আলিফ লায়লা : আরব্য রজনী_পর্ব-৫৬

 
ইঁদুর আর নেউলের গল্প
শাহরাজাদ বলে, যো হুকুম, জাঁহাপনা? এবার আপনাকে ইঁদুর আর নেউলের গল্প শোনাচ্ছি :
একটি স্ত্রীলোক ক্ষীরার বিচির ডাল বিক্রি করতো। একদিন এক খদের এসে ফরমাস দিয়ে গেলো, ডাক্তার তাকে ক্ষীরার বিচির ডাল খেতে বলেছে। শুনলাম, মেয়ে, তোমার কাছে নাকি ভালো জাতের ডাল পাওয়া যায়। তা আমাকে সেরা পাঁচেক বানিয়ে দাও।
মেয়েটি বলে, কাল এসো পাবে।
সেদিন সে খুব যত্ন করে ডালগুলো বানিয়ে একটা ডালায় করে তক্তপোশের নিচে রেখে দিলো।
পাড়ারই অন্যবাড়ির একটা নেউল এক ফাঁকে তার ঘরে ঢুকে খানিকটা ডাল খেয়ে পালিয়ে গেলো। সকালবেলায় মেয়েটি যখন ডালা বের করে দেখে ডালের দানা অনেক কম। মেয়েটি গজ গজ করতে থাকে, ইঁদুরগুলোর মুখে আগুনমুখে আগুন। সব খেয়ে কেটে শেষ করে দিলো। বেড়ালটা যদিন বেঁচে ছিলো একটু শান্তিতে ছিলাম। যেই সে মরে গেলো, আমনি তোদের দৌরাত্ম্য আরম্ভ হয়েছে। দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি। এখন আমি খদেরকে কি বলি?
ঘরের পিছনে আডি পেতে নেউল সব শুনলো মেয়েটির কথা। তাহলে মেয়েছেলেটা ইঁদুরগুলোকেই সন্দেহ করেছে
এইভাবে প্রায় রোজই মেয়েটি ডাল তৈরি করে রেখে দেয়। আর রোজই নেউলটা এসে খানিকটা সাবাড় করে দিয়ে যায়।
মেয়েটি তো রেগে কাই। ঝাঁঝালো কণ্ঠে গালাগালী দিতে থাকেওরে ইদুরের বাচ্চা ইঁদুর, আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন, তাই আমি দেখবো। সারা রাত আজ আমি জেগে বসে থাকবো, দেখি বা ধন কখন তুমি আসো।
নেউল দেখলো এই মউকা। সে ইদুরের কাছে গিয়ে বললো, ইঁদুর ভায়া ইঁদুর ভায়া, কেমন আছো?
ইঁদুর বলে এই চলে যাচ্ছে আর কি?
তোমাকে একটা সুখবর দিতে এলাম, ভাই। আজ রাতে তোমাদের মালকিন ক্ষীরার বিচির ডাল তৈরি করেছে। বড় মজাদার খানা। তা তোমায় কানে কানে বলি, তক্তপোশের তলায় একটা ডালায় করে রেখে দিয়েছে। ইচ্ছে করে তো খেয়ে আসতে পারো। আমি এইমাত্র খেয়ে এলাম, বডিয়া চিজ।
ইঁদুর বলে, তুমি আমার সত্যিকারের দোস্ত। তা না হলে এমন সুখবর কেউ দেয়? আমি এখুনি যাচ্ছি। খেয়ে আসি চারটে।
ইঁদুর মনের আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। কোনও দিকে দৃকপাত না করে সে তক্তপোষের তলায় ঢুকে কুট কুট করে ডালের দানা খেতে থাকে। এদিকে নেউলটা ঘরের দাওয়া দিয়ে মালকিনের সামনে দিয়ে চলে যায়। মালকিন ভাবে নেউলটা ঘর থেকে বেরুলো না তো। একটা লাঠি হাতে ঘরে ঢুকে দেখে মহা আনন্দে ইঁদুর তার এত পরিশ্রমের ডালগুলো খেয়ে শেষ করছে। লাঠির একঘায়ে ইঁদুর ধরাশায়ী হয়। ওদিকে নেউল হাততালি দিয়ে নেচে ওঠে।
কাক কাঠবেড়ালীর কাহিনী
বাদশাহ শারিয়ার বলে তোমার ছোট্ট ছোট্ট গল্পগুলো বেশ সারগর্ভ। অনেক কিছু শেখা যায়। এরপর বিশ্বস্ত বন্ধুর কাহিনী শোনাও।
শাহরাজাদ বলে, শুনুন জাঁহাপনা একটি কাক আর কাঠবেড়ালীর কাহিনী শোনাচ্ছি। একটি কাকের সঙ্গে এক কাঠবিড়ালীর খুব বন্ধুত্ব ছিলো। একদিন তারা দুই বন্ধু মিলে গাছের গুডির উপরে বসে জমিয়ে গল্প করছিলো। এমন সময় গাছের ওধারে কখন একটা বাঘ এসে দাঁড়িয়েছে কেউ টেরই পায়নি। বাঘাটা যখন হুঙ্কার দিয়ে ওঠে তখন কাঠবিড়ালীর পিলে চমকে যায়।
বাঘের গর্জন শুনে কাক তার বন্ধুর পাশ থেকে উড়ে গিয়ে উপরের একটা ডালে গিয়ে বসে। কিন্তু কাঠবিড়ালী ভেবে পায় না কোথায় সে লুকাবে। কাককে জিজ্ঞেস করে, কি করি বন্ধু तृळऊ?
কাক বলে, তাই তো? মুশকিল হলো, তোমাকে কি করে বাঁচানো যায়, বুঝতে পারছি না। বাঘ ব্যাটা ধারে কাছেই এসে পড়েছে। এখুনি হয়তো হালুম করে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
এমন সময় কাক দেখতে পেলো, অদূরে মাঠের মধ্যে একপাল ভেড়া চরছে। তাদের পালে কয়েকটা সিংহের মতো তাগড়াই কুকুর ছিলো। কুকুরগুলোকে রাখা হয় বাঘের হাত থেকে ভেড়াগুলোকে রক্ষা করার জন্য।
কাক উড়তে উড়তে গিয়ে কুকুরগুলোর চোখে ঠোকা মেরে উড়ে উড়ে পালাতে লাগলো। রাগে হুঙ্কার দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে কুকুরগুলো। পায় তো কাকটাকে চিবিয়ে খায় আর কি! কিন্তু কাকের সঙ্গে তারা এটে উঠতে পারবে কেন। সে ঠোকা মেরেই আবার শূন্যে পালিয়ে যায়। কাকের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে কুকুরগুলো দিগবিদিগ জ্ঞানশূন্য হয়ে উড়ন্ত কাকের নিশানা লক্ষ্য করেই ছুটতে থাকে। কাকেরও সেই উদ্দেশ্যই ছিলো। এইভাবে সে তাদের বাগের মধ্যে নিয়ে আসে। একটা গাছের ডালে বসে কাকটা কুকুরগুলোর দিকে তাকিয়ে জুলজুল করে হাসতে থাকে। তখন কুকুরগুলোর সে কি বিকট চিৎকার। পারে তো তারা পুরো গাছ সুদ্ধ কাকটাকে গিলে ফেলবে।
কুকুরের এই চিৎকারে বাঘ ব্যাটা হাওয়া হয়ে যায়। কাক তখন উড়ে অন্যত্র চলে গেলে কুকুরগুলোও হতাশ হয়ে ফিরে যায়।
তখন কাক এসে কাঠবিড়ালীকে বলে, কী। এখন ভয় কেটেছে তো?
কাঠবিড়ালী বলে সত্যিই তুমি বন্ধুর মতো কাজ করেছ ভাই।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.