মামুন সারওয়ার’র ছড়া

 
মেনো
 
বর্ষা-শীতে উদোম থাকে দেহ
পাই না কভু
ভালোবাসা
আদর এবং স্নেহ
 
নইতো যেনো-তেনো
আমরা সবাই
সবার কাছে
অদ্ভুতুড়ে
কেনো
 
কেনো কেনো কেনো!
তুমিও মানুষ
আমিও মানুষ
এই কথাটি মেনো
………………………………….
 
ছেলেটির জন্য
 
এই ছেলেটি
          নিত্য ভোরে
          শুধুই ঘোরে
          কুড়ায় কাগজ ছেঁড়া
 
একলা মনে
          যায় যে হেঁটে
          যায় যে খেটে
          মাথাটা তার নেড়া
 
কেনো ওদের
          দেই না তবু
          আদর কভু
          ভালোবাসা প্রীতি
 
হায় জানি না
          ছোট্ট মনে
          প্রতিক্ষণে
          কিসের এতো ভীতি?
 
এই ছেলেটি
          মরে গেলে
          ঝরে গেলে
          দেয় না তো কেউ জবাব
 
পত্রিকাতে
          হয় না ফিচার
          হয় না বিচার
          ভালো লোকের অভাব
…………………………………
 
ওহ্
 
নাম কি রে তোর?
-যমুনা
বাপের নামটা?
-কমুনা
 
বাপ কি করে?
-গেছে মরে
কদিন হলো?
-ছয়টি মাস
কবর কোথায়?
-ভিটের পাশ
 
আর কে আছে
-আমার মা
 
কাজ কি করে?
-থাকেন ঘরে
একটুও আর
বলব না...
…………………………………
 
টোকাই জীবন
 
এই শোন্ পিচ্চি
দুই টাকা দিচ্ছি
          একটু দাঁড়া!
 
তড়তড়ি দেন চাচা
দেরি হলে নেই বাঁচা
খুব যে তাড়া
 
বল দেখি শুনি আজ
সারাদিন কি কি কাজ
          থাকিস কোথায়?
 
মাল টানি, ঠেলঠেলি
ঘরে ফিরি বেলাবেলি
          থাকি মান্ডায়
 
মা আছে বাপ নেই
পড়াশোনা চাপ নেই
 
কাম করি মুই
রাত হলে আমি মার
গলা ধরে শুই
…………………………………
 
দুখী ছেলে
 
ঈদ এলে যার মুখে ফোটে না যে হাসি
চেনো তুমি তাকে
পথে পথে থাকে
মুখে ভাসে কষ্টেরা- দুখ রাশি রাশি
 
উড়ো উড়ো এলোমেলো ওড়ে চুলগুলো
ছেঁড়া জামা গায়
হাঁটে খালি পায়
সারা দেহে মেখে থাকে চাপ চাপ ধুলো
 
ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত সে রোদ দুপুরে
আঁখি ছলোছলো
ঘামে টলোমলো
কখনো হারিয়ে যায় দূর থেকে দূরে
 
কার কথা বলা হলো চেনো তাকে ভাই
ফুটপাতে ঘুম যায়
খিদে পেলে পানি খায়
সবার কাছেই সে যে পথের টোকাই
…………………………………
 
একটু শুলেই ঘুম
 
বিকেল শেষে সন্ধ্যে হলে
মন বসে না পড়ায়,
চুপিচুপি ঘুমটা এসে
চোখের পাতায় গড়ায়
 
ঘুমটা এলো কোথা থেকে
হন্যে যে মা ডেকে
ডাকটি শুনে ঘুম ভাঙে না
ঘুম যে আসে জেঁকে
 
ঘুমকে বলি -ঘুম ওরে
এমন কেন তুই
দুচোখ জুড়ে ছড়িয়ে পড়িস
একটু যখন শুই
 
ঘুম ভাঙে না তাই তো আমার
হয় না পড়া বই,
তাই তো আমি পাঠশালাতে
সবার পিছে রই
…………………………………
 
পেপার নিবেন
 
বকুলতলার একটু দূরে
দড়াটানার মোড়ে-
একটা ছেলে একলা একা
মুখে নিয়ে করুণ রেখা
এলোমেলো চুলগুলো যার
হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে
পেপার নিবেন ডেকে ডেকে
রোদের ভিতর পোড়ে
 
তোমরা কি কেউ চেনো তাকে
রক্ত ঘামে জীবন আঁকে
 
সকাল দুপুর সন্ধ্যারাতে
ক্ষুধা পেটে শূন্য হাতে
ভাঙা দুয়ার আলগা করে
বের হয়ে যায় ভোরে-
দড়াটানার মোড়ে
 
পেপার আছে পেপার নিবেন
চেঁচিয়ে ওঠে জোরে-
কালের কণ্ঠ, প্রথম আলো
মজার খবর লাগবে ভালো
দাদুভাই নিন্ না কিনে
জড়িয়ে আছি কিস্তি ঋণে
দড়াটানার মোড়ে
 
শ্যামল বরণ গায়ের গড়ন
কথায় ভোলা জেলার ধরন
পেপার নিবেন পেপার নিবেন
নানু ভাই থামুন-
যে ছেলেটা পেপার বেঁচে
নাম নাকি তার মামুন
…………………………………
 
মানুষগুলো মেকি
 
সত্য কথা বলতে গেলে
বলবে সবাই বোকা ছেলে
ভাবছি না তাই
বলুক যে যাই
          বলুক আমায় কে কি ?
 
বলব আমি ঢাকার শহর
পথে গাড়ি থাকার শহর
রঙ বেরঙের মানুষগুলো
মিথ্যে কথার ওড়ায় ধূলো
                   মানুষগুলো মেকি
 
কারোর দিকে চায় না কেউ
হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ছে ফেউ
গরীব দুখী যাচ্ছে মরে
অনাথ শিশুর কান্না ঝরে
                   দুচোখ জুড়ে দেখি
 
আমি টোকাই ভাবতে ভাবতে
এই ছড়াটা লেখি
মানুষগুলো মেকি
…………………………………
 
এই ছেলে এই মেয়ে
 
এই ছেলে এই মেয়ে
এই পথ চেয়ে চেয়ে
                   থাকে...
কাকে যেন মনে মনে
                   ডাকে
 
কাকে
মাকে
হয় তো বা
নিজ আব্বাকে
 
এই ছেলে এই মেয়ে
বাড়ি ছিলো গায়
সবকিছু কেড়ে নিল
নদী মেঘনায়
 
মা আর বাপ ছাড়া
জীবনটা খাপছাড়া
খুবই অসহায়
 
এই ছেলে এই মেয়ে
জীবনের গান গেয়ে
          বেড়ে ওঠে
রাত শেষে দিন এলে
দুঃখের ঘানি ঠেলে
ছোটে শুধু ছোটে
নীল হয়ে ফোটে
…………………………………
 
কাকের শহর ঢাকা
 
ডাকছে কাক কা কা স্বরে
                   কা-কা
নিমের ডালে
তাল বেতালে
বলছে শুধু
গা জুড়ে হায়
কালচে রঙে মাখা
          ডাকছে কাক কা-কা
তাই তো ঢাকা জুড়ে
দেখছি উড়ে উড়ে
          কোন সে বাসার কাছে
          লাক্স সাবান আর
          হুইল পাউডার
          একটু পড়ে আছে
যাচ্ছি ছুটে
নিয়ে ঠোঁটে
          করেই দিতে ফাঁকা
          ডাকছে কাক কা-কা
এসব দেখে বলছে চাচা
          যায় না বাঁচা
          কাকের শহর ঢাকা
          করল সবই ফাঁকা
…………………………………
 
খোকার আঁকাআঁকি
 
শাদা রঙ চাঁদ ওঠে
          দূর নীলিমায়
খোকা সেই ছবি আঁকে
          ছবির খাতায়
 
চাঁদ এঁকে শুকতারা
          আঁকে তার পাশে
নীল নীল মেঘগুলো
          পাল তুলে ভাসে
 
খোকা আঁকে ছায়াপথ তারার মেলা
এইভাবে চলে তার আঁকার খেলা
 
চাঁদ তারা ছায়াপথ
          আঁকা হলে শেষ
মনে হয় খোকা যেনো
          চিন্তিত বেশ
 
ভাবা শেষে আঁকে খোকা মা হাসিমুখ
সেই ছবি বুক জুড়ে এনে দেয় সুখ
…………………………………
 
পাখি খোকন সোনা
 
পাখি তোর ডাক শুনে যে
ঘুম আসে না আর
খবর জানিস মা
 
বলল পাখি, সোনা
তোমার মা যে বাংলাদেশে
লাল-সবুজে বোনা
 
এমন কথা শুনে খোকন
থাকে ভীষণ চুপ;
দেখে শ্যামল রূপ
…………………………………
 
কাজের মেয়ে
 
হতচ্ছড়া হতচ্ছড়ি
সকল কাজে বাড়াবাড়ি
 
পানির গেলাস চায়ের কাপ
ফেলাস শুধু ধাপুর ধাপ
রোজ সকালে এসব কিছু
ভাঙা হলো কাজÑ
আরো তুই কি ভেঙেছিস
বিচার হবে আজ
 
এমন করে কাজের মেয়ে
নিজের ঘরে একা যেয়ে
মারছো ধরে যারা
কেমন মানুষ তারা
…………………………………
 
ঢাকা শহর
 
ভোলা থেকে ঘুরতে এসে
রঙিন শহর ঢাকায়
হেঁটে হেঁটে পথ হারালাম
উল্টোগলির ফাঁকায়
 
ভেবে অবশেষে
জীর্ণ মলিন বেশে
পেরিয়ে এলাম সাহস নিয়ে
বিজয়নগর মোড়
তাও দেখি ভাই
পথেই হারাই
পাই না মনের জোর
 
চলতে চলতে হারাই শেষে
পাই না পথের মাথা
কালো পিচে খামচে ধরে
উদোম পায়ের পাতা
 
রুষ্ট আকাশ! কেনো তাকাস
উত্তেজিত রোদে
ছাতাবিহীন হাঁটছি আমি
তাও আসে না বোধে
 
একটুখানি মেঘের ছায়ায়
রাখো মায়ার ডোরেÑ
এই মিনতি ঢাকা শহর
রোদের ভিতর ওরে
…………………………………
 
ভাতের জন্য
 
আপনি নিলে ফুলের গন্ধ
আমি ভাতের গন্ধ পাই-
এমন কথা বলতে আমার
মনে কোন দ্বন্দ্ব নাই
 
রোদের সাথে স্বপ্ন কুড়াই
রঙিন ফুলের গুচ্ছ দিয়ে
তবু আমি হচ্ছি বড়
জীবনটাকে তুচ্ছ নিয়ে
 
আপনি নিলে রঙিন গোলাপ
পেতাম আমি দুটি টাকা
সুখের জীবন গড়ার জন্য
এমনি করে ছুটি ঢাকা
…………………………………
 
বন্ধু
 
রাগ করে যে কয়না কথা
মুখটা করে ভার-
সে কি তোমার আপন হলো
বন্ধু হলো আর
 
বললে কথা চুপটি থাকে
কয় না কথা ফের
সে কি তোমার চায় কি ভালো
টোকাই জীবনের
…………………………………
 
কাকের ছবি
 
কাকের ছবি আঁকতে গিয়ে
ডাক শুনি তার কা-কা
করুণ সুরের ডাক শুনে আর
হয় না ছবি আঁকা
কাকটা আমায় কেন বলে
কেমন আছেন কাকা

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com 

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.