শরীফ আহমেদ'র কবিতা

 
নগ্ন আর প্রাকৃত
 
শব্দের প্রাসাদ গড়েছিলাম একদিন তোমার জন্য
তুমি অনেক হাসি খুশি ছিলে সেখানে
প্রাসাদে ছিলো তোমার আমার বিশাল শয়নের ঘর
সেখানে ছিলো মনের অরণ্য ভরা অবিরাম গাছপালা
ঝোপ জঙ্গলের অগোচরে আমরা অনেক নির্জনে
খুঁজে নিতাম আমাদের নগ্ন দেহ
 
একদিন তুমি বললে, বড্ড একা লাগে তোমার
এই শয়নের নির্জন অরণ্যে কিছু মানুষ চাই
একা একা নাকি বাঁচে না মানুষ তাই আমরা আর থাকবো না একা
এই বেডরুমে তাই থাকতে হবে আরও মানুষ
 
তোমার অনেক পরিজন, বন্ধুজন, অনেক বান্ধব
সবাইকে তুমি নিয়ে এলে আমাদের মাঝে
বলেছিলে, ওরা মাঝে মাঝে এসে থাকবে
কিন্তু আমি দেখলাম, ওরা তো থাকেই
খুব বেশি হলে মাঝে মাঝে চলে যায়
 
আমি চেয়েছিলাম স্বপ্নের গভীর অরণ্যের মতো একটা শয়নের জগৎ
শুধু আমার ভুল ছিলো আমি সেই জগতটাকে অনেক বড় করে ফেলেছিলাম
এতোটাই বড় যে- তোমার সব পরিজন, বন্ধুজন আর বান্ধব
সবার জন্য অনেক বেশি জায়গা ছিলো সেখানে
 
এক সময় দেখলাম আমার স্বপ্নের শয়ন জঙ্গল আবাদ করেছে কারা যেনো
সেখানে এখন সভ্যতার ছোঁয়া লেগেছে আর
এখন তুমি সেখানে নগ্ন হতে ভয় পাও কারণ নগ্নতা যে অসভ্যতা
কিন্তু তুমি ভুলে গেলে শয়নের ঘর সেটা যতো বড়ই হোক
সেটা তো শুধু নগ্ন হবার জন্যই
এখানে পরিজন, বন্ধুজন আর অনেক বান্ধব নয়
এখানে থাকবো শুধু তুমি আর আমি
এখানে থাকে শুধু নগ্ন আর প্রাকৃত নর আর নারী
..................................................
 
স্বপ্নের ইস্টিশন
 
কতো দূর সেই স্বপ্নের ইস্টিশন আমার
কতোটা দূরে রয়েছো তুমি প্রিয়
আর কতোটা পথ দৌঁড়ালে আমি
পাবো তোমার দেখা
কী নামে গাইলে তুমি
শুনবে প্রাণের গান ?
 
কতোটা দূর গেলে আর
পাইব তোমার ছোঁয়া
আর কতো দেরি করে
ধরবো তোমার হাত
কতোটা অপেক্ষায় হবে
অবশেষে তোমাকে পাওয়া ?
 
ভীষণ প্রেমের সময় এখন
ভীষণ ভালোবাসি আমি প্রিয়া
হৃদয় এখন রয়েছে প্রেমের মতো
পৃথিবীটা হয়েছে ভালোবাসার গভীর নিশি
মনের গহীনে প্রণয়ের বৃষ্টি এখন
 
এই দিন এই বিরহ বেলা
প্রতীক্ষায় সাজানো অনেক মেলা
শ্রাবণের চন্দ্রিমা তুমি ছিলে মন জুড়ে
বসন্ত বাসর আমার আর কতো দূর
আর কতোটা পদচিহ্ন আমার
ভিজবে চোখের জলে
তোমাকে পাওয়ার আগে ?
..................................................
 
তোমার স্পর্শ জুড়ে
 
আমি একদিন
তোমার আকাশ জুড়ে ঝিলিমিলি তারা হবো দেখো
 
আমি এক রাতে
আগুন হবো তোমার স্পর্শ জুড়ে
হবো উষ্ণতার স্বাদ
রমণের তাপে তোমাকে করবো মাতাল
গহীন রজনীর আশ্চর্য শব্দ হয়ে
সুরের মুর্ছনা জাগাবো তোমার শুভ্র উদাম শরীরে
 
আমি এক নির্জন দুপুরে
তোমার বুকের কম্পন হবো দেখো
আমার ক্ষিপ্র হাত
চঞ্চল হয়ে ঘুরবে
তোমার শরীরের পাহাড়, ঝর্না আর ঝোপ জঙ্গল জুড়ে
 
গভীর নিশিতে প্রিয়া
কোনও একটি দিন
যদি না হয় কথা তোমার সাথে
তবে কিভাবে বাঁচবে এই মন ?
এই মন
রয়েছে যখন
তোমার কাছে পড়ে
তখন প্রতিটি দিন
কিভাবে থাকবো
তোমাকে না ভেবে বলো ?
..................................................
 
যন্ত্রণা
 
বিকট ব্যথার দাপটে যখন
দুই চোখে শ্রাবণের ঝর্না
পিপাসা তখন গভীর তমসা
তমালের ডালে ডিগবাজি খায়
এখন আমার ঘুম
এই ঘুম আসে এই আবার চলে যায়
এই ঘুম এই জাগরণ
শ্রাবণ গহীন ঘুমগুলো দিশেহারা
 
বিপন্ন মনের হৃৎপিন্ডের ভেতর
সুইসাইড করেছে ঘুমগুলো
তারপর কাহারা যেনো আজ
শ্রাবণের প্লাবনে ধুয়ে ধুয়ে
সাফ করেছে নিদ্রার লাশগুলো
শুধু আমি নই
আজ অনেক অনেক চোখে
নেমেছে শ্রাবণ
মনগুলো হয়েছে লাশ
 
মনের মস্তিষ্কে আজ ঢুকে পড়েছে
অগণিত যন্ত্রণার বীজ
হৃদয়টা আজ মাইগ্রেনের ব্যথায় হয়েছে অস্থির
আমি এখন থেমে আছি
ভীষণ করুণ পথে
ভীষণ নিষ্ঠুর কাটাগুলো
মেলে আছে কঠিন দাঁত
..................................................
 
হায় স্বাধীনতা
 
আমি ভাষণ শুনেছি
আমি স্বাধীনতার ঘোষনা শুনেছি
আমি যুদ্ধে গিয়েছি
যুদ্ধ করেছি
রক্তে ভেসেছি
বিজয় এনেছি
স্বাধীনতা এনেছি
 
কিন্তু -
মুক্তি পাইনি
শান্তি পাইনি
স্বাধীনতা দেখিনি চোখে
দেখেছি শুধু ভীষণ মরণ
 
সোনার বাংলার স্বপ্ন নিয়ে
পেয়েছি অনেক প্রতারণা
পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে
সয়েছি আমি
লৌহ দন্ডের কঠিন পীড়ন
 
ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সাথে
পনের লাখ বার মরেছি আমি
পনের লাখ মানুষের সাথে
কয়লার মতো কালো হয়েছে পুড়ে পুড়ে
আমাদের স্বপ্ন দেখার মন
 
এই স্বাধীনতা হায়
কী পাবো তবে ?
স্বাধীনতা যদি হয়
এমন কৃষ্ণ করুণ!
..................................................
 
উৎকৃষ্ট গাধারা
 
উৎকৃষ্ট সব গাধারা আজ
গড়েছে মানব সমাজ
 
বুঝে না রাজনীতি
বুঝে না ধর্ম
সুখের আশায় শুধু
ধরেছে আজব বাজি
 
অন্ধ সবাই তাই
হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে
সারাটা জনম ধরে
চিনতে পারে না হাতি
 
নিজের নিঃশ্বাসের বাতাসে
বার বার শুধু
নিভায় জীবনের বাতি
 
গুরুরা সব গরুর মতো
খাচ্ছে বিশুদ্ধ ঘাস
গরুর রাখাল
সেজেছে গুরু
গুরুর ঘরে আজ
তাহাদের বাস
 
মানুষ আছে কি ?
মানুষ ছিলো যারা
তারা সবাই
পরেছে করুণ ফাঁস
..................................................
 
করুণ রক্তের রং
 
জীবনের খাতায় আঁকা ভীষণ দরিয়াটা
পার হতে হবে তাই
একটা কাগজের নৌকা লাগবে আমার
কিংবা প্লাস্টিকের জাহাজ
সোনার টাইটানিক হলে আরও ভালো হয়
কিন্তু ভয় লাগে
টাইটানিক মাত্রই যে
ডুবে যাওয়া ক্ষণিকের উৎসব
আমি তো ডুবতে চাই না
আমি ভাসতে চাই
তাই
একটা কাগজের নৌকাই চাই
 
মনের পাতায় লেখা ভীষণ কাহিনীটা
শেষ করতে হবে
তাই
একটা লোহার কলম চাই
কিংবা অন্য কোনও ধাতু হলেও চলবে
তবে কখনও
স্বর্ণ বা প্লাটিনাম নয়
কারণ ঝকঝকে স্বর্ণের সাথে মিশে থাকে
অনেক দম্পতির করুণ রক্তের দাগ
সোনার রংয়ে কেনা হয়
প্রতিদিন নিয়তির ফাঁস
তাই
একটা লোহার কলমই আমার চাই
..................................................
 
হিমাচলের মেঘ
 
আমার কিছু মেঘ ছিলো হিমাচলের হিমরাজ্য থেকে আনা
তুলার মতো ভীষণ সাদা মেঘগুলো আমি
ডিপফ্রিজে রেখেছিলাম যতœ করে
বাস্পের ধোঁয়া ওঠা হিম ঠান্ডার হিমালয়ে
বৃষ্টি জলের জমাট বিন্দু ছিলো তার সাথে
 
তারপর একদিন ভাবলাম
মেঘগুলোকে ফিরিয়ে দিয়ে আসি মেঘের দেশে
তারপর তোমাকে নিয়ে যাচ্ছিলাম
নীলগিরির নীল উচ্চতার পথে
যেখানে মেঘ আর বৃষ্টিতে একদিন
এক সাথে ভিজেছিলো আমাদের প্রেম
 
আমরা মেঘগুলোকে নিচ্ছিলাম অনেক যতœ করে
ইনসুলেটিং বক্সে করে
যেনো গলে না যায়
যেভাবে পদ্মার পার থেকে
বরফ দেওয়া ইলিশ মাছ আসে আমাদের বাজারে
 
কারণ আমরা বরফ খুব ভালোবাসি
বরফের বাস্প ওঠা মেঘ দেখলে
আমাদের মনের সব মেঘ কেটে যায়
আমরা মেঘগুলো এনেছিলাম হিমাচল থেকে
এখন নীলগিরির সুউচ্চ সমতলে
মেঘগুলো রেখে যাবো ভালোবেসে তোমাদের জন্য
যারা কখনও শীতল শান্তিতে ভরা
হিমাচলের হিমরাজ্য দেখোনি
তারা এই মেঘগুলোর সাথে কাটাবে অনেক শীতল সময়

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com 

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.