সুরমা খন্দকার’র কবিতা


অসীম কৃতজ্ঞতা তোমায়
 
অশরীরী চেতন্য, এতটা প্রসন্ন চিৎকার, নীরব প্রতাপ গর্জন!
ভালোবাসা ছাড়া কে পারে এই নিগূঢ় অগ্নিতে অন্দরে পোড়াতে?
 
পঙ্ক্তিমালায় তোমার শব্দ যে একাকিত্ব দিয়েছিল আমায়
যা জেট বিমানের গতিবেগে নিঃস্ব করেছিল
বারবার যে ক্রন্দন পুষে উঠেছিল বুকে শূন্যতার বন্দরে
যা বয়ে চলে প্রথম প্রেমানুভূতির নহরে।
 
ভেতরে যে আগুন পোড়ে, গহিনে যে নহর বয়ে আলোর কি ভীষণ বন্যা হয়!
তাতে প্রতিস্থাপন করেছি তোমার প্রেম অসীম কৃতজ্ঞতা তোমায় ভালোবাসা এমনই।
 
সবটুকু সব নিয়ে নিঃস্ব করে তারপর চলে যায়
অজানার পথে দু'এক মুহূর্ত রোদ্র আভা হৃদয়ের নীলাভ আকাশে
অসীম বেদনা বিছিয়ে রেখে চলে মহা রথে।

……………………………………………
 
তুমি মানুষ তুমি নারী
 
তোমার মূলত হতে হবে কী
 তুমি ও তা জানো না।
তারপর তোমাকে আস্তে আস্তে জানিয়ে দেওয়া হয়,
তুমি হবে মাটি।
তুমি হবে শক্তি সম্পন্ন উর্বর।
কেবল সোনা ফলাতে শক্তিধর।
বাঁচার অধিকার তোমার দিয়েছে কেউ।
সম্মান নিতে হয় তোমার কেড়ে।
নিতান্ত ভালো না লাগলে তোমায়
আকার তোমার বদলাতে চায় ভেঙেচুরে।
তোমার জন্য ভক্তি হবে, উক্তি হবে,
লোক দেখানো স্ট্যাটাস হবে।
 তবু তোমার আত্মরক্ষায়
তোমায় কুস্তিগীর হতে হবে।
 তুমি বাগানের ফুল হবে।
তোমার সুগন্ধ নেবে, তোমায় দেখে আপ্লুত হবে,
 মাতাল হবে
তারপর বলবে তুমি ঢেকে রাখো
 তোমার সংবেদনশীলতায় লক করো,
 গেট দাও তুলে,
নারী তুমি মানুষ হয়ে জন্মেছো যুদ্ধের ময়দানে
নারী তুমি ফুল হয়ে ফুটেছো পৃথিবীর কুঞ্চিত উঠোনে।
……………………………………………
 
তুমিহীন শহর
 
তোমাকে পাওয়ার তৃষ্ণা আমায় আর উদভ্রান্ত করে না।
বুকের সীমানায় তোমার আর দখলদারি নেই।
তোমাকে ছুঁতে পারার কোনো গ্লানি আর কাতর করে না আমায়।
তোমাকে বলার জন্য আর কোনো কথা নেই।
কাউকে জিজ্ঞেস করি না।
ঠিকানা খুঁজি না তোমার।
শব্দদের আমি বুঝিয়ে বলেছি তারা আর তোমায় নিয়ে লুকোচুরি খেলে না।
এলোমেলো অক্ষরে রাখে না খাতার পাতায়।
হঠাৎ কোনো মোচড় হয় না বুকের ভিতর।
ভুল করে কাউকেও ডাকি না তোমায় ভেবে।
সকালে উঠে ভাবি না আর আজকের দিন শুভ হোক।
রোজ ভাবি শহর ছেড়ে,
পৃথিবী ছেড়ে গেলে হয়তো
আমার একটা তুমিহীন শহর হবে।
……………………………………………
 
একজন কবি
 
কবির মুখ থেকে নিঃসৃত বাণী কোনো আত্মকথা নয়।
কবি হলো সমাজের চোখ, অবরুদ্ধতার মুক্তি, বাকহীনতার সবাক।
কবি হলো বিস্তর একা বিশ্ব চরাচর সর্বস্বটায় বুক জমিনে আঁকা।
 কবির ক্ষমতা জুড়োনো, শূন্যস্থান পূর্ণ করা আর শূন্যতাতে অবগাহন করা।
শিকড় বাঁকলে ঘেরা বিষাদ বৃক্ষ। এক জীবন্ত দহন ঘর করে কবির বুক জুড়ে।
 ছন্দের আচ্ছাদনে কবি লুকিয়ে রাখে ফাঁসিকাঠ শিকলের মোহচ্ছব।
কথারা প্রিয় ছন্দ হয়ে সকাল সাঁঝে কবির বুকে।
কবির লালিত জন্মভূমিতে আজন্ম দুঃখ নিবাস।
কবি রাতের কান্না দেখে, বাতাসের বাজনা শুনে।
নিবিড় আঁধারে কবি আলোর দ্যুতি পায়।
নিজেকে খুঁজে কবি দীন হীনে তৃণে মনে হয় মিশে রয় পথের ধুলোয়।
……………………………………………
 
বিষাদিনী তোমাকে চাই
 
একাকীত্ব ঠিক জানে কতোটা কেঁদেছি আমি।
শূন্যতাও বুঝে গেছে কত রেখেছি চেপে দীর্ঘশাস
বয়ে যাওয়া বেনোজলের যে কানামাছি
তাতে ধুয়ে মুছে যায় বিশ্বাস।
তুমি তো জানো না,
কিভাবে ভেঙেছে হৃদয়ের কূল।
কিভাবে সুখ নিবাসে লাগিয়েছি বিষন্ন বকুল...
নিরবতা, নিসঃঙ্গতার গহ্বরে বার বার
 লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দৃষ্টি সীমানা
মন ভাঙা ঘরে কতক প্রেমের শিরচ্ছেদ করে
বিছিয়ে দিয়েছি রক্ত জবার সেই অরুনিমা..
দশ দিগন্ত আউলা ঝাউলা বিষাদ নামুক চাই দোর্দণ্ড খেদ।
বিষাদিনী আমি তোমার বন্ধু হবো। ওহে প্রেয়সী তোমায় নিমন্ত্রণ।
অভিমানে উত্তাল আবেগে আমি নুজ্যু দ্রোহ
 বিষাদিনী তোমাকে চাই
তোমাকেই ভালবাসি।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.