শাহজাদা আল হাবীব'র কবিতা

 
তুমিই ভ্যাক্সিন
 
তুমি এলেই দূরীভূত হবে সমুদয় বিষাদ-বিবাদ-বিস্বাদ
কর্মক্ষম হবে দেহ, প্রাণ ফিরে পাবে শ্বেত-রক্ত-কণিকা;
তুমি এলেই সচল হবে দেহ-ঘড়ি, 'ইমিউন সিস্টেম'
স্থাপিত হবে জীবাণু-বিধ্বংসী আণবিক মিসাইল।
 
'করোনা'; হোক জৈবাস্ত্র কিংবা কোন ঈশ্বরিক পরীক্ষা,
হরিত হোক 'সিভিল রাইটস'; পৃথিবী নিয়ে হোক নিরিক্ষা।
পেট্রো-ডলার ফলস করুক, বিশ্ব-বাজার হোক ভ্যাক্সিনের,
তবুও যদি ফিরে আসো; প্রিয়; 'ভ্যাক্সিন' লাগবে না আমার।
 
পৃথিবীতে আসুক ক্রিপ্টো-কারেন্সি, মানুষ হোক অনুগত
আজই চলে আসুক মেসায়াহ, ওরা তাকে জানাক স্বাগত?
ব্যাবিলনের মতো ধ্বসে পড়ুক পাশ্চাত্য কিংবা আমেরিকা
মস্কো, বেইজিংয়ে আঘাত হানুক ড্রাগন বা আণবিক হীরা।
তবুও যদি ফিরে আসো, তুমি; 'বাঙ্কার' লাগবে না আমার।
 
পৃথিবী ভালো নেই, নিদারুণ অসুখ তার-
তবুও তুমি চলে এসো প্রিয়;
তুমি ছাড়া আমার কে আছে পৃথিবীতে আর?
..................................................
 
প্রেমিক কখনো প্রাক্তন হয় না
 
অদৃশ্য কারাগারে,
বুকের সীমান্ত যে সংরক্ষিত
নতজানু মন তো বুঝে না।
যে হৃদয়ে কোন অধিকার নেই,
অন্য সাম্রাজ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ;
সে হৃদয়ে কেন পড়ে থাকে মন?
 
মহাকালের অতলে,
বৃন্ত হারিয়েছে ফুল, বৃক্ষ খুইয়েছে মূল
শুধু কালপুরুষ জানে, কার কতোটুকু ছিলো ভুল!
আগুনের পুরনো খেলায়,
কয়লা পোড়ালে হয় লাল, বেদনার শাড়ি হয়ে উঠে নীল
তবু পাঁজরের জাদুঘরে থাকে তোমার হাসি অমলিন।
 
নিঃসঙ্গ নিশিতে,
জোছনা রাত, আকাশের তারা,
এবং সাক্ষী অত্যাধুনিক প্রযুক্তি --
একদিন ইশারায় কাছে ডেকেছিলে
দেহের ভাঁজ খুলে দিয়ে পাশে বসেছিলে
যৌথ পাঁজরের সন্ধিকে আপন ভেবেছিলে।
 
স্বর্গ থেকে মর্ত্য,
বিরাজমান নক্ষত্র তারকারাজি
আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সি জানে অর্ফিয়াসের বাঁশি --
তুমি একদিন আমায় ভালবেসেছিলে।
হে পৃথিবী শোন,
প্রেমিক কখনো প্রাক্তন হয় না।
..................................................
 
অভিমানের কবিতা
 
অভিমানের হিয়ায় যে তরী ভাসিয়েছে প্রেয়সী
সে তরী এসে ভিড়েছে অনুযোগের পর্বত শিখরে।
 
সমুদ্রের গর্জন বাড়ি ফেবার পর সে বললো-
কবি, কতোকিছু নিয়ে লিখলে কবিতা,
কৃষ্ণ অক্ষরের সুবিন্যস্ত চিত্রকর্মে দেখাও রঙ্গিন বিপ্লব,
তুলির কোমল ছোঁয়ায় আঁকো বিশ্ব-রাজনীতির নাড়িনক্ষত্র।
কবিতার পরিণত ধ্রুপদী শ্লোক হয়েছে জনপ্রিয় স্লোগান,
সে স্লোগানের মাদকে মাতোয়ারা হাজারো বিপ্লবী তরুণ।
তারা মিছিলে মিছিলে গাইছে-
অত্যাচারীর খতম হোক, দুঃশাসনের পতন হোক
স্বৈরাচারী নিপাত যাক, ফ্যাসিজম ফাঁসিকাঠে যাক
সাম্রাজ্যবাদীর পতন হোক, জাদুকরের পতন হোক।
 
তোমার পঙক্তিতে কেঁপে উঠা শাসকের গদি শেখে
তাজা রক্তের ঘ্রাণ দিয়ে কেনা স্বাধীনতার মূল্য দিতে।
 
শেষে আহ্লাদিত কণ্ঠে অভিমানের সুরে সে বললো,
অথচ আমাকে নিয়ে একটি কবিতাও লিখলে না!
এতোটুকুও কি সময় হয় না আমাকে নিয়া ভাবার?
তোমার কাছে কি আমি একেবারেই মূল্যহীন?
 
অভিমানের চোয়ালে দু'হাত রেখে
চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে বললাম,
তোমার জন্য অধম আমি কি আর লিখবো বলো
আজ তারায় মেলায় সন্ধি হবে, সঙ্গে আমার চলো।
শোন আমার এক পৃথিবী, নিত্য ভোরের সবিতা
তুমি নিজেই ফুটন্ত গোলাপে যেন জলজ্যান্ত কবিতা।
..................................................
 
চিঠি দিও
 
মৌমাছিকে চিঠি দিও জুঁই
দূরে দূরে রই তবু চিঠিটা তো ছুঁই!
ঝরাপাতার মর্মরে আবারো বাজুক পুরনো সুর
পাহাড়ি নির্জন দুপুরে ভাসুক একটি পদ্ম-পুকুর।
 
পাপড়ির কপালে চুমু খেও গোলাপ
মেঘমালা শুনবে না গোপন তারার প্রলাপ;
সিংহল পাড়ি দিয়ে কিনে দিবো নিশীথ দুপুর
আলতা-খুন রাঙা চরণ যুগলে মেখে নিও নুপুর।
 
অলিকে ভালোবেসো ফুল
ভালোবেসে কে না করেছে ভুল?
আঙ্গুলে ফাঁকে চেয়ে দ্যাখো বকুল
প্রণয়ের পরশ পেতে উত্তাপ ব্যাকুল।
 
কালো ভ্রমরকে টেনে নিও পুরনো উর্বর বুকে,
রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে ফলাবো ফসল আদিম সুখে।
..................................................
 
আঁধার থেমে গেলে
 
যদি পুনরায় প্রেমে পড়ো- চিঠি দিও
চিঠি দিও পাপড়ির খামে ভরে গোলাপের সুবাস ছুঁয়ে
যেভাবে দিয়েছিলে প্রথম কাঁপাকাঁপা হাতে স্টেশনের চত্বরে।
 
যদি পুনরায় অভিমান জাগে- চিঠি লিখো
চিঠি লিখে ক্রোধে পুড়িয়ে দিও আগুনের প্রাচীন শিখায়
যেভাবে পুড়িয়েছিলে গত বসন্তে তোমার রক্তজবার আভায়।
 
যদি এখনো কবি ভাবো- কবিতা চেও
কবিতা চেও প্রশান্ত প্রহরে, নির্জন দুপুরে, নিশীথ রজনীতে
যেভাবে চাইতে তুমি কৃত্রিম গ্রন্থি হীন প্রণয় দোলাতে দোলাতে।
 
আর যদি বাস্তবতাকেই ভালোবাসো- ভুলে যেও
ভুলে যেও যেভাবে ভুলে যায় জননী প্রসবের যন্ত্রণা
আমি আক্ষেপকে নিয়ে বেঁচে থাকবো, সঙ্গে কল্পনা।
..................................................
 
পৃথক সায়র
 
কেউ কি জানে একটা মানুষ 'বার মারা যায়?
কেউ জানে না একটা হৃদয় 'বার পুড়ে ছাই!
'ভাল থেকো' বললেই কী ভালো থাকা যায়?
ভাল রাখার মানুষ ফেলে ভালো থাকা দায়।
 
ভাল যদি চাইতেই আমার থেকেই যেতে তুমি
প্রেমের তৃষে, আফিম মিশিয়ে যেতে অধর চুমি!
প্রস্থান হোক মেকি যাওয়া; চলে এসো ফের?
চেয়ে দ্যাখো বুকের ভেতর ভালোবাসা ঢের।
 
আমরা দু'জন দু'জাহাজের দু'টি দেশের যাত্রী
সাগর জলে দুঃখ জ্বলে, কাটছে বিষাদ রাত্রী;
নীল সায়রে স্রোত থেমেছে -- স্তব্ধ বায়ুর কান
তোমার জন্য পুড়ে নগর, মন করে আনচান।
..................................................
 
আদিম উৎসব
 
নদীর চিরায়ত ভাঁজে, ভিজেছে আঁচলের খাঁজ;
নদীতে যত বাক- ছুঁয়ে শুনেছি তত ডাহুকের ডাক।
সাগরে আছে যত জল, সে জলের গভীরতা অতল;
বারমুডায় আছে যত খাদ, সে খাদ হতে পারে ফাঁদ!
 
ডুবুরি হারিয়েছে দিশা, পেয়ে বসেছে জলের নেশা,
গিরিখাদ সেঁচে মাপতে গিয়ে জল- যে জল জানে ছল।
জল-ছল-নদীর শীৎকারে ভুলে গিয়ে চিরায়ত পথ,
দু'জন দু'জনার যুগল হয়েছে, উপেক্ষিত ভিন্ন মত।
 
যুগল পর্বতের উপত্যকায় সৃষ্ট বৃষ্টিতে,
জলপ্রপাতের কার্যকারিতা বাড়ে দৃষ্টিতে।
পর্বতের মিষ্টি আদিম প্রথাগত প্রপাতের জলোৎসবে,
মৌনসন্ধ্যার শীৎকারে জলধারা নামে আমাদের নামে।
..................................................
 
বিচ্ছেদ
 
শব্দ বিনিময় থেমে যাওয়া মানেই নয় বিচ্ছেদ,
বিচ্ছেদ মানে নয় রজনীতে ছলছল চোখের ভুল।
বিচ্ছেদ হলো দূরত্ব- পাশাপাশি থেকে শত আলোকবর্ষ;
অথবা বিচ্ছেদ যেন ভুল তীরে ঝরে পড়া কোন ভুল কাশফুল।
..................................................
 
নিখোঁজ
 
আমার আমি নিখোঁজ হলো
একলা আমায় ফেলে;
খুঁজছি তাকে অহর্নিশ
নাওয়ে পাল তুলে।
 
এক পৃথিবী খোঁজার পরে
এখন ভীষণ ক্লান্ত;
যার জন্য এতকিছু
সে যদি জানতো।
..................................................
 
নিরব প্রত্যাখান
 
যারা ভালোবাসা দিতে এসেছিলো-
হাতে তারকারাজি কিংবা গোলাপ নিয়ে
বুকে তিস্তা-ধরলার স্রোত, নিগূঢ় হৃদয় দিয়ে
ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি।
 
বাওয়ালি নই; খুঁজিনি মাংসের ঘ্রাণ, বাউলও নই
অপ্রথাগত জীবনে স্কোফিল্ডের মতো প্ল্যান নেই
চোখ দু'টোকে বাইনোকুলার বানিয়ে দেখেছি শুধু
ভিনদেশী তারকা, মস্তিষ্কের ফিকশন, ইতিহাসের বাইজি।
 
যারা ভালোবাসা দিতে এসেছিলো,
তাদের 'শুণ্য' দিয়ে দু'হাত ভরে ফিরিয়ে দিয়েছি
ভালোবাসা নিতে আসি নি, দেওয়ারও সামর্থ্য নেই
হয়তো আমি ভালোবাসার অযোগ্য ছিলাম;
তাই নিতি সবার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছি।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.