হুসাইন দিলাওয়ার’র ছড়া

 

ছড়া
 
ছড়া হলো ছুরির মত ধারালো
আঁধার কেটে আলোয় ভুবন ভরালো।
কিংবা ছড়া পিনের মত সূচালো
বিদ্ধ করে জরাগুলো ঘুঁচালো।
 
ছড়া হলো ছন্দ সাগর, কারু নদীর ঢেউ
সাঁতরে যাবে এমন সাহস কেউ করেনা কেউ।
ছড়াতরী বইতে গেলে পড়তে হবে খুব
নইলে কিন্তু একটু পরে গভীর জলে ডুব।
 
ছড়া ফোঁটায় হরেক রকম রকমারি ফুল
ছন্দ তালে অন্ত্যমিলে যাহার নাইকো তুল
ছড়া হলো জাদুর জগত খুবই মজাদার
করতে ভ্রমণ ছড়ার দেশে, দার টেনে দাও দার।
 
ছড়া পড়ে যদি তোমার উছলে ওঠে দিল
বুঝবে ছড়া খাসা করা সঠিক অন্ত্যমিল।
স্বপ্নছড়া, কল্পছড়া, ভাবনা রঙের ফুল
সত্যছড়া চিনতে কিন্তু করোনা-কো ভুল৷
……………………………………………
 
শাপলা শিকার
 
ছোট্ট ডোবায় শাপলা ফুলের ঢল
শিশিরস্নাত দূর্বা ঘাসে সিক্ত পা'য়ের তল
গন্ধ বাতাস জুড়ে মন হয় চঞ্চল
ডোবার পাড়ে পানকৌড়ি  সাদা বকের দল
মৃদুল বায়ে শাপলা নাচে রোদ ওঠে ঝকমক
শাপলা শিকার রক্তে আমার প্রাচীনতম শখ।
পাড়ে এসে যেই পোঁছোলুম উড়ল বকের ঝাঁক
যায় পেঁচিয়ে পায়ে আমার কলমি ফুলের শাক 
শাক ছড়িয়ে ডোবায় নেমে যেই বাড়ালাম হাত
ফিসফিসিয়ে শুনতে পেলুম জল পরীদের বাত
হঠাৎ করে এই সকালে বিনা মেঘেই বাজ
শাপলা শিকার আর হলো না;  দিনটা মাটি আজ...
……………………………………………
 
দুখু মিয়া নাম
 
চুরুলিয়ার একটি ছেলে দুখু মিয়া নাম
দুঃখে কাটে শৈশব তার নীলচে চিঠির খাম।
তালপুকুরে ফুলের বনে কাটত তাহার বেলা
বসত না মন পড়ায় তাহার চলত সুরের খেলা।
দরাজ গলায় আযান দিত শিশু মুয়াজ্জিন
কল্পলোকে ঘুরত তাহার সিন্দাবাদের জিন।
লেটো দলের মধ্যমণি কিশোর নজরুল
অগ্নিবীণার আবির্ভাবে ফুটল দ্রোহের ফুল।
বিদ্রোহী বীর সর্বহারার সাহস সঞ্চয়ন
সব্যসাচীর হৃদয়পটে আলেয়া মঞ্চয়ন।
উপন্যাসে গান কবিতায় নাটক নিবন্ধে
ডাকল মানুষ ডাকল জাতি হরেক প্রবন্ধে।
ডাগর চোখের শ্রান্ত কবি দিলেন হৃদয় ঢালি
ছিলেন যিনি নকিব মোদের ছন্দলোকের  মালী।
মসজিদেরী সবুজ  ঘাসে ঘুমিয়ে আছে কবি
জুলফিকারের গুল-বাগিচার সর্বহারার রবি।
……………………………………………
 
মায়ার খেলা
 
আকাশনীলা হাতছানি দেয় ছুঁইতে বলে কেশ
ছুঁইয়ে দিলেই মরীচিকায় আর থাকেনা রেশ।
আকাশলীনা মায়ার খেলা
মায়ার মাঝেই ভাসায় ভেলা
বিষথলিতে হেমলক তার, এক ছবলে শেষ।
……………………………………………
 
বাঁচুক সবুজ
 
বাঁচলে সবুজ বাঁচবো মোরা
থাকবে বেঁচে চরাচর
তবুও কেন কাটছ সবুজ
ভরছ পুকুর বরাবর।
নিজের পায়ে কুড়াল মারো
কেমন বোকার হদ্দযে
গাছ লাগাও জীবন বাঁচাও
নয়ত বড় ফর্দসে।
এক পৃথিবীর হরেক জীবন
মারবে কেন মানুষে
ধ্বংস ডেকে আনবে কেন
উড়তে থাকা ফানুসে।
বাঁচুক সবুজ বাঁচুক পুকুর
শিয়াল কিংবা বোয়ালে
তবেই তো ভাই বাঁচবো মোরা
গান গাইবে পিয়ালে।
চারপাশের জীবন জড় সবই 
খুবই দরকারী
নাইলে কিন্তু সর্বনাশ অনবো
ডেকে মহামারী।
……………………………………………
 
আহবান
 
আমরা শিশু আমরা কিশোর
আমরা পথিক আলোর
আমরা কুঁড়ি আমরা ফুল
সত্য ন্যায় আর ভালোর।
আমরা আঁকি আমরা লিখি
নিত্য শিখি পাঠ
ধর্ম জাতি নির্বিশেষে করি
মানব সেবার কাজ।
এসো বন্ধু আজকে ভুলি
সকল পিছুটান
মোদের চলার গতিতে পাক
সবশিশুরা  প্রাণ।
আমরা নবীন  বন্ধনহীন
আমরা সেবক দেশের
আমরা কবি আমরা রবি
কল্যাণকামী দশের।
আমরা কুড়িঁ ইচ্ছেঘুড়ি
নাটাই সুতোহীন
সাত সুমুদ্দুর তের নদী
নিমিষে বিলীন।
……………………………………………
 
আল মাহমুদ
(কবির ৮৪তম জন্মদিনে নিবেদিত কবিতা)
 
সোনার দিনার চায়না ডাহুকী
চায়না সোনার নোলক
আগুনের মেয়ে ডাকছে তোমায়
ডাকছে গোটা ভূ-লোক।
 
পানকৌড়ি ডাকছে তোমায়
করবে সমর্পণ
প্রভাতফেরীর মিছিল তোমায়
জানায় আমন্ত্রণ।
 
বখতিয়ারের ঘোড়া তোমায়
ঘুরাবে লোকালয়
লোক লোকান্তে তোমার কাব্যে
এসেছে দিগ্বিজয়।
 
আকাশ তোমায় ডাকছে হেসে
খেলবে তোমার সঙ্গে
ফুল-কলিরা সুবাস জমায়
ঢালবে তোমার অঙ্গে।
 
আমার আছে ঝালের পিঠা
লঙ্কাবাটা-তাও
আতপ চালের সুবাস নিবে 
এসো আমার গাঁও।
 
কোথায় তুমি পাখির কবি
ফুলের কবি হায়
শুয়োরমুখো ট্রাক'যে হেথা
আবার দেখা যায়।
 
খুঁজছি আমি তোমায় কবি
খুঁজব আমরণ
তোমায় খুঁজে গল্পপ্রেমী
কাব্য রসিকগণ
 
তোমার ছড়ায় কাব্য কথায়
যাই হয়ে যাই বুঁদ
তুমি আমার কাব্যগুরু
কবি আল মাহমুদ।
……………………………………………
 
দেশে
 
দেশের তনুরা
অভিজিৎ রুনিরা
পায় না বিচার
আঘাতে আগুনে
বর্ষায় ফাগুনে
উড়ে যায় প্রাণ পাখি
জীবন খাঁচার!
দেশে বন্দি
বিবেকের দরজা
পশুদের আঘাতে
খুনে ভাসে খাদিজা।
পুড়ে মরে নুসরাত
খুনিদের আগুনে
কত জন গুম হয়
কি হবে তা-গুনে?
বেঁচে যায় অমানুষ
মরে যায় রিফাতে
পার পায়  খুনিরা 
ক্ষমতার দাপটে;
মরে যায় বোধগুলো
বিকের ক্রোধগুলো
কেঁদে কেটে ঝাপটে!
……………………………………………
 
মোহাম্মদ রাসূল
 
আঁধার ধরা পেল তোমার হেরার আলোর খোঁজ
সেই আলোকের শুভ্র ছটায় সকাল আসে রোজ।
দো-জাহানের নেতা তুমি ঐশী বাণীর  বুল
তোমার কথায় সুবাস ছড়ায় পৃথিবীর সব ফুল৷
তুমি ছড়ালে দিনের আলো, চিনল আশেককূল
কুরআন নামের জীবন বিধান ভাঙ্গালো সব ভুল।
তোমায় স্মরে এই জমিনের সকল মাখলুকাত
তোমার প্রেমে দিবস রাতি গায় সকলে নাত। 
তোমার আনা সওদা লয়ে জীবন চালায় আজ
তোমার পথে তোমার মতে নেই আঁধারের ভাঁজ।
আরব জাহেল মরুদ্যানের শাশ্বত পয়গাম  
লক্ষ-কোটি তোমার শানে  দরুদ সালাম।
……………………………………………
 
ডাকছে দূরের বন
 
আমার যেতে ইচ্ছে করে
অচিনপুরের কুঁড়েঘর
পাখির মত উড়ে উড়ে
শহর ছেড়ে অনেক দূরে
দেখবো আমি চক্ষু মেলে
গাইবো আমি হৃদয় খুলে
ডাকছে দূরের বন।
 
মাঠ পেরিয়ে ঘাট পেরিয়ে
পাহাড় চূড়া সব মাড়িয়ে
ক্লাসের পড়া শিকায় তুলে
বাবার শাসন ভুলে গিয়ে
যাবো আমি সেই সে দূরে
দেখবো আমি ঘুরে ঘুরে
ভাবছি সারাক্ষণ।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.