আহমদ বাসির আমার বিশ বাইশ বছরের ছোট। নব্বই দশকের উপান্তে কোন এক সাহিত্য সভায় ওর সাথে পরিচয় হয়েছিল। কবিতা লিখতো, প্রবন্ধ লিখতো। সাহিত্য সভায় তরুণ লেখকদের মধ্য থেকে ও আলোচনা করতো। বেশ ভালো আলোচনা। ভালো কবিতা লিখতো। অল্প সময়ে ও আমার নিকটজনে পরিনত হলো। ওরা তিন জন। আফসার নিজাম ও রেদওয়ানুল হক। আফসার নিজাম কবিতা ও ছড়া লেখে। রেদওয়ান লেখে ছড়া। ওর ছড়া রেদুমিক। তাই ওকে রেদুমিক বলেই ডাকি। ওরা তিন জন প্রায় সাহিত্য আড্ডায় একত্রে অংশ গ্রহণ করতো। এই চল্লিশ বছর সাহিত্য চর্চা জীবনে আহমদ বাসিরকে পেয়েছি প্রায় বিশ বছর। সাহিত্য আড্ডা ছাড়াও সময় পেলে বাসির আমাকে ওর লেখা শোনাতো। ওর কবিতা ও অন্যান্য লেখায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতাম, সেই ওদের গড়ে ওঠার সময় নব্বই দশকের উপান্তে।
কয়েকটি সাহিত্য সংগঠনের সাথে ও যুক্ত ছিলো। আমাকে ও দাওয়াত দিতো। কখনও কখনও ওর সাথে একত্রে সাহিত্য আড্ডায় যোগ দিতাম। আহমদ বাসির আমাদের সাথে, অর্থাৎ মতিউর রহমান মল্লিক, আসাদ বিন হাফিজ, বুলবুল সরওয়ারের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলো। মল্লিক ভাইকে ও পীরের মতো ভক্তি করতো। আমার সাথে ও ভদ্রচিতো ভাবে খোলামেলা ছিলো সেই তুলনায়। সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের তুখোড় সমালোচনা করতো। অনেক বিষয় আমার সাথে পরামর্শ করতো। মল্লিক ভাইকে যা বলতে পারতো না তা আমাকে বলতো। ও একজন চিন্তুক ও অগ্রসর মনের লেখক, পাঠক ও পর্যবক্ষক ছিলো। সমাজ ও বৃহত্তর গনমানুষের বিশ্বাসের অসংগতি ও অকপটে তুলে ধরতো। তথাকথিত প্রগতিশীলদের সাথে মুসলিম মানসের কি ভাবে সমন্বয় করা যায়, কিভাবে দেশের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধ করা যায়, কি ভাবে নতজানু পরদেশ পরামর্শ, পরদেশ ভালোবাসার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত করা যায়, এ বিষয়ক এন্তার চিম্তার মূলদ আমাকে অকপটে বলে যেতো।
আহমদ বাসিরের প্রথম প্রকাশিত বই কবিতা, গ্রন্হ "গোপন
মাটির বীজতলা, "কিশোর উপন্যাস "দীনেশের কালোরাত" আর মল্লিক ভাইকে নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার গ্রন্থ। এ ছাড়াও সে প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছে, গ্রন্থালোচনা করেছে, অনেক কবি সাহিত্যিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সে ক’বছর ধরে গানও লিখেছে।তা র গানের সংখ্যা তার বন্ধুদের মতে পাঁচশতাধিক। ইতোমধ্যে ইউটিউবে তার কিছু সাড়া জাগানো গান গীত হয়েছে শিল্পী লিটন হাফিজের কন্ঠে।
দুই.
আহমদ বাসির একজন সব্যসাচী লেখক। কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, উপন্যাস, গান প্রভৃতি সে সাবলীলভাবে লিখে যেতো। মাত্র তিনটি বই বের হলেও তার অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি রয়েছে বারোর অধিক। সে চমৎকার কবিতা আবৃত্তি করতো। ভরাট কন্ঠের অধিকারী ছিলো সে। তার আবৃত্তি যে কেউ শুনে মুগ্ধ হতো। বাগ্মী ছিলো। অনর্গল শুদ্ধস্বরে সে বক্তৃতা করতো। তার আলোচনায় বিশ্লেষন ও মন্তব্য থাকতো। চমৎকার বাচনভঙ্গীর অধিকারী ছিলো। সে অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও টিভি অনুষ্ঠানের চৌকস উপস্হাপক ছিলো।
আহমদ বাসির একজন ভালো সংগঠক ছিলো। উত্সঙ্গ সৃজন চিন্তন নামে একটি সাহিত্য সংগঠনের সে পরিচালক ছিলো। ঐতিহ্যবাহী সাহিত্য
সংগঠন বিপরীত
উচ্চারণ সাহিত্য সংসদও সে সভাপতি ছিলো। মাস্তুল গ্রুপের সে অন্যতম একজন উদ্যোক্তা ছিলো। ডাকটিকেট নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সাথে সে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো। হাসনাইন ইকবাল, আবিদ আজম, তাজ ইসলাম, শিকদার মোস্তফা, বোরহান মাহমুদ সহ আরও অনেকে আহমদ বাসিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জন ছিলো। ওরা একত্রে
ঢাকা শহরের বিভিন্ন সাহিত্য আড্ডায় অংশ গ্রহণ করতো।
তিন.
আহমদ বাসির সহজেই যে কারো সাথে মিশতে পারতো। এ ক্ষেত্রে সমবয়সী, জুনিয়র, সিনিয়র কবিসাহিত্যিকদের সে আপন করে নিতে পারতো। বাংলাদেশের প্রধান কবি আল মাহমুদ ভাইয়ের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক ছিলো। মাহমুদ ভাইয়ের বাসায় তার অবাধ যাতায়ত ছিলো। তরুণ দের মধ্যে এ ক্ষেত্রে অবশ্য সহজ প্রবেশ্য ছিলো আবিদ আজম, কবি জাকির আবু জাফর এবং আহমদ বাসির। আমিও বেশ ক’বার মাহমুদ ভাইয়ের বাসায় গিয়েছি। তা সাহিত্যিক কারণেই, তবে কবিদের বাসায় বা আত্মীয় স্বজনদের বাসায়
আমার যাতায়াত কম। এটা অবশ্য আমার চাকরির প্রকৃতি ও লেখালেখির কারণে। চাকরির পর বিকেল ও সন্ধ্যায় সাধারণত লেখা লেখির কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হয়। শুধু মাত্র সাহিত্য আড্ডা ছাড়া আমার ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস খুব কম। তরুণ কবি বন্ধুদের সাহচার্য আমি মিস করতে চাইতাম না। আমি কখনও আহমদ বাসির বা আফসার নিজাম, রেদওয়ানুল হক ও বোরহান মাহমুদের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারতাম না।
কবি, কথা শিল্পী প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক আবদুল মান্নান সৈয়দের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক ছিলো। স্যারের ডাকে প্রায়ই তার বাসায় যেতাম। স্যার মেধাবী কবি সাহিত্যিকদের খুব পছন্দ করতেন। আহমদ বাসির স্যারের পছন্দের তালিকা থেকে দূরে ছিলো না। বিভিন্ন সাহিত্য সভায় এমনকি চায়ের আড্ডায় আমার সাথে স্যারের এবং আহমদ বাসিরের অনেক রসায়ন রয়েছে। স্যার আমাকে বলতেন, তোমাদের জুনিয়র লেখকদের মধ্যে আহমদ বাসির বেশ মেধাবী। ও শীঘ্রই জ্বলে উঠবে। প্রেসক্লাব,
বিশ্বসাহিত্য
কেন্দ্র, বাংলা সাহিত্য পরিষদ’সহ বিভিন্ন সাহিত্য সভা,সেমিনারে দেশের নামকরা লেখকদের সাথে ও অনেক সময় এক কাতারে বসেছে।
নজরুল একাডেমির সাহিত্য আড্ডায় একবার ওকে আলোচনা ও কবিতা পাঠের আমন্ত্রণ জানালাম। ও বল্লো, আলীম ভাই আমি একজন অন্ধ শিল্পী নিয়ে আসবো সে হারমোনিয়াম বাজিয়ে দারুণ গান গায়।আপনাদের ওখানেতো নজরুল সঙ্গীতের বড়ো বড়ো শিল্পীরা গান গায়। আমি ওকে আশ্বস্ত করে বলেছিলাম, ঠিক আছে তোমার অন্ধ শিল্পীকে নিয়ে এসো। আমি মিন্টু রহমান ভাইকে বলে ম্যানেজ করে দেবো, তুমি এসো। সে এসেছিলো সেই শিল্পীকে নিয়ে। গান পরিবেশন করেছিলো দারুণ। অনুষ্ঠান শেষে জেনেছিলাম, গানের গীতিকার বাসির নিজে। আমি মুগ্ধ হয়ে বলেছিলাম, মল্লিক ভাইয়ের সার্থক উত্তরসূরী, তবে একটু ব্যাতিক্রম। আমাকে সেদিন বলেছিলো ও কালশীতে ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে একটি বিদ্যালয় পরিচালনা করে। সেখানে, লেখা পড়ার পাশাপাশি গান, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি প্রভৃতি সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ দেয়।
একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে আমাকে সে দাওয়াত দেবে আমাকে যেতে হবে। আমি ওর ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। আহসানিয়া মিশনের উদ্যোগে ছিন্নমূলদের জন্য এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতো আহমদ বাসির। করোনা কালের পূর্ব মুহূর্তে এটি আর্থিক সংকটে পড়ে। তখন ওরা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বাসির আমাকে এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। আমি পরে অন্যের মাধ্যমে জেনেছি।
সেই স্কুলে আমি বিশেষ অতিথি হিসেবে গিয়েছিলাম। সেদিন অনুষ্ঠান শুরুর আগেই আমি বাসিরের কাছে গিয়েছিলাম। স্কুলের ক্ষুদে ছেলেমেয়েদের হারমোনিয়ামসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বাসিরের গান গাইতে শুনলাম। এগুলো বাসিরই পরিচালনা করছে। ওর গানের সাথে দেশাত্মবোধক অনেক অনেক গান সেদিন শুনেছিলাম। আমার জীবনে বাসিরের দেওয়া এই সম্মান কখনও ভুলবো না। আমার অনেক কাছের অনেকেই আমার সাথে এমন আলোকিত আচরণ করেনি। আফসার নিজাম "নিব" নামে
একটি ছড়ার কাগজ বের করে। এটিতেও আহমদ বাসির ব্যাবস্হাপনা ও পরিচালনার সাথে জড়িত।
চার.
বাসির "নিব",
"ডাকটিকিট"সহ আরও কিছু পত্রিকা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিভিন্ন ভাবে জড়িত ছিলো। সে হাসনাইন ইকবালের সাথে "এনভেলাপ"
পাবলিকেশন্সের সাথে সম্পর্কিত ছিলো। ইনভেলাপ দেশের অনেক নামকরা লেখকদের বই পুস্তক প্রকাশ করেছে। আহমদ বাসির সর্বোপরি একজন মেধাবী কবি, ছড়াকার ও গীতিকার। তার কবিতার বইটি আমাকে দিয়েছিলো।এখন হাতের কাছে নেই। তবে ওই কাব্য গ্রন্থে তার বেশ কিছু উজ্জ্বল কবিতা রয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১৭ এর তার বেশ কিছু উজ্জ্বল ছড়া রয়েছে। এগুলো ঝলসে ওঠার মতো উজ্জ্বল ছড়া। তার কিছু চমক লাগা ছড়ার কয়েক পঙক্তি তুলে ধরছি:
১.
আসামে ও আরাকানে আছে যত বাঙালি
তারা কেন আজ এত অসহায় কাঙালি!
বাঙলাকে এত্তো ভাগে কারা কেন ভাঙালি
ভাগ করে করে কেন ভূ-চিত্র টাঙালি!(বাঙালি)
২.
আরাকানে মগেরাই এঁকেছে এ দৃশ্য
এরা নয় গৌতম বুদ্ধের শিষ্য। (আরাকানে বুদ্ধ)
আহমদ বাসির আমার সাহিত্য কর্মের সাথে, বিশেষ করে আমার কোন গ্রন্হ প্রকাশ হলে তার সাথে ওকে সম্পৃক্ত করে নিতাম। এবারের বই মেলায় নজরুল একাডেমি থেকে আমার একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। এটি "কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার নন্দনতত্ত্ব"। এ বইটি প্রকাশের আগে নজরুল একাডেমিতে বিদ্রোহী কবিতার নন্দনতত্ত্বের ওপর প্রায় তিন বছর একটি ডিসকোর্স পরিচালনা করেছিলাম। এর বেশ কটি অনুষ্ঠানে আহমদ বাসির উপস্থিত ছিলো। বইটির ফাইনাল প্রুফ ও অঙ্গ সজ্জার ব্যাপারে ওর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিলো। শুধু তাই নয় আমার এই গবেষণা গ্রন্থের ওপর ও একটি আলোচনা লিখে ফেসবুক অন লাইনে দিয়েছিলো। এরপর অন্য একটি বড়ো আলোচনা লিখেছিল পত্রিকায় দেওয়ার জন্য। সেটি আমি দেখতে পাইনি। ও চলে গেলো এর মধ্যে। এ কেমন নীরবে নিঃশব্দে চলে যাওয়া! আহমদ বাসির আমার একটি নিরীক্ষা মূলক কাব্যগ্রন্হ "কাব্য মোজেজা"র একটি কবিতা "স্পর্শ
সিরিজ"এর আংশিক প্রায় উচ্চারণ করতোঃ
"চোখের মোজেজা থেকে বলছি
আমি সত্যি সত্যি বলছি
হলপ করেই বলছি
তোমাকে স্পর্শ করলেই তুমি পাখি হয়ে যাবে
তোমাকে ছুয়ে দিলেই
তুমি পূণ্যবতী হয়ে যাবে। "
বাসির আমার বেশ কিছু সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সেগুলোর কিছু ছাপা হয়েছে কিছু টিভি’তে প্রকাশ পেয়েছে।
পাঁচ.
আহমদ বাসির আমাকে মোবাইলে ১৪ নভেম্বর শনিবার বিপরীতের সাহিত্য আড্ডায় হাজির হতে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করে। আমি ওকে বলেছিলাম তোমার কথা রাখবো। অনেক দিন করোনা কাল গ্রাসে বাইরে কোন আড্ডা বা সাহিত্য সভায় যাইনা। ওরা ক’মাস হলো সংক্ষিপ্ত আকারে সাহিত্য আড্ডা শুরু করেছে।আমি চাকরির কারণে অফিস করি। অন্য সব অফিস বন্ধ হলেও ঔষধ তৈরির কারখানা বন্ধ থাকেনা। মে মাস থেকে আমি পুরো দস্তর আটটা পাঁচ’টা অফিস করি। এর মধ্যে অর্থাৎ অক্টোবরের প্রথম দশকে আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন থেকে লাইসেন্স রিনিউয়াল পরিদর্শন হয়েছে। এ জন্য আমি ভীষণ ব্যাস্ত ছিলাম। তারপর সুন্দরভাবে আমাদের ভিজিট সম্পন্ন হয়েছে। মনটা একটু ফুর ফুরে মেজাজের। বাসিরের ডাকের আগে আফসার নিজাম স্বস্ত্রীক আমার অফিসে পদার্পণ করেছে। ওদের সাথে স্বাদ রেস্তোরাঁয় আড্ডা দিলাম, কিন্তু মনটা অপূর্ণ থেকে গেলো। ওদের সাথে বেশি ক্ষণ সময় দেওয়া হলনা। নিজাম ও বাসির মাঝে মাঝে আমার সাথে একত্রে আড্ডা দেয়, চায়ের টেবিলে। কিন্তু সে দিন ও আসেনি। বাসির খুব ব্যাস্ত আছে, পরে একদিন আমার অফিসে আসবে বলে জানিয়েছে। আমাকে আবার ১৪ নভেম্বর দূপুরে বিকেলে মোবাইল করেছে। ডাকটিকেটের অফিসে অনুষ্ঠান। ওদের অফিস নতুন ঠিকানায় এসেছে আগে দশ নম্বর গোল চক্করে ছিলো। আমি সে দিন মাগরিবের একটু আগে ওখানে পৌছলাম। আহমদ বাসির আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। ও আমাকে এগিয়ে নিয়ে অনুষ্ঠানে বসালো। আমি পৌছার আগেই কেউ কেউ আড্ডা দিয়ে গেছে। কবিতা পড়েছে। হাসনাইন ইকবাল আগেই এসেছিলো, তাই সে কোন এক জরুরি কাজে বের হয়ে গেলো।
অনুষ্ঠানে আমি, আহমদ বাসির, বোরহান মাহমুদ, তার বড়ো ভাই, শিকদার মোস্তফা, লোকমান হোসেন জীবন’সহ আরও কেউ কেউ ছিলো ওরা সকলে একে একে কবিতা, ছড়া পাঠ করছিলো। একজন পাঠ করলে তার লেখার ওপর একে একে সবাই আলোচনা করে। জমে ওঠে তুখোড় আলোচনা সমালোচনায়। আহমদ বাসির সেদিন কোন পাঠ করেনি তবে পঠিত লেখার ওপর ব্যাপক আলোচনা করেছে। আমি হজরত মুহাম্মদ দঃ এর ওপর একটি কবিতা ও কাজী নজরুল ইসলামের ওপর একটি কবিতা পাঠ করেছিলাম। বোরহান
মাহমুদ ও শিকদার মোস্তফা ছড়া পাঠ করেছিলো। বাসির সবার লেখার ওপর আলোচনা করতে গিয়ে আমার কবিতা আলোচনায় আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। আমার কবিতা ওর মুখস্থ আছে। সে বেশ কিছু কবিতা মুখস্থ বলতে পারে বলে সভায় সকলকে জানালো। আমার
লেখা নজরুলকে নিবেদন করে কবিতাটি পাঠ করলাম, তা বেশি গদ্য হয়েছে বলে জানালো। রসূল দঃকে নিবেদন করে লেখা কবিতা নাকি ওর হৃদয় স্পর্শ করে গেছে। অনুষ্ঠানের অন্যরাও তাই বল্লো। শিকদার মোস্তফা আমার কবিতা আলোচনা করতে গিয়ে আমার অন্য একটি কবিতা মুখস্থ বলে দিলো। সে ও নাকি আমার কবিতা মুখস্থ বলে দিতে পারে। আমি ওদের ভালোবাসার জোছনা শিশিরে অভিষিক্ত হলাম দারুণ ভাবে। শিকদার মোস্তফা কামরুপ কামাক্ষার তান্ত্রিক বিষয় শিরোনাম করে নতুন ঢংয়ের ছড়া পড়লো। আমার বেশ ভালো লাগলো। বোরহান মাহমুদও রসূল দঃকে নিবেদন করে দুটি চমৎকার ছড়া পাঠ করলো। আমি দেখলাম আহমদ বাসির প্রত্যেকের কবিতা ধরে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করছে। ওর আলোচনায় দিক নির্দেশনা থাকে। ওর আলোচনা থেকে লেখকের কেউ কেউ আহত হলেও উপকৃত হয় পরবর্তী কালে। আমার ভালো লাগলো বাসিরের পরিপক্ব আলোচনা শুনে। এক সময়ে বুলবুল সরওয়ার লেখকদের পঠিত লেখার ওপর তুখোড় আলোচনা করতো। তার কঠিন আলোচনা শুনে কেউ কেউ সাহিত্য ছেড়ে দিয়েছে। আবার অনেকেই তার আলোচনা হজম করে পরিপুষ্ট হয়েছে। আহমদ বাসির বুলবুল সরওয়ারের মতো আলোচনা করতো। বুলবুল সরওয়ার আজ দূরারোগ্য ব্যাধিতে নির্বাক।
চৌদ্দ অক্টোবর আড্ডা শেষে বোরহান মাহমুদ তার পাজেরো গাড়িতে করে আমাকে ও বাসিরকে কালশী পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। এর পর আমি ও বাসির মোড় পর্যন্তু এসে আলাদা হয়ে গেলাম। ও সম্ভবত ওর বাসার দিকে গিয়েছিলো। আর আমি আমার বাসার দিকে। এ ভাবে আমরা এক একটা সাহিত্য আড্ডায় মিলিত হই। আবার যে য়ার নীড়ের পানে। কেউ অট্টালিকায়, কেউ বস্তি ঘরে। কেউ তিন বেলা ভুরিভোজ করে। কেউ একবেলা একপেট, আধাপেট খায়। আমরা যে যার ভুবনে, কেউ কারো নয় যেনো। অফিসিয়াল কাজ যেন। অফিসিয়াল হাসি যেন কাঠগোলাপ হাসি, কাষ্ঠ কষ্ট হাসি। কাঠ মোলাকাত, কাঠ মোসাফা। আহমদ বাসিরের সাথে আমার দীর্ঘ সময়ের পরিচয় রইলেও, ও কখনও ওর ব্যাক্তিগত পরিচয়,পরিবার পরিজনদের কথা বলেনি। আর আমিও জিজ্ঞেস করিনি। ওর অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিলো বলে আমার একটা ধারণা ছিল। কবিতা লেখার জন্য ও যে পরিবার থেকে, পরিবারের ব্যবসা থেকে আলাদা হয়েছে বা হতে বাধ্য হয়েছে তা ওর আকস্মিক মৃত্যুর পর জেনেছি।
উনিশ নভেম্বর রাত্র এগারো টার পরে ওর মৃত্যুর খবর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ওর মৃত্যুর খবরে আমার বুক ফেটে, চোখ ফেটে অবিরল বৃষ্টি করেছে। ওর সাথে সাহিত্যের ময়দানে প্রথম দেখা হয়েছিল আর শেষ দেখা ও হয়েছে সাহিত্যের সন্নিধানে, সাহিত্যের সন্নিবেশে। ও দরুদের ফুল, রসূলের কবিতা, নাত আর মহা মহিমের হামদ ঠোঁটে করে জান্নাতের বাগানে উড়ে গেছে।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments