আমি
একজন বাঙালি। এটা আমার জন্য
নিশ্চয়ই গর্বের বিষয়। কারণ জাতি হিসাবে
আমাদের অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস
রয়েছে। সেজন্য আমার জাতিসত্তা নিয়ে
গর্ব না করার মতো
কিছুই নেই। একজন বাঙালি
হওয়ার জন্য জন্মগতভাবে যত
উপাদানের প্রয়োজন স্রষ্টার ইচ্ছাতেই আমার ভেতরে আলহামদুলিল্লাহ
সব উপদান রয়েছে। এটা আমার নৃতাত্ত্বিক
পরিচয়। বাঙালি নৃতাত্ত্বিক পরিচয়টা যেমন আমি বড়
করে দেখি। না চাইতে আমাকে
করতে হবে। কারণ আমার
বিবেক আমাকে আমার বাঙালিত্বের দিকে
টেনে নিবেই। কোনো বাঙালি চাইলে
তার কাজে কর্মে বাঙালি
নয় বলে অস্বীকার করতে
পারে। কিন্তু সেটাও প্রমাণ করা কঠিন হয়ে
যাবে। কারণ জাতিগত যে
উপদান আমার মাঝে ঢুকে
পড়েছে তা কখনোই মুছে
ফেলা সম্ভব নয়।
বাঙালি
যেমন আমার নৃতাত্ত্বিক পরিচয়
তেমনি আমার একটি ধর্মীয়
পরিচয়ও রয়েছে৷ আমার ধর্মীয় পরিচয়
হচ্ছে আমি একজন মুসলিম।
ইসলামকে আমি পেয়েছি জন্মগতভাবেই।
আবার আমি বাঙালি সেটাও
পেয়েছি জন্মগতভাবেই। আমাকে বেড়ে উঠতে হয়েছে
ইসলামী নিয়মকানুনের মধ্যদিয়ে। তেমনি আমাকে বাঙালির ঐতিহ্যকে ধারণ ও পালন
করতে হয়েছে। না চাইলেও যেমন
আমাকে বাঙালির ঐতিহ্যকে বরণ করে নিতে
হয়েছে তেমনি ইসলামের শিক্ষা যতটুকু পেয়েছি,
দেখেছি আমাকে মানতে হয়েছে। এটা একজন মানুষ
হিসেবে আমার বিবেকের তাড়না।
এখন
রাজনৈতিকভাবে হউক আর ধর্ম
পূজারীদের অথবা ধর্ম ব্যাবসায়ীর
মাধ্যমে যেভাবেই হউক বাঙালি মুসলমানদের
মাঝে বাঙালি ও মুসলমান এই
দুটিকে পৃথক করার চেষ্টা
চলছে বহুকাল আগে থেকে। সম্ভবত
বাঙালি মুসলমানের মনে এই চেতনার
উন্মেষ ঘটানো হয়েছে আরো ১০০ বছর
আগে। বাঙালির ঐতিহ্যকে কুসংস্কারে রূপ দিতে কিছু
ধর্মীয় কুসংস্কার মানুষের মনে ঢুকিয়ে এই
দুটিকে আলাদা করে অন্য একটি
চেতনায় মানুষকে বিশ্বাস করাতে একটি গ্রুপ চেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছে। সেকুলারিজম নামক একটি শব্দকে
ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টাও চালিয়েছেন
অনেকেই। তবে যারা সেকুলারিজম
এর সাথে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে
এক দৃষ্টিতে দেখেন আমার মনে হয়
কি পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রই পুরোপুরি
ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পারেনি তবে
পৃথিবীতে অনেক রাষ্ট্রই সেকুলার
থাকতে পারে। পৃথিবীর ক্ষমতাধর বলেন আর উন্নত
রাষ্ট্রের কথা বলেন তারা
পুরোপুরি ধর্ম নিরপেক্ষ হতে
পারেনি। তবে ধর্ম নিরপেক্ষ
রাষ্ট্র গড়তে চাওয়া মনে
হয় খারাপ কিছু নয়। যদি
ধর্ম নিরপেক্ষতার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে পর
ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে রাষ্ট্র একটি
নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবে। এমনটা হলে ধর্ম নিরপেক্ষ
খারাপ কিছু নয়। যদি
সেকুলার আর ধর্ম নিরপেক্ষকে
এক করা হয় তাহলে
মনে হয় না একটি
রাষ্ট্র বেশিদিন সেকুলার থাকতে পারবে। সেকুলার রাষ্ট্র মানেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও ধ্বংস অনিবার্য
হয়ে পড়া।
যদি
প্রশ্ন করা হয় বাঙালি
নাকি মুসলিম এই দুইয়ের মধ্যে
আমি কোনটাকে গুরুত্ব বেশি দিব। তাহলে
আমি বলব গুরুত্বের দিক
দিয়ে আমার কাছে মুসলিম
পরিচয়টা উর্ধ্বে থাকবে। তবে আমার মুসলিমত্বের
মাঝেও আমার বাঙালিত্ব নিহিত
থাকবেই। কারণ আমার মাঝে
অনেক বাঙালি কালচারের সংমিশ্রণ আছে। সেক্ষেত্রে আমার
বাঙালি পরিচয়ও একদম গুরুত্বহীন এমনটা
নয়। এই যেমন গত
১৪ এপ্রিল বাংলা বছরের প্রথম দিন ছিলো। যেটাকে
পহেলা বৈশাখ উৎসব বলা হয়ে
থাকে। বাঙালি জাতির জন্য এই দিনটি
উদযাপনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ
দিন। এই উৎসবেরও কিছু
কালচার ছিলো। যেগুলো বিলুপ্ত হয়ে এখানে ঢুকে
পড়েছে একটি বিশেষ ধর্মীয়
সংস্কৃতি। সে ধর্ম আবার
ইসলাম ধর্ম না হয়ে
অন্য ধর্ম। এজন্যই মূলত বাঙালি মুসলমানদের
কাছে কিছুটা এই উৎসব গুরুত্বহীন
হয়ে পড়েছে। বাঙালি মুসলমানদের কাছে বাঙালিত্বের চেয়ে
মুসলমান পরিচয় কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ
সেই প্রশ্নের উত্তরে বলব,
বাঙালি জাতির
অন্যতম উৎসব পহেলা বৈশাখে
ভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতি ঢুকে পড়েছে। মুসলমানরা
ধর্মীয় সচেতন একটি জাতি। তাই
পরধর্মের সংস্কৃতিকে এরা আলিঙ্গন করে
নিতে পারেনি। যদিও এটি খুবই
স্বাভাবিক বিষয়।
বাঙালি
মুসলমানদের মনে ঠিক বাঙালিত্বের
চেয়ে মুসলমান পরিচয়টা বড় এমনটা বললে
ভুল হবে। বরং ধর্মের
সাথে সাংঘর্ষিক কোনো বাঙালী সংস্কৃতিকে
এরা মানতে পারবে না বলেই ইসলামী
নিয়মকে এরা বেছে নিয়েছে।
পহেলা বৈশাখের দিনটা সকল বাঙালিদের কাছে
যেমন গুরুত্ব বহন করে,
তেমনি
বাঙালি মুসলমানদের জন্যও এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ
ও মহিমান্বিত একটি দিন। কারণ
এবারের পহেলা বৈশাখের সাথে বাঙালি মুসলমানের
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত মাসের
শুরু হয়েছে। এই মাসটি মুসলমানদের
পবিত্র মাহে রমজান মাস।
এখন তাদের কাছে ধর্মীয় নিয়ম
মেনেই সওম পালন করতে
হচ্ছে। সওমকে বাদ দিয়ে তারা
পান্তা ইলিশ খেয়ে পহেলা
বৈশাখ উদযাপন করতে পারছে না।
এখন এর জন্য কি
বাঙালি মুসলমানরা অবাঙালি হয়ে যাবে?
না
এমনটা নয়। বরং এর
মাধ্যমে বাঙালিত্বের পাশাপাশি বাঙালি মুসলমানদের মুসলমান পরিচয়টার গুরুত্বও বহন করে। প্রয়োজনই
মানুষের কাছে গুরুত্বের অগ্রাধিকার
বহন করে। বাঙালি মুসলমানদের
কাছে ধর্ম বিষয়টি বাঙালির
উৎসবের চেয়েও গুরুত্ব বহন করে।
এখন
কথা হলো মুসলমানদের আমরা
কি ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায়
রাখতে পেরেছি কিনা। ধর্ম নিরপেক্ষতা বিষয়কে
ক্লিয়ার করতে আমি এর
সাথে অসাম্প্রদায়িক শব্দটাকে আমি খুব মানানসই
মনে করছি। অর্থাৎ যদি কোনো রাষ্ট্র
অসাম্প্রদায়িক হতে পারে তাহলে
সেই রাষ্ট্র ধর্ম নিরপেক্ষ। ধর্ম
নিরপেক্ষতার সাথে ধর্মহীনতার যদি
যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হয় এটা
চরম একটি ভুল করা
হবে। এই ভুল ব্যাখ্যার
জন্য সাধারণ মানুষ বিগড়ে যেতে পারে। এখন
বাংলাদেশে ধর্ম নিরপেক্ষ বা
অসাম্প্রদায়িক কিনা সেটা একবার
প্রমাণ করা যাক। বাংলাদেশে
যখন রমজান মাস আসে তখন
সাধারণত মুসলমানদের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের
নির্দেশে স্থানীয় সমস্ত খাবারের দোকান দিনের বেলায় বন্ধ করার নির্দেশ
দেওয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য
সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য কিন্তু হিন্দু
হোটেল নামে ব্যানার লাগিয়ে
কিছু খাবারের দোকান খোলা রাখা হয়।
এতে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা রাষ্ট্র বাঁধা দেয় না। তাহলে
বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ
রাষ্ট্র সূচনালগ্ন থেকেই। দ্বিতীয় আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের
প্রতিটি মুসলমান যখন সারাদিন রোজা
রেখে সন্ধ্যার সময় ইফতার করতে
যায় তখন আশেপাশের অনেক
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা মুসলমানদের ইফতারে অংশগ্রহণ করে। কেউ কাউকে
মানা করে না। এর
চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর কি হতে
পারে?
ধর্মীয় পছন্দ অপছন্দের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে
মতের অমিল থাকতে পারে।
তাই বলে এটাকে সাম্প্রদায়িকতা
বলা যায় না। বাংলাদেশ
একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ,
এটি একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ।
পাশাপাশি সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে মুসলমানদের
সংখ্যা এদেশে বেশি বলে এদেশ
ইসলামিক দেশ। পৃথিবীর প্রতিটি
দেশই ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক বিবেচনা করে
জাতিগতভাবে পৃথক হয়ে থাকে।
তবে বাংলাদেশী মুসলমানদের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় দু'
টি পরিচয়ই গর্বের।
এখানে সাম্প্রতিকতার কোনো খুঁত খুঁজে
বের করা সম্পূর্ণ অনুচিত
হবে। বরং দৈনন্দিন জীবনচর্চার
মাঝে কোনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা
দেখা দিলে সেটার সমাধান
করে দেশে শান্তি বিরাজমান
করে জীবনধারণ করে বিশ্বের কাছে
একটি উন্নত জাতি হিসেবে পরিচয়
দেওয়ার জন্য সবাইকে ভূমিকা
রাখতে হবে।
লেখকঃ
এম.
তামজীদ হোসাইন
প্রাবন্ধিক
ও ছড়াকার।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments