে মন সুস্থ থাকে, কল্পনাশক্তির বৃদ্ধি ঘটে, সৌন্দর্যবোধ বিবেচনা করার ক্ষমতা জন্মায়, নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়, আবেগ বিচার বিবেচনা করার বোধ জন্মায়, সুষ্ঠ চিন্তা, মননশক্তির বৃদ্ধি ঘটে সাধারণ মানুষদের থেকে একটু আলাদা চিন্তা করার ক্ষমতা প্রকাশ পায়।
 
 শিল্প বা কলার অনেক প্রকারভেদ আছে। আধুনিক ভাষায় বললে স্থাপত্য, ভাস্কর্য, নৃত্য, সঙ্গীত, চিত্ৰকলা, কাব্য, নাটক, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র এরকম বহু দিক আমরা আমাদের সাধারণ জীবনেই দেখতে পাই। কিন্তু শিল্পের সঙ্গে বিজ্ঞানের একটা সংযোগ অনস্বীকার্য। তাই শিল্পচর্চায় সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাকে বিজ্ঞান নাম দিয়েছে 'যুগ' এই যুগ বিভাজনের দ্বারাই আমরা প্রাচীন বর্তমান বা মর্ডানের মধ্যে শিল্প শিল্পীর তফাৎ করতে পারি।
 
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই শিল্পের কাজ কি? যারা শিল্প করে, তাদেরকে প্রায়শই শুনতে হয় - শিল্প করে পেটের ভাত হয় না। ঠিক কথা কিন্তু আদিকাল থেকে, মানুষ যখন ইশারায় কথা বলতো বা  পাতায় পাতায় ঘর্ষণ করে শব্দের সৃষ্টি করতো বা  বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে  শব্দের সুরে নাচতো, তখন এটা তাদের কাছে ছিলো নতুনের খোঁজ। কিন্তু বর্তমান পরিস্হিতিতে এই নতুনের খোঁজকে উৎসাহিত না করে দমিয়ে দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে, ব্যবসা শুরু হয়েছে। যা খুব একটা সুখকর নয়। তাই আমার মনে হয়, শিল্পের প্রধান কাজ হলো মানুষের মনে শক্তি ভালোলাগা বোধের সৃষ্টি সাধন। অন্যের কাছ থেকে বদনাম কুড়িয়ে এনে নিজের ঘরের সাদা ক্যানভাস রাঙিয়ে দেওয়া অথবা রাত জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতে শেখানো, কবিতার জন্ম দেওয়া, হাতের কোনো মুদ্রার অভ্যাস করাঅথবা গিটারের ছয়তারে সুর খোঁজা। অর্থাৎ ভাবকল্প জগতের বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই হলো শিল্পের প্রধান কাজ।
 
এবার আসি সম্পাদকের প্রশ্নে যে 'আমি কেন শিল্প করি বা কিভাবে করি'?
 
উত্তরটা দেওয়া খুব কঠিন কারণ আসলে আমার ভালো লাগে তাই আমি ভালোবেসে শিল্প করি। আমি মূলত সাহিত্য দৃশ্যকলা এই দুটি বিষয়ে আগ্রহী, গান শুনতে ভালো লাগে, নাচ দেখতে ভালো লাগে। মেয়েবেলায় বেশ কয়েকবার মূখাভিনয় বা মাইম করেছি। স্টেজে উঠে নাটক করেছি, কলেজে নাটক পরিচলনাও করেছি কিন্তু সাহিত্য ছবিতে হয়তো সবথেকে বেশি ভালোলাগাবোধ আমার ছিলো বা আছে বা পরবর্তীতে থাকবে। কবিতা আমি ছন্দে লিখি না, আবেগে লিখি। কতটা ভালো বা কতটা খারাপ তার বিচার আমি করিনা কারণ আমার কাছে মনের ভালোলাগাটাই শিল্প।
 
জীবনে চলার পথে সব মানুষই কিছু না কিছুকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু সেই আঁকড়ে ধরার বস্তুটি কি হলে শক্ত করে আঁকড়ে থাকা যায়, সেটার হিসাব অনেকেই মেলাতে পারেন না। হারিয়ে যেতে হয় অকালে। কিন্তু শিল্পকে ভালোবেসে সহজেই বেঁচে থাকা যায়। সবকিছু চলে যায় সময়ের সাথে কিন্তু শিল্প বেঁচে থাকে তাই আজও অজন্তার গুহাচিত্র নিয়ে আলোচনা হয়, মহাভারতের ঘটনা বর্ণিত হয় অথবা বোকা কালিদাসকে সংস্কৃত ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি বা মহাকবি বলা হয়।
 
আমার ছবি আঁকাটাও শুরু হয় এই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকাকে কেন্দ্র করে। 'আনন্দলোক' পত্রিকার পাতা উল্টাতে গিয়ে একবার বিকাশ ভট্টাচার্যকে নিয়ে লেখা একটি আর্টিকাল পড়েছিলাম। তখন আমি অনেক ছোট। উৎসাহিত হয়েছিলাম তাঁকে দেখে। ভেবেছিলাম, ভদ্রলোক হুইল চেয়ারে বসে ছবি যদি আঁকতে পারেন তাহলে আমিও পারি। কারণ সেও সময়ে আমারও সঙ্গী ছিলো চেয়ার কোনো একটি অসুস্থ্যতার কারণে। আমার ছবি আঁকা শুরু সেই সময় থেকেই। আজও তাকে আঁকড়ে পড়ে আছি আমার ছোট্ট ঘরের চার দেওয়ালের মাঝখানে। রং, তুলি, সাদা কাগজ, আমি, সবাই একসাথে থাকি।
 
জীবনে আঘাত অনেক আসবে। সমস্ত আঘাতকে শুধুমাত্র ভুলিয়ে দিতে পারে এই শিল্প। শিল্পকে ভালোবাসলে কখনই সে তোমাকে আঘাত দেবে না, দূরে সরিয়ে দেবে না, কষ্ট দেবে না, ফিরিয়ে দেবে না। আমি তাই হয়তো শিল্প করি আর এভাবেই করি।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com 

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.