শুভময় হোক আগামী_আফরোজা অদিতি

আমরা খ্রিষ্টাব্দ, বঙ্গাব্দ এবং হিজরী সন অনুসারে দিনযাপন করি। আমাদের দিনলিপি বা দিনপঞ্জিকাতে এই তিনটি সনের দিন-রাত্রির হিসাব পাশাপাশি চলে। আমার অনেকদিনের অভ্যেস জানুয়ারি, বৈশাখ ও মহররম মাসের প্রথমদিন আগের দিনের রান্না করা খাবার অল্প পরিমানে মুখে দিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা! জানি এটি একটি সংস্কার তবুও ছোটবেলা থেকে এই সংস্কার মেনে এসেছি এবং আমার বিশ্বাস আগের দিনের রান্না-খাবার বছরের প্রথম দিন (১ জানুয়ারি, ১ বৈশাখ এবং  মহররমের ১ তারিখ) অল্প মুখে দিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে যে প্রার্থনাই করা হোক না কেন ঐ প্রার্থনা পূরণ করেন ঈশ্বর! এই খাবার (ঝাল ছাড়া খাবার টে.চামচের এক চামচ ভাত বা ক্ষীর-পায়েস) খেতে হয় অল্প পরিমানে যেমন মানুষ সকালে চাল-পানি খায় তেমন! কিন্তু এবারের ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের রান্না খাবার খেতে  ভুলে গিয়েছিলাম। তবুও আশা করেছিলাম ভালো যাবে এই ২০২০ সাল! তখনও চীনের হূবেই প্রদেশের উহান শহরের এই (কোভিড-১৯) মহামরী বা অতিমারীর খবর শুনতে পাইনি। এরপরে যখন খবর পেলাম কোভিড-১৯ এসেছে, তার কালোপাখা বিস্তার করে বিশ্বের মানবাকাশ ঢেকে ফেলেছে তখন তো বৈশাখ আর মহররম মাসের প্রথম দিন কেমন করে কেটেছে সেকথা মনেই করতে পারি না! শুধু টেলিভিশনে, কাগজে করোনা সংক্রমণ আর মৃত্যুর মিছিল শোনা আর দেখা এবং ঘরবন্দী থাকা। 
 
প্রথম ধাক্কায় তো চীনে অসুখ বেড়েছে; ইতালি-আমেরিকা বেড়েছে তখনও অনেক রাষ্ট্র এই অসুখ ছড়িয়ে যাবে বা যাচ্ছে মানব-স্পর্শের মাধ্যমে এটি মেনে নেয়নি! কেউ মেনে না নিলেও এটি তার মনমতোই চলেছে! লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে সংক্রমণ এবং মৃত্যুসংখ্যা! গত মার্চে অতিমারী (চধহফবসরপ) ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। তারপর ঘোষণা হয়েছে ‘লকডাউন’,‘সামাজিক দূরত্ব’সহ নানান বিধিনিষেধ। অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ‘লকডাউন’, ‘সামাজিক দূরত্ব’-এর ঘোষণা দিয়েছে। আন্তজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করা হয়েছিল। কেউ কেউ ‘লকডাউন’ বা ‘সামাজিক দূরত্ব’ মেনেছে কেউ মানেনি। অনেকেই বেকার হয়েছে, বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে অনেকেই। সে যাই হোক, মহামারী বা অতিমারী যাই বলা যাক না কেন এতে কষ্ট হয় মানবসম্প্রদায়ের। প্রথম দফার এই করোনাভাইরাসের কারণে  সংক্রমণ-সুস্থ্যতা-মৃত্যুকাহন কমে এলেও শীতের সঙ্গে সঙ্গে এসেছে তার দ্বিতীয় ঢেউ। এবারে আরও কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। কিন্তু মানুষ কী করবে! মানুষ কতদিন আর ঘরবন্দী থাকবে বা থাকতে পারে! তাঁদের পরিবার-পরিজন আছে, ভরণপোষণের তাগিদ আছে, নিজেরও একটু বাইরের হাওয়া গায়ে লাগাতে ইচ্ছা করে, গায়ে লাগাতে ইচ্ছা করে রোদ-বৃষ্টি। গায়ে যদি হাওয়া লাগানো না যায় তবে বিষাদগ্রস্থ হয় মন আর সেই মন অনেক বিজাতীয় ঘটনা ঘাতে পারে! যা ঘটছে এই সময়ে! এই করোনাকালে মানুষ নিষ্ঠুর আচরণ করছে নিজের পরিবারের সঙ্গে, আশেপাশের মানুষের সঙ্গে; বর্তমান সময়ে নারী শিশু নির্যাতন বেড়েছে, বেড়েছে দুর্নীতি! খবরের কাগজের হেডিংও হয়েছে তা “চিনির চেয়েও মিঠা দুর্নীতি” (আ. সময়: ২৩.১২.২০২০)।
 
এই করোনা সময়ে পারিবারিক সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পরেছে বলে মনে হলেও আমরা তা মনে করবো না। ভেঙে পরতে যাচ্ছে বলে মন করে আমরা যাতে ভেঙে না পরে সে বিষয়ে সচেষ্ট হবো। পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ুক তা আমরা চাই না। আমাদের পরিবারকে রক্ষা করতে হবে, আমাদের মা-বাবা-স্বামী-স্ত্রী-সন্তানদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তাঁরা কেউ নারীর শ্লীলতাহানী, খুন, লুঠপাট বা মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত হতে না পারে। পরিবারকে যদি রক্ষা করা যায় তবেই রক্ষা পাবে সমাজ-রাষ্ট্র।
 
এই করোনা-সময়ে অনেক সংগঠন তাঁদের সামর্থ অনুযায়ী অন-লাইনে কিংবা সীমিত আকারে অনুষ্ঠান করছে। সাহিত্যচর্চা হচ্ছে সেখানে। স্কুল-কলেজগুলোতে অন-লাইনে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ ঘরেই নেট ব্যবহার করে লেখাপড়া করতে পারছে শিশুকিশোররা। আমাদের বাংলা একাডেমি বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক; এই অতিমারীর সময়ে বাংলা একাডেমি ২৬.১২.২০২০ তারিখে সাধারণ সভা করেছে; সীমিত আকারে যদিও তবুও ভালো লেগেছে। মড়কের চিন্তা, অসুখের চিন্তা থেকে বের হয়ে একটু বাইরের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আসতে পেরেছে অনেকেই! ওখানে সকলে সরকারি বিধিনিষেধ মেনেই চলেছে। মাস্ক পরেছে, ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রেখেই বসার আয়োজন করা হয়েছিল। নিবন্ধন করা, হাঁটা চলা, চা খাওয়া বসা সবই ‘দূরত’¡ মেনেই হয়েছে। খাবারও দেয়া হয়েছে লাইন দিয়ে। লাইন মেনেছে সকলেই। প্রতিবারের মতো এবারেও লেখকদের  ডায়েরি কলমসহ একটি ব্যাগ দিয়েছে বাংলা একাডেমি। আমাদের বাংলা একাডেমি মন-মননের প্রতীক।
 
এবারের করোনাতে অনেক গুণীজনের বিয়োগ হয়েছে। অনাড়ম্বরভাবে তাঁরা যাত্রা করেছেন সেখানে, যেখান থেকে একদিন এসেছিলেন তাঁরা এই পৃথিবীতে। সবাইকেই যেতে হয়, হবে; কিন্তু কিছু কিছু মানুষ চলে গেলে সেই শূন্যস্থান কখনও পূরণ হয় না, হওয়ার নয়। এমনি বেশকিছু গুণীজনকে নিয়েছে এই কোভিড-১৯। এই করোনাতে এবং পূর্বে যেসব বিখ্যাত-স্বনামখ্যাত প্রণম্যজনেরা চলে গেছেন তাঁদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং তাঁরা যে পদচিহ্ন রেখে গেছেন আমাদের চলার পথের দিশা পাবার জন্য, আমরা যেন সেই দিশাতে চলতে পারি এবং আমাদের অনুজপ্রজন্মকে দিশা দেখাতে সাহায্য করতে পারি এই প্রত্যয় নিয়ে আমরা দাঁড়াব আসন্ন ২০২১ এর প্রথম সিঁড়ির ধাপে।
 
করোনাকালে যত নেতিবাচক কর্ম ঘটছে বা ঘটুক তা বন্ধের চেষ্টা করতে হবে। তাছাড়া নেতিবাচক দিকগুলো বাদ দিয়ে আমরা এই ২০২০ সনে যে ইতিবাচক দিকগুলো পেয়েছি তা রক্ষা করতে সচেষ্ট হলে এই পৃথিবী আর এই পৃথিবীর মানুষ ভালো থাকবে এবং মনে রাখবে। আগামী দিনে কখনও ভুলে যাবো না নারী-শিশুদের অসম্মানের কথা, ভুলে যাবো না দূর্নীতি পরায়ন মানুষের কথা! আমাদের মনে রাখতে হবে এই দুর্যোগ শুধু অশুভই বয়ে আনেনি এনেছে শুভ বার্তাও। এই শুভ-বার্তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের আগামী! আমাদের আগামী সন অর্থাৎ ২০২১ যেন শুভবার্তা বয়ে আনে আমাদের জন্য এই ব্রত হোক আমাদের।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com 

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.