মানুষ সংখ্যা-২

 
মোহাম্মদ সাদিক
এখানে মানুষ নেই
 
এই যে মানুষ আছে, তুমি বলো, এখানে মানুষ নেই
কোথায় মানুষ?
 
যখন মানুষ আসে তুমি বলো, এটা তো শেয়াল
আবার মানুষ আসে তুমি বলো, এটা তো নেকড়ে
অদম্য ক্রোধের মধ্যে আমি তবু
মানুষ দেখাই
 
তুমি বলো এটা ইঁদুর, ওটা বেড়াল
যে হেঁটে আসে মানব সুরতে, ওটা তো খচ্চর
 
তারপর গাধা, ওটা অজগর, হাতী, পোকা
বাদুড় বাদর
 
এখানে মানুষ নেই এমনকি তোমাদের পৃথিবীতে একটি কুকরও নেই
মিছেই তোমরা লজ্জা ঢাকো, কার জন্যে, এখানে মানুষ কই
 
এজন্যেই তল্লাটে আমি নগ্নদেহ, লজ্জাহীন, বস্ত্রবিবর্জিত।
..................................................
 
কাজী জুবেরী মোস্তাক
মানুষের মতো দেখতে
 
আমি দেখতে অবিকল মানুষের মতো
কিন্তুু সত্যিই কি আমি মানুষ ?
না !
আজও আমি মানুষ হতে পারিনি
কিন্তু ! আশ্চর্যের বিষয় হলো ,
মানুষের তকমাটা ঠিকই আমি বগলদাবা করেছি
আমি আসলে মানুষের মতোই দেখতে
তাই সবাই আমাকে মানুষই মনে করে ,
আর সকাল সাঁঝে কুর্ণিশ করে চলে ,
কিন্তু ওরা জানেইনা মানুষের মুখোশে অন্য মানুষ আমি
মানুষের মুখোশে এক প্রতারক খুনি আমি
তোদের সরলতায় তোদের প্রতারিত করি
বিশ্বাসের সাথে অবিশ্বাসের খেলা খেলি
আর সুযোগ বুঝেই চালিয়ে দেই ছুড়ি
মানুষের মতো দেখতে হলেও , আমি কিন্তু ধর্ষক
নারীর সুঢেল বক্ষপিঞ্জর দেখলে
ধর্ষক আত্মা আমার জেগে ওঠে
আমার নির্লজ্জ চোখ ওকে ভোগ করে
আমার বিষাক্ত লালায় প্রতিনিয়ত ওকে ধর্ষিত হতে হয়
তবুও মানুষের মুখোশে আমাকে মানুষই মনে হয়
..................................................
 
সোমনাথ বেনিয়া
অন্তরবিদ্যা
 
মুখ ভুলতে গিয়ে মনে রাখা, অন্তরবিদ্যা
সমস্ত বন্ধনের শেষে দাঁড়িয়ে থাকে রক্তপর্ব
স্বভূমি, প্রতিটি পদক্ষেপে আত্মজনের কথা
মনন আছে বলে মানবচরিত পাঠ্যক্রম ...
 
বাড়ানো হাতে স্পর্শ আশ্রয় পায়, বটবৃক্ষ
সমস্ত ্যবধানে সমাধানের আভিধানিক সুর
দূর ক্রমশ কাছে আসে দৃষ্টি জড়িয়ে, প্রেম
কল্পনায় স্বর্গ, সবার ইচ্ছেফুলের বাগান ...
 
স্নায়ুর বৃত্তসমগ্র সংসার, এখানে কেউ পর নয়
মানুষ বলতে মান-হুঁশ, যার অন্তিম পরিচয় ...
..................................................
 
মোঃ রুবেল আর.এস.
প্রতিভারদাম
 
বল কয়জন দিতে জানে প্রতিভার দাম,
জাতি,গোষ্ঠী ,স্থান আর পাত্র-ভেদে, নিরবে ঝরে যায় কত নাম।
 
আমি খুঁজি সেই মানুষ,ভবে পড়েছে কি চরণও তার???
তবে পাই না কেন তারে,ঘুচায় না কেন আসলের হার।
কেন অযোগ্য পায় আজও যোগ্যের স্থান কেন প্রতিবাদে উঠে গায়েরও চাম।।
 
স্বার্থরূপি দানব হয়ে কেমন করে পার রাখতে উঁচুশির??
বিবেকহীন কাপুরুষ হয়েও নিজেকে ভাবিয়া লও বীর।
মানুষ রূপে এসেছো ঠিকই হওনি মানুষ আজও তবোও রয়েছে কত সুনাম।
..................................................
 
কিশলয় গুপ্ত
আগুন রঙের হাওয়া-
 
একটি মানুষ হার মানে না
আঁধার জেনেও সামনে দাঁড়ায়
একটি মানুষ ধার ধারে না
বিপদ এলে; দু'হাত বাড়ায়
 
একটি মানুষ অকুতোভয়
আকাশে মাথা সামনে চোখ
পাশ কাটিয়ে সব সংশয়
সামলে রাখে হাজার শোক
 
একটি মানুষ- চক্রব্যূহ
রয়েছে ঘিরে সপ্তরথী-
তবু হাসি মুখে সয় সমূহ
ব্যক্তিগত লক্ষ ক্ষতি
 
একটি মানুষ পরের জন্য
মানুষের ত্বরে সকল চাওয়া
এমন হৃদয় দেশ বরেণ্য
তিনি আগুন রঙের হাওয়া
..................................................
 
বাদল রায় স্বাধীন
পাশবিকতায় এগিয়ে মানুষ
 
মানুষ গুলো নেকড়ে এখন পশু গুলো শান্ত,
দানব গুলো মানুষ মারে সে ধারনা ভ্রান্ত।
 
পশুদের বিবেক নেই কে বলেছে ভাই,
প্রাণী গুলো শুধু মাত্র ক্ষিধে পেলে খায়।
 
মানুষ গুলো সারাদিন খায় খায় করে,
যৌন কর্ম করে কুকুর শ্রাবন মাসের পরে।
 
মানুষ গুলো নিত্যদিন সে চিন্তায় ব্যস্ত,
জোর করে মিলন শেষে মেরে ফেলে আস্ত।
 
পশুরা আজ একা নয় দল বেঁধে চলে,
মানুষ গুলো আলাদা হয় সাবলম্বী হলে।
 
কাক মারলে হাজার কাকে প্রতিবাদে ফাটায়,
অন্যকে বিপদে ফেলতে মানুষ ঘুরায় শুধু নাটায়।
 
নিরিবিলি হাজার পিঁপড়ে সারিবদ্ধ চলে,
মারামারি শুরু হয় মানুষ জড়ো হলে।
 
মানুষ গুলোর হুশ নেই লোভ লালসায় মত্ত,
একদিনেতে পেতে চায় ভোগ সামগ্রি যত্ত।
 
পশুর হাতে মানুষের মৃত্যু নয় মানবের হাতে মানব,
মানুষ নামের প্রাণী গুলো হয়ে যাচ্ছে দানব।
 
মানুষকে আজ পশু বললে পশুরা লজ্জা পায়,
মানুষরা আজ অনেক এগিয়ে পাশবিকতায়।
..................................................
 
মুহাম্মাদ আলী মজুমদার
অমানুষ
 
মানুষের রূপ ধরে
কতো পশু বাস করে
হিংস্রতা চাষ করে
সভ্যতা নাশ করে।
 
করে যায় হানাহানি
খুনোখুনি রাহাজানি
শোনে না যে কারো বাণী
করে শুধু মাস্তানী
 
এইসব জানোয়ার
সমাজের বিষফোঁড়া
মানুষের বেশে তারা
অমানুষ আগাগোড়া
..................................................
 
উত্তমকুমার পুরকাইত
আমি মানুষ
 
তোমাদের মতো আমারও আছে বাপ-মা-ভাই-বোন
কেবল ঘর নেই আমার;
তোমরা যখন ঝড় তোলো
আকাশে-বাতাসে আগুন জ্বালো
বঙ্গোপাসগর থেকে ক্যানিং নদী আমাকে ভাসায়।
আমি তো বন্য শ্বাপদ নয়
তবু কেন ওরা তাক করে প্রতিদিন?
কেন বলে, তুমি জঙ্গি, মনুষ্যহীন!
আমি মানুষ,
দু'শো 'টা হাড় আছে শরীরে
শুধু ধর্মের কারণে অকূল পাথারে
বুকের মানচিত্রে দ্যাখো আমি আর তুমি পাশাপাশি
রোহিঙ্গা কিংবা মুসলিম নই, দুই পড়শি।
..................................................
 
সুকান্ত মজুমদার
পরিশীলিত
 
আর কিছুটা উথলে
ওঠা সুখতৃঞ্চা,
সুখের বিবাদে মগ্ন বিব্রত
অচেনা নিজেই নিজের কাছে,
উৎসুক চোখের
একবিন্দু ছলহীন জলকনা
এক সমুদ্র দুঃখ ভার
আর সহস্র প্রলাপিত ব্যাথা,
সে বা তারা এভাবেই
ঘুরে ফিরে ধুলোপথ কিংবা
স্বপ্নাতুর নাগরিক কালোপথে,
জীবন বঞ্চনার জতুগৃহ
বেঁচে থাকা আটপৌরে শাড়ির
পরিপাটির ন্যায় অট্টহাসি -
জ্যোতিষকথা এখানে উপহাস্য।
 
গর্বের আমানত
পাড়ার কাজের মেয়ে
তাদের আদর দেখে
পোষ্য বেড়ালি হিংসে করে,
সময় সদিচ্ছার অতিব সংকট
কারো কোন প্রদাহে ইস্ শব্দও যেন
অমৃত মন্থনে উথলে ওঠা গরল।
কারো আপন হতে চাওয়া যত
গতিশীল জীবনের মাইলস্টোনে
অস্পষ্ট সংখ্যা রূপ করে বিব্রত।
..................................................
 
কবির কাঞ্চন
মানুষের রূপ
 
আমরা মানুষ বহুরূপী
বহু সুরে গান করি
বিপদে পড়িলে সদা
নরম সুরে কান ধরি।
 
বিপদ থেকে যেই না বাঁচি
ভুলি আগের সবকথা
আত্নপ্রচার করেই চলি
এটাই যেনো একপ্রথা।
 
ভালোবেসে বিশ্বাস করলে
দুঃখ দিতে ভুলি না
মায়ার জগৎ ভরে দিতে
মনের দুয়ার খুলি না।
 
মানুষ হতে চাইলে ভবে
মানুষ হওয়া কঠিন নয়
মানবতার পথ মাড়ালে
এক জীবনে আসে জয়।
..................................................
 
শেখ নুর হোসেন
ছন্নছাড়া
 
ইচ্ছে করে নীল আকাশে
মেঘ হয়ে ভাসি,
ইচ্ছে করে হয়ে যাই
অচিন দেশের পাখি।
 
হতে চাই কুলহারা এক
সাগর জলের ঢেউ,
আঁকাবাঁকা পথ পেরুবো
বকবে নাতো কেউ।
 
ইচ্ছে করে পাখির মতো
যাই উড়ে যাই দুরে,
যখন খুশি যেথায় খুশি
ঘুরবো অচিনপুরে।
 
বাধন হারা হবো আমি
শুনবো না কারো বাধা,
রাজ্যহারা হবো আমি
হবো ছন্নছাড়া।
..................................................
 
রহমান মাজিদ
মানুষ
 
বাঙ্গালী কিংবা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ
কোনটাই আমাকে তেমন আকৃষ্ট করেনা
টানেনা প্রাচ্য কিংবা প্রাতিশ্চের জাতীয়তাবাদ।
সাদা কালোদের মাঝে বিভেদের লৌহ কপাট
হৃদয়ের হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে চলি আমি দিন রাত।
তোমার উঠোনজুরে দাড়িয়ে থাকা সীমান্ত দেয়াল
বুকের উপর পাহাড় চাপানোর মতোই আমাকে ভারগ্রস্থ করে
তুমি কী জান?
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই স্বাধীনতা নিয়ে জন্মেছে
যেমন জন্মেছে বৃক্ষকুল আর বিহঙ্গসমাজ
তুমি কি সাইবেরিয়ার পাখিদের জন্য
ভিসা এবং পাশপোর্ট লাগাতে পার?
যারা অতিথি হয়ে আসে আমার আঙ্গিনায়।
ওদের মত আমিও উড়তে চাই
বিহার করতে চাই সলিল সমুদ্র আর অনন্ত আকাশ
 থাকতে চাই এশিয়া ইউরোপ কিংবা আফ্রিকা
তথা পৃথিবীর প্র্তিটি মানুষের সাথে
ঘুরতে চাই, ঘুমাতে চাই,
এমনকি বাঁচতে মরতেও চাই এক সাথে।
..................................................
 
ইমরান খান রাজ
অহংকার
 
অহংকার....
সেকি মানায় তোমাতে?
একবেলা আহার নিবারণ করতে-
যে কিনা হাত বাড়ায় মানবতীরে!
তার মনঃগভীরে আজ অহংকার-
ততোটুক শো
ভাপূর্ণ হয় না!
 
কাজগের মলাটে ভাজ করা-
চকচকে নোটগুলো হয়তো-
তোমার মাথা কুরে খেয়েছে!
তাই বলে কি আজ এমন আচরণ?
কাদামাটি দিয়ে যার দেহ গঠিত-
তার হৃদয়ে অহংকার শোভা পায়না!
..................................................
 
ফজলে এলাহী
দুঃসময়
 
জীবনের সুসময়ের বাতাসে
মনের অজান্তে দুঃসময়ে ভাসে,
জীবনের সকল কর্মের হিসাব
লিপিবদ্ধ হয় উপরওয়ালার হাতে।
 
আপন কর্মে তাই নয় অবহেলা
ব্যর্থতার পরে জীবন পায় সফলতা।
চলার পথে সকল বিপদ-আপদ হতে
নিস্তার পেতে দান কর অসহায়দের স্বহস্তে।
 
দুঃখ জীবনের পরশ পাথর
দুঃখ কে ভুলে যাই কি করে?
শ্রাবণের দুঃখগুলোকে তাই খুব সযত্নে,
আমি বুকে আগলে রাখি জীবনের তরে
আপনজনদের ভালো রাকিস রে মন যে কোন মুল্যে।
 
জীবনের সকল দুঃসময়ে
দমে দমে ডাকো রে মন অন্তর্যামী কে
জীবনের প্রকৃত প্রার্থনায়
ছোট ছোট বিনিময়ে,
আপনজনের শুভ কামনাতে
ভাইয়ের প্রার্থনায় বোনের জীবনে
সুস্থতার আলো ফিরে আসে।
 
জীবনের অন্ধকার অমানিশা কেটে
জীবন নদী চলে আপন তরি বেয়ে।
জীবনের বাস্তবতা নানান রঙের ছবি আঁকে
কেউ জীবন কাটায় অট্টালিকাতে,
কেউ বাস করে খোলা আকাশের নীচে
দুঃখ কষ্টের সাথে যাযাবর বেশে।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.