রোখসানা ইয়াসমিন মণি'র কবিতা
কষ্ট পেলে আমি জল হয়ে যাই
কেন তুমি ডেকেছিলে মরণ
কেন তুমি চেয়েছিলে বাঁচার সাধ?
কেন তুমি বিচ্ছেদের বিবশ নদী
করেছ পীড়ন,
কেন তুমি লবঙ্গে খুঁজেছিলে দারু
-চিনির স্বাদ?
তবুও হৃদয় অক্ষত রেখে চুমো খাই
বৃক্ষের বুকের ভেতর,
বহু অসুখ আছে আমার,জানি আমি
তারপরও সুগন্ধী ফুল ফোটার মত
ফুটে যাই তরতর,
আমার দু'চোখে দুঃখের যানজট
জ্যাম লেগে ঢলে গেছে পশ্চিমে,
কাঁদিনি কখনও,তবু একফোঁটা জল
আমি তোমার জন্য রেখেছি আঙুলে।
তুমি আজ ভীষণ একা আমারই মত
আমিও আজ ভীষণ একা তোমার মত,
বিকীর্ণ লাটিম অনুবাদ করেছে কত কিছু
বিকীর্ণ লাটিম বলে গেছে আমরা আজও
অবুঝ শিশু।
আজ আকাশ আকাশকে কাছে ডাকে না
আজ বাতাস বাতাসকে কাছে টানে না,
পৃথিবীটা যেন তোমার চুরুটের মত,
পৃথিবী হয়ে গেলো নিশ্চুপের মত,
পৃথিবী সরে গেলো ধোঁয়ার মত।
..................................................
চাঁদ জুয়াড়ী
যদি পৃথিবীতে ঝরে জোছনার ফুল
ছুঁয়ে যায় প্রিয় যেন তোমার আঙুল,
যে আঙ্গুল লিখে যায় শতকের গান
চাঁদের আলোতে তার ভরে যাক প্রাণ।
কাব্যের মেলা বসাও যে আঙুল জুড়ে
মথিত হৃদয় কাঁপে কামনা শৃগারে,
কতো বাসনা লুকিয়ে হই যে ব্যাকুল
যৌবন বেদনা এসে ভেঙে চলে কূল।
বসন্তের গন্ধ চুমে তোমার কবিতা
কবরীর অশ্রুজলে ফোটাও বিথীকা,
বনোবধূ হয়ে যাই হেঁয়ালীর ভীড়ে
স্বপ্ন ভাঙ্গাও যখন উদাসীন তীরে।
লিখে যাবে শতবর্ষ,কতো কতো সুর
হয়তো কবিতায় পাবে আরো কতো হুর,
তারাদের সব আলো যদি যায় নিভে
তবুও তুমিই রবে এ বুকে নীরবে।
বিহঙ্গ হবে আমার কিংসুক বসন
অনামিকায় সঁপেছি দুরন্ত যৌবন,
দখিন দূয়ারী মন তোমাকেই খুঁজে
যখন আঙুলে এসে চাঁদ চোখ বুজে।
..................................................
জ্বরশেষের প্রলাপ
পাঁচদিন জ্বরশেষে উঠে বসেছি।
জ্বরের বিছানা ছেড়ে জানালায়
রেখেছি চোখ।অনেক দিনপর
আলো দেখা,আকাশ দেখা,যে
চোখ বিশ্বের খবর প্রতিদিন নিত
পড়ে,আজ জ্বরশেষে দেখি অনেক
খবর চাপা পড়ে গেছে কুটিল চক্রে।
খবর আসে নাই ছাত্রলীগের ছেলে
গুলোর ফসল তোলার গান,নাই খবর
তিলোত্তমা রমণী যে হিন্দু হয়েও
রোজাদারদের জন্য করে ইফতারের
আয়োজন।খবর নেই গণস্বাস্থ্যের বানানো
কিট কখন আমার মত রুগী পাবে সস্তায়,
স্বাস্থ্যখাতের ভোঁদেল কীটেরা বেখবর করে
ডঃ জাফরুল্লাহর মানবীয় সেবা।বেখবর হয়
সব নষ্ট রাজনীতির চর্চায়।তবুও আমি দাঁড়াই
জ্বরের ঘোর কেটে জানালায়।আমারই বা
খবর রেখেছে কে?আমি করেছি লড়াই জীবানুর
বিরুদ্ধে। যখন ওষুধ দুর্মূল্য তখন বেঁচে ওঠে
আমার মত মানুষ সস্তা গুজবের টোটকায়।
টোটকা খেয়ে বেঁচে উঠেছি,বেঁচে উঠে শষ্য
শ্যামলী ক্ষেত,ছাত্রলীগের কাস্তের জোরে।
বেঁচে ওঠে রোজদারী মানুষ তিলোত্তমার
ইফতারিতে।যখন মুসলিমের হাত হিন্দুর হাতে
তৈরী করা খাবারে ভাঙ্গে সিয়াম,তখন
কাঠমোল্লার ফতোয়া বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় ক্ষুধার্ত পেট।
আজহারী,মোনেম,সোনেমের বুলি আজ ফাঁকা।
কোথায়! কোথায় আজ ধর্ম, যেখানে হিন্দু, মুসলিমের
ক্ষুধার বর্ম এক হয়ে বেঁধেছে সাম্যের চাকা!
..................................................
অপরিচিত
সূর্যের উল্টোদিকে দাঁড়ালেই
আমার চোখের ছায়া গিলে
নেয় ব্রহ্মাণ্ডের চোখ,জীবন
মৃত্যুর জলতেষ্টায় সূর্যের লাল
লাল হৃদপিণ্ডে পিঠ নামিয়ে
আমার আমিকে খুঁজি বুকের
কার্ণিশে। সময় জমে যায়
কঠিন শিলার মত,হাওয়ায় পাল
নেই,জল নিয়ে ওড়ে না মেঘ;
নিঃশ্বাসের কণ্ঠায় বেখাপ্পা
উজ্জ্বলতায় ঝুলে আছে
আমার শীর্ণ তাঁবু।তাঁবুর তালুতে
ননীর মত বিকেল নুয়ে পড়ে,ননীর
বিকেলে আমাকে খুঁজতে বেরুলেই
এই জীবন,এই মৃত্যুর জলতেষ্টায়
আমার ছায়ারা অপরিচিত কপাটে
মিলিয়ে যায়।
..................................................
এপ্রিলের বৃষ্টি
আজ কত বৃষ্টি ঝরে গেছে
এপ্রিলের রাতের নিচে নেমে
আসা বৃষ্টি কি যেনো ওড়ালো,
প্রতিটি ফোঁটা গোলগাল পৃথিবীর
মত;বুদবুদের ফেনা ছেড়ে ভেসে
গেলো আত্মার গোড়ালি কেটে,
মুমূর্ষু জ্যোৎস্নার দাবদাহ পোড়াতে।
মরা পাখির চোখের মত চাঁদের চোখ
জেগে থাকে কেন?কিসের রক্তে
ভেজায় তার নীল আঁচল?কেন কিছু
ভুল মুছে গেলে বৃষ্টি হয় শীতল হৃদয়?
এপ্রিলের বৃষ্টি বুঝি এমনই হয়,
ঝিরিঝিরি ছাতুকণায় উড়ে চলে
বেলবটম ঘুড়ি,ঘুড়ি উড়াল দেয়
ডিমের মত পৃথিবী ওপর;
কমলালেবুর পৃথিবীর ওপর;
ডিমের মত পৃথিবী জানে
কমলালেবুর পৃথিবী জানে,
ঘুড়ির উড়াল ডানা আমাকে খুলে
বাঁচার গল্প লিখে চলে আমার চুলে।
..................................................
কাঁচের শহরে কাফেলা জীবন
এই বন্দীশিবিরে গুচ্ছগুচ্ছ দিনের শেষে
হাঁড়ের ভেতর বয়ে বেড়াচ্ছি লাল রোদ
এক সময় অমল নিঃশ্বাসে রূপান্তর হত
আশ্চর্য গোলাপের মত আমার স্বাধীকার ;
আমার আনন্দ বাজাতো সুরের সিম্ফোনি
মানুষ আর প্রকৃতি সেই স্পর্শে তরুণ হতো,
মানুষের তারুণ্যের ভেতর জেগে ওঠে দেশ
মানুষের তারুণ্যে শত শত চোখ দেখে নদী
দেশের বুকে বয়ে নিত উর্বর জলের রুহু,
সেই রুহুতে প্রাণ পেয়ে মাটি ফলাত ভেষজ।
জেগে ওঠা দেশের ঘ্রাণে জেগে ওঠে নদী
কিশোরী নারীর মত পাললিক বুক নিয়ে
দাঁড়ায় সবুজ শষ্যের বীজের ভেতর।বীজের
বুকে কীট বাসাবাড়ি করে,পাললিক বুকেও
আঁচড় কাটে নখর দৈত্য,নদী মরে যায়,
নদী মরে গেলে দেশ মরে যায়,ভূতের কাণ্ড
নিয়ে জেগে ওঠে পৃথিবী। তপ্ত,খাঁ -তৃষ্ণায়
পৃথিবীর বুক ফেটে গেলে আসে করোনা
মানুষের নখর চাহিদা ঢোকাতে খোঁয়াড়ে।
মানুষ খোঁয়াড়ে চলে গেলে নদী জেগে ওঠে
নদীর রুহু জলে পার ভাঙে পাললিক ঢেউ
ছিন্নমূল গাছেদের ডালে ডাকে উদ্বাস্তু কোকিল
কচিপাতা আমলকি বনে অশব্দেরা শব্দ তোলে।
কীটের কামড়ে জেগে ওঠা তরুণ চোখে ভয়ের
লালরোদ কানামাছি খেলে।এখন ঘরের ভেতর
মসজিদ,ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ রবে পাঁচক
মুখেরা, ঘরের ভেতর মন্দির,গীর্জা,রাম,যীশুর
স্তূতীতে উপাসনাগৃহেও ঈশ্বর,যীশু আসে না।
সবাইকে একঘরে রেখে দিয়ে করোনা,পৃথিবীতে
প্রভূত্ব করছে।করোনাই কি তবে ঈশ্বরের প্রতিভূ?
তাহলে হে ঈশ্বর!আমাকে মুক্তি দাও;লালরোদের দিনশেষে এই কাঁচের শহরের কাফেলা জীবন থেকে।
..................................................
ভুলনাম
আমার শিয়রে রাত এলে পরে
অকারণ কে যেন মাতলামি করে
আমার শিয়রে নাচে তারার ঘুঙুর
চোখ তার ঝুমঝুমি মায়ার নুপূর,
আমাকে কে যেন আলগোছে ডাকে
এই বিষণ্ণ চুপচাপ কালবোশেখে
কে ডাকে বুকের ভেতর ঘুমঘুম ফল
হাতভরে ছেঁকে আনে মহুয়ার বোতল,
কে যেন কালোখোঁপায় বসে ভুল করে
ভুলনামে ভালবেসে একদিন চিনেছি যারে।
..................................................
মৃত্যুরে ভয় করে কোন শালায়?
কোথায় রেখেছিস চালের বস্তা
জীবন কি এতই সস্তা
হারামখোরের দল?
ভেবেছিস বস্তা লুকিয়ে পাহাড়
বানাবি ক্ষুধার্ত পাঁজরে
ঠেকিয়ে বন্দুকের নল?
ওরে জোচ্চোর যখন ক্ষুধার রঙ
রক্তের মত টগবগিয়ে ফোটে,
তখন এই পৃথিবীর পানশালা
যে যায় না মাপা নোটে,
চুলার আগুন পেটে এসে
যখন দুন্দুভিটা বাজায়,
তখন নাঙা ভুখার দ্রোহের
আগুন থামাবে কোন শালায়!
এখনও সময় আছে গুদাম খুলে
নিরন্নের থালা চালে ডালে ভরে দে
নইলে ক্ষুধা চেনে না করোনা টরোনা,
গদি থেকে নামাবে ক্ষুধার্ত জনতা যে,
কোথায় রেখেছিস চালের বস্তা
বলে দে মাদারচোতের দল,
ত্রাণ দে নইলে শসার মত ছিলে খাবে
তোদের প্রাণ নাঙাভুখার দল।
অনেক খেয়েছিস এবার ক্ষ্যান্ত দে
তোদের ভালর জন্য বলছি,
পেটে আগুন নিয়ে লিখছি কবিতা
জন্ম থেকে জ্বলছি,
"জন্ম
থেকেই জ্বলছি মাগো,
আর কতকাল বল সইবো
এবার আদেশ করো মা,আদেশ করো
ভাঙনের দারুণ খেলা খেলবো"
আমার চারিদিকে ভাঙন
আমার চারিদিকে কম্পন
আমার বাঙাল পেট যে
ভাতের কাঙাল
ক্ষুধার জঞ্জালে ধুঁকছে,
পেটের ভেতর ঈস্রাফিল
বসে কেয়ামতের শিঙ্গা ফুঁকছে।
আমি চারিদিকে ডাক শুনি
আমি চারিদিকে হাঁক শুনি
আমি ডাক শুনি ক্ষুধার্তের
আমি হাঁক শুনি শিশু বলছে
ভাত দে মা, দিনরাতের।
দিনরাতেরা কই?
ক্ষুধাতো শুনতে চায় না
লকডাউনের নিয়ম,
ক্ষুধাতো পথ চেয়ে থাকে
চালের ডালা হাতে নিয়ে
আসবে কখন পিয়ন?
পিয়ন নেই পিয়ন নেই
ওরা মরে গেছে
চালের ডালা হাতে নিয়ে
ওরা গুদামে লুকিয়েছে,
গুদাম কই,কোথায় সেই গুদাম?
যখন পেটের গুদামে আগুন
তখন শালা তোদের রক্তে
করবো রাক্ষসী ক্ষুধাকে খুন,
টাকা জমাবি,কোথায় রাখবি গদি
এই বাংলার মাটিতে?
সেতো হবে না বাপু এখন
করোনার জন্মভূমিতে?
করোনায় পুড়ছে বিশ্ব
করোনায় যখন নিস্ব সবে
তখন চাল, ডাল,নুন,তেলে
ভরেছে তোদের ভাণ্ড,
অথচ কি কাণ্ড!
তোদের চুরি দেখে
মৃত্যুর মিছিলে শামিল
হওয়া পৃথিবীও লজ্জাক্রান্ত।
শুধু তোদেরই নেই লজ্জা
কে খেয়েছে তোদের বিবেক
কে খেয়েছে বল মজ্জা?
ভেবেছিস পার পাবিরে
মোটেও না
যে জনতার ক্ষুধার পেটে
একটি দানাও জোটে না
সে জনতা তখন কী আর
রাজা চেনে? খাজা চেনে?
মোটেও না,
সে জনতা তখন যে আর
ভয় করে না, করোনা
এই জনতা মরণকেও
কুচপরোয়া করে না,
যে জনতা মরে যায় ক্ষুধায়
সে জনতাকে মরণের ভয়
দেখাবে কোন শালায়?
যে জনতা মরে যায় ক্ষুধায়
সে জনতাকে মরনের ভয়
দেখাবে করোনায়?
হা হা হা হা অট্টহাসিতে যাচ্ছি ফেটে
রাজার সৌধ ভেঙে যাবে,লিখে গেল
করোনা, ভুখা নাঙার ললাটে,
পেটের ক্ষিধে করেছে যে বহন,
মরার আগেই সে মৃত্যুকে করে বরণ।
আজ পেটের ক্ষুধার দাবী,,
ত্রাণ দে, নইলে প্রাণ দে
"ললাটের লিখন না যায় খন্ডন"
শেষে যে পস্তাবি।
..................................................
নলখাগড়া চোখ
করোনার পরে যদি আবার বেঁচে যাই
নলখাগড়া চোখে যেন তোমাকে পাই,
হয়ত এখন আমরা খুব এলোমেলো
জানলার শিক কেটে ব্যাধিরা দাঁড়াল,
হয়ত ভয়াল মৃত্যুরা কেড়েছে আবেগ
হো হো করে হাসে নাযে দলবাঁধা মেঘ,
উথাল মন শোনে না পাথালের ডাক
গোলাপী ফুলের ঘ্রাণ পায় নাতো নাক।
হয়ত এখন আমরা কাউকেই শুনি না
ভেতরে একা থাকা নিজেদের চিনি না,
আমাদের বুকের শব্দে শবের মিছিল
ভয় আর গোঙানির ব্যধি দিয়েছে খিল,
তবুও আমরা সোনালু ফুলে চকিত হই
রঙিন চিবুকে আকাশ ডেকে তারাতে রই,
যখন কালোচুলের ঢেউ শস্যের ক্ষেতে
শোক ফেলে আশা ছোটে মৃত্যু তাড়াতে।
হয়ত বয়সী পৃথিবীর মুখ আবার ভেঙে
চোখগেল পাখির দলে মিলাবে ফিঙে,
তখন এই নলখাগড়া চোখে একটি নদী
ঢেউয়ের খেলা হবে ফিরে দেখো যদি!
..................................................
বন্দনা
কুমিল্লা লকডাউন।
শহর মৃত।আত্মারা আবছায়ায় দাঁড়িয়ে।
আমরা ঘুড়ি হতে চলেছি
আমরা ঘুড়ি হতে চলেছি
আমরা উড়বো,উড়বো,হে আত্মারা
আমাদের চোখ বন্ধ করে দিয়ে যাও
হে পৃথিবীর অগণিত মানুষ,
শুনতে পাচ্ছো আমাদের চিৎকার?
আমরা কি শুনতে পাচ্ছি তোমাদের?
আজ আমি চলে গেছি আমার হতে
আজ তুমি চলে গেছো তোমার হতে
আজ আপনি চলে গেছেন আপনার হতে
আজ আপনারা ছেড়ে গেছেন, আপনাদের।
আজ সবাই একা,আজ আমি একা,তুমি একা
তোমরা একা,আপনারাও।আজ আমরা কাউকে শুনতে পাচ্ছি না,দেখতে পাচ্ছি না,
এ্যাই চুপ,চুপ,কে? কে ওখানে?ও করোনা তুমি?
চলেই এলে তাহলে? এত কষ্ট করতে এলে কেন?
আমরাই তোমাকে ডেকে নিতাম।
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা করোনা!
তোমাকে এমন ভালবেসেছে কে কবে?
তোমার জন্য কোয়ারেন্টাইন,আইসোলেশন,আর লকডাউনের পৃথিবীতে কি হইচই?
এত হইচই যে পৃথিবী আজ নিস্তব্ধ হয়েই তোমাকে ভালবাসছে,।
তোমার নৈবদ্যে দিয়েছি মানুষকে,তুলে নাও যত খুশি
নিয়ে নাও,কুমিল্লা থেকে বাংলাদেশ
নিয়ে নাও দিল্লি থেকে ইন্ডিয়া
নিয়ে নাও ইসলামাবাদ থেকে পাকিস্তান
নিয়ে নাও লন্ডন,ইতালি, আমেরিকা,স্পেন
নিয়ে নাও,এশিয়া থেকে এন্টার্টিকা
শুধু আমার প্রেমিককে নিও না।একমাত্র পৃথিবীতে তাকে বাঁচিয়ে রেখো।
আমাকে হারানোর শোকে তার বুকের পাঁজর ঝর্ণা হতে
দাও ,
তারপর বুঝুক প্রেমহীন হয়ে গেলেই পৃথিবী করোনার হয়ে যায়,
..................................................
কষ্ট পেলে আমি জল হয়ে যাই
কেন তুমি ডেকেছিলে মরণ
কেন তুমি চেয়েছিলে বাঁচার সাধ?
কেন তুমি বিচ্ছেদের বিবশ নদী
করেছ পীড়ন,
কেন তুমি লবঙ্গে খুঁজেছিলে দারু
-চিনির স্বাদ?
তবুও হৃদয় অক্ষত রেখে চুমো খাই
বৃক্ষের বুকের ভেতর,
বহু অসুখ আছে আমার,জানি আমি
তারপরও সুগন্ধী ফুল ফোটার মত
ফুটে যাই তরতর,
আমার দু'চোখে দুঃখের যানজট
জ্যাম লেগে ঢলে গেছে পশ্চিমে,
কাঁদিনি কখনও,তবু একফোঁটা জল
আমি তোমার জন্য রেখেছি আঙুলে।
তুমি আজ ভীষণ একা আমারই মত
আমিও আজ ভীষণ একা তোমার মত,
বিকীর্ণ লাটিম অনুবাদ করেছে কত কিছু
বিকীর্ণ লাটিম বলে গেছে আমরা আজও
অবুঝ শিশু।
আজ আকাশ আকাশকে কাছে ডাকে না
আজ বাতাস বাতাসকে কাছে টানে না,
পৃথিবীটা যেন তোমার চুরুটের মত,
পৃথিবী হয়ে গেলো নিশ্চুপের মত,
পৃথিবী সরে গেলো ধোঁয়ার মত।
কেন তুমি চেয়েছিলে বাঁচার সাধ?
করেছ পীড়ন,
-চিনির স্বাদ?
বৃক্ষের বুকের ভেতর,
তারপরও সুগন্ধী ফুল ফোটার মত
ফুটে যাই তরতর,
জ্যাম লেগে ঢলে গেছে পশ্চিমে,
আমি তোমার জন্য রেখেছি আঙুলে।
আমিও আজ ভীষণ একা তোমার মত,
বিকীর্ণ লাটিম বলে গেছে আমরা আজও
অবুঝ শিশু।
আজ বাতাস বাতাসকে কাছে টানে না,
..................................................
ছুঁয়ে যায় প্রিয় যেন তোমার আঙুল,
চাঁদের আলোতে তার ভরে যাক প্রাণ।
মথিত হৃদয় কাঁপে কামনা শৃগারে,
যৌবন বেদনা এসে ভেঙে চলে কূল।
কবরীর অশ্রুজলে ফোটাও বিথীকা,
স্বপ্ন ভাঙ্গাও যখন উদাসীন তীরে।
হয়তো কবিতায় পাবে আরো কতো হুর,
তবুও তুমিই রবে এ বুকে নীরবে।
অনামিকায় সঁপেছি দুরন্ত যৌবন,
যখন আঙুলে এসে চাঁদ চোখ বুজে।
..................................................
জ্বরের বিছানা ছেড়ে জানালায়
রেখেছি চোখ।অনেক দিনপর
আলো দেখা,আকাশ দেখা,যে
চোখ বিশ্বের খবর প্রতিদিন নিত
পড়ে,আজ জ্বরশেষে দেখি অনেক
খবর চাপা পড়ে গেছে কুটিল চক্রে।
খবর আসে নাই ছাত্রলীগের ছেলে
গুলোর ফসল তোলার গান,নাই খবর
তিলোত্তমা রমণী যে হিন্দু হয়েও
রোজাদারদের জন্য করে ইফতারের
আয়োজন।খবর নেই গণস্বাস্থ্যের বানানো
কিট কখন আমার মত রুগী পাবে সস্তায়,
ডঃ জাফরুল্লাহর মানবীয় সেবা।বেখবর হয়
সব নষ্ট রাজনীতির চর্চায়।তবুও আমি দাঁড়াই
জ্বরের ঘোর কেটে জানালায়।আমারই বা
খবর রেখেছে কে?আমি করেছি লড়াই জীবানুর
বিরুদ্ধে। যখন ওষুধ দুর্মূল্য তখন বেঁচে ওঠে
আমার মত মানুষ সস্তা গুজবের টোটকায়।
টোটকা খেয়ে বেঁচে উঠেছি,বেঁচে উঠে শষ্য
শ্যামলী ক্ষেত,ছাত্রলীগের কাস্তের জোরে।
বেঁচে ওঠে রোজদারী মানুষ তিলোত্তমার
ইফতারিতে।যখন মুসলিমের হাত হিন্দুর হাতে
তৈরী করা খাবারে ভাঙ্গে সিয়াম,তখন
কাঠমোল্লার ফতোয়া বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় ক্ষুধার্ত পেট।
আজহারী,মোনেম,সোনেমের বুলি আজ ফাঁকা।
ক্ষুধার বর্ম এক হয়ে বেঁধেছে সাম্যের চাকা!
আমার চোখের ছায়া গিলে
নেয় ব্রহ্মাণ্ডের চোখ,জীবন
মৃত্যুর জলতেষ্টায় সূর্যের লাল
লাল হৃদপিণ্ডে পিঠ নামিয়ে
আমার আমিকে খুঁজি বুকের
কার্ণিশে। সময় জমে যায়
কঠিন শিলার মত,হাওয়ায় পাল
নেই,জল নিয়ে ওড়ে না মেঘ;
উজ্জ্বলতায় ঝুলে আছে
আমার শীর্ণ তাঁবু।তাঁবুর তালুতে
ননীর মত বিকেল নুয়ে পড়ে,ননীর
বিকেলে আমাকে খুঁজতে বেরুলেই
এই জীবন,এই মৃত্যুর জলতেষ্টায়
আমার ছায়ারা অপরিচিত কপাটে
মিলিয়ে যায়।
..................................................
এপ্রিলের রাতের নিচে নেমে
আসা বৃষ্টি কি যেনো ওড়ালো,
মত;বুদবুদের ফেনা ছেড়ে ভেসে
গেলো আত্মার গোড়ালি কেটে,
জেগে থাকে কেন?কিসের রক্তে
ভেজায় তার নীল আঁচল?কেন কিছু
ভুল মুছে গেলে বৃষ্টি হয় শীতল হৃদয়?
বেলবটম ঘুড়ি,ঘুড়ি উড়াল দেয়
ডিমের মত পৃথিবী ওপর;
কমলালেবুর পৃথিবী জানে,
বাঁচার গল্প লিখে চলে আমার চুলে।
..................................................
হাঁড়ের ভেতর বয়ে বেড়াচ্ছি লাল রোদ
এক সময় অমল নিঃশ্বাসে রূপান্তর হত
আশ্চর্য গোলাপের মত আমার স্বাধীকার ;
মানুষ আর প্রকৃতি সেই স্পর্শে তরুণ হতো,
মানুষের তারুণ্যে শত শত চোখ দেখে নদী
দেশের বুকে বয়ে নিত উর্বর জলের রুহু,
কিশোরী নারীর মত পাললিক বুক নিয়ে
দাঁড়ায় সবুজ শষ্যের বীজের ভেতর।বীজের
বুকে কীট বাসাবাড়ি করে,পাললিক বুকেও
আঁচড় কাটে নখর দৈত্য,নদী মরে যায়,
নিয়ে জেগে ওঠে পৃথিবী। তপ্ত,খাঁ -তৃষ্ণায়
পৃথিবীর বুক ফেটে গেলে আসে করোনা
মানুষের নখর চাহিদা ঢোকাতে খোঁয়াড়ে।
নদীর রুহু জলে পার ভাঙে পাললিক ঢেউ
ছিন্নমূল গাছেদের ডালে ডাকে উদ্বাস্তু কোকিল
কচিপাতা আমলকি বনে অশব্দেরা শব্দ তোলে।
কীটের কামড়ে জেগে ওঠা তরুণ চোখে ভয়ের
লালরোদ কানামাছি খেলে।এখন ঘরের ভেতর
মসজিদ,ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ রবে পাঁচক
মুখেরা, ঘরের ভেতর মন্দির,গীর্জা,রাম,যীশুর
স্তূতীতে উপাসনাগৃহেও ঈশ্বর,যীশু আসে না।
সবাইকে একঘরে রেখে দিয়ে করোনা,পৃথিবীতে
প্রভূত্ব করছে।করোনাই কি তবে ঈশ্বরের প্রতিভূ?
..................................................
অকারণ কে যেন মাতলামি করে
আমার শিয়রে নাচে তারার ঘুঙুর
চোখ তার ঝুমঝুমি মায়ার নুপূর,
এই বিষণ্ণ চুপচাপ কালবোশেখে
কে ডাকে বুকের ভেতর ঘুমঘুম ফল
হাতভরে ছেঁকে আনে মহুয়ার বোতল,
ভুলনামে ভালবেসে একদিন চিনেছি যারে।
..................................................
জীবন কি এতই সস্তা
হারামখোরের দল?
বানাবি ক্ষুধার্ত পাঁজরে
ঠেকিয়ে বন্দুকের নল?
রক্তের মত টগবগিয়ে ফোটে,
যে যায় না মাপা নোটে,
যখন দুন্দুভিটা বাজায়,
আগুন থামাবে কোন শালায়!
নিরন্নের থালা চালে ডালে ভরে দে
নইলে ক্ষুধা চেনে না করোনা টরোনা,
বলে দে মাদারচোতের দল,
তোদের প্রাণ নাঙাভুখার দল।
তোদের ভালর জন্য বলছি,
জন্ম থেকে জ্বলছি,
এবার আদেশ করো মা,আদেশ করো
ভাঙনের দারুণ খেলা খেলবো"
আমার চারিদিকে কম্পন
আমার বাঙাল পেট যে
ভাতের কাঙাল
ক্ষুধার জঞ্জালে ধুঁকছে,
বসে কেয়ামতের শিঙ্গা ফুঁকছে।
আমি চারিদিকে হাঁক শুনি
আমি ডাক শুনি ক্ষুধার্তের
আমি হাঁক শুনি শিশু বলছে
ভাত দে মা, দিনরাতের।
লকডাউনের নিয়ম,
চালের ডালা হাতে নিয়ে
আসবে কখন পিয়ন?
ওরা মরে গেছে
চালের ডালা হাতে নিয়ে
ওরা গুদামে লুকিয়েছে,
তখন শালা তোদের রক্তে
করবো রাক্ষসী ক্ষুধাকে খুন,
এই বাংলার মাটিতে?
করোনার জন্মভূমিতে?
করোনায় যখন নিস্ব সবে
তখন চাল, ডাল,নুন,তেলে
ভরেছে তোদের ভাণ্ড,
মৃত্যুর মিছিলে শামিল
হওয়া পৃথিবীও লজ্জাক্রান্ত।
শুধু তোদেরই নেই লজ্জা
কে খেয়েছে তোদের বিবেক
কে খেয়েছে বল মজ্জা?
মোটেও না
যে জনতার ক্ষুধার পেটে
একটি দানাও জোটে না
সে জনতা তখন কী আর
রাজা চেনে? খাজা চেনে?
ভয় করে না, করোনা
এই জনতা মরণকেও
কুচপরোয়া করে না,
সে জনতাকে মরণের ভয়
দেখাবে কোন শালায়?
সে জনতাকে মরনের ভয়
দেখাবে করোনায়?
রাজার সৌধ ভেঙে যাবে,লিখে গেল
করোনা, ভুখা নাঙার ললাটে,
"ললাটের লিখন না যায় খন্ডন"
..................................................
নলখাগড়া চোখে যেন তোমাকে পাই,
জানলার শিক কেটে ব্যাধিরা দাঁড়াল,
হো হো করে হাসে নাযে দলবাঁধা মেঘ,
গোলাপী ফুলের ঘ্রাণ পায় নাতো নাক।
হয়ত এখন আমরা কাউকেই শুনি না
ভেতরে একা থাকা নিজেদের চিনি না,
ভয় আর গোঙানির ব্যধি দিয়েছে খিল,
রঙিন চিবুকে আকাশ ডেকে তারাতে রই,
শোক ফেলে আশা ছোটে মৃত্যু তাড়াতে।
হয়ত বয়সী পৃথিবীর মুখ আবার ভেঙে
চোখগেল পাখির দলে মিলাবে ফিঙে,
ঢেউয়ের খেলা হবে ফিরে দেখো যদি!
শহর মৃত।আত্মারা আবছায়ায় দাঁড়িয়ে।
আমরা ঘুড়ি হতে চলেছি
আমরা ঘুড়ি হতে চলেছি
আমরা উড়বো,উড়বো,হে আত্মারা
আমাদের চোখ বন্ধ করে দিয়ে যাও
হে পৃথিবীর অগণিত মানুষ,
আজ তুমি চলে গেছো তোমার হতে
আজ আপনি চলে গেছেন আপনার হতে
আজ আপনারা ছেড়ে গেছেন, আপনাদের।
আজ সবাই একা,আজ আমি একা,তুমি একা
তোমরা একা,আপনারাও।আজ আমরা কাউকে শুনতে পাচ্ছি না,দেখতে পাচ্ছি না,
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা করোনা!
তোমার নৈবদ্যে দিয়েছি মানুষকে,তুলে নাও যত খুশি
নিয়ে নাও,কুমিল্লা থেকে বাংলাদেশ
নিয়ে নাও দিল্লি থেকে ইন্ডিয়া
নিয়ে নাও ইসলামাবাদ থেকে পাকিস্তান
নিয়ে নাও লন্ডন,ইতালি, আমেরিকা,স্পেন
নিয়ে নাও,এশিয়া থেকে এন্টার্টিকা
শুধু আমার প্রেমিককে নিও না।একমাত্র পৃথিবীতে তাকে বাঁচিয়ে রেখো।
আমাকে হারানোর শোকে তার বুকের পাঁজর ঝর্ণা হতে
দাও ,
কেন তুমি চেয়েছিলে বাঁচার সাধ?
করেছ পীড়ন,
-চিনির স্বাদ?
বৃক্ষের বুকের ভেতর,
তারপরও সুগন্ধী ফুল ফোটার মত
ফুটে যাই তরতর,
জ্যাম লেগে ঢলে গেছে পশ্চিমে,
আমি তোমার জন্য রেখেছি আঙুলে।
আমিও আজ ভীষণ একা তোমার মত,
বিকীর্ণ লাটিম বলে গেছে আমরা আজও
অবুঝ শিশু।
আজ বাতাস বাতাসকে কাছে টানে না,
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments