শীত শিহরণ : শীত সংখ্যা ২০২০
কুয়াশার চাদর ভেদ করে যাওয়া সূর্য দেখার জন্য কার মন না আনচান করে। শুভ্র কুয়াশার চাদর দেখে বাঙালী কবি হয়ে যায়। আধুনিক নগর সভ্যতার বহুতল ভবনের জনালার কাচে কুয়াশার ছোঁয়া কার না স্পর্শ করতে ইচ্ছে করে। এমন সময় শহর ছেড়ে মন উড়ে যায় মেঠোপথে। তার পাশে মাঠে ঘাসের উপর শিশিরে পা রেখে যে প্রেমময় অনুভূতি তার প্রেমিক হৃদয়ই জানে। এর ঋতুতে লেপ আর কম্বলের নীচে বসে পিঠা-পায়েস, পাটালি গুড়, মুড়ি-মুড়কি খেতে খেতে মনে এমন সুন্দর জীবনই তো আমরা প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি। এরকম কনকনে সময় নিয়ে কবি সাহিত্যিকরা রচনা করেন তাদের সুন্দর সুন্দর সৃজনকর্ম। কবিতা, গল্প, গান, চিত্র। তাই মোলাকাত এই শীত নিয়ে প্রকাশ করছে শীত শিহরণ। আশা করি এই সংখ্যাটি সবার ভালো লাগবে। সবার ভালো লাগলেই আমাদের ভালো লাগা। -আফসার নিজাম, সম্পাদক-মোলাকাত
শীতের সিন্ধু :: কাজী নজরুল ইসলাম
এই সব ভালো লাগে :: জীবনানন্দ দাশ
শীতে ভালোবাসা পদ্ধতি :: আবুল হাসান
শীত এলে মনে হয় :: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
শীত আবাহন :: কুমার দীপ
পৌষের শীত :: মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
আমাদের শীতকাল :: তৈমুর খান
শীতাচ্ছন্ন পংক্তিমালা :: মাঈন উদ্দিন জাহেদ
শীত :: হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
বেয়াড়া এক শীত পাখির ওম :: হরেকৃষ্ণ দে
শীতের বুড়ি :: গণেশ পাল
শীতের ছড়া :: ছন্দা দাশ
শীতের রাতে :: অরুণাভ সরকার
শীতের ছড়া :: কামরুল আলম
শীতকাহন :: সৌমেন দেবনাথ
দেখেও দেখি না :: সুকান্ত মজুমদার
হিমেল হাওয়া ঝিরঝিরে :: মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
শীতের এ সময়ে :: মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
শীত নেমেছে :: কবির কাঞ্চন
শীত ও পথশিশু :: শাহীন রায়হান
শীতের রাতে :: শেখ একেএম জাকারিয়া
শীতের সকাল :: লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
শীতের অপেক্ষায় :: তাইম শেখ
কে এলো পৌষে :: খালীদ শাহাদাৎ হোসেন
শীতের বুড়ি :: নারায়ণ চন্দ্র রায়
বঙ্গ মায়ের ঘরে :: শরীফ সাথী
মায়ের মত :: জাহাঙ্গীর ডালিম
শীতের সকাল :: সুরজিৎ সী
শীত আবার আসবে :: স্বপন শর্মা
শীত আর তুই :: সোনেলা দরজা
শীতের আগমন :: মেহেদী হাসান মান্না
কাজী নজরুল ইসলাম
ওগো বন্ধু, ওগো প্রিয়, তব সেই তীরে!
খেলিতে আসিয়া হায় যে কবি বিবাগি
সকলই হারায়ে গেল তব বালুচরে,–
তব লোনা জল লয়ে,– তব স্রোত-টানে
ভাসিয়া যে গেল দূর নিরুদ্দেশে পানে!
দোলাইয়া ফেলে দিলে দুরাশা-সীমায়,
খেলিতে আসিনি বন্ধু, এসেছি এবার
দেখিতে তোমার রূপ বিরহ-বিথার।
সেবার আসিয়াছিনু হয়ে কুতূহলী,
হারায়েছি মণি যথা সেই সিন্ধু-তীরে!
তবু ফিরে ফিরে আসে! বন্ধু গো, তেমনি
হয়তো এসেছি বৃথা চোর বালুচরে!–
তবু ঘুরে মরে কেন,– কেন সে কে জানে!
তারি লাগি আধ-রাতে অভিসারে চলে
অবুঝ মানুষ, হায়!– ওগো উদাসীন,
হয়তো হারানো মণি ফিরে তারা পায়,
হারায়ে সে চিরতরে! এ জনমে তার
দিশা নাহি মিলে, বন্ধু!– তুমি পারাবার,
যা ডোবে তা চিরতরে ডোবে আঁখিজলে!
রত্নহার! কিন্তু হায় জিনে শুধু মালা
কী হইবে বাড়াইয়া হৃদয়ের জ্বালা!
হে উদাসী বন্ধু মোর, চির আত্মভোলা,
কীসের করুণা মাখা! কূলের সিথানে
এলায়ে শিথিল দেহ আছ একা শুয়ে,
তেমনই উঠিয়া দূর গগন-সীমায়,
ফুলে ফুলে কূলে কূলে কাঁদ অভিমানে,
বুকের প্রিয়ারে ত্যজি পথের প্রিয়ায়!
অন্ত তব, পেতে ঠাঁই অন্তহীন চিতে!
এসেছি দেখিতে তারে সেদিন বর্ষায়
খেলিতে দেখেছি যারে উদ্দাম লীলায়
বিচিত্র তরঙ্গ-ভঙ্গে! সেদিন শ্রাবণে
ছলছল জল-চুড়ি-বলয়-কঙ্কণে
শুনিয়াছি যে-সঙ্গীত, যার তালে তালে
নেচেছে বিজলি মেঘে, শিখী নীপ-ডালে।
যার লোভে অতি দূর অস্তদেশ হতে
ছুটে এসেছিনু এই উদয়ের পথে!–
সেই পথে – মেঘ যথা যায় পথ ভুলি।
না মানিয়া কাজলের ছলনা নিষেধ
চোখ ছেপে জল ঝরা, –কপোলের স্বেদ
মুছিবার ছলে আঁখি-জল মোছা সেই,
থর থর কাঁপে আজ শীতের বাতাস,
সে যদি হারায় কভু সাগরের জলে
কে তাহারে ফিরে পায়? নাই, ওরে নাই,
পুবালি হাওয়ার শ্বাসে বরষা-কাঁদনে,
দু ফোঁটা শিশির আর অশ্রুজল-পাতে!”
হয় তব কূলে কূলে আমার সে ডাক!
ঘুমাও একাকী যবে, নিশব্দ সংগীতে
ভরে ওঠে দশ দিক, সে নিশীথে জাগি
ব্যথিয়া ওঠে না বুক কভু কাও লাগি?
ফিরিয়া চাহ না তব কূলে কল্পনাতে?
যে চাহে তোমায় তারে চাহ না কি ভুলে?
বসে আছি, চলে যায় কত দিবা-নিশা!
তার পদতলে বসি গাহি শুধু গান!
ভরিতে নারিল যাহা– তারে আমি আনি
ধরিব না এ অধরে! এ মম হিয়ার
বিপুল শূন্যতা তাহে নহে ভরিবার!
কূল ছাড়ি চলে যাব দূরে বহুদূরে।
বলো বন্ধু, বলো, জয় বেদনার জয়!
ঘুরে মরে; গৃহবাসী হয়ে উদাসীন–
মালা-গাঁথা যে-বিরহে, যে-বিরহে জাগে
চকোরী আকাশে আর কুমুদী তড়াগে;
হয়তো আসিব পুনঃ তব কূল বাহি।
হেরিব নতুন রূপে তোমারে আবার,
গাঁথিব গোপনে বসি। নয়নের ঝারি
বোঝাই করিয়া দিব তব তীরে ডারি।
হয়তো বসন্তে পুনঃ তব তীরে তীরে
ফুটিবে মঞ্জরি নব শুষ্ক তরু-শিরে।
আসিবে নতুন পাখি শুনাইতে গীতি,
পুড়িবে একাকী তুমি মরূদ্যান হয়ে
আসবি সেদিন বন্ধু, মম প্রেম লয়ে!
জীবনানন্দ দাশ
আমারে ঘুমাতে দেখে বিছানায়, -আমার কাতর চোখ, আমার বিমর্ষ ম্লান চুল-
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমাহীন গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে,
ফিরে এল; রং তার কেমন তা জানে অই টসটসে ভিজে জামরুল,
মলিন পাখনা তার খড়ের চালের হিম শিশিরে মাখায়;
নিমপেঁচা তবু হাঁকে : ‘পাবে নাকো কোনোদিন, পাবে নাকো
কোনোদিন, পাবে নাকো কোনোদিন আর।’
আবুল হাসান
সন্ধেবেলা তোমার চুলে শিশির ভরে রাখবো লক্ষ্মী
তোমার অনামিকায় কামড় দিয়ে আমি হঠাৎ আবার
‘যাহ-কী-দুষ্ট’ ওষ্ঠে তোমার ওষ্ঠ ছোঁবো সকাল বেলায়
সূর্যোদয়ের কাছে কেবল শান্তি চাইবো, বুঝলে কনক
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সোনালী ফসল, কত রোদ ও বৃষ্টির স্বপ্ন যেন
স্নেহ লেগে আছে
লাউমাচায়, গরু ও গরুর ভর্তা সবান্ধব পুকুরের পাশে
মুখে বিশ্রামের ছবি, যদিও কোমরে গ্যাঁটে ব্যাথা।
মধুময় হয়ে যাবে, যে রকম চেয়েছেন পিতৃপিতামহ
তাদের মৃত্যুর আগে ভেবেছেন আর দুটো বছর যদি…
এবার সমস্ত কিছু...
কুমার দীপ
শরৎ-পদ্যে মুখরিত কবিতার পাতা-পত্রাদি
রূপের স্বতন্ত্রকলা উধাও, তবু হেমন্তরূপে
বিমোহিত জীবনানন্দ কলমে আঁকেন জ্যোৎস্না!
রুটির ধরনে ভাঁজে যে বোশেখ, তারই বিরহে
দুবাহু বাড়ায়ে দাঁড়ায়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
অথচ, এমন শুভ্র, সুনিপুণ উষ্ণতাপিয়াসী;
করতলে; তার জন্য গাঁথা নাই পঙ্ক্তির হার!
তোমার মিঠেল রোদে পিঠ রেখে, ফুরবো এ কাল।
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ॥
ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক।
মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক॥
তৈমুর খান
ছেঁড়াখোঁড়া স্বপ্নগুলি সেলাই করি
স্বপ্নের কাঁথায় মুড়ে থাকি
কাঁপন পেলেও কাঁপি চুপচাপ
আগুন পুড়িয়েছে হৃদয়
তার উষ্ণ যৌবনে পরকীয়া
অবুঝ শিহরনে নষ্ট হই
তবু সূর্য চেয়েও দ্যাখে না ভাগ্নেকে
আসে যায় রোজ নিজের খেয়ালে
ধানের সবুজ ঠোঁটে হাসে
শীতকাল শিশিরের অশ্রু টলমল
ক্ষয় হওয়া দরজার চৌকাঠে দাঁড়ায়
মাঈন উদ্দিন জাহেদ
বোহেমীয় অরণ্য জ্বলে, কাঁদে, অস্তিত্ব হারায়।
এমন মূঢ় দিনে মানুষের বুকেই আশ্রয় খুঁজে
শিশু ক্যাঙ্গারু কিংবা প্রচীন সিনানথোপাস।
অথচ আজ মানুষই সবচেয়ে অবিশ্বস্ত বটে
বুকে গেঁথে আটকে নেয়া প্রযুক্তি-অক্টোপাস।
আমাদের সুশীল নামক কল্পিত সমাজে;
হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
দেয় নাড়িয়ে দেহের ভিত
শীত
দিনে রবির কাছে হেরে
সন্ধে ঘনিয়ে এলেই জিত
শীত
সঙ্গে আনে পিঠে পুলি
হরেকরকম মেলা গীত
শীত
বয়স্কদের দুমড়ে দিয়ে
দাপিয়ে খেলে চু কিত কিত
শীত
বাগানে ফুল ফল ফলিয়ে
সর্বজনের করে হিত
শীত।
হরেকৃষ্ণ দে
বাসার ভেতর শিশিরের দানার মত আমাকে খুপে খুপে খায়
উত্তুরে বাতাসের পাড় ভেঙে হাঁটি
মেরুভল্লুকের লোমশ রোদ খাওয়ার জন্য
বার বার চিৎকার করে
আমি শীত কাতুরে হৃদপিণ্ড খুলে বেঁটে দিই
ভালোবাসার গাঁদা রং
শীতফুল সাজায়
টনটনে মনের তন্তুতে নেচে ওঠে কলরব
ধনেশের ঠোঁটে বার বার ঠোক্কর খেতে খেতে
ডুবে যাই
সর্ষে ক্ষেতের গ্ল্যাসিয়ারে
মনন রাগের প্রাত্যহিক ভোর ক্রন্দসীর নেকলেস
জুড়ে জুড়িয়ে নিই বেয়াড়া এক শীত পাখির ওম৷
গণেশ পাল
আহা শীতের বুড়ি ঠকঠকায় ।
শীতে পাটিজড়া-পুলি-পিঠা
শীতের বুড়ি খাওয়ায় বড় মিঠা ।
শীতের বুড়ি লেপের ভেতর
গরম ধরায় মনের ভেতর ।
শীত শীত বেজায় শীত
শীতের বুড়ির নেই ভয় ভীত।
তবু আসুক শীত, তবু থাকুক শীত ।
ছন্দা দাশ
হিম জমেছে ঘাসে,
কাঁপছে মানুষ ত্রাসে।
মেলছেনা তার আঁখি,
মুখখানিরে ঢাকি।
কাঁপছে থরো থরো
ঘুম আসেনা দু'চোখে তার
শীতের প্রকোপ বড়ো।
এসো না হয় ধীরে
তখন তোমায় বলবো না আর
যাওগো তুমি ফিরে।
অরুণাভ সরকার
আকাশে এখন কোনো সোনা
নেই, বহু আগে
ঝরে গেছে। রাগে
গর্জাতে গর্জাতে উত্তরের বায়ু
ছুটে আসে। ত্বক চাটে। পরমায়ু
টেনে ছিঁড়ে খায়
অন্ধকারে, থাবায় থাবায়
তাই এসো, আর কোনো বিলম্ব করো না
হাতে গোনা
এই তো সময়। আগে-পরে দিন
ছোট দিন, তারও দাবি সীমাসংখ্যাহীন
সে-দাবি মেটাতে হয় অক্ষরে অক্ষরে
প্রতিটি প্রহরে
তারই জন্য নিন্দা-স্তুতি, ঔদার্য-আক্রোশ
তাতে কোষ-অণুকোষ
অবসন্ন। অবসাদ অস্থি ও মজ্জায়
তাই ডাকি, এসো দুই চোখের শয্যায়।
কামরুল আলম
আমরা ঘুরি দিন রাতে
উদোম গায়ে ওরা কাঁপে
পায়নি খাবার তিন রাতে।
ওরা যখন ফুটপাতে
উৎসবেতে আমরা নাচি
শীতের পিঠা 'রুট' হাতে!
সইছে ওরা যন্ত্রনা-
কাব্য লেখার মন্ত্রনা!
চায় না গল্প, নাটিকা
একটা জামা, একমুঠো ভাত
দেন্ না পাঠক-পাঠিকা।
সৌমেন দেবনাথ
কনকনে ঠাণ্ডার গুরুগম্ভীর শাসনে দমে গেছে অকরিৎকর্মাদের দস্যিপনা
আগ্রাসী শীতের করাল গ্রাসে নুব্জপ্রায়, ছেড়াবেড়াপ্রায় তুমি আমি ময়- মুরব্বী
কুয়াশার পর্দা মধ্যদুপুর অবধি আনন্দের যত বারতাকে করে দিচ্ছে ছ্যাৎছুৎ স্যাঁতস্যাঁতে
কর্মপাগল দিনমজুর খাটা মানুষগুলো ঘরের মধ্যে শেকলবদ্ধ হাতপা বাঁধা
পূর্ব দিগন্তে ক্ষণিককালের জন্যে সূর্যদেব উঠলেও ভাবনার উপপাদ্য মেলে না
শীতের আবহে হেস্তনেস্ত হয়ে ঘরের মধ্যে থরথর কাঁপে অদ্ভূত দর্শনার দল
হিমেল হাওয়া আর হিম হিম হিম কুহেলীর ঝরঝর-চোখে দেয় ধোঁয়াশা
মনের স্টিশনে, চোখের চাকায় বা বুকের সীটে কত যে কবিতা জাগে বিরহরাগে
ধানের ঘ্রাণ, খেজুর রস বা তরতাজা বাহারি রঙের সবজি খাওয়ায় পড়ে ধূমরে ধূম
গৃহকোণে শিশির ঝরা দেখে আর চা পান করে নবদম্পতি অক্টোপাস বন্ধন বেড়ায়
ভালোবাসার নিষিক্ত ঘ্রাণে হৃদয়ের কাঁদা মাটিতে জাগে তাদের কত কাল্পনিক স্বপ্ন
ঘুম ঘুম চোখে লেপ কাথা কম্বল তল থেকে উঁকি মেরে আবার পলায়ন
আর আজন্ম পাগল মা ভোরে জেগে কত পসরা খাদ্য তৈরি করে খেতে ডাকে
সুকান্ত মজুমদার
দেখি,বহু শীত ফাগুনের অব্যক্ত কথা
তার নিথর যৌবন নিয়ে
এক টুকরো বুকে মাথারেখে
উষ্ণতার স্মৃতিকথা মাখছে,
অভিমানি স্থির দৃষ্টি দিয়ে অপলক
আপন হবার সংবাদ নিয়ে
সেই কব্বে থেকে এখনো নিশ্চুপ-
শুক্ন পাতায় প্রেমালাপ হয়ে মেখে আছে
অখ্যাত নিস্তেজ গুল্মরা
মজে যাওয়া জলাশয়ে দৈনতার সংসারে
যে যার মত নির্লিপ্ত প্রহর গুনছে,
বন গুলিকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে জড়িয়ে,
গ্রাম্য শীত রূপে উঠানে উঠানে
ঝরিয়েছ দেখছি খেলার ছলে
সজনে আর শিউলি পাতাদের,
তোমার শৈত আঁচলে করেছি উজাড়
আরো আবেশ নিয়ে ঘুমের ভানে
বুজেছি চোখ ঠাকুমার কোলে,
আর কুয়াশায় মুড়ে যাওয়া চাঁদ
তোমায় করেছে জীবন্ত রূপকথা।
অনেকদিন পর অনেকখানি তুমিকে
নিজের খুব নিকট দেখেও
খুঁজছি বিবাদি উষ্ণতা, হীন উত্তাপ-
আমি তুমিময় মিশে গিয়েছি কবেই,
পরতে না পারা চাদরে ঢাকা অতিকায়তা
নির্বাসিত আমির সর্বাঙ্গ ঢাকা তুমিতে
রাতজাগা পিঠের মাতন, নান্দনিক-
আমি ও আমার বিদগ্ধ চায়ের কাপে
তুমি আসতে পারনা জানি-
তবু সেই ছুঁয়ে যাওয়া খানি তেমনি গভীর
শুধু সাহস হারানো দৃষ্টি আবছা, মানি।
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
গ্রীষ্ম আসে ঘাম ঝরানো কাঠফাটা রোদ্দুর,
তারপরেই শীত আসে যে কুয়াশা চারদিক,
খড়ের আগুন তাপে গ্রামের মানুষ বাঁচে,
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
সম্পুর্ন আকাশটা এখন তারাদের দখলে।
তারাদের কিছু সাংকেতিক চিহ্নের সামনে
ছড়ানো শীতের পুরো রাত্রি।
শীতল শীতের হাওয়া আর কুয়াশার আদরে আর্দ্র
বৃক্ষের দেহে কবিতার মত জেগে উঠেছ তুমি I
দেওয়ালের ভিতর টেবিলে আমার লেখার খাতার
ব্যস্ততা বেড়ে উঠছে যতসব উদ্ভট অক্ষরগুলোর
সামনে আমিও ছাত্র হয়ে উঠেছি।
বিশ্বাস কর, আমি চাই
সব শেষে অনিবার্যভাবে ঘরে ফিরে যেতে I
কবির কাঞ্চন
জীবনটাকে রাঙাতে আজ
আয়রে তোরা আয় আমার সোনার গাঁ'য়।
সুখ কুঁড়াতে দলে দলে আয়রে তোরা আয়
আমার শ্যামল গাঁয়।
রবির আলো মাখতে গায়ে আয়রে তোরা আয়
আমার সবুজ গাঁয়।
শীতের মজা লুপে নিতে আয়রে তোরা আয়
আমার সবুজ গাঁয়।
তরতাজা ফল-সবজি খেতে আয়রে তোরা আয়
সবুজ শ্যামল গাঁয়।
ফিরনি পায়েস খেতে আজি আয়রে তোরা আয়
আমার সবুজ গাঁয়।
শাহীন রায়হান
শীতের ছোঁয়ায় তার আলপনা
ঘাস পাতাতে আঁকে।
চাঁদের বুড়ি চরকা কাটে
মেঘমালাদের ফাঁকে।
মানুষগুলো পেটেপুরে খায়
জড়ায় ঘুমের ফাঁদে।
মুখ লুকিয়ে সবুজ ঘাসে
হুহু করে কাঁদে।
শীত তাড়ানোর কাপড় বুনে
দাঁড়ায় ওদের পাশে
পথশিশুদের রাতটা পোহায়
দুঃখ ভুলে হাসে।
শেখ একেএম জাকারিয়া
খেতে লাগে জবর মিঠা
খেজুর গাছে হাঁড়ি,
শতরকম মজার পিঠা
বানায় বাড়ি বাড়ি।
খাচ্ছে সবাই শীতের রাতে
পিঠার সাথে কারি,
জমে ওঠে শীতের রাতে
যাত্রা-নাটক-জারি।
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ফুলবনে ফুল ফোটে সমীরণ বয়,
উঠোনেতে হাঁসগুলি করে কোলাহল,
ভাঙা পাঁচিলের পাশে বসে এক কাক,
তাইম শেখ
আমি মুগ্ধ হব তোমারই আগমনে
দুর্বাঘাস দিবে পা,
অভিমানে ঝরছে গাছের পাতা,
নতুন করে খুলবে খাতা।
ধরবে মাছ শান্ত পুকুরে
সর্ষে গাছে রয়েছে বর্ণ সবুজ
হলদে রঙে সাজাবে মাঠ
কেবল তোমারই অপেক্ষায়।
পাবে তার পূর্ণতা,
কুমারীত্ব, এখন বিবর্ণ ঐ স্বর্ণলতা।
ভোমর করে আনচান।
ঘরের কোণে একটুকরো আসা রোদ্রে
কবে পোহাবে আমার বাবজান?
সূর্যের সাথে খেলবে লুকুচুরি
কবে ভরবে খেজুর রসে
মাটির তৈরি হাড়ি।
খালীদ শাহাদাৎ হোসেন
শিশিরের ভাবী নাকি তুষারের বৌ সে
নাম তার শবনম নীহারী ঘোমটা
বরফের জুতা-মোজা ওটাতে ওমটা।
হিমালয়ে বাড়িঘর হিমাগারে বসতি
সুতিকায় অতিশয় অতিসরে প্রসূতি।
লোকালয়ে এলে প্রসু বাতাসে গায় গীত
নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে চারিদিকে ধায় শীত।
পশু পাখি জনগণ শীত কোপে হিমশিম
বুড়াবুড়ি ঠকঠক জরা ধরে ঝিমঝিম।
রবিকর হিমকরে চাপা পড়ে রশ্মি
হিম হিম বায়ু যেন প্রাণ নাশ দস্যি।
আসে মাঘ কাঁপে বাঘ গায়ে লেগে ঠাণ্ডা
হাঁস করে উপহাস জলে পাড়ে আণ্ডা।
কাল গুণে ফালগুনে যেই বহে দক্ষিণা
শীত গাহে বিপরীত শবনম সখি-না!
নারায়ণ চন্দ্র রায়
দেশে,
হেসে।
শীতের বুড়ি কাঁদতে এল
বঙ্গে,
সঙ্গে।
শীতের বুড়ি খেতে এল
চিতই-ভাঁপা-কুলি,
মস্ত বড় ঝুলি।
ঝুলির ভেতর রাখা ছিল
পান-সুপারি,
শতরূপা-বাহারি।
বুড়ির কথা বলতে বলতে
নাও দৌড়াইয়া চলি,
গানে-গানে বলি।
শীতের কাবু দেশের
সকল মানুষ,
মনের ফানুস।
বুড়ি তুমি যাও চলে যাও
ফিরে তোমার বাড়ি,
নইলে দিব আড়ি।
শরীফ সাথী
বঙ্গ মায়ের ঘরে,
খেজুর রসের সরে
দুধের সাথে গড়ে
সব মানুষই মুখের স্বাদে
খেয়ে গো পেট ভরে।
শীত সকালের এসব দৃশ্য
জানিয়ে দিতে সারা বিশ্ব
মনটা পাগল করে,
মিষ্টি কথা ঝরে।
বঙ্গ মায়ের ঘরে ॥
জাহাঙ্গীর ডালিম
শান্তি যে তার বুকে
দেশটি আমার বুবুর মত
পদ্য যে তার মুখে।
দেশটি আমার দাদুর মত
সূর্যি যেন হাসে
দেশটি আমার পিতার মতো
শিশির পড়া ঘাসে।
সুরজিৎ সী
আরো দুষ্টু হলাম আমি, শুয়েই আছি জেগে!
লেপের ভিতর মনটা, তবু তোমার কথা মনে পড়ে।
স্বপন শর্মা
তবু ধন্যবাদ জানাই আবার ফিরে আসুক নতুন রুপে
আমি যে ভালোবাসি পৌষের গাঢ় শীতকে
একথাটি হয়নি বলা তাতেই শীত বিদায় নিলো
যা বলার বলব আগামী শীতে।
এবার হয়নি বলা আগামীতে সব বলব।
ভালোবাসি শীতে শীতের ছন্দ পতন,
এবার শীতকে আসলে কিছুই হয়নি বলা,
বলতে চেয়েছিলাম শীত তোমাকে অনেক ভালোবাসি
বসন্ত আসছে দেখে শীত বিদায় নিলো যখন,
শীতের সাথে সখ্য গড়তে অনেক দিনের আশা,
শীতকে বড় হিংসা হতো, যখন ঠন ঠন করে
কাপাঁত আঠারো উর্ত্তীন সকল তরুনিকে
যখন স্বামীর চেয়ে লেপের প্রেম চাইত
যখন কাঁপা কাঁপা গলায় বলত ওগো শীত লেগেছে
ঠিক তখন হিংসা হতো ভীষন হিংসা হতো শীতকে।
তাছাড়া আমি ভালোবাসি শীতকে, এবারও শীত বিদায়ে
চোখের জলে বিদায় জানালাম অনেক ঘটা করে
ভালোবাসি এই কথাটি হয়নি বলা, বলব তা আগামী শীতে।
যা বলার বলব আমি আগামী শীতে।
সোনেলা দরজা
কুয়াশা ভোরে রোদের তাপ,
হাতের গরম চায়ের কাপ ।
কুয়াশা মাখা কনকনানি
ডুবের আগে সরিষা তেল,
সুবাস ছাড়া লিপজেল ।
খেজুর গাছের রসের কল,
আমলকি আর সফেদা ফল ।
বাঁশের চাড়ে লাউয়ের ডগা
টিনের চালে কুমড়ো ফুল,
লবন মরিচ, আপেল কুল ।
এপাড় ওপাড় হাঁটু জল,
শীতের রাতের কম্বল ।
ওল সুঁতায় নরম গরম
গলায় রঙিন মাফলার,
আর হাতাকাটা সুয়েটার ॥
মেহেদী হাসান মান্না
মুরি দিয়ে
শীত আসে হেঁটে
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
আকাশ মাঝে,
লতাগুল্মরা যায় কুঁকড়িয়ে,
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
কোনো গান,
টিকটিকির প্রাণ।
বারিধারা যেন মলিন হয়!
সবাই দ্যাখে,
কুয়াশার চাদর গায়ে
মুরি দিয়ে,
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
কচুপাতার কালি দিয়ে।
মাছরাঙা বলে শোনায়
নিজ হাতে কবিতা লিখে,
শীতকে করে দাওয়াত,
শীত আনে সওগাত।
একখানি কুয়াশার চাদর
গায়ে মুরি দিয়ে
শীত আসে হেঁটে
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Facebook: facebook.com/samoiki
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments