আল মাহমুদ স্মরণ_মুহম্মদ আবদুল বাতেন
মেঘলাদিন। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। গাড়ীতে কবির সঙ্গে যাচ্ছি, তাকে পল্টন থেকে মগবাজার পৌঁছে দিতে। কবির সিগারেটের ধোঁয়ার কুন্ডলি গাড়ির মধ্যে ঘুরছে। কবি গ্লাস সরিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ নিরবতা। আমার হাতে একটা বই, সোরেন কিয়েদেগার্দ। বইটি তিনি হাতে নিলেন, আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কিয়েদেগার্দ আমার প্রিয় দার্শনিক। জীবন দুঃখময়, এই ভাবনাটা তিনি আমার মধ্যে সঞ্চারিত করেছেন।
বললাম, আপনিতো জীবনবাদী মানুষ, কিন্তু আপনি কিয়েদেগার্দকে কিভাবে নিলেন।
বললেন, তোমার বয়স এখনো দুঃখের দরোজায় পৌঁছেনি, আর দুঃখ বাইরে থেকে দেখা যায় না। আর দুঃখের মধ্যে কোন কৃত্রিমতা নাই, এদিক থেকে দুঃখ পবিত্র এবং এটি আত্মাকেও পবিত্র করে।
বললাম, তাহলে দুঃখের উৎস কি বস্তুগত নয় ? যা দেখা যায় না, সেই দুঃখবোধের সঙ্গে বাস্তব জীবনের সম্পর্কইবা কি।
বললেন, জীবনে জ্বরা, মৃত্যু, অনিশ্চতা সম্পর্কে চেতনা জাগ্রত না হলে জীবনের সত্য উপলব্ধি করা যায় না।
কিন্তু কবিতার সঙ্গে এই দুঃখময় অন্তর্জীবনের সম্পর্ক তাইলে কি।
দ্যাখো দুঃখবোধ হৃদয়কে বিশুদ্ধতা এবং অন্তর্দৃষ্টি দান করে। আর এটা ছাড়া দৃষ্টি, কল্পনা ও শিল্পবোধ জাগ্রত হয় না। কিন্তু ভেতরের আন্দোলিত সত্য বাইরে থেকে দেখা যাবে না।
বোদলেয়্যরকে কি দুঃখবাদী কবি বলা যায়, কিংবা মাইকেল মধুসূদন দত্ত বা জীবনানন্দ দাশ।
সৃষ্টিশীল মানুষের দুঃখের অনুভূতি তীব্র হয়।
তীব্র দুঃখবোধ এদের ছিল, কিন্ত দুঃখ বাইরে থেকে বিচার করা যায় না। কারো কারো লেখায় কিংবা শিল্পে তার ছায়া পড়ে এবং সেটা বুঝতে পাঠকের প্রস্ততির প্রয়োজন হয়।
কিয়েদেগার্দ তো খৃস্টান থিওলোজিস্ট, তিনি হয়তো তখনকার মঠবাসী পাদ্রিদের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছেন।
দুঃখ সব মানুষের মধ্যেই থাকে, এখানে কোন ভিন্নতা কিংবা সীমানা নির্ধারিত নেই, ব্যক্তি তার দুঃখ লাঘবে ভিন্নভিন্ন পথ অবলম্বন করেন।
আপনি জানেন, কিয়েদেগার্দ নিয়ে বেশ সমালোচনাও আছে।
নরওয়েজিয়ান নাট্যকার ইবসেন কিন্তু কিয়েদেগার্দের ভক্ত ছিলেন, পরে তিনি এই সমলোচনাও করেছেন, যে কিয়েদেগার্দ প্রভাবিতরা ঈশ্বরকে বাতিল করে এখন কাঠের তৈরি ক্রুসের ওপর ঈমান আনছে।
মানুষের সব চিন্তাই অন্যদের মাধ্যমে বিবর্ধিত, রূপান্তরিত অথবা বিকৃত হয়। আপনার কি মনে হয়।
কথাটায় কবি জোরালো সমর্থন দিলেন। বললেন, এটি এখন বড় সমস্যা, তবে স্বাভাবিক। কারণ মানুষের চিন্তার কোন স্থির বিন্দু নাই। মানুষের জ্ঞান ভিত্তি পুরোটা ইন্টারপ্রেটেশনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ভক্তরা আত্মসাৎ করে এবং বিকৃত করে, নতুন পথ তৈরি করে। তারা খুব একটা ফিলোসফিতে যেতে পারে না, কখনো নিজেদের সুবিধার জন্য মাজার তৈরি করে।
আপনার ভক্তদের ব্যপারে ধারণা কি।
বললেন, কবি কোন পীরতন্ত্র না, কবিত্ব বংশানুক্রমিক হস্তান্তরের বিষয়ও না। কবি মূলত একা, ভেতরে ভেতর একাকীত্বের অবগাহন।
গৌতম বুদ্ধ তো মৃত্যুর সময় শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছেন, শিষ্যরা যেন তার মূর্তি না বানায় এবং পূজা না করে। কিন্ত এখন তার উপদেশ ভক্তরা মানছেনা, সব ধর্মশালায় বৌদ্ধ মূর্তি।
কবি তো পীর বা ধর্মগুরু নয়, কিছুকাল পরে চেলারা বিদায় নেয়, কবির লেখারই কাল পরম্পরায় কবিকে বাঁচিয়ে রাখে।
আল মাহমুদকে নিয়ে অনেকের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা। কবির সঙ্গে আমার যোগাযোগটা ঘটেছে সারফেসের কিছুটা নিচ দিয়ে, নির্জনতা ও মৃদুস্বরের অভিব্যক্তিমূলক আলাপে। পুরানো ডায়রির নোট থেকে এই টুকরো স্মৃতিখন্ড এখানে আলোর মুখ দেখলো। ১৯৮৮ সালে এক সাহিত্য সভা শেষে কবিকে পল্টন থেকে মগবাজার পৌঁছে দেয়ার সময় এই আলাপ, আগে পরে আরো কিছু আলাপের অংশ। কবির সঙ্গে স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো এখনো উদ্ভাসিত হইতেছে। আমি এই কবির ৮৫তম জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments